তখন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, সোশ্যাল মিডিয়া বা বাংলায় একমেবাদ্বিতীয়ম যারে ফেইসবুক নামে চিনতাম আমরা — সেই ফেইসবুকের যেখানটায় লেখা থাকত ‘হোয়াটস্ অন ইয়োর মাইন্ড’ সেখানে ‘স্ট্যাটাস আপডেট’ দিতাম বা বাংলায় (তার আগে একটা টাইম অব্দি ইংলিশ লেটারে) স্ট্যাটাস লিখতাম। গদ্যেই লিখতাম, সময়ের এবং ভাবের সংগতি অনুসারে, না-পারলে পদ্যে। সেসব স্ট্যাটাসগুলা ডাইরেক্ট অভ্র কিবোর্ডে বা ইউনিকোডে সরাসরি ওই স্ট্যাটাসবক্সেই লিখতে হতো ঝড়ো হাতে। এরই মধ্যে ফেইসবুক ‘নোটস’ সুবিধা আমদানি করলে স্ট্যাটাসগুলা আলাদা আলাদা নোটের আকারে বেশ গোছায়াগাছায়া রাখা যেত সচিত্র প্রকাশনার অবয়বে, সেই সুবিধাটাও কর্তৃপক্ষ রদ করে ফ্যালে একসময়। এইভাবে তেরো টু ষোলো সমাজমাধ্যমে লেখালেখির ব্যক্তিগত খতিয়ান-পর্চা-দাগ প্রভৃতি হিস্ট্রির আকারে বেশ মনে আছে এখনও। দুইহাজারষোলো মনে আছে, একটা ব্যক্তিগত দুঃখশুরুর বছর, একদম অনিয়মিত নোট লিখতে লিখতে এল সতেরো, অমোঘ উনতিরিশ মে, ব্যক্তিগত জীবনে, এরপর থেকে এক-বাদে-এক মর্মমুসিবতে ফেইসবুকে লেখালেখি বিরল হতে হতে ব্যাহত হয়ে যায় একসময়। সেই কয়বছরে একটা সাইটের নিত্যদিনের খিদে মেটাতে ব্যস্ত রইতে হয়। দামামা বাজায়া আসে প্যান্ডেমিক বিশ্বজুড়ে, দ্বিসহস্রবিশে, এই টাইমটায় ফেইসবুকে ফের কিছু লেখাকর্ম করবার ফুরসত তৈয়ার হয়, কিন্তু ততদিনে ফেইসবুক দফায় দফায় অ্যাল্গোরিদম বদলায়া জায়গাটাকে দেখনবান্ধব করে তুলতে থাকে, লেখনবান্ধব নয় আর, কোভিড-নাইন্টিনের ধাক্কায় ফেইসবুক হয়া যায় লাইভের লঙ্গরখানা। লাইভ, রিলস, মিমস ইত্যাদি বিচিত্র প্রকারে টেক্নোলোজিক্যাল অ্যাডভ্যান্সমেন্টগুলা আমরা উপর্যুপরি ইউজ করতে থাকি। মিডিয়ার, মানে ট্র্যাডিশন্যাল ম্যাসমিডিয়ার ফেইলিয়রের কারণে ফেইসবুকে একইসঙ্গে ব্লেইমিং, বুলিয়িং, ফ্যাক্টফাইন্ডিং প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের গুজব, প্রোপ্যাগান্ডা, প্রশাসনতোষণ, লুটপাটভজন চলতে থাকে বেইসিক্যালি লাইভ স্ট্রিমিং আর ফেইসবুকের স্ট্যাটাস আপডেইটিং স্পেইসগুলা ব্যবহারের মাধ্যমে। লেখক, কবি, কথাসাহিত্যিক, নাটকআর্টিস্ট, সিনেমাআর্টিস্ট