গোটাকয় গান :: মাইকেল জ্যাকসন

গোটাকয় গান :: মাইকেল জ্যাকসন

অ্যালিয়েনের তিনটা গান শোনা/দেখা/পাঠের আগে একটু ভূমিকা টানা যাক। দরকার নাই, কিন্তু ভূমিকা ব্যাপারটার দরকার-অদরকারের বাইরে একটা ডেকোর‍্যাশন্যাল রোলও রয়েছে স্বীকার্য, বিশেষভাবে এমজে সম্পর্কে অজ্ঞ কোনো মর্ত্যলোকবাসিন্দা আমাদের জ্ঞাত পরিধিসীমায় পাওয়া যাবে বলিয়া মনে হয় না। কাজেই এইটা একটা ডেকোর‍্যাশন্যাল প্রিফেইস বৈ কিছু নয়। অ্যালিয়েন ফ্রম দ্য মার্স মাইকেল জ্যাকসন সম্পর্কে একেবারেই নিরান্দাজ কোনো মর্ত্য/অমর্ত্যবাসী যদি পেয়েই যাওয়া যায় দৈবাৎ, তাকে/তাদিগেরে গ্যুগলরোডে ভ্যেইকল হাঁকাবার লাগি বিনীত অনুরোধ করা যাবে। এমজে শীর্ষক ফলকলাগানো সহস্র লেইন-বাইলেইন-অ্যাভিন্যু রয়েছে এই নৃত্যবাদ্যিবিধৌত দুনিয়ার সর্বদেশে সর্বভাষায় সর্বতথ্যপত্রপত্রিকায়।

নিজেরই একটা উক্তিবাহিত কথা মাইকেল জ্যাকসনকে অ্যালিয়েন ভাবতে প্ররোচিত করেছে আপনারে, এমন নয়। মাইকেলের গানের সাউন্ড শুনে, স্টেজম্যাজিক দেখে, এমটিভি কি ভিসিয়ারে এমজে মিউজিক ভিডিয়ো দেখে, ড্যান্স দেখে, এবং সর্বোপরি কিং অফ প্যপ্ এমজের ম্যুনওয়াক্ দেখে অ্যালিয়েন শব্দটা আপনার মাথায় ধাম করে আসবেই আসবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চেইঞ্জিং অ্যাপিয়্যার‍্যান্স তথা মাইকেলের গাত্রবর্ণ থেকে শুরু করে চেহারা আমূল পাল্টে ফেলা। সার্জারির মাধ্যমে এইভাবে ন্যাচার‍্যাল অ্যাপিয়্যার‍্যান্স পুরা পাল্টে ফেলার ইনিশিয়েটিভ পাব্লিক ফিগার বা সেলেবদের মধ্যে এমজের আগে-পরে কেউ অদ্যাবধি নিয়েছেন জানা যায় না। নানাবিধ অস্ত্রোপচার দিয়া স্টারবানানো-শোবিজনেস ইন্ডাস্ট্রির কুশিলবেরা শারীরিক সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নিয়া থাকেন আজকাল আকছার। মাইকেলের খোমাপাল্টানো অবিকল ওই জিনিশ নয়। এত সরলভাবে এমজে-অ্যাপিয়্যার‍্যান্সের চেইঞ্জ বিষয়টি ইন্টার্প্রেট করা যাবে না। ফায়দা পাওয়া যাবে যদি আমরা কালচারাল আইডেন্টিটি ডিকন্সট্রাক্ট করার একটা এক্সাম্পল হিশেবে এমজের চেহারাচেইঞ্জের ব্যাপারটাকে দেখি। ডিনাই করতে দেখা যায় বান্দরের বংশপরম্পরাজাত সমস্ত রঙঢঙা। শাদা নয়, বাদামী নয়, কালা নয়, পৃথিবীর কোনো রঙমাস্তানি নয়, অ্যালিয়েনের রঙ, অ্যালিয়েনই।

