পরিকল্পিত নয়, একেবারেই দৈবচয়িত ববি ডি-র ছয়খানা গানের কথাভাগ রাখা যাচ্ছে এই তর্জমাবাহিকীর মূল অংশে। একমাত্র নয়, কিংবা নয় দি বেস্ট অভিধাযোগ্য তর্জমাগুচ্ছ, এগুলো বরং বলা ভালো সর্বার্থেই যে একটা-কিসিমের বাংলা। আরও হরেক কিসিমে হতে পারে এগুলো তর্জমা, তা অবশ্য বলার অপেক্ষা রাখে না। ভার্শন এগুলো। কতভাবেই-না বাংলা হতে পারে! এন্তার ধরনে একই জিনিশের উপস্থাপন/অনুবাদ একই অনুবাদকের হাতে একই লিখনবৈঠকে হতে পারে, এই অভিজ্ঞতা ট্র্যান্সল্যাটর সকলেরই হয়ে থাকে, সেই-সমস্ত সম্ভাব্য ধরন থেকে একটামাত্র ধরনেই জিনিশটা দাঁড় করান অনুবাদক। অন্য/অন্যান্য ধরন কোনোদিনই-আর মুখ দেখে না আলোর।
উৎসভাষায় একটা গান/গদ্য/কবিতা যা-কিছু অফার করে পাঠকেরে, গন্তব্যভাষায় তা-ই কি নিতে হয় হুবহু? তর্কাতীত নয় এই ইশ্যু। অর্থদোহনকালে একটা ভাষান্তরকাজে মেরুপ্রান্তে-স্থিত দুই ভাষার কালচার, লোকবাচনিকতা, সুর-স্বর-ছন্দকাঠামো, গল্পবয়নকৌশল, ভাষাদ্বয়ের এককোডিং-ডিকোডিং প্রোসেসের ন্যাচারাল প্রবণতা প্রভৃতি জিনিশপত্তর ডিক্টেইট করে থাকে গোটা ভাষান্তরকাজটাকে। এমন নয় যে সচেতনভাবে ব্যাপারটা বজায় রেখে যেতে হয়, এইটা ঘটে যায়, এমনটাই ঘটে। সেক্ষেত্রে উভয় ভাষায় গানশ্রবণাভিজ্ঞতা যার যেমন ও যতটা, ভাষান্তরকালে তার সংকট ও সুবিধা তেমন ও ততটাই।
নোবেলভাষণে নিজের স্যংরাইটিং নিয়া বব ডিলান কয়েকটা বাক্য বলে রেখেছেন দেখতে পাবো। বলছেন,
“যদি কোনো গান আপনাকে নাড়া দেয়, তাহলে সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। গান কী, সেটা কখনো আমাকে জানতে হয়নি। আমি আমার গানে সবকিছুই লিখেছি। এসবের অর্থ নিয়ে আমাকে কখনো দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। মেলভিল যখন ওল্ড টেস্টামেন্ট, বিব্লিক্যাল রেফ্রেন্স, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, প্রোটেস্টেন্ট তত্ত্ব, সাগর, জাহাজ, তিমি নিয়ে তার সব জ্ঞান একটি গল্পে মিশিয়ে দিলেন, তখন তাকে অর্থ নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি।”
ডিলান বলছেন কথাগুলো। অথচ অনুবাদক মূলানুগ অর্থোত্তোলনে এতই গলদঘর্ম যুগে যুগে যে এক অক্ষম-পিঁচুটিওয়ালা ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক ছাড়া আর-কেউ অনুবাদপাঠে যেন উৎসাহ পায় না।
ভাষান্তরিত ছয়টা গানের মধ্যে ‘মাস্টার্স অফ ওয়ার’, ‘ফরেভার ইয়াং’ এবং ‘মেইক য়্যু ফিল্ মাই ল্যভ’ গানত্রয় লিস্নারদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। অন্য তিনটা গান ওই অর্থে শ্রোতাপরিচিত নয়। এ তো বলা বাহুল্যই যে ববির নিজের রচনা সংখ্যায় এবং সম্পন্নতায় এত প্রচুর যে এর মধ্যে গোটা পঞ্চাশ/শতেক গান ছাড়া বাকি বেশিরভাগই হার্ডকোর গানখোরদের খোরাক। দুনিয়ার সমস্ত প্রোলিফিক রচনাকারের বেলাতেই জিনিশটা দেখা যাবে যে তাদের পাঠকপরিচিত রচনাজগতের সমান্তরালে বয়ে চলে এক বিস্তর অপরিচিত রচনাজগৎ। ববির ক্ষেত্রে যেমন, রবির ক্ষেত্রেও, দুখু মিয়ার ক্ষেত্রেও।
