শঙ্খচিলের ডানার বিস্তার এবং সমারোহ যৌথ প্রযোজনার

শঙ্খচিলের ডানার বিস্তার এবং সমারোহ যৌথ প্রযোজনার

পাগলা খাবি কি, ঝাঁঝেই মরে যাবি
পাগলা কি খাবি?
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবি …
[গান, চন্দ্রবিন্দুর]

গৌতম ঘোষের পরিচালনায় সিনেমাটা বাজারে এসেছে এই কিছুদিন হয়েছে মাত্র। বছর-তিন হয়ে গেল ম্যুভিখানা শুভমুক্তিপ্রাপ্ত। যৌথ প্রযোজনায় এইটি নির্মিত। মন্দ হয়েছে না ভালো, কতটা ভালো অথবা খারাপ কত, ওইসব বিচারসালিশ এই নিবন্ধে পূর্বনির্ধারিত বৈষয়িক সিদ্ধান্তের কারণেই হচ্ছে অগ্রাহ্য। তবে এটুকু বলেকয়ে এগোনো ভালো যে এ-পর্যন্ত খবরে প্রকাশ, এবং নানা মাধ্যমবাহিত প্রতিবেদনেও, ম্যুভিটা যাচ্ছেতাই হয়েছে। এমনিতে এই বাংলাদেশে গৌতম ঘোষের ম্যুভিনির্মাণকলা বিষয়ে গদগদ আহ্লাদের কতিপয় বিদেশমুখাপেক্ষী ইন্ডিয়াস্তাবক ছাড়া হার্ডকোর ম্যুভিখোরদের মধ্যে তেমন কাউকেই বিশেষ আগ্রহী পাওয়া যাবে না বোধহয়। নাকি যাবে? কে জানে, যাচ্ছেতাই সম্ভবের এই দেশ, হয়তো-বা পাওয়া যাইতেও পারে।

এরপরও ‘যৌথ প্রযোজনা’ ছাপ্পায় ইদানীং বাংলাদেশ-ভারত মধ্যস্থিত মৈত্রী নিয়া বাংলাদেশের সিনেব্যবসায়ীদিগের মধ্যে কেউ কেউ অতি আহ্লাদী যেমন রয়েছেন, সন্দেহসঙ্কুলও রয়েছেন বটে কেউ কেউ। বর্তমান বাংলা আহ্লাদেরই হাটবাজার হওয়ায় সন্দিহানদের স্বর অতটা আসছে না কানে এই রিগার্ডে। অ্যাজ্ অ্যা রেজাল্ট জয়েন্ট ভেঞ্চার ইন্ডিয়া-বাংলা ভাইবেরাদরি সিনেমা বানানোর হিড়িক বাড়ছে ছাড়া কমার লক্ষণ দূর ভবিষ্যতেও নজরে ঠেকছে না। ফায়দা আছে নিশ্চয় এখানে, বাংলাদেশের ফায়দা নিয়াই ভাবি ইন্ডিয়া বাদ দিয়ে অ্যাট-লিস্ট এই নিবন্ধে, এই ফায়দার জায়গাটা আমাদের অন্তত বোধগম্মিতে আসছে না এখনও।

হচ্ছেটা কী আসলে? কেন এই সিরিয়্যাল্ যূথবদ্ধতার হুজুগ হঠাৎ করে? ব্যাকরণগ্রন্থ প্রণয়নে যেমন পবিত্র সরকার মহাশয়কে আবাসিক পণ্ডিত হিশেবে আমদানি করা হয়, সেল্যুলয়েডে একটা কাহিনি বান্ধিবার বেলায় একই মাইন্ডসেট কাজ করে কি? কিংবা ব্যাপারটা কি পেশাদারিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো সমস্যা? বাংলাদেশে পেশাদার পণ্ডিত ও ম্যুভিনির্মাতা কারো উপরেই কি দেশী বিনিয়োগ লগ্নিকারকদের আস্থা নাই? কিংবা বাজেটে একটা সাশ্রয়ী সুবিধা পাওয়া যায় কি? বিপণনসুবিধা? বাজারের বৃহত্তর পরিসর পাওয়া যায় কিংবা যাবে কি ইন্ রিমোট ফিউচার? দেশী সিনেক্রু যারা, তারা কি বিশেষজ্ঞ পশ্চিমবাংলারাজ্যের কাছ থেকে টেক্নিক্যাল্ স্কিলস্ অর্জন করতে পারছেন? ঘটনাটা আসলে কোথায়? ব্যবসাটা আসলে কেমন হচ্ছে? কে দেখছে আর কোথায় দেখানো হচ্ছে? এইসব হরেদরে বেকুব ম্যুভিকদলিগুলোর ভোক্তা কারা? আর গুণেমানে এবং সংখ্যায়ই-বা কেমন তারা? যারা জনতার সনে মিতালি পাতানো জঘন্য মনে করেন জনৈক আধুনিক বাংলা কবিতাজনকের মতো, উনারা? রাষ্ট্রকর্ণধাররা? ব্যবসাজীবীরা? অ্যাওয়ার্ডগ্রিডিরা? মাসতুতো ‘পরস্পরি’/চুরিচামারি-‘চুরিপরস্পরি’-করা ভাইবোনবন্ধুরা?