সবাই — তৃণমূল থেকে বাঁশগাছের আগা পর্যন্ত সবাই — নিখিলবিশ্বজোড়া আলেমউলামা বাদ নাই — আওয়ামী লীগের পরিচয়ে পেতে থাকে চেয়ার, চোদন ও চৌর্যশীর্ষ। তবু এরই মধ্যে বেশকিছু লেখা, যা খাতায় বা পাতায় প্যাপিরাসে নয়, নানান সময়ে ফেইসবুকেই লিখিত হয়েছিল এই নিবন্ধকের হাতে, সেইগুলা ভাগে ভাগে যেভাবে যখনই পেরেছি স্টোর করে রেখেছি শিরোনাম অঙ্কিত স্বতন্ত্র্য সংকলনে। সেই সংকলনগুলার মধ্যে, তেরো থেকে তেইশ একদশকে, যেমন রয়েছে — ফেব্রুয়ারিশিখা, প্যাট্রিয়োটিকা, তারা, বাংলাদেশ দুইসহস্র অশেষ, অ্যাওয়ার্ড সিরিমোনির হাওয়ায়, নিজের নিবন্ধ, গদ্যগহ্বর ১, গদ্যগহ্বর ২, পিকক পোয়েটিকা, লঘুগুরু প্রভৃতি। ‘চিকন চালের চলাচল’ শীর্ষকের আন্ডারে এইখানে বেশকিছু জিনিশ অ্যান্থোলোজাইয করা যাচ্ছে যেগুলা আগে একত্র করা যায় নাই। সিরিজপ্রায় এইধারা কাব্যিপনায় একটা ব্যাপার যার কারণে আগে এইগুলার গোড়ার রিয়্যালটাইম রেফ্রেন্সগুলা চট করে রিয়্যালাইজ করা যেত, অনেক দিনের দূরে এসে এখন আর অত অনায়াস হয়তো হবে না পাঠকের পক্ষে রেফ্রেন্সগুলা কানেক্ট করা, আমার নিজেরই হয় নাই অনেক জায়গায়, তারপরও, তবু, দলিলায়নের একটা ট্রাই করা যাচ্ছে এখানে সেই সোশিয়োকমিক স্ক্রিব্লিংগুলা। — জাআ, ফেব্রুয়ারি ২০২৫
.
লিরিক, পুরানা চাল
হলো না আমার কতকিছুই তো
তোমারও হয়নি জানি
কলুর বলদ দুজনে আমরা
দিন খাই দিন আনি
এনে একফুঁয়ে ফুরিয়েও ফেলি
দিবারাতি যাই দেখে
আজদহা রাত কুটিল কলমে
হননের গান লেখে
আমরা দুজনে চিৎকারি যাই
বসন্তে বারিষায়
এই রাত্রির ইতি হোক এবে
এহেন অমানিশায়
কতকিছুই তো হয়নি তোমার
আমারও অনেক দাবি
আদায়ের পথে খেয়ে নিয়েছে
সারমেয় সদালাপী
উহাদের কাঁধে ন্যস্ত রেখে
আমাদের দিনকাল
ভেবেছি মিছাই উঠিবে সূর্য
ওষ্ঠের মতো লাল
ওষ্ঠ তোমার শুকিয়ে এসেছে
আমিও তো রতিরিক্ত
চিরযৌবনা আমরা দুজন
শোণিতে ও স্বেদে সিক্ত
হয়নি কিছুই কিন্তু কথাটা
বলে ফেলি এইবার
চেয়েছি আমরা মানুষেরই হোক
ত্রিবিশ্বসংসার
যুগে যুগে এসে আমরা দুজনে
চেয়েছি কেবল এ-ই
আকাশবিহারী বিধাতাকে নয়
মন দেবো মাটিকেই
দুজনা আমরা অচল আধুলি
হয়তো পুরানা চাল
ভাতে ও হাভাতে বাড়বোই দেখো
আমরা আগামীকাল।।
২০১৩
.
