বিটিভি লহরী || জিনাত জাহান

বিটিভি লহরী || জিনাত জাহান

[কথা আজকের নয়, এখনকার নয়, এখন তো সংগীত শোনা বা গানবাজনা করবার-শুনবার রাস্তা হাজার। এখন নিশ্চয় জেবের ভিতরে একপৃথিবী মিউজিক নিয়া পাথারে বা পাহাড়ে জনমনিষ্যিবিরল সুরের ঘোরে একলাফে বছর পার করে দেয়া যায়। কিন্তু অন্তহীন সুরের সংযোগপ্রবাহ অনবচ্ছিন্নই রয়ে যায় যদি নির্বাসিতজনের জেবের ভিতরকার যন্ত্রখানা হয় দশাসই। নিতান্ত ছোট্ট একটা সেলফোনে নেটসংযোগ থাকলেই দিবারাত্রি খোলা গানবাজনার অশেষ স্টেশন। যখন ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা যা ইচ্ছা যেমন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা গান শোনা যায় একটিপে। এখন আছে ইউটিউব ছাড়াও গান শ্রবণের গান পরিবেশনের বেশুমার রাস্তা। আছে এফএম, আছে টেরিস্ট্রিয়্যাল চ্যানেল কাতারে কাতার, আছে ব্যাপক সংখ্যায় গানবাদ্যিবাদনের প্রোগ্র্যাম।

তবে এই কিছুদিন আগে, বেশি দূরে যেতে হবে না, গেল শতকের নব্বইয়ের দশক অন্তিম অব্দি লিমিটেড ছিল সংগীত শ্রবণের উৎস। বাংলাদেশ বেতার ছাড়া, আর অডিয়োপ্লেয়ারে ক্যাসেট মাধ্যম ছাড়া, গান শোনার কথা ভাবনাতেও ছিল না কারো। সর্বোপরি প্রোক্ত সময়টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, সংক্ষেপে বিটিভি, প্রভূত অবদান রেখেছে গানপেটুক শ্রোতাভাইবোনবন্ধুদের সংগীতক্ষুধা নিবৃত্তিতে। পাক্ষিক আর সাপ্তাহিক গোটা-দুই টিভিনাটক ও মাসে একটা বাংলা ছায়াছবি প্রচারের বাইরে রোজকার সংবাদ প্রচার নির্ধারিত প্রহরে এবং রোজকার একাধিক সংগীতানুষ্ঠান দর্শকশ্রোতাদেরে একটা বড়সড় সময় জুড়ে সঙ্গ দিয়ে গেছে।

একমাত্র সংগীতশ্রবণদর্শন তথা গানদেখাশোনার মাধ্যম ছিল তখন সবেধন নীলমণি বিটিভি। বিকাল চারটে থেকে রাত বারো অব্দি বিটিভি অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করত তখন। পরে অবশ্য সম্প্রচারসময় বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে পল্লিগীতি থেকে শুরু করে ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালী কিংবা পাঁচকবির গান বা রাগলহরী কি সীমিত পরিসরে ব্যান্ডসংগীত এমনকি ইংরেজি প্যপ থেকে শুরু করে মোৎসার্ট-বাখ-চাইকোফোস্কিও শোনানো হয়েছে।

এইখানে প্রকাশিত হতেছে যে-লেখাটা তাতে দেখব বিটিভি তার স্বর্ণসময়ে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানমালায় গানবাজনা বা সংগীত কতটুকু জুড়ে প্রচার করত। ওই সময়ের দীর্ঘ না-হলেও যথেষ্ট বিস্তারিত এই রচনা আমাদের দৃশ্যমাধ্যমে সংগীত সম্প্রচারের ইতিহাসলগ্ন করবে পাঠককে। এইটা পাঠোত্তর আমরা পাঠক হিশেবে এবং সেই সময়ের দর্শক হিশেবে একাধটু হয়তো যোগ করতেও প্রবৃত্ত হব নিজেদের স্মৃতি থেকে। এইভাবে একটা আস্ত ছবি নিশ্চয় ফোটানো সম্ভব হবে এই পরিবর্তিত সংগীত-সম্প্রচারবিশ্বের আদি পথপরিক্রমের।