বিস্তারিত বকবক না-করে একদৌড়ে ব্যাপারটা হচ্ছে এ-ই যে, এমজে একেবারে ছেলেবেলা থেকেই টিভিসেলেব্রেটি। ছয় বছর বয়সেই নিজেদের পারিবারিক ব্যান্ড ‘জ্যাকসন ফাইভ’-এর স্টেজথ্রব পার্ফোর্মার। পুঁচকে এমজের তাকলাগানো শরীরী মুদ্রার নৃত্যগীতিকা আজকের প্রযুক্তিকৃপায় ইউটিউবে বা নানাবিধ আর্কাইভে দেখতে পাওয়া যায়। কাজেই নিজের শাদা ফ্যানদের মধ্যে ক্রেইজ্ তৈয়ার করার গরজে এমজে চেহারা পাল্টায়েছেন, অথবা স্ববর্ণের গোত্রসদস্যদের গাত্রদাহ ঘটাতে, ক্লেশকর ওই সার্জারির ভিতর দিয়া পার হয়েছেন বছরের পর বছর শুধু শস্তা পাব্লিক পটানোর মোহে, এমনটা মাইকেলের শত্তুরও বলবে না আশা করি। নিশ্চয় আরও গূঢ় কোনো অভিপ্রায় থেকেই নিজের বর্ণবদল, নিজেকে নবায়নের হেন প্রক্রিয়া মাইকেলের। এবং অ্যামেরিক্যান এই সিঙ্গার, স্যংরাইটার, রেকর্ড-প্রোডিউস্যর, ড্যান্সার, অ্যাক্টর, ফিল্যানথ্রোপিস্ট মাইকেল জোসেফ জ্যাকসনের আজীবনের গানের লিরিকগুলো মনোযোগে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে ব্ল্যাক-হোয়াইট বাইনারি বৈপরীত্যের দুনিয়াজোড়া সাংস্কৃতিকতায় এমজেরচনা আগাগোড়া ভাবিত।

অপরূপা কালো রঙধারক বংশোদ্ভূত জো জ্যাকসন ও ক্যাথ্রিন জ্যাকসনের ঔরসে-গর্ভে এমজে ১৯৫৮ সনের ২৯ অগাস্ট জন্ম নেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায় এমজের জন্মমাটি। তিনবোন ও পাঁচভাইয়ের সঙ্গে এমজে বেড়ে উঠেছেন স্টেজে গেয়ে-নেচে ছেলেবেলা থেকেই, ইন-টোট্যাল দশ ভাইবোনের বিশালায়ত মজুর পরিবারে, সিব্লিংসের মধ্যে দুইজন শৈশবেই বিদেহী। মা বাজাইতেন পিয়ানো ও ক্ল্যারিনেট, বাবা স্থানীয় একটা ব্যান্ডের সঙ্গে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে গিটার। বাবা-মা দুইজনেই স্টিলকারখানায় কাজ করতেন দিনমজুর হিশেবে। বেত্রাঘাতে ছেলেদের শৃঙ্খলা জারি রাখতেন বাবা রিহার্সালের সময়। সাংঘাতিক কড়া মাইকেলের বাবাই ছিলেন তাদের ট্রেইনার, ইন্সট্র্যাক্টার ও প্রথম সংগীতগুরু। মাইকেল ছাড়াও প্যপদুনিয়ায় পরিণত ও পরবর্তী জীবনে তার সহোদরা জ্যানেট জ্যাকসন তারকাখ্যাতি পেয়েছেন।