বব ডিলানের গানগুলো বেশিরভাগই নিজের কণ্ঠে যতটা-না তারচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছে অন্যান্য শিল্পীদের কণ্ঠে। ব্যাপারটা কাভার-ভার্শন হিশেবেই মিউজিকশ্রোতাদের কাছে পরিচিত। সম্প্রতি ইউটিউবযুগে এসে বাংলাতেও কাভার-ভার্শন উত্তরোত্তর জনপ্রিয় হচ্ছে। এইখানে পত্রস্থ গানগুলোর মধ্যে যেমন ‘ফরেভার ইয়াং’ গানটা আমরা জ্যোন বায়েজের কণ্ঠেই শুনেছি বেশি। ইন-ফ্যাক্ট আমরা অনেকেই গানটা বায়েজের গান হিশেবেই দীর্ঘদিন ভেবে এসেছি। ঠিক এমন অনেক গানই বায়েজ গেয়েছেন যা ববির রচনা এবং মূল রচয়িতার আগেই অন্যান্য সংগীতশিল্পীরা স্টেজে এবং স্টুডিয়োসংকলনে গেয়ে রেকর্ড করে জনপ্রিয় করেছেন। ববির গান কাভার করেছেন পিট সিগ্যার থেকে শুরু করে সেকালে ডিলানের গুরুজন অনেকেই। অতি সাম্প্রতিক এড শিরান বা অ্যাডেল প্রমুখ শিল্পীরাও ববির গান কাভার করে শ্রোতাপ্রিয় হচ্ছেন। কিছুদিন আগে যেমন অ্যাডেল তার ক্ল্যাসিক ঘরানার গলায় ‘মেইক য়্যু ফিল্ মাই ল্যভ’ গানটা কাভার করেছেন দুর্ধর্ষভাবে। এ-হলো ববিমিউজিক নিয়া ভাষান্তরকারীর ব্যক্তিগত ভূমিকা। আন্দাজে, এবং অতি সংক্ষিপ্ত।
নোবেলঅ্যাড্রেস দিতে যেয়ে সেই ভিডিয়ো-অভিভাষণে বব ডিলান আরও বলছেন,
“আমাদের গানগুলো জীবিতদের দুনিয়ায় বেঁচে থাকে। গান কিন্তু আর-সব সাহিত্যের মতো নয়। গান পড়া হয় না বরং গাওয়া হয়। শেইক্সপিয়্যরের নাটকের সংলাপ মঞ্চে অভিনয় করতে হয়; গানের কথার মতো যা আসলে গাইতে হয়, পাতা থেকে পড়লে হয় না। আমার আশা আপনাদের অনেকেই আমার গানের কথাগুলো সেভাবে শোনার সু্যোগ পেয়েছেন, যেভাবে সেগুলো শোনার কথা : কন্সার্টে বা রেকর্ডে যেভাবে আজকাল মানুষ গান শোনে।”
এবং সবশেষে ডিলান বলছেন,
“আমি আরেকবার হোমারের কাছে ফিরে যাব যিনি বলেছিলেন, ওহ মিউজ্, আমার মধ্যে সুর তোলো এবং আমার মাধ্যমে গল্পটা বর্ণনা করো।”
উপরের দুটো অনুচ্ছেদে ডিলানভাষণের উক্তি ব্যবহার করা হয়েছে একটা কাগজের শুক্রবাসরীয় সাময়িকী থেকে, যেখানে অভিভাষণের চুম্বকাংশ অনুবাদ করেছেন এসএম রশিদ।
ববির নোবেলস্পিচের ভাষায় ব্যক্ত ‘গল্প’ ছয়টা বাংলা মাধ্যমে কেমন দাঁড়াল, অথবা তাদের সুরসমুদয় কেমন কায়দায় বেঁকে গেল, নজর বুলানো যাক নিচে।
_________
ছয়টা গান :: বব ডিলান
মাস্টার্স অফ ওয়ার ।। ফরেভার ইয়াং ।। বাকেটস্ অফ রেইন
