আন্ডার দ্য নাইফ অফ মিকেল্যাঞ্জেলো || আহমেদ ইয়াসিন

আন্ডার দ্য নাইফ অফ মিকেল্যাঞ্জেলো || আহমেদ ইয়াসিন

 

রূপকার বললেন এগারোটায় চলে এসো হাসপাতালে। কত লাইলাতুল কদর ‘ফান্নান’ সাহিত্যের মোনাযেরায় আমাকে কত কিছু বলেছিলেন, তার মধ্যিখানে নিজের অজান্তেই বেশ কয়েকবার আমাকে “গোমেজ” তাভ্‌সিয়ে করলেন পড়ে দেখার জন্য, কনটেম্পোরারি বাংলা সাহিত্যে হয়তো আমি নাদান আর ফান্নানের অবচেতনে গোমেজ ভালোই জায়গা নিয়েছে তাই ভোরবেলায় শৈত্যপ্রবাহের মাঝে ব্যাগখানা হাতে নিয়া সাথে হাতের সামনে পড়ে থাকা গোমেজের “মাতৃমূর্তি ক্যাথিড্রাল” লইয়া আজ হোলি খেলুঙ্গি কেহ্‌ বিস্‌মিল্লাহ্‌ জপ্তে-জপ্তে রিক্সা নিয়া রওনা দিলাম বাসস্ট্যান্ডের পথে মৌলিবাজারের উদ্দেশ্যে। বুড়ো চালকের প্যাডেলও ঝাপসা লাগছে চোখে। কনকনে শীতে আমি ও সূদূর-দূরে সরকারী হাসপাতালের সার্জিকাল স্কাল্পেলের মাঝখানে ঘন কুয়াশা যেন রুবান্দ-এ নাজ্‌ভা। আর নয়াব্রীজের তলে এককালের মৃগনাভি মৃতপ্রায় নদীর ঘ্রানহীন সুতীকা অসাড়, অবসাদ, অনুজ্জ্বল। আমি হাজারোবার ডাক্তারবাবুর চাকুর নিচে মাইকেলেঞ্জেলোর ‘দাঊদ’ না হইলেও তাঁর আর সব অর্ধসমাপ্ত কাজের মত “মুমূর্ষ কিঙ্কর” (The Dying Slave) ভাস্কর্য হইতে আ-মরি রাজি যদি হোন তিনি রূপকার ফান্নান। An artist, to my mind, is always a finest general in war and a finest surgeon with a knife. রাব্‌কি কাসাম্‌ history is my witness.

বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে টিকিটখানা লইয়া, মঙ্গলবার-চেঁচামেচির মাঝে, পাশের টং-এ চা চুমাইতে-চুমাইতে জনৈক লাপড়ী ভদ্রলোকের মুখে সান্তা-মনিকার আগুন লাগার ইনানি-বিনুনী দাস্তান ও তার টং-ওয়ালাকে নসিহত শুনতে-শুনতে মুচকি হাসিয়া স্থান ত্যাগ করে বাসে চাপলাম, আজকাল পথে-ঘাটে সবাই মোল্লা, সবখানে ওয়াজ-নসিহত! বই খুলিয়া শুরু করলাম পড়া! শুরুতেই একটা শব্দে আসিয়া চক্ষু আটকাইলো আর ভাবলাম “এই গ্রহোপগ্রহনোভানক্ষত্রনীহারিকাপুঞ্জিতনিকুঞ্জের” অন্তরালে অনন্ত ঘূর্নায়মান পাষাণ রাহুল্যমান মহ্‌সিনের অন্তিম কোথায়, অথবা সেই অন্তিমে কোন্‌ মঙ্গলে মঙ্গলবারে ঔপনিবেশই বা করবেন! যাই হোক ভাষার চাতুর্য্যে গোমেজের হুইমসিকাল রোজনামচা মত লেখা আদ্ধেক শেষ কত্তেই মুতের বেগ পাইলো, চল্লিশ মিনিট ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করার পর বাস-কন্ডাক্টরকে বলতেই উনি পাশের বাড়ির দুধেল ভাবীর মত চোখ মটকে “এইতো সামনে একখানা স্ট্যান্ড আছে ওখানেই করে নেবেন” বলে ধোঁকা দিয়া নিশ্চুপ হয়ে গেলেন, এই ফাঁকে কোলকাতার পুকুরপাড়ে আহত আমার ডান পদ্মকদম আরেকটু আহত হলো বাসের ঝাঁকুনিতে, বুঝলাম না কোথায় চোট লাগলো—দিলে, চরণে নাকি মুত্তথলিতে! যাউজ্ঞা ধোঁকা হতে পরিত্রাণ নাই, অধ্‌মে-আদম-নরাধম অগত্যা অগাস্টিনের বইয়ে চোখ বুলাতে লাগলাম! অনেকবছর পর মৌলিবাজার!—নেমে স্ট্যান্ডের ল্যাভাট্‌রী সদ্ব্যবহার করে বেরোতেই বাসের এক চাচা বলে উঠলেন “ফেসাব করছনি রেবো বাতিজা?” হাসি দিয়া মাথা নেড়ে ‘ওটলে’ ঢুকলাম, সেখানে চা গিলে বেরোবার সময় দেখলাম তিন মাছি সোয়েটারের ল্যাপেলে ফুলের বদলে ল্যাপেল পিন হয়ে নড়াচড়া করছে, বুঝলাম আমি পঁচে গেছি নাহলে এম্নে হয় হ্যাঁ, একটু আশ্চর্য্য হলাম বৈকি! চারপাশে তাকাতে-তাকাতে হাসপাতালের দিকে হেঁটে গেলাম। আশপাশের গাছ-গাছালি আর পরিবেশ-চিত্রে কোলকাতার ধূলিধূসর ছাপ!