অতএব ভক্তদের মধ্যে বেয়াড়া চাঞ্চল্য ও শস্তা আন্দোলনের জন্য মাইকেল তার ক্যারিয়ারে কিছু করে থাকবেন ব্যাপারটা বিশ্বাস হয় না। স্টার্ডম ব্যাপারটা ডাইজেস্ট করেই তিনি শিশু থেকে অ্যাডাল্ট বয়সে এসেছেন। হঠাৎ-পাওয়া খ্যাতি জিনিশটায় মাইকেলকে ব্যতিব্যস্ত হতে হয়নি। কিন্তু মোস্ট সাক্সেসফ্যুল এন্টার্টেইনার হবার পরে সেইটার একটা ধাক্কা নিশ্চয় থাকে। এমজেরও ছিল না তা নয়। চাইল্ড-অ্যাবিউজ্ ইত্যাদি অভিযোগ শক্তভাবে একাধিকবার উঠেছে তার বিরুদ্ধে, এক্সপেন্সিভ নিষ্পত্তিও হয়েছে; সেসবের ব্যাপারে শেষমেশ মিডিয়াব্যবসার ডামাডোলে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং সুস্থির কিছু বুঝবার মওকা মেলে না। সার্জারির ব্যাপারেও তেমনি; কি কারণে, কেন, তেমন সুস্থির জানা যায় না। আত্মজীবনীতে অবশ্য নিজের চেহারা নিয়া তার প্রারম্ভবয়স থেকেই বিতৃষ্ণার কথা জানিয়েছেন। ফাইন্যালি মাইকেলের পরিবর্তিত অদ্ভুতুড়ে চেহারায় স্টেজে নৃত্যবিভোর তাকে এক অন্যজাগতিক মায়াবী জীব বলেই মনে হয়েছে বারবার আমাদের কাছে।

এখানকার তিনটা গানের মধ্যে প্রথম দুইটা — ‘বিট ইট’ এবং ‘বিলি জিন’ — মাইকেলের কলমে এককভাবে লেখা। গানদ্বয় নেয়া হয়েছে ১৯৮২-রিলিজড বেস্টসেলিং অ্যালবাম ‘থ্রিলার’ থেকে। শেষেরটা ‘মিউজিক অ্যান্ড মি’ অ্যালবামের গান। এইটার স্যংরাইটার অবশ্য অন্য। সব মিলিয়ে এমজের স্টুডিয়োরেকর্ডেড অ্যালবামসংখ্যা প্রায় তেরো। তন্মধ্যে ‘থ্রিলার’ ছাড়াও ‘হিস্টোরি : পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার : ব্যুক ওয়ান’, ‘ব্লাড অন দ্য ড্যান্সফ্লোর’, ‘ব্যাড’, ‘ইনভিন্সিব্যল্’ প্রভৃতি শীর্ষক অ্যালবাম ভুবনজোড়া ভাঙাচোরা মানুষেরে তাতিয়ে-মাতিয়ে রেখেছে নাচে-গানে এবং রুখে দাঁড়াবার এক বিশেষ জজবায়।

এই তিন গানের প্রথমটা বাংলাদেশে প্রায় সকলেরই পরিচিত। ‘বিট ইট’ গানটা সাংঘাতিক জনপ্রিয় হয়েছিল এর মিউজিক ভিডিয়োর মাধ্যমে। এই গানটার মধ্যে, অ্যাট-লিস্ট লিরিকে, রেইসিস্ট দ্বন্দ্ব মিউজিকের থ্রুতে নিরসনের একটা আলাপ প্রস্তাবিত হতে দেখা যায়। ভিডিয়োতে যদিও দুই বিবদমান স্ট্রিটগ্যাঙের দ্বন্দ্ব ও হ্যান্ডশেইক দিয়া কারবার সামলানো হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী থেকে শুরু করে মফস্বল শহরে সর্বত্র, বিয়াশাদিতে গায়েহলুদে জন্মদিনে, এই গানের বিট ও ড্যান্সস্টেপ অবলম্বনে ‘ব্রেইক ড্যান্স’ নামে একটা ব্যাপার গড়ে উঠেছিল এবং তরুণ-ছোকরাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়ও হয়েছিল।

‘বিলি জিন’ গানটা নিয়া নানা জল্পনা ছিল তখন। কে এই বিলি জিন? সম্ভবত এমজের উন্মাদিনী কোনো ভক্তকে উপজীব্য করেই লিরিক্স। যদিও পরে এক-পর্যায়ে এমজে বলেছেন,

“There never was a real Billie Jean. The girl in the song is a composite of people my brothers have been plagued with over the years. I could never understand how these girls could say they were carrying someone’s child when it wasn’t true.”

