কিছু সংলাপ কিছু প্রলাপ ও মহীনের ঘোড়ারা || আহমদ মিনহাজ

কিছু সংলাপ কিছু প্রলাপ ও মহীনের ঘোড়ারা || আহমদ মিনহাজ

কলকাতার নব্বই। সেই চিরচেনা আড্ডা ও কফিহাউজ; — দশকের-পর-দশক পার করে ফের নব্বইয়ে এসে নতুন তরঙ্গের জন্ম দিয়েছিল।  ষাট ও সত্তরের উত্তাল মুহূর্তগুলো ফিরিয়ে আনা নব্বইয়ের এই কলকাতা আর কফিহাউজ দিয়ে হওয়ার ছিল না, তবু নতুন বুদ্ধিজীবিতা দানা বাঁধছিল শহর কলকাতায়। নব্বই ছিল সম্ভবত শেষ দশকিবৃত্ত যেটি বিগত ও আগত দশকের টানগুলোকে একতারে বেঁধে সময়ের ডিল্যুশনটাকে ধরতে চেষ্টা করছিল।

‘মহীনের ঘোড়া’-র গৌতম চট্টোপাধ্যায় অশির সঙ্গে এই দশকটাকে নিজের করে নিয়েছিলেন। ছবির সবগুলা গান ওঁর কম্পেজিশন। একেকটি গান যেন প্রলাপ ও সংলাপের মধ্যবর্তী তির; — বুকে ধক করে লাগে। গৌতম নিজের সময়ে এবং এখনও আনপ্যারালাল হয়েই আছেন, অন্তত আমার কাছে। কলকাতার পরবর্তী দশকি বুদ্ধিজীবিতা, গুলতাপ্পি, সাহিত্য-সংগীত-সিনেমা-নাটক ঘিরে সৃষ্ট সব তরঙ্গ এই গৌতমকে কতটা ধারণ করতে পেরেছে সে এক প্রশ্ন হয়েই রইল। সুমন-অঞ্জন-নচিকেতাকে মনে রেখে কথাটি বলা। যেমন আখন্দ ভ্রাতাদের বাংলাদেশের নব্বই দশকি গানের ধারা কেন যেন ছুঁয়েও ছুঁতে পারল না। ‘ঘুড্ডি’ সিনেমায় হ্যাপি একচিলতে বাঁধাই হয়েই রইলেন, ব্যাস এটুকুই!

আজম খানরা আজো ডকু কিংবা ফিকশনের বাইরে ব্রাত্য হয়ে আছেন। নিজের ও পরবর্তী সময়ের মাঝ বরাবর চলে-যাওয়া দাগ যে-সীমানা রেখে যায়, দূরত্বের যে-বোধ জাগায়, সে-রকম এক দূরত্বের মধ্যে হ্যাপির তিরোধান ঘটল। তারপরেও বাংলাদেশের ব্যান্ডগানে যে-বিপ্লব সেটি কলকাতায় লক্ষ্যভেদী না-হওয়ার কারণ কী গৌতমের সংবেদি গিটারে লুকানো অনিকেত অনুভবকে পড়তে না পারার কারণে? উত্তর জানা নেই, তবে অশোক বিশ্বনাথানের হাতে বানানো ছবিখানের মধ্যে হয়তো এর উত্তর খোঁজা যেতেও পারে।

‘কিছু সংলাপ কিছু প্রলাপ’ নামে নব্বইয়ের অন্তে এসে রিরিজ করেছিল সিনেমাটা। জাতীয় পুরস্কারও পায় বলে শুনেছি। আমাদের এখানে তো বিচিত্র অঙ্গে ছবি বানানোর রেওয়াজ প্রবল নয়। ধারাটাই গড়ে ওঠেনি এখনো! কলকাতা এই জায়গায় অনেকখানি এগিয়ে। সে ওই সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল-তাপসের হাত ধরে সিনেমার নবতরঙ্গটা জন্ম নিয়েছিল বলে। পরে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত থেকে ঋতুপর্ণ, গৌতম ইত্যাদি হয়ে আজকের সৃজিত-কৌশিকরা টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

যা-হোক, আপনি/আপনারা হয়তো অনেক আগে দেখে ফেলেছেন, তবু লিঙ্কটা দিলাম। সময়-সুযোগ করে আরেকবার না-হয় ঘুরে আসলেন। অন্তত গৌতমের বহুবার শোনা এই গানগুলোকে নতুন করে রি-ডিসকভার  করার খেয়ালে না-হয় আরেকবার ঘুরে আসলেন। লিঙ্কের সঙ্গে গৌতমের লিরিক্সখানা জপ করতে-করতে বিদায় বলি :—

‘কিছু সংলাপ কিছু প্রলাপ’ সিনেমাটি দেখতে এইখানে ক্লিক করুন
‘কত কী করার আছে বাকি’ গানটি শুনতে এইখানে ক্লিক করুন

কত কী করার আছে বাকি
বেলা বয়ে যায়
কী করে এভাবে আমি থাকি

ভেবে ভেবে সারাদিন কাটে
বলো কী উপায়,
তোমারও কি এ-রকম ঘটে?

ঠিক কী যে চাই, খুঁজে বেড়াই
কূলকিনারা ভেবে না পাই
কী করি বলো না,
হা-হুতাশ গেল না!

সব ছেড়েছুঁড়ে বহুদূরে
সরে যাই তবে,
আর কী-বা হবে?
কিছু তো হলো না এ-জীবনে
বৃথা কালক্ষয় …


আহমদ মিনহাজ রচনারাশি
তাৎক্ষণিকামালা

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you