চিরাচরিত দূর্নীতিপীড়ীত রাষ্ট্রের সরকারী হাসপাতালের সুরত খুব একটা আশ্চর্য করেনি মোটেও। আধা-ঘন্টা আগেই পৌঁছেছি, দু-তলায় উঠে একটা লম্বা খালিপ্রায় চেয়ারে জনৈকা বোরখাওয়ালী বিনীতার কাছে অনুমতি চাহিয়া বসতে চাইলে তিনি উঠে চলে গেলেন! আমিও আর ধার-না-ধেরে বসে পল্লুম। রূপকার ফোন দিলেন, বললাম, “চলে এস্‌ছি ভাই”। ক্ষনকিছু পরে এক ছেলে-ছোকরা নাম ধরে ডাক দিলো, আমিও জবাব দিয়া গেলাম সামনে। ভেতরে নিয়া গেলো। সেখানে আরেক ডাক্তারের অফিসে জুতোজোড়া বদলে সপাট-সোজা ডাক্তারবাবুর সরকারী নানা-নাটকের যন্ত্র-যন্ত্রণার অস্ত্রের থিয়েটারে ঢুকে পল্লুম, জীবন্ত প্লে হয় এখানে। মলিন ওটি-তে মিটমিটি তারার আলোর নিচে রুগীদের উপর কামলা ও রিহার্স্যাল দেয়া চলছে। রূপকার বললেন “স্যারকে একটা চেয়ার দাও বসতে”।

বললাম, “একখান ফর্ম দিয়েন আর সরকারি ফি কত ট্যাকা?” উনি কইলেন “পাঁচ টাকা”!—মাঝখান থেকে পাশের ছোকরা ফর্ম নিয়ে এসে জিগেস করলো, “বয়স কত?” বললাম, “সনদেরটাই লিখে ফেলো”, মনে মনে বললাম শালার সিল্‌ভার ফক্স জর্জ্‌ ক্লুনি তো হয়েই গেছি আবার বয়েস জিগায়, ইস্‌কো কেহতে হ্যায় ‘নবুয়্যতি উমার্‌’!—এই মানুষ গুলো ৫-টাকায় অবিরত-দিবানিশি নিরোবধি রুগীদের উপর ভূতে পাওয়া ভাস্করের মত কামলা দিয়ে যাচ্ছে! আমি আর টাকাটা দিই নাই। পাঁচ-টাকার হাসি নিয়া ঋণী থাকতে চাই রূপকার, হাসপাতাল, আর জনগণের কাছে! বাকী থাকুক, ৪৭-এ মান্টোর কিছু পয়সা যেমন বাকী ছিলো বোম্বে ছেড়ে লাহোরে যাওয়ার কালে দোকানীর কাছে! এমনিতেই তো টবাটেক সিং হয়েই আছি, ক্ষতি কি। কিছু ঋণ বোঝা নয় বরং আনন্দ বটে, অনেকটা মাঘীপূর্নিমায় শিক্ষকের বাড়ি গাছ পেড়ে পেঁপেঁ চুরি করে খাওয়ার মত (কোন এক-কালের মৌলিবাজারের শাব্‌-এ মাজরা)!

