কামের চে’ অকামে আমার আগ্রহ আজকের না। তাই বাউল মকদ্দস আলাম উদাসী আমার পুরানা স্বজন। দুনিয়াবি কোনো কাজে তো আমার সফলতা শূন্যের কোঠায়। তাই নিজের ঘরে কম্পিউটারে লিখতে বসলে বউ এসে কাঁটা ঘায়ে লবণের ছিঁটা দিয়ে যায়, বাকশো বাজাইতাছ? বাজাও…
জাগতিক হিসাবে চূড়ান্ত ব্যর্থ সত্তর বছর বয়সের বাউল উদাসী তাই আমার শুধু স্বজন নয় বন্ধুও।
শীতকালের সবুজ হাওরে হাওরে ঘুরে বেড়ানোটা আমার নেশা। একাই যেতে হয়। একবার এক ঘনিষ্ঠজনকে সঙ্গী হওয়ার অফার করেছিলাম। লোকটা শুনে আমার দিকে খুব অবাক চোখে তাকিয়েছিল। সেই থেকে একা-একাই ঘুরি। মা বেঁচে থাকতে আমার মনের কথা বুঝে মাঝেমাঝে বলতেন, —
‘মন মিললে মেলা,
না মিললে একলা-একলা।’
গরিবের সাথে গরিবের দুস্তি জমেও ভালো, টিকেও অনেক দিন। তাছাড়া উদাসীভাইয়ের সাথে আমার একটা মিলও আছে; তিনি সুনামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় গান রচনা করেন। আমিও আমার লেখায় সুযোগ পেলেই ময়মনসিংহের মুখের ভাষা বসিয়ে দেই। তাই মাঝেমাঝে উদাসীভাইকেই সঙ্গী লই। খুব বেশি দূর যেতে হয় না। দশ-বিশ টাকা খরচ করে একটু এগিয়ে গিয়ে যানবাহন থেকে নেমে পড়লেই হয়। সুনামগঞ্জে হাওর হলো মায়ের মতো, —
‘যেদিকেই হাত বাড়াও,
মায়ের আঁচলের নাগাল পাও।’
এবার উদাসীকে একটু খোলাসা করতে চাই। জন্ম তার ছাতকের চড়বাড়া গ্রামে। স্থানীয় কওমি মাদরাসায় দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় প্রধান হুজুরের সাথে রাগ করে আনুষ্ঠানিক জ্ঞানার্জনে ইতি দেন। তারপর মায়ের সাথে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে। মনে ইচ্ছা সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টাকে তালাশ করবেন। তিনি আজ পঁয়ষট্টি বছর ধরে গানের সাধনায় আল্লাহকেই তালাশ করছেন।
উদাসীর সাথে হৃদয়ে হৃদয়ে সমম্পর্ক আমার আঙুলে-গোনা তিরিশ বছরের। তাই ফোন দিলে তিনি এই অধমকে বিমুখ করেন না। শুকনা হাওরের নির্জন থেকে নির্জনতর সবুজের মাঝে আমরা পাশাপাশি দিনের পর দিন হেঁটেছি আর কথা বলেছি। চারপাশ থেকে দুনিয়াটা দেখেছি একজন সত্যিকারের বাউলের চোখে।
২০১৭ সনের শীতে হাওরে হাওরে ঘোরার সময় হঠাৎ একদিন মনে হলো আমি ভুল করছি। উদাসীভাই কথায় কথায় বাউলের জীবন, ধর্ম, সংসার, আল্লা ও পরকাল বিষয়ে যেসব আলোচনা করে তা লিখে রাখা উচিত। সেই ইচ্ছা থেকেই গরিবের এই সংগ্রহ।
শেখ লুৎফর : যতটা জানি, আপনি মাদরাসার ছাত্র ছিলেন। তো গান লিখতে শুরু করলেন কেন?