স্কাইলার্ক ।। হোয়াই ওয়্যজ্ আই বর্ন ।। মেইক য়্যু ফিল্ মাই ল্যভ
ভূমিকা ও তর্জমা :: জাহেদ আহমদ
__________
মাস্টার্স অফ ওয়ার
বলে যাই শোনো যুদ্ধপ্রভুরা আগাইয়া আইসো হে
ব্যাপক রভসে বানায়েছ যারা গাদাবন্দুকগুলো
তোয়ের করেছ মিহি মৃত্যুর উড়ো জঙ্গের জাহাজ
মনের হরষে ঠেসেছ যাহারা মারণতৃষ্ণ বোমা
গা-ঢাকা দিয়াছ তোমরা যাহারা প্রাচীরের ওইপাশে
ডেস্কের পিছে হাঁটু-ঠকঠক লুকায়েছ মুখনিচু
তোমাদেরে শুধু পষ্ট কথায় এটুকু জানাতে চাই
চিনেছি হে আমি মুখোশ ভেদিয়া রাক্ষসমুখগুলো
ঘুণাক্ষরেও তোমরা যাহারা ভালো করো নাই কিচ্ছু
শুধু শুধু করে গেছ দিবারাতি ধ্বংসের পাঁয়তারা
আমার প্রাণের পৃথিবীর সনে খেলিয়াছ জুয়া যারা
ভাবখানা যেন দুনিয়া আদতে ছেলের হাতের মোয়া
আমারে তোমরা দিয়াছ তুলিয়া হাতে একখানা রাইফেল
তোমরা গিয়াছ সরিয়া আমারে একা মুসিবতে ফেলে
এবং আমায় মাঝদরিয়ায় রাখিয়া দিয়াছ চম্পট
যখন আমার কামান হইতে বেজায় ছুটিছে ব্যুলেট
তোমরা আখেরে আদি ইতিহাসখ্যাত জুডাসের মতো
ছলনায় আর ক্রূর শঠতায় রেখেছ জগৎ জব্দ
বলেছ বিশ্বে যুদ্ধ বাঁধায়ে আমাদেরই হবে জয়
এই মিথ্যাটা আজীবন তুমি খাওয়ায়েছ উদয়াস্ত
অথচ তোমার দুইচোখে আমি হিংসার স্রাব দেখেছি
মগজে তোমায় দেখেছি ভীষণ হায়েনাহিংস্র জন্তু
তোমায় চিনেছি ইকারে-উকারে আকারে-প্রকারে আস্ত
ঘরের নালার ঘোলা পানিরাশি ঠিক যতটাই চিনি
ট্রিগারে ঠেকানো তর্জনীগুলো পক্ষে এনেছ তোমার
অতঃপর তুমি নির্দেশিয়াছ গুলি চালাবারে জনতায়
আয়েশে চক্ষু মুদিয়া তামাশা দেখিতে বসেছ সোফায়
টিভিপর্দায় মৃতের সংখ্যা ততক্ষণে বেশুমার
ততক্ষণে যেয়ে সেঁধিয়েছ তুমি আকাশচুম্বা প্রাসাদে
এবং তোমার বিলাস-ব্যসনে একটুও নাই বিঘ্ন
সড়কে তখন রক্তবন্যা হাজার তরুণ শরীরের
অন্তিমে তারা শায়িত ভূমিতে থিকথিকা কাদাজলে
লেলিহান ভয় দিয়াছ ছড়ায়ে এই ভবসংসারে
যেন কখনোই সেই ভয় থেকে রেহাই না-পাই আমি
পৃথিবীতে যেন জনক-জননী হইতে না-পারে কেউ
ধরণীতে যেন ভয় জারি রয় সন্তান জন্মানোর
হুমকিধামকি দিতেছ আমার শিশুসন্তানটারে
এখনও জন্ম হয় নাই যার বেজন্মা ভূমিপৃষ্ঠে
এখনও উত্তরাধিকারী তুমি হও নাই রক্তের
ধমনী-শিরায় বাহিত রক্তফোঁটাটাও তুমি চিনো নাই
কিন্তু কতটা সাধ্যিতে বলো কুলোবে
এমনও তো নয় আমি পির-পয়গম্বর
চুপচাপ দেখে ভেবো না মাকাল আমায়
ভেবো না আমায় বেয়াক্কেল এক গিদ্ধর
একটা ব্যাপার বিলক্ষণ আমি জানি
তুলনায় আমি ক্ষুদ্র যদিও বহরে এবং গতরে
এমনকি যিশুপ্রভুও তোমায় দিবেন না নিস্তার
তোমাদের কৃতকর্মের ফল নিশ্চয় পাবা তুমি
এইবার আমি জিগাই তোমারে শোনো দুইকান খুলে
জেবের ভিতরে এতটাই তুমি মালকড়িওয়ালা নাকি
কিনতে পারো কি নিজের আকামকুকামগুলোর ক্ষমা?
