কিংবদন্তি ব্রিটিশ রকব্যান্ড ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’; গোড়া থেকেই দলের লাইনাপে যে-পাঁচজন ছিলেন তাদের একজন রজার ওয়াটার্স, ব্যেসগিটার ও ভোক্যাল দিয়ে পিঙ্কফ্লয়েডে এবং দুনিয়াজোড়া রকসিনে রজারের কন্ট্রিবিউশন অনস্বীকার্য।
গোটা সাক্ষাৎকারটায় ফিলিস্তিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, সোশ্যালিজম, ‘দ্য ওয়াল’ অ্যালবাম প্রভৃতি প্রসঙ্গ ধরে এগিয়েছে আলাপচারিতা। রজারের এই সাক্ষাৎকারটা নেয়া হয় ২০১৫ সালে, ‘রোলিং স্টোন’ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে। এইটা বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে ইংরেজি থেকে।
_____________
রজার ওয়াটার্স সাক্ষাৎকার
প্রসঙ্গ ফিলিস্তিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, সোশ্যালিজম, ‘দ্য ওয়াল’ অ্যালবাম ও অন্যান্য
প্রকাশস্থান : রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন
প্রকাশকাল : ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
বঙ্গানুবাদ : শফিউল জয়
________________
♪ প্রশ্ন : হেই রজার! জো বাইডেনরে নিয়ে লেটেস্ট নিউজটা শুনছো? সে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হবে না বলে নাকি ঘোষণা দিছে।
রজার : তোমার কথা কিচ্ছু বুঝলাম না। কী আবোলতাবোল বলতেছ।
♪ প্রশ্ন : বলতেছিলাম জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যে লড়বে না।
রজার : এএএএবং…
♪ প্রশ্ন : টাশকি খায়া গেলাম। আমি আসলেই মনে করছিলাম সে দাঁড়াবে।
রজার : (তিন সেকেন্ডের নীরবতা) তোমার মতামতের জন্যে ধন্যবাদ।
♪ প্রশ্ন : আচ্ছা ঠিকাছে। ‘দ্য ওয়াল’ নিয়ে কথা বলা যাক। কী কারণে গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এত এত মানুষ এই অ্যালবামকে প্রাসঙ্গিক মনে করতেছে? তোমার কী মনে হয়?
রজার : ষাট-সত্তুর দশকের তরুণদের শক্তিশালী প্রতিবাদী আন্দোলনগুলা ঝিমায়া পড়ার পর মানুষজন এখন বড় বড় দার্শনিক এবং রাজনৈতিক ব্যাপারগুলার মুখোমুখি হইতে প্রস্তুত, আর ‘দ্য ওয়াল’ সেই গোষ্ঠীর জন্যে একেবারে মানানসই। ষাটের দশকের আন্দোলন তো সিলিকন ভ্যালির বিপ্লবের নিচে চাপা পইড়া গেছে। এই ইশ্যুগুলা মানুষের যাপনের মান, জীবন আর মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত। আমি মনে করি ‘ওয়াল’ অ্যালবামটা একটা মৌলিক প্রশ্নে উপরে খুব গুরুত্ব দেয়, যেটা হচ্ছে — আমরা কি প্রেরেস্ত্রইকার আগেরকার পূর্বজার্মানির মতো সিমিলার কোনো সমাজে বাস করতে চাই কি না। ১৯৩০-এর দিকে কিছু বলব না, কারণ নানা জটিলতায় পড়ব। মানুষজন আস্তে আস্তে তাদের স্লিপওয়াকিঙের ভেতর দিয়া সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদে প্রবেশ করতেছে, আইনকানুন ভাইঙ্গা পড়তেছে। একদিকে মিলিট্যারিরা ব্যবসাবাণিজ্য দখল করতেছে, আরেকদিকে কর্পোরেশনগুলা সরকার দখল করে নিতেছে। আর আমাদের প্রতিবাদ করার কোনো রাস্তা নাই। ‘দ্য ওয়াল’ অ্যালবামটা প্রশ্ন করে, ‘তুমি কি তোমার কথাটা শুনাইতে চাও সবাইকে? যদি চাও, নখরামি না চোদায়া বের হয়ে পড়ো এবং নিজের বুঝটা বুইঝা নাও। কারণ কেউ তোমাকে কিছুই প্লেটে তুইলা দিবে না’।
♪ প্রশ্ন : যে-বুঝটা থেকে অ্যালবামটা করছিলা সেটা এখন কতখানি পরিবর্তিত হয়ে গেছে?