“নতুন শীট বিছায়ে দাও”, বললেন ছোকরাকে। “ইয়াসিন শুয়ে পড়”, জিগাইলাম, “ভাই, চিত্‌ না উপইত্‌ হইব”, “চিত্‌ হয়ে যাও চলবে”। নার্স শামসুন্নাহারকে লইয়া তিন-নম্বর চাক্কু না পাইয়া চার-নম্বর স্কাল্পেল নিয়া কানের নিচে আগে কলম দিয়া দাগ কাটিয়া অপারেশান্‌ কর্ম শুরু করতে গেলেন। “ইয়াসিন ইঞ্জেকশান (এনেস্থেশিয়া) দিবো একটু লাগবে”, বললাম, “ইঞ্জেকশন লাগবে না এম্নেই কাটেন”। কে শোনে কার কথা! মাঝখান থেইকা শামসুন্নাহার আমার মুখখানা জিওভান্নির “নিকাব কুমারীর” (The Veiled Virgin) মত কাপড় দিয়া ঢাকিয়া দিলো, ঈষৎ বিরক্ত হইলাম আবার খুশিও হইলাম, কলম আর কলমতরাসে ফুটে ওঠে সর্বদা রক্ত-বান, রক্ত-নিনাদ। রূপকার ইঞ্জেকশান্‌ দিয়া আড়াই মিনিটে চার-পোচে চাকুচালানো-অপারেশান্‌ সমাপ্ত করলেন—এ যেন হোয়্যাম্‌, ব্যাম্‌, গুডবাই ম্যাম্‌! মানে উনি যেরকম মাঝরাতে প্রুত্‌-প্রুত্‌ করে আঁকেন আর কী! নার্সের নাম জিগেস করতে ডাক্তারবাবু নাম জানালেন।জিগেস করলাম কেননা কোন দিন যদি আমার বস্তাপঁচা লেখাজোখায় কামে লাগে এই আর কি। পাঠক আবার ভাব্বেন না যে প্রেমিকা নাজিয়া হাসানের বলিউড কাঁপানো গান বুম্‌-বুম্‌ কানে বাজছিলো। হেঃ হেঃ। আমার সাফারি সাহারায়! আহঃ নাজিয়া, ডাইড্‌ ইয়াং!

শ্যাষ্‌মেশ ওটি থেকে বের হয়ে পাশের সেই ডাক্তাররুমে গিয়ে বসলাম। জুতো পড়তে-পড়তে এ-কথা-ও-কথা শুরু হতেই সেই ডাক্তার—কি যেন নাম ভুলে গেছি—প্রশ্ন করলেন, “আপনি আবৃত্তি করেন নাকি?” শুনে ভেতরে দম-ফাটানো হাসির পট্‌কার আওয়াজ ভিরমি দিয়া গিলে বললাম, “না ভাই, গান-আবৃত্তি আমার তাম্‌শা-তাবু (সার্কাস) নহে, even a murder of crows laughs at me rudely and loudly.” মনে পড়লো অ্যালান পো’র আমার প্রিয় কবিতা র‍্যাভেন এর কথা, “Ghastly grim and ancient Raven wandering from the Nightly shore—… ভদ্রলোক চা-সিঙ্গারা খাওয়ালেন। রূপকার ইতিমধ্যে হন্তদন্ত হয়ে এসে ঢুকলেন, জানতে পারলাম (ফান্নানের ভাষ্যে) একজন নাগা-সন্নাসী ৩৮-বারের প্রচেষ্টায় অবশেষে কুম্ভমেলায় এফসিপিএস পাশ করেছেন, দৌড়ের উপর এক-তোড়া অঞ্জলি নিয়া সেলিব্রেটও করে আসলেন উনারা। প্রটোকল।