হ্যাঁ, ন্যারো মনমানসিকতার প্রশ্ন হলেও উত্তরমালা না-পেলে এর থেকে উত্তরণ ত্বরানো দূরপরাহত হয়েই রয়ে যাবে; এক্স্যাক্টলি, সেইটাই। জিনিশগুলো কোনো-না-কোনো পয়েন্টে যেয়ে পেতে হবে, এহেন প্রশ্নগোছার উত্তরমালাটাকে। এই কিসিমে সিনেমাব্যবসায় আদৌ প্রোফিট কোথায়? আর্থিক ও/বা অনার্থিক কোনো-না-কোনো প্রোফিটমার্জিন্ তো উভয় কিংবা একপক্ষের পকেটে ঢুকবে, ঢুকবে না? লাভের ফিগার কত এবং ভাগবাটোয়ারা কীভাবে হচ্ছে? এতে ফায়দাটা কার বস্তুত? কোন আমড়াটা বাংলাদেশের বাজারিব্যাগে ঢুকছে? কে এইসব দিয়া সার্ভাইভ করছে, কে লাভের গুড় মটকায় তুলছে, এন্ডিয়া না বাংলাদেশ? অথবা চ্যানেলমালিকের ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ ধাঁচের আবেগিক স্লোগ্যান্ হচ্ছে শুধু? হচ্ছেটা কি হিড়িকের এই হবলঙ্গের বাজারে? কেন বছরে এত এত যৌথ উপগত? বঙ্গদেশচলচ্চিত্র উপর্যুপরি কেন এত যৌথপর্যুদস্ত? যৌথদুর্গতির হেন কুরঙ্গ ইরেডিকেইট করবার ইনিশিয়েটিভ একটু আগুয়ান হয়ে এসে কেউই কি নিবেননাকো?

গোড়ার প্রশ্ন, যৌথ সহবাস/সহাবস্থানের সমঝোতা স্মারক দলিলপত্রাদি কি সর্বসাধারণের গোচরীভূত? শর্তাবলি কি কি সেখানে? ক্যাপিট্যাল্/সিডমানিটা কার কত অঙ্ক? মুনাফার ভাগবাটোয়ারার হালহকিকত কেমনতর? মুনাফা আদৌ হচ্ছে তো? পোষাচ্ছে এক-না-আরভাবে নিশ্চয়? ‘দৃশ্যত’ হচ্ছেটা কি এবং ‘প্রকৃত প্রস্তাবে’ এই পন্থ দিয়া কোথা যাব? প্রশ্ন আরও আছে অবশ্য। গৌতমজি নিজের অনোরিয়্যম্/পরিচালনাপারিশ্রমিক, অর্থগত সম্মানী, সিনেমাটি রিলিজের আগেই ঠিকঠাক বুঝে নিয়েছেন তো? বস্তু যা-ই হোক ময়দার গোল্লা বা মাখনমণ্ড, পরিশ্রম তো হয়েছেই পয়দাইতে যেয়ে, শ্রমিকের ঘাম শুকাইবার আগে রেস্ত সমঝিয়া পাবার হক্ তার আছে বৈকি। কিন্তু অঙ্কটা জানতে মনটা আনচান করছিল। টোট্যাল্ নির্মাণব্যয় শেষ পর্যন্ত কততে যেয়ে ঠেকল? কন্ট্রিবিউশন্ কার কত? কস্ট্ শেয়ারিং বাজেটপ্ল্যানের শুভঙ্করবাবু কড়া পাহারায় রাখা হয়েছিল তো? ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো’ — হোয়াট, জানা আছে আপনার? আমরাও তো হইতে চাই ইক্টু অবগত।