অটোবায়োগ্র্যাফি ‘ম্যুনওয়াক’-এ এই ডিসক্লোজার পাওয়া যায়। কিংবা আরেক জায়গায়, একটা সাক্ষাৎকারে, এমজে বলছেন :

“Billie Jean is kind of anonymous. It represents a lot of girls. They used to call them groupies in the ’60s … They would hang around backstage doors, and any band that would come to town they would have a relationship with, and I think I wrote this out of experience with my brothers when I was little. There were a lot of Billie Jeans out there. Every girl claimed that their son was related to one of my brothers.”

অ্যানিওয়ে। এই গানেরই ভিডিয়োতে সেই চন্দ্রহন্টন/ম্যুনওয়াকের স্টেপিংস্ দেখতে পাই আমরা, যা কালক্রমে এমজেড্যান্সের সিগ্নেচার মুদ্রায় পরিণত হয়। সেই বিরাশি সন থেকেই মায়াবী এই অ্যালিয়েনের আশ্চর্য ম্যাজিকে মাতোয়ারা হানাহানিদীর্ণ দুনিয়ার দুঃখী মানুষেরা। তারপর অসংখ্যবার মঞ্চে-টেলিভিশ্যুয়্যালে এই তিলিসমাতি দেখেছি আমরা।

বাংলায় ভাষান্তরকালে, বলা বাহুল্য, একেকটা লাইন/পঙক্তি হুবহু অর্থানুসরণ করা হয়েছে এমন কদাচিৎ। বল্গাহারা স্বাধীনতাই নেয়া হয়ে গিয়েছে হয়তো। শুধু পঙক্তিধৃত বিশেষ একটা ধক ধরবার দিকেই তর্জমাকারের মতলব নিবদ্ধ ছিল, যে-কারণে “লড়ে যা পাগলা ঘাড় বেঁকাইয়া শুরু থেকে শেষতক
/ মুখে ফেনা তুলে লড়ে যা যেমন লড়াকু বাংলা রক্” লাইনগুলো পয়দা হয়েছে। কেবল অন্ত্যমিলের লোভেই নয়, একটু অন্যতর অভিপ্রায়ও ক্রিয়াশীল ছিল এহেন কাণ্ডে। প্রত্যেকটা গানের শীর্ষনাম মূলেই রইল, যদি মিলিয়ে পড়ে দেখতে চান কেউ।

তবে, যেইটা জানানো জরুরি, এমজের গান কি পড়ার জন্য পয়দা হয়েছে দুনিয়ায়? নাকি শুধুই আনন্দে-বেদনায় শোনার জন্য? কোনোটাই নয়। এমজের গান থেকে আপনি পারবেন না নাচ আলাদা করে নিতে। আপনি কেন, দুনিয়ার সমস্ত পণ্ডিত পানিতে পড়বেন মাইকেল জ্যাকসনের গান থেকে ড্যান্সস্টেপিংস্ আলাদা করে নেবার প্রশ্নে। এই গান বিশেষ এক গতির, বিশেষ এক ধকের, বিশেষ এক জজবাতিয়ার, বিশেষ এক উজ্জীবনের গান। অবশ্য বাংলা কালচারাল কায়দায় নিশ্চয় আপনারা পারবেন এমজে-রিবিউকিং তৎপরতা চালাতে, যেমন বাংলা সিনেমায় সেই এইটিজেই এমজেকে খামাখা গালিগালাজ করে প্লেব্যাকে সৈয়দ আব্দুল হাদী গাইছেন, “আউল-বাউল লালনের দেশে / মাইকেল জ্যাকসন আইল রে / সবার মাথা খাইল রে / আমার প্রাণের সারিন্দা কান্দে রে / আমার সাধের দোতারা কান্দে রে” … ইত্যাদি।

ইন্টার্ভিয়্যুতে এমজে বলছেন,

“Why not just tell people I’m an alien from Mars? Tell them I eat live chickens and do a voodoo dance at midnight. They’ll believe anything you say, because you’re a reporter. But if I, Michael Jackson, were to say, “I’m an alien from Mars and I eat live chickens and do a voodoo dance at midnight,” people would say, “Oh, man, that Michael Jackson is nuts. He’s cracked up. You can’t believe a single word that comes out of his mouth.”