রজার : (দীর্ঘশ্বাস) … এই প্রশ্নের উত্তরটা অনেকবার দিছি। শুরুতে ব্যাপারটা ছিল বিশের কোঠায় একজন মানুষের ব্যক্তিগত আখ্যান, যে বুঝতে পারতেছে না তার জীবনে আসলে কী হইতেছে, কেন সে অন্য মানুষজন থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে এবং উত্তরগুলাও জানা নাই। উপলব্ধিটা আসছিল একজন সফল তরুণ মিউজিশিয়ান হিশাবে আমার অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে। স্টেইজে দাঁড়ায়া বাজানোর সময় মনে হইত : শ্রোতাদের অনুভূতি আর আমার অনুভবের জায়গাটা, যে-আবেগ থেকে ব্যাপারগুলা বুঝতেছি — এই দুইটার মধ্যে বিশাল ব্যবধান আছে। ‘দ্য ওয়াল’ অ্যালবামটা এই বিচ্ছিন্নতার জায়গা থেকেই আসছে। এর জন্যে চিন্তা করলাম, বিচ্ছিন্নতাবোধটা বোঝানোর জন্যে থিয়েট্রিক্যাল অ্যাপ্রোচে স্টেইজের সামনে দেয়াল বানাইলে ক্যামন হয়! এখন জিনিশটা অডিয়েন্সদের সাথে আমার বিচ্ছিন্নতার না। গত কয়েক বছরের ঘোরাঘুরি আর শো করার পর মনে হয় এই দূরত্বটা অনেকটাই কমে গেছে যেটা বিশাল প্রাপ্তি। তাই ‘দ্য ওয়াল’-টা এখন আমরা যে-সমাজে বাস করি তার রাজনৈতিক অবস্থার সামাজিক অধ্যায়গুলার সাথে প্রাসঙ্গিক।
♪ প্রশ্ন : প্রায় ২২০ বার শো-টা করছ। এত দীর্ঘ পরিকল্পনা কি ছিল?
রজার : আমাদের কোনো আইডিয়াই ছিল না এটা নিয়ে। বিশাল ক্যারদানির দরকার হইছিল প্রথমবার এ-রকম শো করার জন্য; কিন্তু মানুষের প্রতিক্রিয়া খুব ভালো ছিল। তাই প্রায় তিনবছর টানা করতে পারছি।
♪ প্রশ্ন : আরও ওয়াল শো করার পরিকল্পনা কি আছে? নাকি এইখানেই শেষ?
রজার : ইজরায়েল যদি সাম্যের কথা বলে, সমাজে জাতিগত বৈষম্য কিংবা বর্ণবাদ চর্চা না করে আসল খাঁটি গণতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে — তাহলে আমি ওইখানে যাবো এবং ‘দ্য ওয়াল’ করব। স্টেইজ সাজানোর খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলা রাইখা দিছি, আর যেগুলা নাই সেগুলা আবার বানাবো। ইজরায়েল এবং ফিলিস্তিনের লোকজনের সাথে কথা বলছি, বিশেষ করে ইজরায়েলের লোকদের সাথে — কারণ তাদের হাতেই তো সব ক্ষমতা। দখল করা ভূমির উপর যে অবৈধ দেয়াল বানানো হইছে, হ্যাঁ — সেই দেশটার নাম ফিলিস্তিন; আর ভূমিটাও দখল করা হইছে অনৈতিক উপায়ে, এটাই বলব — সেই দেয়াল যদি সরায়া ফেলা হয় তাহলে অবশ্যই করব। কয়েক বছর আগেই এই প্রতিজ্ঞা করছি এবং এখনো সেটা আছে।
♪ প্রশ্ন : তুমি কি আশাবাদী যে এমন দিন কখনো আসবে?
রজার : খুবই ইন্ট্রেস্টিং প্রশ্ন। গতকাল রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভির চ্যানেল ঘুরাচ্ছিলাম, মানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রিপ্লে না থাকলে মানুষ যা করে আর-কী! হুট করে একজায়গায় চোখ আটকায়া গেল, ভাবলাম, ‘হুম্… ইন্ট্রেস্টিং মনে হচ্ছে কিছু’। এটা ছিল জেএলটিভি অর্থাৎ ‘জ্যুস লাইফ টেলিভিশন’। যেটা আমাকে কৌতূহলী করছিল, মানে আমি হাইসা দিছিলাম যা দেখে সেটা হলো, ‘জেএলটিভি, দ্যা চুজেন নেটওয়ার্ক’ (অট্টহাসি)। ও আল্লা! এত্ত হাসছি। কতটা অবিশ্বাস্য ভুল কথা!