বুড়ো মুর্গার গান
আইসো সখারা
জোর তর্ক চালাই
এই এফবিপেজে
নেই নিষেধ বালাই
কেউ কইবে না এসে
এ কী করছ তুমি
খালি বিটলামি দিয়া
ভরে তুলছ জমি
যদি করতে আবাদ
আহা ফলতো সোনা
শত ফলে ও ফুলে
হতো নীড় রচনা
ছিল রামপ্রসাদে
ছিল লালনে দেদার
যেই জীবনকুসুম
সবই গিয়েছে বেকার
আর রবীন্দ্রনাথ
যদি মিথ্যেই হয়
তবে প্রেমের দেবতা
লাজে মুখটি লুকোয়
বেবাকে গরলে দ্যাখো
রয়েছে মজিয়া
ধান্দার দাস সবে
বান্দা ভজিয়া
বান্দা ভজিয়া যায়
আন্ধাকানারা
নিজেতে প্রবেশি কেউ
খোঁজে শুকতারা
কোথা বান্দা খাঁটি
কোথা পাই তার খোঁজ
দ্যাখো ওই তো জমেছে
রুটি-হালুয়ার ভোজ
হোথা মিলিব সবে
হোথা আ-মরি জীবন
হোথা খল ও চতুর
দুয়ে দোস্তি ভীষণ
তুমি কেন বসে একা
যাও হোথা গানাবাজানায়
যেথা জমেছে বেদম মেলা
তিন সেয়ানায়
কলাপাতা হাতে এসো
বসি গিয়া হোথা
বিবেক জাগিলে তাহে
কষে মারি জুতা
আইসো বাছারা
মাতি ব্যাকুল জিকিরে
মুই ভালো তুই বদ
ফিৎনা ফিকিরে
বহে চলে নালা-নদী
ফিৎনাফেনায়
এদিকে পরান ফাটে
পানিতৃষ্ণায়
কাহার জন্ম তাহা
নির্ণয় ন জানি
ফড়িয়া বেনেরা পায়
যত যজমানি
পানিতে নেমেছি সখা
কুমিরে কী ভয়
লভেছি মানবজন্ম
ফাইজলামি নয়
এহেন ফাজিল ঋতু
কুতর্কের চাষ
বাঁজা আর আঁটকুড়ায়
দম্ভ প্রকাশ
কোন বৃক্ষ উৎকৃষ্ট
কোন বৃক্ষ হীন
এই নিয়া দাঙ্গায়
দুনিয়া বিলীন
এ বলে আমড়াগাছ
ও বলে কচু
দুজনেই ভুষিমাল
দুজনেই উঁচু
ভঞ্জিবে এ বিরোধ
হেন সজ্জন
করে যেতে চাই তার
মুখদর্শন
জীবন ফুরায়া যায়
বুড়া মুর্গার
নাই তার হাউশের
সীমা ও শুমার।।
২০১৩
.
টুমরো নেভার ডাইজ : জেমস বন্ড রাইম
পুঁটিমাছ ইজ বাউন্ড টু ডাই
বলিলেন মহাজ্ঞানী তিনি
আমার বলার কিছু নাই
যেহেতু কথাটা খাঁটি গিনি
আমার বলার কিছু ছিল না
না গো, বলার কিছু নাই
হতেম যদি বরাহের পুত্রবধূ খনা
সপাটে দিতেম কয়ে সত্যি কথাটাই
তাছাড়া তাতে একরত্তি মিথ্যেও তো নাই
পুঁটিমাছ ইজ বাউন্ড টু ডাই
কিন্তু ইতিহাসে তো পুঁটিমাছ আছে
আছে এদের বজ্জাতি বীর্যশৌর্যের গাথা
তা যতই মনে হোক মিথ্যে তোমার কাছে—
সেইকালে চ্যানেল কৈ? কৈ দৈনিকপাতা?
আহা, আমি বলি কী-না-কী মাগার
আমার সারেঙ্গি ভনে এলোপাথাড়ি সুর
কত গুম দ্রিমিদ্রিমি-দ্রুমাদ্রুম কত্ত গণপ্রহার
ছাই হয়ে গিয়েও তবু মরে না শত্তুর!
এবার কাজের কথাটা ফেলি বলে
পুঁটিমাছ মরুকগে মজা-পুকুরের জলে
সেক্ষণে সেমিনার ফাঁদিব সবে মিলি
পুঁটিমাছ-প্রকল্প, ওহো, ডোন্ট বি সিলি!