কোনো-এক গসিপ/গুজব নিয়া তাকে জিগায়েছিলেন জনৈক প্রতিবেদক, তদুত্তরে এমজে প্রোক্ত কথাগুলো কয়েছিলেন। কাজেই, বলাই যায়, সম্ভবত ডেলিবারেইটলিই এমজে চেয়েছিলেন নিজেকে এই পৃথিবীর যুগ্মবৈপরীত্যভরা হানাহানিজিঘাংসার বাইরের বাহ্যিক চেহারায় প্রেজেন্ট করতে। চেয়েছিলেন হতে অ্যালিয়েন। ভিনগ্রহবাসী। মায়াবী ভিনগ্রহবাসী।

‘দিস্ ইজ্ ইট’ শীর্ষনামে একটা কন্স্যার্টের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন অনেকদিন ধরে। এমনিতেই ঋণে-দেনায় দেউলিয়া হালত চলছিল, জমিন্দারি-কিংডম যায় যায় দশা, সুবৃহৎ বাড়ি বা বলা যায় একক-মালিকানায় আস্ত একখানা গ্রাম নেভার্ল্যান্ড পাওনাদারের কব্জায় যাবার উপক্রম। এরই মধ্যে পরিকল্পিত হয় ‘দিস্ ইজ্ ইট’ কন্স্যার্ট-প্রোজেক্ট। আন্দাজ করা যাচ্ছিল যে এই একটা কন্স্যার্ট দিয়াই কিং তার হৃতপ্রায় সাম্রাজ্য-সালতানাৎ ফিরিয়া পাবেন। তরী তীরে এসেই ডুবেছে। এক্সেসিভ স্ট্রেস এবং ওষুধের প্রতিক্রিয়াজনিত জটিলতায় কিংবা খাস অর্থে মঙ্গলপতির ইচ্ছায় এমজে ফেরার ফ্লাইট ধরলেন সেদিন উত্তীর্ণ সন্ধ্যায়। দিস্ ইজ্ ইট। দ্যাট’স্ অল্। রাজা নাই, মুকুট রইল পরিত্যক্ত ধুলায়।

অ্যালিয়েন ফ্রম দ্য মার্স মাইকেল জ্যাকসন ফ্লায়িং-স্যসারে উড়ে পৃথিবীসীমার বাইরে চলে যান ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল পঞ্চাশ সাকুল্যে। এবং? দুই-দুইখানা শাদি করেছিলেন, কোনোটাই বছর-দুয়েকের বেশি ওয়ার্ক করে নাই, এর মধ্যে একটা শাদি ছিল ধুমধাম করে ঢাকঢোল পিটিয়ে এল্ভিস প্রিস্লির মেয়ে ম্যারি প্রিস্লির সঙ্গে, ব্যয়সাপেক্ষী ডিভোর্স হয়েছে দুইটারই। বিভিন্ন হুজ্জতে, মামলামুকদ্দমায়, ব্যাপক অর্থগচ্ছা তো দিতেই হয়েছে জিন্দেগিভর। দ্য মোস্ট সাক্সেসফ্যুল এন্টার্টেইনার অন আর্থ হবার খেসারৎ কিছুটা, আবার নিজের বদখাসলতেও হয়তো-বা। আমাদের নিশ্চয় এইসব জেনে কাজ নাই। কিন্তু শারীরিক গরহাজিরার পর তার স্থাবর-অস্থাবর সুরকীর্তি নিয়া ব্যবসাবাণিজ্য হয়েছে ব্যাপক, হচ্ছে, এবং হবে। অ্যানিওয়ে অ্যাগেইন। আমরা তার গানেরই ভিখারি, গানার্থী, নৃত্যকাঙাল। আমরা তার সঙ্গে যে-কোনো অবকাশে, আমাদের ‘কাজের মাঝে মাঝে কান্নাধারার দোলা’ থামতে দিতে, একবার চাঁদে হেঁটে আসতে পারি।