ওইখানে একজন চমৎকার তরুণীকে দ্যাখাইতেছিল, যে স্ট্যান্ডউইথআস নামের একটা অর্গানাজেশন চালায়। অর্গানাইজেশনটার কাজ ছিল ইজরায়েলের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করা। শব্দটা ইজরায়েল, ইজরায়েলি বা ইজরায়েলের লোক না। অর্থাৎ ইজরায়েল দেশ আর সরকারের কৃতকর্মের প্রতি সমর্থন। তার গেস্ট আসছিল দুইজন, একজন ছিল ব্লন্ড তরুণী আর আরেকজনকে দেখে মনে হইল লোকটা ফরাশি। তাদের আলোচনার মধ্যে বিডিএস (বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাংশন) নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনজনই ঘটনাক্রমে এক ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাইল যে বিডিএস কতটা ফালতু, তৃণমূলের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই আর এটা চালানো হয় বাইরে থেকে। আরও বলতেছিল এই অর্গানাইজেশনের সব টাকা আসে বাইরে থেকে আর অ্যাম্রিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলাতে যারা এর পক্ষে কথা বলে তারা ধনী প্যালেস্টাইনিদের পুতুল ছাড়া কিছু না। অনুষ্ঠানটা সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া সহ নানা জায়গার ক্যাম্পাসের বিশাল বিশাল ওয়ালগুলা দেখাইতেছিল। খুবই সুন্দর ছিল ওয়ালগুলা, সেপারেশন ওয়ালের মতো করে করা — গা জুইড়া রাজনৈতিক স্লোগ্যান লেখা। লোকজন ঘুরে ঘুরে ইতিহাস বলতেছিল। এবং অন্যদিকে টিভিতে চ্যানেলের উপস্থিত তিনজন মডারেটরই ইজরায়েলি দখল, সন্ত্রাস আর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনটাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করতেছিল। প্রত্যেকবার আক্রমণের জন্যে মুখ খোলার সাথে সাথে তারা চলতি আন্দোলনের ন্যায্যতার প্রতি সমর্থন দিতেছিল পরোক্ষভাবে, তাদের কথা দিয়ে।
মুখ হা করে এইসব আবোলতাবোল কথা শুনে গেলাম। ভাবলাম, ‘বাহ তোমরা তো টেলিভিশন প্রোগ্রামও বানাইছো নিজেদের গীত গাওয়ার জন্যে’। তারা যখন ফিলিস্তিনের কীর্তি বলতেছে, আসলে তারা নিজেদের কথাই বলে। নেতানিয়াহুর আমলেই হাসবারা অর্থাৎ ইজরায়েলিদের প্রোপ্যাগান্ডার অস্ত্র চালু করে তেলআভিভে। এরা খুবই সংগঠিত, সবসময়ই আমার ফেইসবুক পেইজে দেখি। ইতিহাসের কোনো ফ্যাক্টের ধারই ধারে না এরা, খালি মিথ্যা বলতে থাকে, ‘এইটা আমাদের জমি, আমরাই এর মালিক, ঈশ্বর আমাদের দিছে এটা। এইখানে কোনো ফিলিস্তিনের লোক থাকত না। ফিলিস্তিনের লোকেরা সবসময়ই আমাদের হত্যার চেষ্টা করছে, এবং আমাদের অধিকার আছে নিজেদের রক্ষা করার’। তাদের প্রোপ্যাগান্ডার ভিত্তি হচ্ছে এই।
♪ প্রশ্ন : এইসব ব্যাপারে কথা বললে তো অনেকেই তোমাকে অ্যান্টি-সেমিট বলে।
রজার : (অট্টহাসি) … বলার চেষ্টা করে। কাহিনি বলি, আমার বন্ধু জি ই স্মিথের সাথে স্যাগ হার্বর নামের ছোট্ট একটা থিয়েটারে আগামী শনিবার অনুষ্ঠান করতে যাইতেছি। টিকিট সব শেষ। পোরট্রেইট নামের এই অনুষ্ঠানটা সিরিজ শোয়ের মতো, যেখানে স্মিথ অন্য মিউজিশিয়ানদের আমন্ত্রণ জানায়। সেদিন দ্যাখা হওয়ার পর ওকে জিজ্ঞাস করলাম, ‘আমরা কী করব ওইখানে?’ ও বলল, ‘চিন্তা করিও না। একটু আলাপসালাপ কইরা মিউজিক বাজাব। সমস্যা নাই কোনো। জানোই কী করতে হবে’। কিন্তু কাহিনিটা কেউ লক্ষ করছে। আমাকে কেউ-একজন স্থানীয় বৃদ্ধা ইহুদি মহিলার ব্লগের লিঙ্ক পাঠাইল; পুরা ব্যাপারটা নিয়ে প্রতিবাদ করছে সে। ঈশ্বর তার মঙ্গল করুক। তারা সবাই থিয়েটারে চিঠি লিখতেছে যাতে আমি পারফর্ম করতে না পারি। বলতে ভাল্লাগতেছে যে, থিয়েটার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো — একজন গুরুত্বপূর্ণ মিউজিশিয়ান হিশাবে আমাকে অবশ্যই বলতে দিতে হবে, কিংবা বাজাইতে। যা ইচ্ছা আমার।
আমি এমন মানুষ চিনি, যারা বলবে, ‘ঠিকাছে। দাঁড়াও। খুব ভালো তোমার বাকস্বাধীনতা আছে, কিন্তু তেলআভিভের অ্যালান পার্সন সম্পর্কে কী বলবা? তুমি তো তাকে থামাইতে চাইছিলা।’ এ-রকম সারা বিকাল কথা চালায়া যাওয়া যাবে, কিন্তু মূল ব্যাপারটা খুব সিম্পল। অ্যানালজিটা স্টেইটসের সাউদার্ন স্টেইটগুলার সাথে ম্যান্ডেলাপূর্ব দক্ষিণ আফ্রিকার সিভিল রাইটসের সাথে তুলনার মতো। আমরা সবাই জানি দক্ষিণ আফ্রিকাকে সাংস্কৃতিক আর স্পোর্টসে বয়কট করার মাধ্যমে কীভাবে দুনিয়াব্যাপী সিভিল সোসাইটির মানুষ সচেতন হইছিল সেইখানের কালোদের ওপর শ্বেতাঙ্গ-আধিপত্যবাদীদের আচরণ সম্পর্কে, আধিপত্যের ভয়াবহতা সম্পর্কে। বলতে গেলে পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ এইভাবেই ইজরায়েলের ব্যাপারটা দ্যাখে। কিন্তু অ্যামেরিকার অনেক মানুষ এ-সম্পর্কে সচেতন না, কারণ তাদেরকে জানানো হচ্ছে না। আমার কার্যক্রম ইজরায়েলি মানুষ, ইহুদি কিংবা জুডাইজমের বিরুদ্ধে কিছু না। কল্পনাও করতে পারি না তাদেরকে আক্রমণ করার চিন্তা। বলতে গেলে অনেক ইজরায়েলি মানুষ আছে, যারা ভাবে এটাই সঠিক রাস্তা তাদের সরকারের পলিসি চেইঞ্জ করানোর জন্যে। আমরা সেই ব্যাপারে আলোচনা করতে পারি, কিন্তু বাদ থাক।
♪ প্রশ্ন : ফলে হাওয়ার্ড স্টার্নের মতো কেউ যখন…
রজার : হা।
♪ প্রশ্ন : যখন সে বলল, তুমি নাকি সব ইহুদিদের আবার কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ফেরত পাঠাইতে চাও — ক্যামন লাগছে এটা শোনার পর?