যে-কথাটা বলিনি কিন্তু বলা দরকার
পুরনো বহুলাবৃত্ত কথা পুনপুনর্বার
লুপ্ত হয়েছে ম্যালাদিন ডাইনোসর অতিকায়
তেলাপোকা আজও অবাক রয়েছে দুনিয়ায়!
মোদ্দা কথাটা তাহলে এ-ই—
বোয়ালের পুঁটিঘৃণা থাকবেই!
২০১৩
.
রাজনীতিদিনগুলিতে প্রেম
মাইরি বলছি কিন্তু তুমি আমলেই নিচ্ছ না
আমারে ইগ্নোরিয়া চালাতেছ
অযথার আলোচনা
আগুনের কিরা আমার কথাটা শোনো
অপদেবতায় পুজো দিয়ে তুমি
নিঃশেষিছ সবটুকু ধুপধুনো
বিদ্যা ছুঁয়েও তোমায় বুঝাতে নারি
যার-তার সনে যত্রতত্র
তব হোলিখেলা ভারি
দিব্যি দিচ্ছি পুরাণের প্রিয়তমা
চাতুরি শিখিনি একদম
প্রয়োগে ব্যর্থ উপমা
সয়্যার টু গড ড্যামিট ডিয়ার
তালপাতা-সেনাবাহিনীতে মুই
নহিকো মাস্কেটিয়ার
দোহাই দিবস ও রজনির
প্রতিমুহূর্ত লড়াই করছি
বিরুদ্ধে দুর্গতির
খোদার কসম জান
তোমাকে ভেবেছি তিনশতাব্দী
জঙ্গে পরিত্রাণ
মাইরি বলছি হয়তোবা তুমি অন্যের মনোনীত
গর্ভ হইতে গোর তক আমি
রাজনীতিলাঞ্ছিত।।
২০১৪
.
গোডো কেইম অ্যান্ড স্পেইক লাস্ট নাইট
Wishes are the memories coming from our future. — Rainer Maria Rilke
কোথায় ফিউচার — দ্যাখা তো নাহি যায়
এইখানে
কেউ কি দেখে তারে — এহেন বরিষায়
বেতাল রিপাব্লিকের রাজধানে?
অথবা হেথাকার বেবাক হলদেটে
মফস্বল জুড়ে হিংসাগান
সবুজ সবকিছু অন্ধকার স্লেটে
দেখা-না-যায়-হেন উটকো ম্লান
এ ওরে কিল দ্যায় কিংবা চাপাটি-চড়
চোয়ালে আর মাথায় বিকট কোপ
দৈবদুর্বিপাকে সমুদ্যত ঝড়
ফণা নামায়া খোঁজে শ্যাওড়াঝোপ
প্রকৃতি ম্রিয়মাণ ধরণী দ্বিধানত
সকলে সমস্বরে মাগিছে ত্রাণ
সকলে একজোট পীড়িত শত শত
ঝর্ণাধারে মর্ষকামীর স্নান
রক্ত পান করে সেবিছে ঈশ্বর
সর্বশ্রেষ্ঠ যত ধর্মদল
ওদিকে উজবুক যুক্তিবিদ্যাধর
অস্তি-নাস্তি নিয়া বাঁধায় গোল
জনান্তিকে দ্যাখো অট্টহাসিরোল
হাসিছে পরাক্রমী প্রতিপালক
উর্ধ্ব গগনপটে বাজিছে ঢাক-মাদল
নিম্নে উতলা তাঁর বাঁধা পাঠক
ওরে ও উজবুক রে কচিকাঁচা পাঁঠা
আমারই পিছে তুই বিলক্ষণ
তরফদারি করে কাটালি বাপ-জ্যাঠা