আপনে ইমাজিন্‌ করেন, করডোবা আন্দালুসিয়ায়, আল-যাহ্‌রাবি, মাইকেলেঞ্জেলো, কিঙ্কর, টেগোর, আর টেন্ডার হার্ট দার্শনিক লেভেস্কে দে পুয়ী একসাথে বইসে চুক্তি করলেন। এই মেনিফেস্টাশান্‌ অফ সিক্রেট ডেক্লারেশান্‌ অফ হোলি কাভানেন্ট ১২৪২৪০ বা চুক্তিই হল ‘মহ্‌সিন’—নাদিরে আল্-আসর—Wonder of the age. বন্ধু ও অগ্রজ মহ্‌সিনের কাজ হইলো দিন নাই-রাত নাই এরে ধইরা-ওরে ধইরা অস্ত্রপ্রচার করে মেরামত করে দেয়া, এমনকি পারলে প্লাস্টিক ও কস্মেটিক্‌ সার্জারি করে দেয়া (ওহ্‌ ভি ফ্রি!) আর তাদের তাবৎ কমতি-কষ্টে হাহুতাশ করা। মুখকাটা, শিলা বর্মের ভেতরে নরম শিশু-মন, মহ্‌সিনের কাছে অন্যের ব্যাপারে জানিনা তবে তাবৎ ঋণ আছে আমার। কখনো ঘটা করে আর বলা হয়ে উঠে নাই। কলম চলে তার ভূত-রাত্তিরে (at the witching hour), কলমতরাসও চলে। রূপকার দেশ-বিদ্যাশে নানা যাদু-নগ্‌রিতে যাদুকরদের কাছে শিশুর মতো উচ্ছল হয়ে টোবাটেক সিং-রে যেভাবে এপ্রেশিয়েইট কত্তে শুনেছি যা নৈরাশ্যবাদী-নর্দমায় কেউ কখনো করেনি। জুলাই বিপ্লবে আমার গুলি খাওয়া ও অন্তর্ধ্যানে পুরো শহর বুনো-ঐরাবতের মত নিনাদ করে বাত্তি-জ্বালিয়ে খোঁজা শঙ্কিত মাইকেলেঞ্জেলোকে দেখেছি নিরবে। বা-হাতি ফান্নান আর এম্বিডেক্সট্রাস আমি দুজনের বাপই ছিলেন শিক্ষক, আমার মেটারনাল গ্রেইট গ্র্যান্ডফাদার আর মহ্‌সিন দুইজনেই একই নাম ধারণ করেন এবং পেশায় উভয়েই কাটাকুটি-কষ্টদেব-বৈদ্য। যাইহোক, the more I shall play the percussion and try as I might, the less it will sound! ভূত-রাত্তি-রিভাইয়্যাত অন্য দিনের জন্য তাকে তুলে রাখলাম। কোন একদিন মরবারকালে লিখ্যা যাবনে। সরকারী হাসপাতাল, কোলকাতার পরিবেশ-পট, রূপকারের নাম, শতবছর আগের ব্রিটিশ-রাজের কোলকাতায় যেন গ্রেইট গ্র্যান্ডফাদারকে দেখতে গিয়েছিলুম এটা জানাতে যে লনি আজ বেঁচে নেই, তুমি দেখতে আসলা না।