রজার : শোনো, আমি ওই বোকাচোদাটার পিছনে একটা মুহূর্তও ব্যয় করব না। এর মধ্যেই করে ফেলছি, খামাখা। অন্য ব্যাপারে বলো।
♪ প্রশ্ন : তোমার নতুন অ্যালবামের কী খবর?
রজার : ভালো প্রশ্ন। সম্পূর্ণ ডেমো করে ফেলছি। এখন গিটার নিয়া, ডেমো রেকর্ডিংগুলা নিয়া রুমের মধ্যে বসে থাকি। গুতাগুতি করি, কলম দিয়া প্যাডের উপর খসখস করে লেখি মাঝেমধ্যে। মানে পুরা ব্যাপারটাকে আকৃতি দেয়ার চেষ্টা, কার্টুন স্কেচ আঁকার মতো, যাতে শেষ পর্যন্ত পেইন্টিংটা কী হবে বুঝতে পারি। আউটডোর শো-য়ের জায়গা থেকে জিনিশগুলা নিয়ে ভাবতেছি, হইতে পারে আরও কিছু সম্ভব আমাকে দিয়ে। নতুন সুরগুলাকে পুরানগুলার সাথে সমন্বিত করে কিছু করার চেষ্টা, যাতে মানুষজন শোনে। এই অ্যালবামের মৌলিক প্রশ্নটা হইতেছে, ‘আমরা শিশুদেরকে কেন হত্যা করতেছি?’
♪ প্রশ্ন : তাহলে এটা কন্সেপ্ট অ্যালবাম?
রজার : হ্যাঁ। আলাদা কিছু আর কই?
♪ প্রশ্ন : তোমার শেষ রক অ্যালবাম বের হইছিল বাইশ বছর আগে। ভক্তরা তো নতুন কিছু শোনার জন্যে মুখায়া আছে।
রজার : আসলেই। ব্যাপারটা খুবই চ্যালেঞ্জিং, আবার একই সাথে ভয়েরও। একবার মূল জিনিশটা পায়া গেলে তুমি বলবাই, ‘উম্ম! এইটা কী বোর্ড দিয়া করলে ভালো হবে, অথবা টেম্পোটা ঠিক নাই। অথবা, দাঁড়াও দাঁড়াও, থিয়েট্রিক্যাল সিন থেকে পরবর্তী ট্রাঞ্জিশনটা একটু অন্যভাবে করতে হবে।’ মানে এইভাবেই করি। কিন্তু এ-রকম কোনো প্রজেক্টের কঠিন অংশটা হইতেছে, প্রথম স্কেচ আর বেসিক আকারটা খুইজা পাওয়া, তারপর গ্রে আর য়োয়াইট বিটসে ব্লক করে ফ্যালা।
♪ প্রশ্ন : কবে বের হবে এটা বলতে পারো?
রজার : (হাসি) … আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়া ভাবি না। শীত পইড়া আছে, নিজেকে আরও কিছু করানোর জন্যে আবিষ্কার করতেছি। ভেটেরানদের নিয়ে কাজটা শেষ হইছে, খুবই ভালো ছিল। গত শুক্রবারে মিউজিক হিলস নামের এই শো-টা ওয়াশিংটনে করলাম। কন্সটিট্যুশনহলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোকের জমায়েত হইছিল। অবিশ্বাস্য। আমার সাথে বিলি কর্গ্যান আর টম মরেলোও ছিল। বিশাল প্রাপ্তি বলা যায়। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মতো। কিন্তু ভালোয় ভালোয় সব শেষ হইছে, এখন আমরা প্রজেক্টে মনোযোগ দিতে পারব।
♪ প্রশ্ন : ট্যুরে যাওয়া মিস করো? ‘দ্য ওয়াল’ ট্যুরটা তো তোমার জীবনের বেশ কয়েক বছর দখল করে রাখছিল।
রজার : হ্যাঁ। এমনকি আমরা শেষ যে গিগটা করলাম শুক্রবারে, সেটার পর চাঙ্গা হইছি অনেক। ভিতরে ভিতরে কেউ বলতেছে, ‘ফিরা আসার জন্যে দেরি করা সম্ভব না। অ্যালবামের চিন্তাগুলা পরীক্ষা করা আর জিনিশটা বের করে নিয়া আসার অপেক্ষা অসহ্য লাগতেছে’। নতুন শতাব্দীর গোড়াতে খুব সাবধানে ট্যুরিং শুরু করছিলাম। জানতাম শ্রোতা আছে। মানুষজন শেষপর্যন্ত বুঝতে পারল আমি এখনো আছি, ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’ ছাইড়া আসার পর হারায়া যাই নাই, শুধু ব্যক্তিগত কাজ আর লেখালেখিতে ব্যস্ত ছিলাম।
♪ প্রশ্ন : পিঙ্ক ফ্লয়েডের অন্য মেম্বারদের সাথে তোমার সম্পর্ক ক্যামন এখন?