টগবগানো তরুণ করিৎকর্মা বাংলাদেশী নির্মাতা যেখানে চুলবাল পাকিয়ে ফেলে একটা ফ্যুলল্যান্থ ফিচারফিল্ম বানানোর অনিদ্র খোয়াব দেখতে দেখতে, প্যাকেজ্ পুংটামিপীড়িত সোপ-অপেরা ড্রামা আর টিভিসি বানাতে বানাতে যৌবন ফিকে হয়ে গেলেও প্রযোজকের/লগ্নিকারকের পাত্তা পায় না বাছারা যেই দেশে, সেই ইতিহাসবাস্তবতা ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে এইসব সন্দিগ্ধ সপ্রশ্ন কৌতূহলীদিগেরে আশ্বস্ত করবে কে? এবং জরুরি ও সিনেজনগুরুত্বপূর্ণ কতিপয় ইশ্যু অব্যক্ত রয়েছে এখনও। সংক্ষেপে এহেন দুইয়েকটা বাতচিত দ্রুত দাগা যায় এইখানে প্যারাগ্রাফান্তরে।

যেমন, পয়লাই জিজ্ঞাসা, খালি ফিন্যানশিয়্যাল্ যৌথতাই কি বিরাজিছে/বিরাজিত হোথায়? সিনেমায় এককভাবে ফিন্যান্স করার ক্ষেত্রে এত ভয় বাংলাদেশের কবে থেকে? এন্ডিয়ার ওই বিশেষ রাজ্যের ফিন্যান্সার সিনেইনভেস্টররা পালিয়ে গেল কোথা? আর-কোনো রাজ্যে এত যৌথ মহড়া নাই কেন? ওদের দিলদরিয়ায় দয়ামায়া নাই? হৃদয়ে এবং গায়েগতরে মৈত্রীর মহা ভাব ও ভাবনাচিন্তা নাই? নিছক অর্থলগ্নিজনিত সঙ্কট সুরাহার জন্য দুই পার্টি কি এইভাবে এত ঘনঘন হচ্ছে একত্রিত? অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন কাস্টিং, যেমন ডিরেকশন্, যেমন ডিস্ট্রিবিউশন্, যেমন মার্কেটিং, যেমন প্রোমোশন্ প্রভৃতি সিনেমার নির্মাণসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বহুবিধ অজ্ঞাত/জ্ঞাত/অবজ্ঞাত সেক্টর/খাতগুলোতে কে কোথায় এবং কীভাবে কন্ট্রিবিউট করছে এইগুলো উভয় দেশগোষ্ঠীর অবহিত হওয়া আবশ্যক নয় কি? সিনেমা স্টার্টকার্ড এবং এন্ডকার্ড জুড়ে যেসব নামের তালিকা পাওয়া যায় তাতেই যদি জিজ্ঞাসা নিরসিত হতো তবে তো ম্যুভিক্রিটিক দুনিয়ায় থাকত না। বাংলায় সিনেসমালোচনা আছে কি?

দিনাবসানে এইসব যৌথ রসগোল্লা কারা চাখছে, কে ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্সেস্ ক্যাল্কুলেইট করছে, একপক্ষ অন্যপক্ষের কাছ থেকে কতটুকু ময়রাগিরি শিখতে পারছে এইসব জানা চাই। কিন্তু সর্বাগ্রে একটা ব্যাপার খোলাখুলি নিশ্চিত হওয়া আশু দরকার। ব্যাপারটা এ-ই যে, এন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সিনেকলাকুশলীদের জ্ঞানবুদ্ধি, সিনেমাদর্শন ও তাদের টেক্নিক্যাল্ স্কিল্ প্রভৃতি কি ইলিশবঞ্চিত প্রোডিউস্যরকান্ট্রি বাংলাদেশের তুলনায় ব্যাপক উঁচুতে? অ্যান্সার যদি ইয়েস্ হয়, তাইলে ঠিক আছে। অ্যান্সার যদি হয় নোপ্, নট অ্যাট অল্, তাইলে লুঙ্গির গিট্টু কষে বেঁধে কিংবা পাৎলুনের গোড়ালিটুকু গোটাইয়া আরও গুটিকয় আলাপ দরকার তোলা।