দাড়ি-গোঁফের আড়াল থেকে উদাসী নিঃশব্দে হাসল। সেই হাসি রহস্যের না বিদ্রুপের? সংসার ছিল। সন্তানও ছিল। একে একে তিন সন্তানের অকাল মৃত্যু হলো। স্ত্রী গেল। এখন একমাত্র কিশোর পুত্রকে নিয়ে বৈষ্ণব সাধক রাধারমণের ভিটার পাশেই ছয়শটাকা ভাড়ায় একটা রুমে থাকে। ছেলেটা রিকশা চালায়। তাই বাইরে-বাইরেই কাটে তার। রান্নাবান্নায় নানান ঝক্কি। তাই পাশের বাজারে গিয়ে একটা চা আর একটা শুকনা রুটিতে কাটে তার দিনের পর দিন। আয়-রোজগার নাই বললেই চলে। মানুষের তো বুক নাই, চোখ নাই। তাই ক্ষীণদৃষ্টির ভোগী মানুষ আড়ালে-আবডালে রসিকতা করে উদাসীকে বলে, উপাসী।
উদাসী : আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কত আর বয়স। খুব বেশি হলে বারো-তেরো। আমাদের ক্লাসে একটা উর্দু কিতাব ছিল ‘তালিমুল ইসলাম।’ সেখানে একটা প্রশ্ন ছিল, ওয়াজিবুল ওজুদ ক্যায়া মানা হ্যায়? ওয়াজিবুল ওজুদ কিসকো কাহতে হ্যায়?
অর্থাৎ, ওয়াজিবুল ওজুদ কী এবং কাকে বলে? উত্তর : যা নিজে নিজে সৃষ্টি হয়েছে তা-ই ওয়াজিবুল ওজুদ। ইসলাম এইটাই শিক্ষা দিতেছে যে, আল্লাহ ওয়াজিবুল ওজুদ।
কত আর বয়স! এই বারো-তেরো। চারপাশে যা-কিছু নতুন দেখি, শুনি, — তার বিষয়ে মনে নানান জাতের প্রশ্ন আনাগোনা করে। তাই আমার মনে এক জিজ্ঞাসা, আল্লা নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে। তার কোনো বাপ-ভাই নাই, স্বজন নাই! দিনটা শুক্রবার। ভাবতে ভাবতে মাদরাসার মসজিদে গেলাম জুম্মার নামাজ আদায়ে। সবাই ঘাটে ওজু করছে। আমাদের মাদরাসার মোহতামিমও ওজু করছেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, হুজুর, এই-যে তালিমুল ইসলামে একটা কথা আইছে, ওয়াজিবুল ওজুদ। এইটা আমার কাছে যেমন…।
হুজুর চিৎকার দিয়ে উঠলেন, এইত্, তোমারে এইরকম কথা কে শিখাইছে? তোমার উপর তওবা লাজিম।
আমার উপর তওবা লাজিম? কিন্তু আমি তো জানতে চাইছি আল্লাহ সম্বন্ধে, তাঁর অস্তিত্ব সম্বন্ধে। আল্লাকে জানতে চাইলেই যদি পাপ হয়ে যায়, তবে অন্ধের মতো বিশ্বাস করাটাই কী আল্লা! অন্ধের মতো কতকগুলা কানুন মেনে চলাই কী ধর্ম! কোন যুক্তিতে এইটাকে শিক্ষা বলা যায়? শিক্ষা তো আলো।
মাদরাসায় আর গেলাম না। মা-ও ঘোষণা দিলেন, মাদরাসায় না গেলে ভাত পাইতে না।
বুকভরা অভিমান নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। মনে অজানাকে সন্ধানের ইচ্ছা। ‘মান আরাফা নাফছাহু, ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু। অর্থাৎ যে নিজেকে চিনেছে, সে তার খোদাকে চিনেছে। কিংবা আরেকটু এগিয়ে বললে, ‘যা আছে ভাণ্ডে, তা-ই ব্রহ্মাণ্ডে।’ শুনেছি সক্রেটিসও নাকি বলতেন, ‘নিজেকে চিনো।’ বাউল ধর্মও নিজেকে চিনে নেওয়ার ধর্ম। একজন বাউল সারাজীবন এই সাধনাই করে। শাহ ছাবাল আলী বলে গেছেন, —
‘অলীরে ডংসিল নাগে ওঝা নাই নগরে,
ও মন শিক্ষা লও অন্তরে।’