আমারই ভোটার তুই জীবনপণ
এ বলে আমি নাই ও বলে আমি আছি
আমার পোয়াবারো দুইদিকেই
আমারে ঘিরেই করে উভয়ে নাচানাচি
মরণে আ মরি দুশ্চিন্তে নেই
সৃজনী জীবনের না-পেল খোঁজ এরা
চাপাতিহিংস্র দুই পিগের ছাও
আস্থাভোট দ্যায় মত্ত মহিষেরা
নেতিনিক্তিতেও হোথা আমারই দাঁও
অথচ আমারে তো বাঁচায়া রাখা যেত
নিখিল নীরবতার নদীতীরে
গুম করাটা আরও সহজ অভিপ্রেত
সৃজনকলরোলের ধ্যানী ভিড়ে
দ্যাখ-না চাহিয়া এঁড়ে ও বকনা
রাষ্ট্রে দোঁহে তোরা ফালতু ফেউ
ভোটের গৃহে যেয়ে দ্যাখ-না ওরে মনা
ভোটটি দিয়ে গেছে অন্য কেউ
আমারে মেরে তুই কী ফল পাবি বল্
আমি তো ফাটা ডিম দিসনে তা’
আমারে বাঁচায়াও অহেতু ভোম্বল
পাবিনে পিঁপড়াভাত বা পারমিতা
তারচে দ্যাখ তুই একটিবার ওরে
যেটুকু হক্ তোর বুঝেনে আজ
দিসনে আমারেও ঢুকতে তোর ঘরে
আমার নামগানেও নাহিকো কাজ
তাইলে হেথা আয় দুইটি পক্ষ মিলে
দেখি কী লিখেছে সুধীন-দ্র দত্ত
প্রত্যুপকারের স্বার্থ সমুজিলে
বৃথাই অস্ট্রিচের বীরত্ব।।
২০১৪
.
লাইফ অফ অ্যা লিলিপুটিয়্যান
কয়েকটি দিন মন্দ গেল
কয়েকটি দিন ভালো
কয়েকটি দিন কনকচাঁপায়
কয়েকটি দিন কালো
কয়েকটি দিন তরুলতায়
তিন-চারটে ফুলে
কয়েকটি দিন রুদ্ধকপাট
হৃদিবিতান খুলে
কয়েকটি দিন কবন্ধ ভূত
কল্কিরঙিন আঁখি
কয়েকটি দিন সন্ধেতারা
বিষণ্ণ জোনাকি
কয়েকটি দিন কুতুবমিনার
ভীষণ বরাতজোর
কয়েকটি দিন ব্যাল্কোনিগ্রিল
চাঁদের রাতদুপুর
কয়েকটি দিন কোজাগরি আর
কয়েকটি দিন কুফা
কয়েকটি দিন সলতে-পাকানো
করুণ আপোসরফা
কয়েকটি দিন ধনিয়াপাতায়
কয়েকটি দিন ধানে
কয়েকটি দিন মধু ও মদে
কয়েকটি দিন গানে
কয়েকটি দিন হিংসাচালিত
কয়েকটি দিন হাসির
কয়েকটি দিন কলহকূটিল
কয়েকটি দিন বাঁশির
কয়েকটি দিন রাজনৈতিক
মৃত্যুবাস্তবতা
কয়েকটি দিন জীবিকানুগত
বাধ্যবাধকতা
কয়েকটি দিন ধর্মন্যুব্জ
ধন্য দৈত্যদানো
কয়েকটি দিন গুমট গুহায়
বাতাস বহানো
কয়েকটি দিন নকলনবিশি
কয়েকটি দিন খাঁটি
কয়েকটি দিন নদীবিধৌতা
বাকিটা আঁধার মাটি।।
২০১৪
.