রচনাটা গানপার গ্রহণ করেছে ‘আনন্দভুবন’ এপ্রিল ১৯৯৯ (৩ বর্ষ ২২-২৩ সংখ্যা; ১৬ এপ্রিল ১৯৯৯; ৩ বৈশাখ ১৪০৬) ইশ্যু থেকে। এর শেষে বিটিভি কর্তৃক প্রচারিত ও জনপ্রিয়-হওয়া গানগুলোর একটা তালিকা আছে খেয়াল করব, তালিকাটা ‘বিটিভি লহরী’ শীর্ষক জিনাত জাহান রচিত প্রতিবেদনের সঙ্গেই ছিল সংযুক্ত, বলা বাহুল্য জনপ্রিয়-হওয়া গানের তালিকায় নিশ্চয় আরও যুক্ত করতে চাইব আমরা। আর, উল্লেখ্য, গানগুলোর প্রথম কলির সঙ্গে কেবল কণ্ঠশিল্পীর নামটা থাকল। সংশ্লিষ্ট গানটার গীতিকার, সুরকার ও সংগীতকারের নামপরিচয়তথ্য মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে অ্যাবসেন্ট এবং আমরাও তথ্যসমূহ সংযোজন অন্তত বর্তমান রচনায় জরুরি মনে করছি না। – গানপার]

BTV

“ওই যে আকাশ নীল হলো আজ / সে শুধু তোমার প্রেমে / ওই যে বাতাস বাঁশি হলো আজ / সে শুধু আমার প্রেমে” – সোনালি পাড়ের সবুজ শাড়ি পরা ফেরদৌসী রহমানের কপালে বড় লাল টিপ। ডিআইটির ছোট্ট স্টুডিওতে গাইলেন এই গান। সেটা আজ ইতিহাস। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম গান। গীতিকার আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও সুরকার আনোয়ার উদ্দিন খান। সেটা ছিল ’৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর। এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। আজকের বিটিভি অনেক সুবিধাসম্পন্ন। সাদাকালো থেকে রঙিন হয়েছে। প্রচারের সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে গানের অনুষ্ঠানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আরেকদিকে অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যেও গানের ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, আলেখ্যানুষ্ঠান, নাটক – সবখানেই গানের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে।

প্রাথমিক অবস্থায় নির্দিষ্ট গানের কিছু অনুষ্ঠান ছিল। নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক, লোক এবং রাগপ্রধান। পাকিস্তানী আমলে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিয়ে প্রচুর ঝামেলা হয়েছে। যদিও বিটিভির প্রথম দিন থেকেই রবীন্দ্রসংগীত প্রচার হয়েছে নিয়মিত। জাহেদুর রহীম ও ফাহমিদা খাতুন ছিলেন প্রথম রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী। জাহেদুর রহীম গাইলেন ‘পথে চলে যেতে যেতে কোথা কোনখানে তোমার পরশ আসে’ এবং ফাহমিদা গাইলেন ‘তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়’। স্বাধীনতার পর সে-বাধাও কেটে গেছে।

এদেশে সংগীতক্ষেত্রটির বিকাশে টেলিভিশনের অবদানকে খাটো করে দেখার উপায় নেই। অডিও ক্যাসেট ইন্ডাস্ট্রি সেভাবে গড়ে না-ওঠায় শিল্পীদের রেডিও-টেলিভিশনের কাছেই যেতে হতো। এই দুটো মাধ্যম ছাড়া দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা বা প্রচার কোনোটিই সম্ভব ছিল না। এক্ষেত্রে আধুনিক গানের কথা বলতেই হবে। রবীন্দ্রসংগীত বা নজরুলসংগীতের জন্য নতুন পরিচিতির প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা নতুন গান লিখছেন, সুর করছেন, গাইছেন – তাদের জন্য রেডিও-টিভি ছিল বলতে গেলে একমাত্র অবলম্বন।