টাকা থাকলেই কিনতে পারবে পাপের প্রায়শ্চিত্ত?
মনে হয় তুমি ঠিকই একদিন বুঝতে পারবে এইসব
যখন তোমার মৃত্যু আসিয়া আদায় করবে শুল্ক
পয়সাপাত্তি বিস্তর যত গুদামে করেছ সঞ্চয়
কিচ্ছুটি দিয়া আদৌ তোমার আত্মা ফেরত পাবে না
কায়মনে আমি চাইছি তোমার মৃত্যু
যত দ্রুত তুমি মরবা ততই মঙ্গল
রয়েছি মুখিয়ে দেখব তোমার শব
তোমার যাত্রা জাহান্নামের রাস্তায়
দেখব তোমার শবদেহ যবে কবরে নামানো হবে
এবং মৃত্যুশয্যায় কাকপক্ষীও কাঁদবে না
আমি ঠিকই গিয়া হাজির হব তোমার দাফনদিনে
একদম স্বীয় চক্ষে দেখব তোমার জীবনাবসান।
ফরেভার ইয়াং
আল্লা তোমার হবেন সহায় জীবনের ময়দানে
এই মুনাজাত করে যাই যেন খোয়াব পূরণ হয়
চাইছি তোমার কাজকাম যেন উপকার বয়ে আনে
মানুষেরই ভিড়ে যেন খুঁজে পাও অনন্ত বরাভয়
তারা বেয়ে ওঠো অসীম গগনে এই দোয়া যাই করে
এ-ই চিরদিন চাই যেন তুমি শীর্ষের পানে ধাও
প্রৌঢ়ের মতো প্রথাজীর্ণ এ-পৃথিবীর বন্দরে
যেন তুমি বিদ্যুতের গতিতে তারুণ্য ঝল্কাও।
বড় হও তুমি দীর্ঘ মহান সরল ও সুন্দর
সত্যের সনে সাক্ষাতে হও শুভ্র সমুজ্জ্বল
দুঃসাহসের মতো হয়ে ওঠো মোহন ও মনোহর
পবনের নাও শূন্যে ভাসাও অপরাজেয়োচ্ছ্বল
অরণ্যের এই বিপদভুবনে বাঁচো সিংহের মতো
রুখিয়া দাঁড়াও যথাবশ্যক হিম্মত রেখে বুকে
রেখো ধরে এক গাছের সবুজ মস্তক উন্নত
যৌবনে রাখো রক্ত রাঙিয়ে বাসনারৌদ্র চোখে।
দোয়া করি যেন তোমার দু-হাত সদা থাকে তৎপর
দোয়া করি যেন দুইপা তোমার ক্ষিপ্র প্রখর হয়
দোয়া করি হও কাণ্ডে-শেকড়ে সুঠাম এক শম্বর
দোয়া করি যেন লোভের ইশারা করিবারে পারো জয়
হৃদয়েতে যেন রয় চিরদিন রঙ ও রোদের রোশনাই
চিরদিন যেন লোকে গেয়ে যায় তোমারই প্রেমের গান
সহিসালামতে থাকো তুমি প্রিয় দোয়াটুকু রেখে যাই
চিরদিন থাকো আজিকার মতো তরুণ তাগড়া প্রাণ।
বাকেটস্ অফ রেইন