বাত্‌-চিত্‌ সংক্ষেপণ করলে বলবো, আমরা দু’জনে নিরাময়-মেহেল্‌ থেকে বের হইতে গেলাম। হাটতে-হাটতে তার হোয়াট্‌সএপে পাঠানো শিশু-আঁকায় চোখ আটকে গেলো জানালেন তাঁর ছেলে এঁকেছে। যাকে নিয়ে আমার মূলত-মূল-মোতাল্লিয়া। বললাম, “আমারে হোয়াট্‌সএপ করেন”। ফরাসী আঁকিয়ে ইভ্‌ ক্লাইন এর ইজিপ্‌শিয়ান ব্লু-এর ফাইনেস্ট পিগ্‌মেন্টের প্রতি যে অবসেশান্‌ আর এই স্বর্ণসম মূল্যের রঙের অবসেসিভ ব্যবহার ফেরাউন্‌রা যেভাবে করেছেন প্রাচীন মিশরে কিংবা ভেনেশিয়ান পেইন্টার তিশ্যান বা ফ্লেমিশ পেইন্টার রুবেনের লাল পিগ্‌মেন্টের পটে-পারফেকশান, এবং ক্লিম্‌ত্‌ জানতেন সোনালি রঙের ফাইনেস্ট ভাইব্রান্স শুধু স্বর্ণ-পত্রে বিদ্যমান আর কোথাও নয়; ফলে, এক-ঝটকায়-এক-পলকে আমাকে ইল্‌মাযের এই শিশুচেতনার অহর্নিশ অন্বেষণ স্প্যানিশ আঁকিয়ে জুয়ান মীরোর কথা মনে করিয়ে দিল। আঁকিয়েরা চিরন্তন কিছু রঙের ফাইনেস্ট-ভাইব্রান্স অন্বেষণ করেছেন—যা আমাদের মস্তিস্ক ধূসরে ভাইব্রান্ট-ভাইব্রেশান্ এবং শরীরে রক্তরাশ ঘটায়—না পেলে নিজে বানিয়ে পারফেক্ট করেছেন। প্রতিটি শিশুর মনে এই ৩/৪-টে রং অবচেতনে দোলা দেয়, ইমোশনের বহিঃপ্রকাশ এগুলোতেই ঘটে, আমাকে এক ঝটকা-টানে আমার শিশুকালে নিয়ে গেলো ইল্‌মায। আমি হয়তো তাঁর মতো শিল্প-সমাজ্‌ধার-সমালোচক নই তবে কিঙ্করের অনুগামী মহ্‌সিন কি জানেন বা আদৌ অনুধাবন করেছেন কখনো যে রং-কাঁকড়ের মাঝে জন্ম নিয়েছে আরেক সফিস্টিকেইটেড মীরো!—হয়তোবা like father, like son. উল্লেখ্য রামকিংকরের সাথে মোহাব্বাতে-মোলাকাত মহ্‌সিন করাইয়াছিলেন ম্যালা বছর আগে, বলতে লজ্জা নাই।

ফান্নান আমাকে তাঁর ব্যস্ত-সমস্ত মঙ্গলময় মঙ্গলবারে নিয়ে গেলেন কাচ্চি খেতে, আমি যা-ই কথা বলি না কেন আমার চোখে ভাসছে ইল্‌মাযের কল্পনায় নীল পিরামিডের স্বর্ণালী চূঁড়ো যেখানে নীলের মাঝে দেখি আমি সোনালী হায়ারোগ্লীফ! ছোটবেলায় এঁকেছিলাম। খাইয়ে-দাইয়ে আগেরকালের মেহ্‌মানবাড়ি গেলে যেভাবে হাতে ধরিয়ে দিতেন কিছু আসার কালে, তিনিও হাতে ধরিয়ে দিলেন এক থলে চা-পাতা। আসারকালে বাসে আরো নানান ঘটনা মজার ঘটনা, মিশনারীর পাল্লায় পড়ে ক্রিশ্চিয়ান রমণী-শ্যারেন, আমার হাতে গোমেজের বইখানি দেখে জিগ্যেস করলেন, “বইটি কী নিয়ে লিখা?” এ-কথা ও-কথায় আরও পুঁছলেন, “আপনি কি ক্রিশ্চিয়ান?” আমি নিজের অজান্তেই নিজেকে শুধাইলাম, “আসলেই আমার ধর্ম কী এই পোস্ট নিও-লিবারেল-মেডিইভাল এরায়?” ভাবতে-ভাবতেই ক্লাস টেন-এর শিশুর আমাকে মায়া প্রকাশ করে একটুখানি তার পাশে জায়গা করে দেয়া যেহেতু পুরো রাস্তা আবাল-বৃদ্ধা-বনিতাদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে আমার দাঁড়িয়ে আসা—তার অনুধাবন, মানুষের ভীড়ে নানা গল্প, সাঁঝবেলায় টবাটেক সিং-এর বাড়ি ফেরা ঐ বিটুইন দ্যা বার্বড্‌ ওয়্যারস্‌ আর কী! সে রিভাইয়্যাত না হয় অন্য রজনীতে লিখবো।

বাল্‌খির মতো করে নিজ শব্দে কইতে চাই তাব্‌রীজির পানে চাহিয়া, “আমি হাজারোবার তোমার খঞ্জরের নিচে গলা পাতিয়া দিবো হে ভাস্কর, যদি তুমি হউ ফান্নান-এ ফিল্লাহ”।
Tuesday, the 28th of December, 2025


আহমেদ ইয়াসিন রচনারাশি

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you