রজার : নিক ম্যাসন আর আমি একজন আরেকজনকে পছন্দ করি, আমরা প্রায় পঞ্চাশ বছর যাবৎ বন্ধু। একটু খুনসুটি হইছিল ব্যান্ড ছাইড়া আসার সময় তবে ব্যাপারটা দুইজনেই বুঝছিলাম। কিন্তু যা-ই হইছিল-না-কেন সামান্য ব্যাপার ছিল, আর আমরা এখনো খুব ভালো বন্ধু। রিক মারা গেছে, সিড ব্যারেট মারা গেছে। খারাপ লাগে। ডেভিড গিল্মোর আর আমি কখনোই বন্ধু ছিলাম না, তাই যোগাযোগটা নাই। এবং সবকিছু নিয়া অনেক তৃপ্ত।
♪ প্রশ্ন : আমি জানি ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর যে তোমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে, পিঙ্ক ফ্লয়েডের কোনো রিইউনিয়ন হবে কি না। হওয়ার কোনো সম্ভাবনা তো নাই।
রজার : তার প্রতি আমার জবাব হাওয়ার্ড স্টার্নকে নিয়ে উত্তরের মতোই।
♪ প্রশ্ন : সামান্য গোছায়া বলবা?
রজার : (চিল্লায়া) না, বলব না। তুমি তাইলে আমাকে জিজ্ঞাস করলেই পারো আমার প্রিয় রঙ কী! সেটা এই প্রশ্নের থেকে কম আচোদা শোনাবে। উত্তরটা তো জানেই সবাই, তারপরেও সবাই জিজ্ঞাস করে। খুবই আচোদা। ধৈর্য হারানোর জন্য দুঃখিত।
♪ প্রশ্ন : তোমাকে দোষ দিতেছি না। তার জন্যেই জিজ্ঞাস করলাম বিরক্ত না কী!
রজার : জানি। তুমি শুধু তোমার কাজটা করতেছ।
♪ প্রশ্ন : ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে কিছু বলা যাক। পোলে ওর ভালো অবস্থা দেইখা শঙ্কিত?
রজার : হ্যাঁ। ভীতিকর ব্যাপার, সম্পূর্ণই ভীতিকর। কিন্তু এমন কোনো রিপাব্লিক্যান প্রার্থী নাই যারে দেইখা ভয় পাবা না। তারা দুনিয়ার সবাইকে মাইরা ফেলার জন্যে এত্ত মুখায়া আছে। জানি এগুলা বললে অবস্থা গরম হয়া যাবে, কিন্তু তাদের আচরণ এত ফ্যাসিস্ট, সব্বাই। কারো কথা শোনার যোগ্যই না। ট্রাম্প তো সবচেয়ে বেশি আপত্তিকর। সে কিছু পয়সা কামাইতে পারছে দেইখা নিজেরে খুব চালাক মনে করে, আর একটা বালের টিভি শো আছে ওর। ও কিছুই না, কিছু বোঝার ঘিলুই নাই ওর।
♪ প্রশ্ন : তাহলে সে সব পোলে এত আগায়া আছে ক্যান?