বালতি বালতি বৃষ্টিপানি
বালতি বালতি কান্না
কানের ভিতরে পশিছে কেবলই বিষাদবাদ্যিবাজনা
বালতিভরা চাঁদের হাসি বিলাতে এসেছি ভবে
এসো প্রিয়তমা আঁজলা পাতিয়া নাও যতটা-যা পারো
হয়তো-বা আমি কিছুটা এভাবে বেঁচে যেতে পারি আরো
ধৈর্য ধরেই ছিলাম বেজায়
গাছের মতো শক্তপোক্ত এবং সহনশীল
অদৃশ্য হতে দেখেছি কেবলই ভালো-লোকেদের মিছিল
বন্ধুরা আসে বন্ধুরা যায় ছায়াটুকু রয় পড়ে
কেবল তোমার কথায় আমার জলভরা পাতা নড়ে
তুমি যদি চাও সটান রইব বোশেখরুদ্র ঝড়ে
যে-ভঙ্গিমায় তাকাও তুমি ঠিক যেমনটা হাসো
সর্ব অঙ্গ ভালোবাসি জেনো সর্ব ভঙ্গিমায়
হাঁটার সময় কোমর তোমার মোহনীয় দোল খায়
কেমন তোমার হিয়ার শীর্ষ কেমন তোমার মায়া
বাঁধা পড়ে যাই যেতে চাই যত দূরে
প্রেমেই আমি পর্যুদস্ত প্রণয়েই ভবঘুরে
সেই গাড়িটির রঙ লাল
সেই লালরঙা বাইসাইকেল
বান্দর নই যদিও সহসা ডালে-পল্লবে উদ্বেল
তুমিও আমায় বাসো জানি ভালো সজোরে এবং ধীরে
যেতে নাহি দিব যদিও তোমায় নিয়া যাব মম সঙ্গে
যখন চলিয়া যাইব তখন তুমি মিশে থেকো অঙ্গে
আছে দুঃখ আছে মৃত্যু
উৎসবও আছে জীবনে
হে বন্ধু হে প্রিয় করো হে যা লয় তোমার মনে
যেমনটা চাও করো সেইমতো যতটুকু পারো ভালো
তোমার জন্য করব সবই জীবনে যা যা লাগে
এই কথাটুকু অসংকোচে একবার তুমি বলবে কি সংরাগে?
স্কাইলার্ক
বলো সমাচার কি কি জানো তুমি প্রিয় হে ভুবনচিল
কোথা যেয়ে বলো লভিবে শান্তি এই বেতমিজ দিল্
কোথায় মাঘের মিহি কুয়াশায় একটা ধানের ক্ষেত
কোথায় একটা মানুষের ঠোঁটে চুম্বনসংকেত
তুমি কি দেখেছ বসন্তে এক সবুজ রঙের পাহাড়
যেখানে আমার হৃদয় বেড়ায় গিরিখাত-নদীপাড়
ঘুরিয়া বেড়াই নিলীমাছায়ায় নিঝুম বৃষ্টিছাঁটে
ভেঙে কাদাপানি পাথরের খনি বনঢাকা পথঘাটে
একলা তোমার চলার পথে একাকী উড্ডয়নে
একবারটিও নৈশ গানের ধুন পশে নাই শ্রবণে?