আজকের জনপ্রিয় আধুনিক গানের শিল্পীদের সিংহভাগই টেলিভিশনের মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন। সুরকার এবং গীতিকাদের ক্ষেত্রেও কথাটা অনেকাংশে খাটে। চলচ্চিত্রের বাইরে তাদের সুযোগ ছিল খুবই কম। সেক্ষেত্রে টিভি তাদের জন্য ছিল খুব বড় একটা সুযোগ। সংগীতরচয়িতা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান স্মৃতিচারণ করেন, টেলিভিশনের প্রথম দিন থেকেই আধুনিক গান প্রচার হলেও এসব গান ছিল বেতারেরই গান। ১৯৬৭ সালের দিকে টেলিভিশন নিজস্ব আধুনিক গানের অনুষ্ঠান প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়।

মূলত গানের অনুষ্ঠানের জন্য প্রথমদিকের টিভি জনপ্রিয় হয়েছিল। প্রথমদিককার সকল টিভিকর্মী কথাটা একবাক্যে স্বীকার করেছেন। টিভিতে রুনা লায়লা ঢাকায় তার প্রথম একক গানের অনুষ্ঠান করেন। এছাড়া প্রতিদিনই বিখ্যাত শিল্পীদের উপস্থিতি ঘটত। স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত টিভিতে বাংলা গানের পাশাপশি ব্যাপকহারে প্রচারিত হতো উর্দু গান। রুনা লায়লা, ফেরদৌসী রহমান প্রমুখ ছিলেন প্রধান শিল্পী। উর্দু ছাড়াও আরো বেশ কয়টি ভাষায় সংগীত প্রচার হতো নিয়মিত। ফেরদৌসী রহমানের নাম টিভির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। প্রথম সংগীতশিল্পী ছাড়াও বিটিভিতে তার বহু অবদান আছে। এসো গান শিখি-র মতো ব্যাপক জনপ্রিয় সংগীতশিক্ষার আসর তার হাত ধরেই গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে আরো বলতে হয় নতুন কুঁড়ি-র কথা। খালেদা ফাহমী ছিলেন নতুন কুঁড়ি-র প্রথম প্রযোজক। বহু নতুন শিল্পী বেরিয়ে এসেছে এ-অনুষ্ঠান থেকে।

টিভির সংগীত বলতে গেলেই চলে আসে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের কথা। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে বহু বিষয়ের সম্মিলন ঘটানো হয়। কিন্তু প্রধান আকর্ষণ থাকে গানের জন্য। সেই কবেকার ‘সংলাপ’, ‘যদি কিছু মনে না করেন’ থেকে শুরু করে আজকের ‘ইত্যাদি’ পর্যন্ত সবখানেই সংগীত অন্যতম বিষয়। বহু শিল্পী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহারণ হিসাবে ‘এলোমেলো’ গানের শিল্পী নাফিস কামালের নাম করা যায়।

এরপর আসে নাটকের কথা। প্রশ্নাতীতভাবে নাটক সবচাইতে আকর্ষণীয় এবং জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। ‘একতলা দোতলা’ ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নাটক। প্রাথমিক অবস্থায় সরাসরি সম্প্রচার হবার কারণে গানের ব্যবহার খুব-একটা দেখা যায় না। এর মধ্যেও দু-একটা নাটকে গানের ব্যবহার হয়েছে। তবে টিভিনাটকে গানের ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রবল জাগরণ ঘটে স্বাধীনতা-উত্তরকালে। মুস্তফা মনোয়ারের রক্তকরবী-তে আমরা শুনতে পাই ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে’। এ-সময় রবীন্দ্র-নজরুল এবং ফোক গানের ব্যবহারই ছিল বেশি। লালনের গানের ব্যবহারও ছিল উল্লেখযোগ্য। মোটামুটিভাবে আশির দশক থেকে নাটকে আধুনিক গান শোনা যেতে লাগল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবেও শোনা গেল আধুনিক গান।

নাটকে গানের ব্যবহারের ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদের নাম উল্লেখযোগ্য। ‘নির্বাসন’ নাটকে শিমুল ইউসুফের গাওয়া ‘তেপান্তরের মাঠে বধূ হে একা বসে আছি’ সে-সময় আলোড়ন তুলেছিল। এরপর বহুব্রীহি-র ‘হলুদিয়া পাখি’, অয়োময়-এর ‘আসমান ভাইঙ্গা জ্যোস্না পড়ে’ এবং আজ রবিবার-এর হাসন রাজার গানগুলোর ব্যাপক অবদান রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহারের কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। এছাড়া নাটকে খালিগলায় গাওয়া গানকে জনপ্রিয় করার পেছনেও তাঁর অবদান রয়েছে।