রজার : কারণ একমাত্র রিপাব্লিক্যান ইলেক্টোরেট যে আছে, অর্থাৎ যাকে নিয়ে আমরা কথা বলতেছি তাকে বিদ্বেষপূর্ণ মিডিয়া সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাইখা দিছে, এই মিডিয়ার নেতৃত্বে আছে ফক্স নিউজ। কিন্তু মিডিয়ার রাঘব বোয়ালেরা, যারা তোমার দিকে তাকায়া একটু হাসবে হয়তো — তারা সবকিছু কাছে থেকে দেখে যাইতেছে পার্টিকে অনুসরণ কইরা। এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনোকিছু নিয়াই প্রশ্ন করতেছে না। বিশেষ করে এই দেশের উদ্দেশ্য, আকাঙ্ক্ষা নিয়া, এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র কী হইতে চায় এই ব্যাপারে। ১৩৫টা দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বেইজ আছে, কিন্তু এটা নিয়া কাউকেই প্রশ্ন করতে দেখতেছি না। প্রতি বছর জাতীয় সম্পদের বড় একটা অংশ ঢালা হয় পেন্টাগনে পুরা দুনিয়াটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য, অন্যের বিরাগভাজন হওয়ার জন্য। কিন্তু কেউই এইসব ব্যাপার নিয়ে বলতেছে না। এই মহান জাতির উপরে এই নিঃশব্দ ভর করছে, এবং আমার ধারণা এই নিঃশব্দ দ্রুতই ভাঙবে।
অনেকটা ফিলিস্তিনের জন্যে ন্যায়বিচারের আন্দোলনের চেষ্টা এবং অর্জনের মতো ব্যাপারটা। স্থিত হতে যাচ্ছে, শুধু ক্যাম্পাসগুলার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না আর এইসব। চার্চের মধ্যে ছড়ায়া যাবে, প্রেসবিট্যারিয়ান চার্চের প্রতিনিধির সাথে আমার কথা হইছে। হেওলেট-প্যাকার্ড, মটোরলা, ক্যাটারপিলারের মতো যেসব অর্গানাইজেশন ফিলিস্তিনের উপর অত্যাচারের জন্যে দায়ী, এবং সেটেলমেন্টকে যারা সাপোর্ট করতেছে, যেটা কি-না একেবারেই অবৈধ — সেইসব সংস্থাকে বর্জন করার জন্যে ভোট দিছে চার্চ। এইসব তো কখনোই জ্যুস লাইফ টেলিভিশনে শুনবা না। তারা জীবনেও নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করবে, ‘তোমাদের কি মনে হয় না সেটেল্মেন্ট প্রোগ্র্যামের এই প্রশ্নে পুরা দুনিয়া বিশ্বাস করে তোমরা অবৈধ? আর যেটাকে তোমরা নিজেদের জায়গা ভাবতেছ সেটা তোমাদের না?’ দাঁড়াও। ভাবতে দাও। আইনটা লেখা আছে, শুধুমাত্র ডকুমেন্টেই, দেইখা নিও। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ইজরায়েল দৈনিক প্রায় ছয় লক্ষবার আইন ভাঙতেছে, শুধুমাত্র সেটেলমেন্ট ইশ্যুতেই। প্রত্যেকটা ইহুদি সেটলার ঘুম থেকে উঠার পর সেইখানে আইন ভাঙে। মিলিট্যারি শক্তি দিয়া জায়গা দখল কইরা সেখানে কোনো ধরণের স্থাপনা করার অনুমতি কারো নাই।
♪ প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোনো যুদ্ধ কি তোমার কাছে জাস্টিফাইড?
রজার : না। একেবারেই না। যেসব যুদ্ধ হইছে সেগুলোর কোনোটাই মেনে নেয়া যায় না, যদি না তুমি মনে করো এইটাই সহজবোধ্য। গুয়েতেমালা, নিকারাগুয়া, চিলিতে অ্যামেরিকা পয়সা ঢাইলা তলে তলে ফন্দি কইরা সেইখানকার শাসন পরিবর্তন করে দিছে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষের উপর একনায়কতন্ত্রকে চাপায়া দিছে। চিলি সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। সালভাদর আলেন্দেকে সরায়া দিয়া অগাস্তো পিনোশেকে বসাইছে।আমি যখন বলি ‘তারা’, আমি ‘তুমি’ বোঝাই। যুক্তরাষ্ট্র এটা করছে। সবাই জানে হেনরি কিসিঞ্জার এটা করছে, কী হইছে সেইখানে এটাও জানে। যখন এইসব করো, তখন তো এইটাকে শুধু যুদ্ধ বলা যায় না। গুয়েতেমালা কিংবা ভেনিজুয়েলা… সব জায়গায়ই। এই তালিকা বিশাল। ভিয়েতনাম, আরেকটা। সম্পূর্ণ অনৈতিক ছিল।
♪ প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কি তুমি শুধু যুদ্ধ হিশাবেই দ্যাখো, ড্রেসডেনের বোম্বিং এবং যুদ্ধাপরাধের পরেও?
রজার : নিশ্চিত সব পক্ষ দ্বারাই যুদ্ধাপরাধ হইছে, এবং যুদ্ধের এই জিনিশটাই বাল। মানুষ যুদ্ধে গেলে অপরাধ করেই, কেউই নিয়ম মাইনা চলে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তিও অনেক যুদ্ধাপরাধ করছে, যুদ্ধের শেষের দিকে মূলত জার্মান সভ্যতার মানুষদেরকে যেভাবে পোড়ানো হইছে। জঘন্য। ড্রেসডেন শুধু না, হ্যামবুর্গ, ডাসেলডর্ফ। ১৩টা নগর কোনো মিলিট্যারি কারণ ছাড়া ধ্বংস করে ফেলা হইছে ইচ্ছামতন, যা খুশি তাই করে। তারা যেটা করছে সেটা সন্ত্রাস। আকাশ থেকে কীভাবে মানুষ মারা যাবে এটা বের করছে তারা, এবং যার ফল ভোগ করছে জাপান। শুধু হিরোশিমা নাগাসাকিতে না, টোকিওতেও যে-পরিমাণ বোমা ফ্যালানো হইছে বিনা কারণে। এইসবই যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু এগুলা কখনোই গোনা হবে না কারণ আমরা জিতছি। কোনো অভিযোগও নাই তাই তোমার প্রতি।
♪ প্রশ্ন : কিন্তু এতকিছুর পরেও তো যুদ্ধ করা ছাড়া উপায় ছিল না, তাই না?