তিনটা গানের বাংলা চেহারায় এইবারে একটু নজর বুলায়ে নেয়া যাক। গানত্রয় পাঠের জন্য সবাই নিম্নগামী হই।

__________
গোটাকয় গান :: মাইকেল জ্যাকসন
বিট ইট ।। বিলি জিন ।। মিউজিক অ্যান্ড মি
ভূমিকাভাষ্য ও তর্জমা : জাহেদ আহমদ
__________

michael-jackson2


বিট ইট

গুণ্ডারা তারে বেধারা শাসায়ে যায়,
“ব্যাটা তোরে যেন না-দেখি চৌসীমায়
ফের যদি তোর খোমা দেখি তল্লাটে
পিটাইয়া সিধা পাঠামু শ্মশানঘাটে।”
এই বলে তারা হানিয়া আগুনবাণ
চলে যায় গেয়ে বীরদর্পের গান

এইবার কাঁপো থরহরি বোকাচোদা
পারলে ঠেকাও, রুখিয়া দাঁড়াও, লহো লহো ভীমগদা

লৌড় দে ব্যাটা, পারলে খাড়া, টাইম নাই বৃথা ভাবনার
হরিবোলখাটে শয়নের আগে আগুনেরে কর্ অঙ্গার
রক্ত দেখেই হিক্কা ওঠে হেন যদি হোস্ ডরপুক
ব্যাটাগিরি তবে ফলাতে যাবি না শালা প্রাণান্ত উজবুক
যদি হতে চাস বাপের ব্যাটাটা আদ্যোপান্ত মত্ত
ষণ্ডাদলের দাবড়ানি খেয়ে হবি না হন্তদন্ত

অথবা হাতেই খিঁচে নে ক্রোধের ভোদা
পারলে ঠেকা, দাঁড়া বুকটান, পালাবি না বেহুদা

পালাবি না শালা পালায়ে কোথায় যাবি
হেরোর হদ্দ গোটা জিন্দেগি ধাতানিই খালি খাবি
মিথ্যে-সত্যে লেগেছে লড়াই দেখা তো মুরদ কত
জঙ্গের মাঠে রেফারি থাকে না, থাকে না কানুন শত

এইবার তোরে ক্ষ্যামা দিয়া গ্যাছে ধরবে পরেরবার
বাঁচতে চাস তো রুখিয়া দাঁড়া বা খুঁজে নে পগারপার
আকামা বালের বালক হবি কি বাপের ব্যাটার মতো
পথ বেছে নে গে একটা যা-হোক চরিত্রসম্মত
বাঁচতে চাস তো বাঁচার মতন বাঁচ
দেখা দেখি তোর আগুনে কতটা আঁচ

রক্তচক্ষু গুণ্ডাগুলোরে দেখায়ে দে একহাত
ডরপোকা খায় জীবনে কেবলি কিল ঘুষি আর লাথ
যতটা পারিস জীবনের সনে খেলে যা বেদম জুয়া
সাহসে শক্তি সাহসে মুক্তি সত্যি-মিথ্যে ভুয়া
পাণ্ডারা তোরে শাসাবার পরে হোগায় কষাবে লাত্থি
নিচু হ যতটা পাল্টা মারের জন্যে বেয়াড়া হাত্তি

লড়ে যা পাগলা ঘাড় বেঁকাইয়া শুরু থেকে শেষতক
মুখে ফেনা তুলে লড়ে যা যেমন লড়াকু বাংলা রক্

লড়ে যা পাল্টা আঘাত হানিয়া লড়ে যা রে হার্মাদ
শূয়রের মতো গোঁয়ারের মতো লড়ে নে শিকের ফাঁদ

বিলি জিন

যেনবা সে এক রূপসা নায়িকা ছায়াছবিদৃশ্যের
জিগালাম তারে কেন বলল সে আমি তার কাঙ্ক্ষিত
আমি নাকি তার জন্মের জুটি নৃত্যমগ্ন মঞ্চের
আমরা দুজনে নাচের বাঁধনে হব নাকি প্রবাহিত