নাটকে আবহ সংগীত একটা উল্লেখযোগ্য দিক। এক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে মাকসুদ জামিল মিন্টু, ফোয়াদ নাসের বাবু, আইয়ুব বাচ্চুর কথা বলা যায়। আইয়ুব বাচ্চু পান্থজনের সখা-র মিউজিক করে প্রশংসিত হয়েছেন সুধীসমাজে।

সত্তর-আশির দশকটা বাংলা গানের ক্ষেত্রে বেশ উল্লেখযোগ্য। এ-সময় একটা পরিবর্তন সূচিত হয় বাংলা গানে। পপ এবং ব্যান্ড মিউজিক জনপ্রিয় হতে শুরু করে। পপগান জনপ্রিয় হবার পেছনে বিটিভির রয়েছে ব্যাপক অবদান। আলাদা করে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়েছে পপগানের জন্য। পিলু মমতাজ, ফেরদৌস ওয়াহিদ, ফিরোজ সাঁই, নাজমা জামান, জানে আলম প্রমুখ শিল্পীরা টিভির মাধ্যমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ফকির আলমগীর নিয়ে আসেন গণসংগীত ক্রেজ। তার ‘ও সখিনা গেছস কি না ভুইলা আমারে’ ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এরপর আজম খান আসেন তরুণ শ্রোতাদের ক্রেজ হিসেবে। তার ‘আলাল ও দুলাল’ এবং ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ তখন ঘুরত লোকের মুখে মুখে। আজম খানের অসম্ভব জনপ্রিয়তার পর থেকেই বিটিভিতে নিয়মিত পপসংগীত প্রচার হতে থাকে।

জানে আলমের ‘একটি গন্দমের লাগিয়া আল্লা বানাইল দুনিয়া’ ব্যাপক হিট হয়েছিল। বিটিভিতে প্রথম যে-ব্যান্ড অনুষ্ঠান করে তারা হলো ‘আয়োলাইট’ – ’৬৫ সালে, আধঘণ্টার একটি ইন্সট্রুমেন্টাল প্রোগ্রাম। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে প্রথম বিটিভিতে আসে ‘মাইলস’। তারাও প্রথম যাত্রা করেন ইন্সট্রুমেন্টাল দিয়েই। তবে ব্যান্ডবিষয়ক ক্রেজটা শুরু হয় নব্বই দশক থেকে। এ-সময় ‘সোলস’, ‘মাইলস’, ‘ফিডব্যাক’ সহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ডকে নিয়মিত দেখা যেতে লাগল টিভিপর্দায়। এখন তো কথাই নেই – ‘ফিডব্যাক’, ‘এলআরবি’, ‘ফিলিংস’, ‘মাইলস’, ‘সোলস’, ‘আর্ক’ সহ প্রথম সারির ব্যান্ডগুলোর উত্থানের পেছনে বিটিভির অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যদিও টিভিতে ব্যান্ডবিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। কিন্তু ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি’ বা ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’-র দেশব্যাপী উন্মাদনা বিটিভির মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। এ-সময় নিয়মিত ইংরেজি গানের অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। ‘সলিড গোল্ড’ ছিল খুবই হিট প্রোগ্রাম।

একসময় বিটিভির সংগীতক্ষেত্রটি ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ। কিন্তু আজকে আর সেই অবস্থা নেই। কলিম শরাফী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, মুস্তফা মনোয়ার এবং সৈয়দ আব্দুল হাদীই মূলত সংগীতক্ষেত্রটিকে পোক্ত করেছেন। আজকে তারা কেউই আর বিটিভির সাথে জড়িত নন। একসময় বিটিভির পল্লী এবং লোকসংগীত বিষয়ক প্রোগ্রাম ভালোই জনপ্রিয় ছিল। আব্দুর রহমান বয়াতী, নীনা হামিদ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ফরিদা পারভীন, ফেরদৌসী বেগম/রহমান সবার অবদান ছিল এক্ষেত্রে। বিটিভির অন্যতম সম্পদ হলো স্বয়ং আব্দুল আলীমের গানের ভিডিও।