উদাসী থামলেন। সূর্য পশ্চিমে একটু ঢলে পড়েছে। তাই হিজল আর করচ গাছের ছায়া এখন আরেকটু ঘন। দিন-রাত, সকাল-দুপুর পলে পলে স্রষ্টা তার সৃষ্টির অঙ্গে অঙ্গে নানান রঙ্গে দেখা দেয়। দেখার চোখ যার আছে সে দেখে। উদাসী আসন ভিড়িয়ে বসে ছিলেন। মাথা সোজা করে বুক ভরে দম নিলেন। ঘন সবুজের মাঝে সোনার বরন রোদ। বিশ্বসংসারের এই ব্রহ্মমুহূর্তটা কী উদাসী চোখ বুজে ধরতে চাইছেন? আমারও কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। তাই সবুজ ঘাসে শরীর এলিয়ে দেই। চোখের সামনে শুধু অসীম শূন্যতা ঝকঝকে নীলে স্তব্ধ হয়ে আছে।
আমি ছোট্ট ব্যাগ থেকে পানির বোতল আর বিস্কুট বের করি। দুইজনেই নিশব্দে খাই। উদাসীভাইয়ের সাথে বসে থাকলে কথা না-বলেও অনেক কথা বলা হয়। খাওয়া শেষ হলে দুইজনই সিগারেট ধরাই। মাথার উপর থেকে সূর্য একটু হেলে পড়তেই সবুজ হাওরের রং আরেকটু গাঢ়তা পায়। সিগারেটের শেষ দমে তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলে উদাসী বলেন :
ইমাম গাজ্জালি তাঁর ‘ইয়াহিয়া উলুম ফিদ্দিন’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ‘তাফাক্কুরু সায়াতিন খাইরুন মিন-ইবাদিতি সিত্তিনা সানাতিন।’ অর্থাৎ স্রষ্টার সৃষ্টিকে যে একপলক ভাবে তার সত্তর বছর নফল এবাদতের সমান নেক হয়। এই-যে হাওর, এর মধ্যে দ্যায়া আমরা কী স্রষ্টার পরশ পাই না? যে-আত্মার এই পরশ অনুভব করার ক্ষমতা আছে তাকে পরমাত্মা বলে। আত্মা পাঁচটি। তার মধ্যে পরমাত্মা প্রবল। পরমাত্মাই পরম ঈশ্বর। ইকবাল তার খুদিদর্শনে বলেছেন, আত্মাই আল্লা। এবং আল্লাকে পাওয়ার মূল ক্ষেত্রই আত্মা। সুরা যারিয়ত-এর ২১ নং আয়াতে আল্লা বলেছেন, —
‘ওয়াফি আনফুসিকুম আ’ফালা তুবসিরুন।’
‘আমি তোমাদের আত্মার মাঝেই বিরাজমান তা-কী তোমরা দেখ না?’
শেখ লুৎফর : নামাজ বিষয়ে কিছু বলবেন কী?
উদাসী : উত্তর-দক্ষিণ-পুব-পচ্চিম যেদিকেই যাই খালি নামাজের তাগিদ। নামাজ! নামাজ! নামাজ কায়েম করো। নামাজের এত চাপ যে তা সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ বাস-ট্রাক-রিকশার বডিতেও লিখে রাখে, ‘নামাজ কায়েম করুন।’ আরে বেটা, নামাজ তো কায়েম করমুই। তার আগে খুঁজে দ্যাখ-না নামাজ শব্দটা কী? নামাজ ফার্সি শব্দ। যার অর্থ সালাত। আরবি এই সালাত শব্দের অর্থ চারটি : ১. দোয়া। ২. তাসবিহ। ৩. রহমত। ৪. ইসতিগফার। খালি অঙ্গ সঞ্চালন আর তিলাওয়াতেই নামাজ না। নামাজের সাথে কায়েম কথাটা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। কায়েম অর্থ : সুদৃঢ়, স্থায়ী, মজবুত, পাকাপাকিভাবে প্রতিষ্ঠিত। তার মানে নামাজের মধ্যেই সৃষ্টি আর স্রষ্টা, পরমাত্মা আর পরমেশ্বরের মিলন ঘটে। শুধু অঙ্গভঙ্গিতেই না। মননে, মগজে, মজ্জায় নামাজকে ধারণ করতে হয়।
উদাসী গভীর নিশ্বাস ছেড়ে দূরে তাকিয়ে থাকে। কথা বলতে বলতে রেগে গেলে উদাসীভাই সিলেটি বুলির দিকে ঝুঁকে পড়ে। আবার কখনো ভাবের গভীরে যেতে যেতে তার গলার স্বর অন্যরকম মাত্রা পায়, ভাষা তার অজান্তেই বদলে যেতে যেতে মানভাষার দিকে হাত বাড়ায়।
শেখ লুৎফর : আমাদের মাঝে একটা সহজ প্রচার আছে, ইসলামে গান নিষেধ। আপনার মতামত কি?