রাইম অফ দি অ্যানশিয়েন্ট উইন্টার
ছিল শিমের মাচান
ছিল শিশিরের সর
ছিল দুধের মতন
দূরে কুয়াশাঝালর
ছিল ভোরের বেলায়
লেপ-তোষকের ওম
ছিল সন্ধ্যাবাগানে
শত তারার কুসুম
ছিল খড় জড়ো করে
এনে উঠোনকোণে
ছিল আগুন পোহানো
পোড়া-আলুর সনে
ছিল ঘন যামিনির
বনমধ্যিখানে
শোনা শেয়ালের হাঁক
মাঝরাতের শিথানে
ছিল গ্রামবেষ্টিত
সোঁদা ধুলোর প্রণয়
সাঁঝে হেঁশেলের ধোঁয়া
যেন শনির বলয়
ছিল জামে-মসজিদ
ছিল পুকুরের ঘাট
ছিল শজিনার ঝোপ
ছিল কবরের মাঠ
ছিল বিচালি-বিছানো
ঘরে গাইগোরুগুলো
ছিল বাদুড়ের ডাক
ছিল পাঁচিলে হুলো
ছিল চনমনা রোদ
ছিল কমলার খোসা
ছিল রোদে পিঠ-সেঁকা
ছিল হাওয়া সহসা
ছিল কান পাতি’ শোনা
গান পালা-মালজোড়া
ছিল শেষ-রজনিতে
ভীরু দরোজার কড়া
ছিল পিঠছাল-তোলা
জালিবেত্রপ্রহার
ছিল বেগতিক বুঝে
হওয়া পগারের পার
ছিল কত-না-কিছুই
ছিল দশাসই শীত
আজও সুপর্ণা আছে
নেই শীতসম্বিৎ।।
২০১৪
.
নোটন নোটন নভেম্বরগুলো
তোমাকে শুনছি; হিমের তিমির ফুঁড়ে
ফুলের মতন মৃদু ফুটিতেছ তুমি
নিভু জ্যোছনার নভেম্বরনিশি জুড়ে
দেউটিগুলোও উড়িছে গগন চুমি
নত নভতলে দ্যাখো অম্বর ভরিয়া
রহিয়া রহিয়া গান গায় স্মৃতিকীট
কলার মোচার শরীরে জোনাকিহিয়া
খানিক জিরায়া যায় উড়ি’ মিটিমিট
ঘুরিয়া ঘুরিয়া অনুসন্ধানরত
কচুরিঝোপের গোড়ায় ব্যাঙাচিগুলো
তোমার আমার মতন অসম্মত
উহারাও দেখি জীবিকাধ্বস্ত নুলো
খঞ্জ পাখিটি বেলাশেষে বাড়ি ফিরে
রেখেছে হৃদয় পাখিনীর কোল ঘেঁষে
আশশ্যাওড়ায় ঘেরা পুকুরের তীরে
হেরিছে পেঁচা চাঁদটিরে অনিমেষে
বেদনার মতো সমাহিত নক্ষত্র
শক্তির শ্লোকে যেমতি রয়েছে অবনী
শিরোনামহীন তুমিও রয়েছ অত্র
শেয়ালের স্বরে অপরূপায়িত রজনি।।
২০১৪
.
জীবনযান
গাহি বিষণ্নতার গান
জীবনখাতায় বিষাদ যদিও নহে তেন মহীয়ান
নহে প্রিয় নহে এ-জীবন শুধু গগনভরা আনন্দ অম্লান
গাহি বিষণ্নতার গান
কুমার-কামার-তাঁতি-তস্করে একপুকুরেই সারিছে স্নেহের স্নান
নহে নহে প্রিয় এ-ভুবন শুধুই বিদ্বেষে বলীয়ান
গাহি বিষণ্নতার গান
অটম স্যোন্যাটা বাজিছে দ্যাখো দূরে ও হৃদয়ে গাছে-জলে একতান
তোমাকে চেয়েছি এটুকু সত্য এটুকুতে গরীয়ান
গাহি বিষণ্নতার গান
সংগতিসীমিত ছোট এ-তরণী, জীবন যদিও অগাধ এবং সমুদ্র অফুরান।।
২০১৪
.