রজার : অবশ্যই। হ্যাঁ। হিটলার… প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে তাকায়া বলতে পারো, ‘আচ্ছা, ভুলটা কী হইল? ন্যাশনাল সোশ্যালিজম আর নাৎসি জার্মানির পেছনের রাজনৈতিক কারণটা কী ওই ওয়েইমার রিপাব্লিকে? এবং তারপরে যা হইল? হিটলার কীভাবে নেতা হইল? এবং হ্যানত্যান … ‘যে-কেউ ইতিহাসের দিকে তাকাইতে পারে, আমার থেকে অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আছে — ইতিহাসবিদ, রাজনৈতিক বক্তা — যারা বলতে পারবে কী হইছিল, এবং অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এখনকার সাথে কিন্তু সেই সময়টার অনেক মিল। তারা বলবে, ‘আমাদের সাবধান হওয়া উচিত আসলে কী হইতে যাইতেছে এটা নিয়ে’। এর জন্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর বেন কার্সন এত ভয়ঙ্কর। আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি — যেসব ইলেক্টরেটরা জানেবুঝে কম, শিক্ষা নাই, এবং যে-দেশের নাগরিক সেই দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া সবসময় যদি তাদের নামে একটা প্রোপ্যাগান্ডা চালায়া যায় — তাহলে ভীষণ একটা বিধ্বংসী কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
♪ প্রশ্ন : আর এইদিকে বেন কার্সনও তো ওবামাকে হিটলারের সাথে তুলনা দিছে।
রজার : এটা ভয়ঙ্কর। মাঝেমাঝেই লোকজন আমাকে বলে (সাউদার্ন টানে মক কইরা), ‘ অই মিয়া! তুমি ইংল্যান্ডে ফিরা যাও না ক্যান?’ আর আমি বলি, ‘ শোনো, তুমি তোমার সংবিধান পড়ছ? সংবিধানের প্রথম সংশোধনী?’ মানুষজন আমার সমালোচনা করে কারণ গানে আমি রোন্যাল্ড রিগ্যানের সমালোচনা করছি। কিংবা ‘লিভিং বৈরুত’-এর কথাই বলা যায়, টনি ব্লেয়ারের সমালোচনা আছে। তারা বলবে (আবারও সেই মক টানে), ‘এইসব বাল শোনার জন্যে পয়সা দেই নাই। ও ভাগে না ক্যান এখনো?’ আচ্ছা। যাই না কারণ বিশ্বাস আছে, এবং আমি একজন লেখক, এবং একজন লেখকের দায়িত্ব এইটাই। তোমার দরকার না হইলে পয়সা দিয়া টিকেট কাইটা আসার দরকার নাই, কিন্তু আমাকে চুপ করায়া দেয়ার অধিকার তোমার নাই। এটা অবৈধ।
♪ প্রশ্ন : ডোন্যাল্ড ট্রাম্প যদি জিতে তাহলে এই দেশ ছাইড়া চইলা যাবা?
রজার : না। আমার মনে হয় যদি ট্রাম্প জিতে, তাহলে আমরা যারা আছি, তাদেরকে খুব দ্রুত সঙ্ঘবদ্ধ হইতে হবে যাতে করে সে পুরা দুনিয়াটা ধ্বংস না কইরা ফেলতে পারে। তা না হলে কইরা ফেলবে। অর্ধেক চান্স পাইলেই সে করবে। মনে হয় না সে নির্বাচিত হবে, কিন্তু যদি হয় তাহলে অ্যামেরিকার জন্যে এইটা অশনি সংকেত। যা-ই হোক, আমাদের নর্থের ভাইবোনদেরকে শুভেচ্ছা তারা জাস্টিন ট্রুডোকে নির্বাচিত করছে এই কারণে। স্টিফেন হারপারের শেষ দেইখা ভালো লাগতেছে।
♪ প্রশ্ন : নির্বাচনগুলা প্রমাণ করে পোল কিন্তু তেমন বিশ্বাসযোগ্য কিছু না। ট্রাম্পকে দেইখা এত ভয় পাওয়ারও কিছু নাই।
রজার : হ্যাঁ। তা ঠিকাছে। এটা একটা দীর্ঘ, প্যাঁচানো, দুর্নীতিগ্রস্ত ক্যাম্পেইন। বার্নি স্যান্ডার্স হচ্ছে সেই কম মানুষদের একজন যে বলছে সিটিজেন ইউনাইটেড অ্যামেরিকার জুরিসপ্রুডেন্সকে পেছনে ধইরা রাখতেছে অনেক আগে থেকে। সম্ভবত ১৯১৪ হ্যারিসন অ্যাক্ট থেকে। সিটিজেন ইউনাইটেড কন্সটিট্যুশনের আতঙ্কজনক আত্মসাৎ বলা যায়। এর কারণে দ্যাখা যাইতেছে যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট পলিটিক্যাল অ্যাপয়েন্টিস, তারা সরাসরি পার্টি লাইনে ভোট দেয়। ফলে, তুমি যদি পাঁচজন রিপাব্লিক্যান আর চারজন ডেমক্র্যাট পাও, তাহল মতামত হবে রিপাব্লিক্যান। বুশকে ফ্লোরিডায় নির্বাচিত করছিল আল গোর থেকে ছিনায়া নিয়া। সিটিজেন ইউনাইটেডের সাথে যা হইছে, যেইখানে যে-যতখুশি টাকা ঢাইলা যে-কোনোকিছু করায়া নিতে পারে।