আলাপটা, তা যে-কোনো প্রসঙ্গের আলাপই হোক, ফ্যাসিলিটেইট করবে কে? মেইনস্ট্রিম্ মিডিয়াই নিশ্চয়, যে-স্ট্রিমের রিসেন্ট মেম্বার অনলাইন ওয়েবপোর্টালগুলো। অথচ ম্যুভিপ্রিমিয়ারের দিনে ঢাকাস্থ কোনো-একটা পাঁচ/তিননাক্ষত্রিক রেস্তোরাঁলাউঞ্জের আজদহা হাতলওয়ালা গাব্দাগোব্দা সোফার গদিতে টালিউডি হিরো-হিরোয়িনের সনে গাদাগাদি বসে সেল্ফি খিঁচে বেচারা অন্/অফ-লাইনার সিনেজার্নালিস্ট ফুরফুরে মেজাজে ব্যাপক কায়দা-মারানো ছবি বিভিন্ন ঢঙে আপ্ করিয়ে স্বীয় প্রতিবেদনের সতেরো পঙক্তি বিমুগ্ধতা বাজারে ছেড়ে খাল্লাস। পরে এই সিনেমা আরও কতদীর্ঘ সসাগরা বসুন্ধরা পাড়ি দিলো, কতদূর গেল, কোন আকাশ আলোকে ছাইল, কত আয়-ইনকাম্ হলো, দই খাইল কোন নেপোয় ইত্যাদি ইত্যাদি নিউজ্/প্রতিবেদনা লাপাত্তা।

নাই, ফলোআপ্ নাই, ইন্ডিয়ার সনে বাংলাদেশের গদগদ যৌথতার কোনো ফলোআপ্ কোথাও সুলভ নয়। একটা আন্দাজ আমরা যার-যার বুঝমতো করে নিয়েই নিস্তব্ধ খোশহাল রই। কিন্তু কতদিন, প্রিয়তমা? বাংলাদেশের ক্লাব-ফুটবলে, এবং ক্লাব-ক্রিকেটেও, এককালে এহেন প্রবণতা আমরা দেখেছি বিরাজ করতে যে এগারোজনের মধ্যে পাঁচজন বোঁচানাসা ভারতীয় অথবা গাছলম্বা অ্যাফ্রিক্যান্/ক্যারিবিয়্যান্ প্লেয়ার খেলত। অচিরে এইটা আল্লার রহমতে বন্ধ হয়েছে। এর ফল তো মন্দ হয় নাই নিশ্চয়। ক্রিকেটে এর ফল তো স্ব-অধীন বাংলাদেশের পক্ষেই ফলতে দেখছি।

কিন্তু ম্যুভিনির্মাণের ব্যবসায় এ কোন মুসিবতের অধ্যায় পেরোচ্ছি আমরা? স্কিল্ গেইন্ করার জন্যই যদি এহেন যৌথতা, তাহলে দুনিয়ার আর-কোনো ভূখণ্ডাংশের সনে আমাদের পার্টনার্শিপ্ নাই কেন? পশ্চিমবঙ্গের কোন পটুতাটা বাংলাদেশের নাই শুনি? ইন্ডিয়ার তামিল-তেলেগু অথবা ব্যাপক বাজারধন্য বলিউডের সনে একটা আশনাই আখেরে বাংলাদেশের কাজে এলেও আসতে পারে; কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাংলা জ্ঞানবুদ্ধি দিয়া আমরা আদৌ স্বর্ণভল্লুক লভিতে পারিব কভু? কয়টাকা খাইতেই-বা পাইব অন্তিমে?

কোলাজ

এদিককার কয়টা প্রেক্ষাকামরায়, এবং ওদিককার কয়টা প্রেক্ষাকামরায়, এই সিনেমারাজি পর্দায়িত হয় বলুন দেখি? হিসাবটা আছে কারো কাছে? এক ‘অগ্নি’ ছাড়া আর-কোনো যৌথ প্রযোজনার ম্যুভি তো চোখে পড়ার মতো চলতে দেখলাম না বাংলাদেশের টিমটিমে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে। কেন, ‘মনের মানুষ’, গৌতমজির যৌথ প্রসবযন্ত্রণার পূর্বনজির? অথবা আরও অন্তত ডজনখানেক গত দুই/দেড় বছরে? সেই হিসাব তো নিশ্চয় কাজির কিতাবে লিপিবদ্ধ, যদিও গোয়ালের সরেজমিন তদন্ত করে নাই কেউ। সহস্রাধিক প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে দেশে এখন সব সিকি-আধুলি মিলিয়ে দেড়-দুইশ’ ভবনও যদি টিকিয়া থাকে শেষ-পর্যন্ত তো শোকরগোজার করতে হয়। সিনেমার পোস্টারও অধুনা ফেসবুকপাতায় ইভেন্টপেইজ্ খুলে শেয়ার দিয়াই কিল্লাজয়।