বিলি জিন তার নাম জানাল সে নাচমুদ্রার ফাঁকে
এই কথা শুনে একে একে সব পুরুষেরা চায় ফিরে
এবং সকলে মনে মনে চায় বাহুডোরে পেতে তাকে
সব্বাই চায় নাচের মওকা একই নায়িকারে ঘিরে

লোকে বলে শোনো যা-ই করো বাছা ভাবিয়া করিও কাজ
ভুলেও কখনো তুড়িও না মন সুনন্দা রাধিকার
আম্মা আমায় বলতেন বাবা প্রেমে হয়ো অধিরাজ
যুক্তিতে নয় প্রেমে শেষমেশ সত্য ও সৎকার

বিলি জিন নয় আমার প্রেমিকা সাক্ষ্য দিতেছি আমি
সাধারণ এই মেয়েটার দাবি আমি নাকি তার প্রেমিক
নই আমি তার বাচ্চার বাপ আমি নই তার স্বামী
বিলি জিন বলে যে-কথা তার নাই মাথামুণ্ডুর ঠিক

চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত একে একে যায় কেটে
বিলির দিকেই ছিল আগাগোড়া আইন ও আদালত
কতদূর-আর যাবেন হাকিম বিলির পক্ষে খেটে
যেহেতু পয়সাকড়িতে মেয়েটা প্রায় ভিক্ষুকবৎ

কয়েকটা পাক নেচেছি দুজনে এইটুকু পরিচয়
নৃত্যমঞ্চে একটুকু শুধু কুশলের বিনিময়
এছাড়া আমার সঙ্গে বিলির নাই কিছু গলাগলি
বিলির ব্যাপারে এই বিবৃতি হলফ করেই বলি

নৃত্যমঞ্চে বিলি বলেছিল নেচে যাবে রাতভর
পরক্ষণেই চিবুক উঁচিয়ে তাকায় আমার দিকে
একটা কান্নামুখের শিশুর ফোটো দেখায় এরপর
আমারই মতন অবিকল শিশু ছবিটিতে অনিমিখে

সে এসে দাঁড়ায় আমার বাঁ-পাশে প্রায় বাহুলগ্ন
হাল্কা তাতানো খুশবুপ্রভাবে শরীরে ধরায় ঘোর
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে দেখি আমি দিনান্তে দেহমগ্ন
ততক্ষণে এক-কামরায় দোঁহে দেহদহনের ভোর

বিলি জিন নয় আমার প্রেমিকা সাক্ষ্য দিতেছি আমি
সাধারণ এই মেয়েটার দাবি আমি নাকি তার প্রেমিক
নই আমি তার বাচ্চার বাপ আমি নই তার স্বামী
বিলি জিন বলে যে-কথা তার নাই মাথামুণ্ডুর ঠিক

মিউজিক অ্যান্ড মি

বহুদিন ধরে বহুপথ ঘুরে এইখানে দুইজনে
এই বিরানায় গান আর আমি বিভাজনভেদহীন
পরোয়া করি না সহি কি না গান ছন্দের বন্ধনে
এইখানে শুধু আমাতে-গানেতে কেটে যায় রাতদিন

যতদূরে যাই যেখানেই থাকি একাকি কিংবা সংঘে
হরিহর আত্মা গান আর আমি দুজনে পরস্পর
লোকালয়গুলো ঘোরে দিবারাতি বহুবিচিত্র রঙ্গে
কেবল আমরা বাজাতেছি দোঁহে দুজনার অন্তর

ডান-বাম নয় ধরো এই গানহাত
যদি পারো গাও তোমার নিজের গান
ডুব দিয়ে দ্যাখো গহিনে সুরপ্রপাত
শব্দ এবং সুরের ঐকতান

সুরপালকের পাখিটার গানে ছেয়ে আছে তল্লাট
কান পেতে শোনো পাওয়া যায় পাখসাট

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you