♪ প্রশ্ন : আমার মনে হয় স্যান্ডার্স নিয়ে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপারটা হইতেছে সে হইল ফার-লেফট, জাতীয় টিকেটে তার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভবনা কম। ডেমোক্র্যাটরা যদি তাকে নির্বাচিত করে, তার মানে গিয়া দাঁড়াবে হোয়াইট হাউজ রিপাব্লিক্যানদের হাতে গছায়া দেয়া।
রজার : তুমি সম্ভবত ঠিক বলতেছ, কিন্তু আশা করি তোমার কথা ভুল। মানুষজন বামঘেঁষা হইলে রাজনীতিতে প্রান্তিক হয়া পড়ে। কিন্তু এই কারণেই তাকে শ্রদ্ধা করি আমি, কারণ সে যখন সত্য বলে তখন সত্য কথাটাই বলে। তাকে লেফট উইঙের মনে হইতে পারে, কিন্তু তার প্রধান কারণটা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ডানপন্থী মিডিয়া আমাদেরকে যেইভাবে নানা জিনিশ গিলাইছে। এবং অবস্থা খারাপ হইতে হইতে ভিন্নমতের জায়গা থেকে এই স্বরগুলা একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ফলে তাকে একটু অন্যরকম শোনাইতে পারে, এবং এটাই তার সবচেয়ে ভালো দিক।
♪ প্রশ্ন : মনে হয় ‘সোশ্যালিস্ট’ শব্দটা শুনলেই মানুষ এখন ভয় পায়।
রজার : সোশ্যালিজম ভালো জিনিশ, খারাপটা কী? আমার শোনা একমাত্র দেশ তোমাদেরটা যেইখানে পোলাপানদের সকালে বাসে করে স্কুলে পাঠায়। এটা সোশ্যালিস্ট না হইলে কী? আমি সিরিয়াস। দুনিয়ার আর কোথাও শুনি নাই। তারপর তুমি বলবা, ‘কী বলতেছ? আমরা চাই না আমাদের পোলাপানদের বিপজ্জনক জায়গা দিয়া প্রতিদিন স্কুলে যাক। তাই আমরা বাস পাঠাই দরজার সামনে থেকে তাদের তুলে নেয়ার জন্যে, তারপর আবার পৌঁছায়া দেই।’ তারপর বলবা, ‘বাহ! চমৎকার’। এটা সোশ্যালিজম, এবং একেবারে ঠিক। তোমরা যদি মেডিসিনকেও এইভাবে ছাড় দিতে পারতা, তাহলে আসলেই এই দেশকে সোশ্যালিস্ট দেশ বলা যাইত। অন্তত তোমাদের একটা ভালো মেডিক্যাল সিস্টেম আছে এখন, বারাক ওবামা আর প্রশাসনের নির্বাহীদের একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য। কিন্তু অন্য তিরিশটা সভ্য দেশের তুলনায় এই হেলথকেয়ার কিছুই না। তোমার হেলথকেয়ার খুবই ভালো যদি তুমি খুব খুব খুব বড়লোক হও আর তোমার কোনো দুর্লভ ক্যান্সার হয়। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ব্রেইন সার্জনগুলা তোমাদের দেশে, অথচ কত কম মানুষ এই সুবিধাগুলা পায়। তোমাদের হেলথকেয়ার খুবই খারাপ, এবং দুনিয়ার যে-কোনো দেশের তুলনায় দ্বিগুণ। আর পাওও অর্ধেক সেবা, কেন জানো?
♪ প্রশ্ন : ক্যান?
রজার : কারণ এইগুলা ইনশ্যুরেন্স কোম্প্যানি আর ড্রাগ লর্ড, ড্রাম কোম্পানির লাভের খাতায় যায়। তারা তাদের লাভটা বুইঝা নিছে, কিন্তু এমন হওয়া উচিত না। একটা সহজলভ্য দামে ওষুধ সব লোকের জন্যে বিতরণ করা উচিত, সবসময়। অবশ্যই ইনশ্যুরেন্স কোম্প্যানি আর ওষুধ কোম্প্যানিগুলা কিছুটা লাভ করতেই পারে, কিন্তু তেমন তো হয় না। তারা তো সব খায়া ফ্যালে। সবার হৃৎপিণ্ড চিইরা যত তাড়াতাড়ি পারে সবকিছু নিতেছে। এই দুনিয়াতেই আমরা বাস করি।
♪ প্রশ্ন : ধন্যবাদ রজার। সবকিছুর জন্যে।
রজার : তুমি জানো তোমাদের কী দরকার?
♪ প্রশ্ন : কী?
রজার : সোশ্যালিজম।
♪ প্রশ্ন : হ্যাঁ!
রজার : কথা বলে ভাল্লাগছে। চিয়ার্স।
শফিউল জয়। শিক্ষার্থী, নৃতত্ত্ব। সংগীতবীক্ষক ও অনুবাদক।
- বিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে ইতালো ক্যালভিনো ১ || শফিউল জয় - July 21, 2020
- ইন্ডি মিউজিকের ঢাকা : বঙ্গাব্দ ১৪২৫ || শফিউল জয় - June 7, 2018
- সাম্প্রতিক মেঘদল || শফিউল জয় - March 6, 2018
COMMENTS