কেউ যদি প্রশ্ন তোলে যে কেন গৌতম ঘোষের কড়া আলোর ঝকঝকে-তকতকে চোখধাঁধানো ফোটোগ্র্যাফি প্রোজেক্টের জন্য পয়সা ঢালবে বাংলাদেশ? শুধু সংস্কৃতির অভিজাত ড্রয়িংরুমে অ্যাক্সেস্ পাবো বলে? কেন গৌতম ঘোষের নাইভ আবেগের উদরাময় গিলতে হয় আমাদিগেরে? বেচারাকে একটা এসএলআর কিনে, ল্যান্সওয়ালা সাতহাতা, আজীবন সম্মাননা দিয়ে দিলেই তো হয়। ঢাকা ক্লাব আছে কেন! গৌতম ঘোষের হাউশমতো সুন্দর-সুন্দর ভিয়্যুকার্ডের আর্টফোটো ও অন্যান্য সমাজসভ্যস্পর্শী সিনসিনারিয়ো তুলিয়া যাইতে কেউ বারণ করবে কখনো? হোয়াই সিনেমা? আল্লার দুনিয়ায় আর কোনো উন্নত শিল্পকারখানা নাই উনার জন্যে? সেই ‘দেখা’ পর্যায় থেকেই ঘোষজিকে আমরা ভালো ফোটোগ্রাফারের মর্যাদায় রেখে দিয়েছি যত্নের সনে। এদ্দিন বাদে ফের তিনি স্থিরচিত্র কম্পিটিশনে কেন অবতীর্ণ হতেছেন পুনঃপুনঃ নতুন করে? এরচেয়ে, এইসব পরদেশপ্রেমী ডিরেকশনের চেয়ে, উনি অ্যাক্টিংটা করলেও তো পারেন। সত্যি, সিরিয়াস্লি অ্যাক্টিং করলেই তিনি নিজের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতেন সম্ভবত।

বলি কি, হাবিব সাহেব এবং সাগর সাহেব এবং আমরা তাদের দেশসুদ্ধ কর্মচারি মিলে এইবার সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলি না-হয়। এক হয়ে যাই সিনেমায়-সিদ্ধহস্ত ওয়েস্টবঙ্গ ও ম্যুভিবোকাহাবা বাংলাদেশ। অবশ্য গৌতম-পোসেন অলরেডি সীমানাকাঁটাতার সহাস্য বদনে কেটে ফেলেছেন, সিনেমায় এবং সংবাদ-সম্মেলনেও; অবাধে এখন আমরাও নিশ্চয় টালিউডে যেয়ে ভাঁড়ের চা খেয়ে বেশ ম্যুভিচিত্র প্রণয়ন করতে পারব। যৌথ প্রযোজনার চেয়ে ডেকচি একান্ন হয়ে গেলে অ্যাট-লিস্ট খানাখাদ্যখর্চা সাশ্রয়ের হবে এবং বড়-ডেকচির খানাখাদ্যিতে সোয়াদও হবে বেজায় বেহতর। শঙ্খচিলের ডানার বিস্তার এবং শিরীষশাখায় আলোনৃত্য স্বচক্ষে হেরিব তখন।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবার যে-কথাটা গানে ব্যক্ত, চন্দ্রবিন্দুর গানে, বর্তমানে অ্যাডনির্মাতা বাংলাদেশী ফিল্মমেইকাররা পাশরিয়া আছেন বোধহয়। বা পাশরিয়া যান নাই, কিন্তু যখনই কিছু বানাইতে নামছেন চলচ্চিত্র, অনুদানের বা নিরনুদানের, জিনিশটা না হচ্ছে ঘরের না ঘাটের। তবু লড়াইটা থাকুক। উল্টাপাল্টা কাহিনিরেখা আর ঝকঝকা ক্যামেরায় তালগাছের উপর থেকে ঘনঘন বর্ণাঢ্য পোশাকপরিহিত চরিত্রাবলির নৌকাভাসা বালুচরে ফ্যাশন প্যারেড দেখিয়া আমরা বাংলাদেশী ফিল্মের নবতরঙ্গের জন্য অপেক্ষায় থাকি।

রিপোর্টপ্রণেতা : জাহেদ আহমদ

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you