উদাসী : গান পাপের কাজ, কিন্তু কোন গান?
১. যে-গান শুনলে মানুষের কাম জাগে।
২. কেউরে উদ্দেশ্য করে গান গাওয়া হারাম।
৩. বিনা ওজুতে গান গাওয়া মুকরো-এ-তাহরিমা।
৪. বিয়ের গান, ঈদের গান, দেশাত্মবোধক গান মুস্তাহাব।
৫. নিজের আত্মশুদ্ধি ও খোদার সন্তুষ্টির জন্য গান গাইতে হয় বিতিরের নামাজের পর।
শেখ লুৎফর : কেন আপনি আঞ্চলিক ভাষায় গান লিখেন?
উদাসী : আমি হাওরবাসীর ভাষা তুলে নিছি। আমি তো হাসন রাজা না। করিমভাই না। আমি তো নিজে আমি।
শেখ লুৎফর : একটা সময় ছিল সুনামগঞ্জ মানে বড় বড় পদকর্তা, বড় বড় মহাজন। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের তরুণ বাউলদের ব্যাপারে আপনার আশাবাদ কি?
উদাসী : এরা তো বাউল গান গায়। তাই এরা বাউল শিল্পী। বাউল না। বাউল একটা ভাব। ভাবের সাধনা থেকেই সে বাউল রূপ নেয়। এই সাধনা সংসার সহ্য করতে পারে না। তখন সে পথে নামে। গুরুর সন্ধান করে। শেষ পর্যন্ত সে গানের মধ্যে আল্লারে খোঁজে। সে যে-কথাটা গানে বাঁধে সেই কথা হাজার হাজার মানুষের মনের কথা হয়ে যায়। কারণ বাউল জানে, মানুষকে ভালোবাসলে আল্লাকে ভালোবাসা হয়। মানুষ ছাড়া আল্লার কোনো দলিল নাই।
শেখ লুৎফর : তাহলে আল্লাকে পাওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক ধর্ম কতটা জরুরি?
উদাসী : ধর্ম তো খালি ফিৎনাফ্যাসাদ। বাউলদের কোনো সম্প্রদায় নাই। সাম্প্রদায়িকতায় বাউলরা ঘৃণা বোধ করে।
শেখ লুৎফর : সিদ্ধি কী বাউল সাধনার অনুষঙ্গ?
উদাসী : সিদ্ধি মানে সাধন সিদ্ধি। যারা সাধনা করে তাদের জন্য সিদ্ধি। না-হলে তোএইডা গাঞ্জা। (হাসি)
শেখ লুৎফর : মরলে পরে আল্লা তাঁর প্রিয় বান্দাকে বেহেস্ত দিবে, হুর-গেলমান দিবে। এই বিষয়ে বাউলরা কি ভাবে?
উদাসী : এই কথা যদি বলি তবে সবাই আমারে নাস্তিক বলবে। এই দুনিয়াতেই সব। সবকিছু আল্লার বিধানেই হয়। আজ সিংহাসনে, কাল কারাগারে। মানুষের চোখ যদি থাকত, স্রষ্টা আর তার সৃষ্টির লীলা যদি একপলক বুঝবার চাইত তাহলে দেশে এত দারোগা-পুলিশের দরকার পড়ত না।
শেখ লুৎফর : পরকাল?