সেই সংগীত এতই বিধুর মৃদু আলেয়ার ন্যায়
অথবা পাখির কুজনে বেদেনি গান গায় চাঁদোয়ায়
কোনোদিন যদি ইহাদেরে তুমি খুঁজে পাও কোনোখানে
ডেকে নিতে যেন ভুলো না আমারে সে-দেশের সন্ধানে
দেখিবারে যদি পাও অয়ি চিল ইহাদেরে কোনোদিন
আমিও হইব তোমার পিঠের পাখনায় উড্ডীন
হোয়াই ওয়্যজ্ আই বর্ন
জন্মেছি কেন বলো-না আমায় বেঁচে আছি কেন বলো
কোন আমড়াটা দিব তোমাদেরে কিছু নাই সম্বলও
কোনটা চাইব কোনটা রাখিয়া চাইবারও নাই কিছু
জানতাম যদি কি চাই আমি নিতাম তারই পিছু
হুদাই কেন-যে এঁকে যাই গানে তোমারে আমার পাশে
কেন শরীরের অতল ফুঁড়িয়া কান্নায় হৃদি ভাসে
কেননা আমি তো জেনেছি আমারে শুনবে না কভু তুমি
কী বিদঘুটে বোকাহাবা আমি তোমারেই যাই নমি’
কিছুই আমার নাই করবার আছে এইটুকু শুধু
জন্মেছি আমি বেসে যেতে ভালো তোমারেই হৃদিমধু
হুদাই কেন-যে এঁকে যাই গানে তোমারে আমার পাশে
কেন শরীরের অতল ফুঁড়িয়া কান্নায় হৃদি ভাসে
কেননা আমি তো জেনেছি আমারে শুনবে না কভু তুমি
কী বিদঘুটে বোকাহাবা আমি তোমারেই যাই নমি’
কিছুই আমার নাই করবার আছে এইটুকু শুধু
জন্মেছি আমি বেসে যেতে ভালো তোমারেই হৃদিমধু
মেইক য়্যু ফিল্ মাই ল্যভ
যখন তোমার মুখে এসে লাগে ঘনবুনটের বৃষ্টি
পৃথিবীর যত উটকো লোকের তোমার দিকেই দৃষ্টি
ঠিক তক্ষুনি ভীষণ আশ্লেষে এই আদরের সৃষ্টি
যেন তুমি নিতে পারো সমঝিয়া কাঙালের প্রণয়ার্তি
যখন ঘনায় সন্ধ্যার ছায়া তারাফুলগুলো ফোটে
কেউ নাই নেবে তোমার অশ্রু অস্ফুট করপুটে
সেই ক্ষণে আমি রাখিব তোমারে একান্ত দুই ঠোঁটে
যেন তুমি নিতে পারো সমঝিয়া আমার প্রেমের স্তোত্র
জানি তুমি আজও মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করো নাই
কিন্তু তোমার বেলায় আমার হৃদয় নিঃসন্দিগ্ধ
বুঝে গেছি সেই প্রথম দেখাতে নাই তুমি ছাড়া ঠাঁই
নিশ্চয় তুমি চিরমধুরিমা আর চিরদিনই স্নিগ্ধ
রইব বরং ভুখাপেটা আমি রইব বরং নিঃস্ব
যদি দিতে হয় হামাগুড়ি দিব গোটা আঘাটার বিশ্ব
করতে পারি না তোমার লাগিয়া নাই কিছু অবিমৃষ্য
তোমারে দেখাব নমুনা আমার অনাদি প্রেমের দৃশ্য
উঠিয়াছে দ্যাখো তুফানের হাওয়া সাগরের মহামন্দ্রে
দ্যাখো গরজিছে বেজায় বিজলি বড়-সড়কের কিনারে
বেতাল বাতাস মুক্তস্বাধীন নগরের সব রন্ধ্রে
দেখেছি আমি যা তার অল্পই দেখিয়াছ তুমি ইথারে
এবং তোমার সমস্ত সাধ পুরাইব কথা রইল
তোমার জন্য উঠব পাহাড়ে বেছে নেব হিমশৈল
দুনিয়ার শেষমাথায় গিয়া হাঁক দিব, ‘কই, আয় লো …
দেখিয়া যা তোর লাগিয়া আমার দিন কাটে প্রেমবিহারে
… …
- বাগেশ্বরী শিল্পপঙক্তিমালা - February 4, 2025
- শীতসকালের স্মারক বক্তৃতা : ব্যান্ডেজ ও বৈদ্য - January 31, 2025
- মাধবী, বিপ্লব ও অন্যান্য মদন প্রসঙ্গ - January 24, 2025
COMMENTS