এখন অবস্থা খুবই করুণ। এখন চলছে প্যাকেজের যুগ। বিটিভির নিজস্ব গানের অনুষ্ঠানগুলো ক্রমশ নিষ্প্রভ হয়ে আসছে। সবাই প্যাকেজ সংগীতানুষ্ঠান দেখার জন্য উদগ্রীব। মিউজিক ভিডিওর প্রচলন হয়েছে। ’৯৮ ঈদ উপলক্ষ্যে প্রচারিত ‘ব্যান্ড ক্লাসিক’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটি সমাদৃত হয়েছে। ব্যান্ডের গুটিকতক গান নিয়ে রিংগো এই মিউজিক ভিডিওটি তৈরি করেন। এরপর মিউজিক ভিডিও তৈরির হিড়িক পড়ে যায়। তবে মান বেশ শোচনীয়।

বাংলা স্যাটেলাইট চ্যানেল চালু হবার ফলে ছোটপর্দায় ফিল্মের গানের প্রচার তুঙ্গে। এটিএন-এ প্রায় সর্বক্ষণ ফিল্মের গান দেখা যায়। আধুনিক গানের অনুষ্ঠানের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন অনেক শিল্পী আসছেন। টিভির সাথে সংগীতের সংশ্লিষ্টতার কথা বলতে গেলে সেখানকার মিউজিশিয়্যানদের নাম প্রথমেই চলে আসে। শিল্পীর পাশাপাশি তাদের বিশাল অবদান থাকা সত্ত্বেও ওরা যেন খানিকটা উপেক্ষিত। এইসব যন্ত্রীরা প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিখ্যাত। এদের মধ্যে বেহালাবাদক সুনীল চন্দ্র দাস, বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী, তবলাবাদক মিলন ভট্টাচার্য, মদন গোপাল প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া দেশের খ্যাত সেতার, সরোদ ও ক্লাসিক্যাল যন্ত্রীরা বিটিভিতে নিয়মিত অংশ নেন। গিটার, কিবোর্ডস্, ড্রামস্ সহ বিভিন্ন বিদেশী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার শুরু হবার পর থেকে হাবলু, আলী আকবর রুপু সহ অনেকেই টিভিতে বাজাচ্ছেন।

বিটিভি-সম্প্রচারের মাধ্যমে জনপ্রিয় কয়েকটা গান

  • মন শুধু মন ছুঁয়েছে ।। সোলস
  • দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা ।। দিলরুবা খান
  • আইজ পাশা খেলব রে শ্যাম ।। সেলিম চৌধুরী
  • ভ্রমর কইও গিয়া ।। দিলরুবা খান
  • ও সখিনা গেছস কি না ভুইলা আমারে ।। ফকির আলমগীর
  • তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে ।। কুমার বিশ্বজিৎ
  • আজ যে-শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে ।। রেনেসাঁ
  • যেখানেই যাও ভালো থেকো ।। রানা
  • নীল চাঁদোয়া ।। শুভ্র দেব ও সাবিনা আক্তার রুনা
  • কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে ।। সামিনা চৌধুরী
  • এই রূপালি রাতে ।। শম্পা রেজা ও তপন চৌধুরী
  • চতুর্দোলাতে চড়ে দেখো ঐ বধূ যায় ।। কুমার বিশ্বজিৎ
  • আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি ।। সুবীর নন্দী
  • আলাল ও দুলাল ।। আজম খান
  • মামুনিয়া ।। ফেরদৌস ওয়াহিদ
  • এমন একটা মা দে না ।। ফেরদৌস ওয়াহিদ
  • ওরে আমার পাগল মন ।। আর্ক
  • নাতি-খাতি বেলা গেল শুতি পারলাম না ।। চাইম
  • কালো মাইয়া কালো বইলা ।। চাইম
  • শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শুনাবো ।। রুনা লায়লা
  • ও মাঝি নাও ছাইড়া দে রে মাঝি পাল উড়াইয়া দে ।। সাবিনা ইয়াসমিন
  • আমি আগের ঠিকানায় আছি ।। মুরাদ
  • ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো ।। শঙ্কর সাঁওজাল
  • নাই টেলিফোন নাই রে পিয়ন ।। পাপিয়া সারোয়ার

… …

 

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you