রেইনি রিট্রিট
বৃষ্টি এল অস্তরাতের দিকে
বৃষ্টি এল যখন রাত্রিশেষ
বৃষ্টি এল ভোরের আলোয় ফিকে
অন্ধকারে কেবলই বৃষ্টিরেশ
বৃষ্টি এল বনভূমি ঝমঝমে
বৃষ্টি এল জবাফুলগাছটিতে
বৃষ্টি এল যেনবা গানের সমে
নেমেছে স্বস্তি দহনের বিপরীতে
বৃষ্টি এল ঘুমের ভিতর ডম্বরুশব্দে
বৃষ্টি এল উজাগর নিশি হেমবর্ণাদৃত
বৃষ্টি এল ঘনবুনটের গণহননের অব্দে
প্যালেস্টাইনি শিশুর হন্তা বৃষ্টিতে পরাজিত
বৃষ্টি এল বিহারি-মারার দেশে
বৃষ্টি এল রোহিঙ্গাবাহী নৌকায়
বৃষ্টি এল পারাপারঘাট ঘেঁষে
অপার বসিয়া থাকার প্রতীক্ষায়
বৃষ্টি এল সামরিক ঘাঁটিঘরে
বৃষ্টি এল জনগণময়দানে
বৃষ্টি এল ম্যুভিচিত্রিত মৃদুমোশনের স্বরে
প্রভাতপাখির তোপধ্বনি-মার্চগানে
বৃষ্টি এসে নেচে-গেয়ে ন্যাজ নেড়ে
গেল উড়ে শেষে এই ছড়াটা পেড়ে।।
২০১৪
.
প্যান্ডেমিক লাইভ
লাইভে দেখছি মৃত্যু
লাইভে দেখছি লাইফ
লাইভে দেখছি জিসাস ক্রাইস্ট
লর্ড রবার্ট ক্লাইভ।
লাইভে দেখছি যুক্তি এবং
আবেগের গমগম
লাইভে দেখছি ইন্টেলিজেন্স
লাইভে অ্যাক্টিভিজম।
লাইভে দেখছি লড়কে লেঙ্গে
ভুবন বিন্ধ্যাচল
লাইভে দেখছি বিরোধীরে নিয়া
গালিগালাজের ট্রল।
লাইভেই জিন্দেগির জজবা
লাইফে কিন্তু নাই
লাইভেই সীমাবদ্ধ লড়াই
লাইফ থেকে পলাই।।
লাইভে দেখছি তোমায়
যাচ্ছ রেস্তোরাঁয়
লাইভে সপরিবার
বঙ্গোপদরিয়ায়।
লাইভে দেখছি তোমার সঙ্গে
তোমার প্রাক্তন
লাইভেই বিছানায়
ইয়োকো ও জন লেনন।
লাইভে উঠছ লাইভে বসছ
লাইভে মারছ ল্যাং
ফুল-বেলপাতা-ঘনকাসুন্দি
শঙ্খ ড্যাডাং-ড্যাং।
লাইভে তোমার সামনে
নেভার অন মাই নি
কিন্তু তোমায় দিতে চেয়েছিনু
বসন্তকাহিনি।।
লাইভে দেখছি তুমি
নৃত্যচণ্ডালিকা
আকাশলীনা লাইভে এখনও
রক্তের প্রবাহিকা।
লাইভেই ল্যভ লাইভেই ল্যস
লাইভে লেগপ্যুলিং
লাইভে তোমার বাগদত্তা
হাতে ওয়েডিং রিং।
লাইভে দেখছি মিথ্যা
শ্বাসবায়ু সাবলীল
লাইভে জ্যান্ত করোটির খুলি
ইগল-শকুনি-চিল।
লাইভে দেখছি হিন্দু এবং
মুসলমানের হিংসা
লাইভে এখনও রক্তের হোলি
বিপন্ন একবিংশা।।
লাইভে দেখছি দিবসরাত্র
দৈত্যদানোর শাসন
লাইভে দেখছি বিকল বুদ্ধ
অজন্মা জাগরণ।
লাইভে দেখেছি অনেক তোমায়
লাইফে দেখতে চাই
দিন হতে দিন আসিছে কঠিন
করিমের গান গাই।।
২০২০
- ‘সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ’ : পড়ার পিপাসা - February 27, 2025
- প্রতুল স্মরণ - February 23, 2025
- বাত্তির রাইত - February 15, 2025
COMMENTS