উদাসী : পরকাল পরের কথা। সবকিছুই হ্যায় (উপরে আঙুল তুলে আল্লাকে বুঝায়া) কৈরা যায়। ছিল গরিব। চুরি-চামারি করে কিছু পৈসা হইল, ঘুম বাড়ল, খাওয়া বাড়ল, পেট-পাছায়, ঘাড়ে-গর্দনায় খুব সুখ! সুখ! সাইনবোর্ড হইল। তারপর চল্লিশ হইবার আগেই ডায়াবেটিস, হার্টব্লক, কিডনি দুইটা অচল, টাকার গরমে ছেলেটা ভোমভোম হোন্ডা চাইলাইতে যাইয়া ট্রাকের নিচে। আর পরকাল লাগে? আমি ইতা ভাবি না। আমি আমারে নিয়া ভাবি। আমি তো আমারে দেখছি। (চোখ টলমল করে।)
শেখ লুৎফর : আগের কথায় আবার ফিরতে হয়, সুনামগঞ্জের আজকের তরুণ বাউলদের সমস্যাটা কি?
উদাসী : মিডিয়া! মিডিয়া! ( মিডিয়া মিডিয়া করে তিনি যেন কাতরে ওঠেন) আগে বাউলরা থাকছে আড়ালে। কষ্ট করছে। সাধনা করছে। জানার জন্য, সাধনার জন্য দেশের এক প্রান্ত থাইকা আরেক প্রান্তে গেছে। এখন তো ঘরে বইসাই সব। সাধনা কৈ? সাধনা ছাড়া কী বাউল হওয়া যায়?
শেখ লুৎফর : সুনামগঞ্জের কালো, পিচ্ছিল মাটিতে তো এইসব ছিল না!
উদাসী : ফালাওক্কা। (ফালায়া দ্যান) নয়বছর অইছে কোনো কসাইখানাৎ (হাসপাতাল) গেছি না। একটা ট্যাবলেট খাইছি না। সব আমার হ্যায় (আল্লায়) দ্যাখব। আমার দশটাকা লাগলে, দশটাকা চাইয়াম। বিশ চাইতাম না। দুইবার সরকার বাড়ি দিবার চাইছে। নিছি না। বাড়ি কী কেউর লগে গ্যাছে?
‘আনন্দে স্বর্গবাস,
নিরানন্দে নরকবাস।’
শেখ লুৎফর : এখন সময় কাটে কি করে?
উদাসী তার দরদি গলায় যেন জীবনের শেষ গান গেয়ে ওঠে :
‘জীবনভরা গান গাইলাম,
বাকি রইল আমার গান,
গা রে পাখি —
নিজেই গা নিজের গান।’ (গামছা দিয়ে ভেজা চোখ মুছে নেয়)
[পরে উদাসীভাই এই গানটি বেশ পরিবর্তন করে বইয়ে ছাপেন।]
শেখ লুৎফর : সবশেষ কি লিখলেন?
উদাসী : এই গান —
‘কোন সন্ধানে করিল ভুরুঙ্গা (ভুরুঙ্গা : বাতরের গর্ত)
জমিনের পানি ফুরাইল,
লাগছে অহন ব্যাঙ্গা। (ব্যাঙ্গা : ঝামেলা)
কাঁকড়ারে মারিবার লাগি
তুকাই (খুঁজি) লাঠি-ঠ্যাঙ্গা।
কত মাছ ভাসিয়া গেল,
পাইলাম না রুঙ্গা। (রুঙ্গা : বাঁশ দিয়ে বানানো মাছ ধরার ফাঁদ)
মকদ্দস কয় মরুভূমি
হইল আমার গঙ্গা।
পিপাসায় বুক শুকাইল
কপাল আমার ভাঙ্গা।
… …
- চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ ৯ || শেখ লুৎফর - July 8, 2022
- চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: পর্ব ৮ || শেখ লুৎফর - November 20, 2021
- চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: পর্ব ৭ || শেখ লুৎফর - October 30, 2021
COMMENTS