আর. কে. দাস ও রিকশাচিত্র : এক সংক্ষিপ্ত খোঁজ || শিবু কুমার শীল

আর. কে. দাস ও রিকশাচিত্র : এক সংক্ষিপ্ত খোঁজ || শিবু কুমার শীল

আর. কে. দাস মানে রাজ কুমার দাস। নারিন্দা ঋষিপাড়ায় থাকতেন। চলে গেছেন সম্প্রতি। গতকালই তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম কারো শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান হচ্ছে। হঠাৎ তাঁর ছবি দেখে মনখারাপ হয়ে গেল।

আর. কে. দাস এমন কেউ না যাকে লোকে এক-কথায় চিনে ফেলবে। তিনি নিভৃতের শিল্পী। বাংলাদেশে রিকশা পেইন্টারদের মধ্যে আর. কে. দাস, শামসু — এই দুই নাম প্রথমেই চলে আসে। আরও নিশ্চয়ই আছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি, আর. কে. দাস আমাদের রিকশা-পেইন্টারদের মধ্যে অনন্য এক নাম। তাঁর কাজ নিয়ে কথা বলার সুযোগ কম; কারণ, এ-পেশা আজ মৃত। গ্যুগল ঘেঁটে এসব নিয়ে কথা বলা ছাড়া উপায় কী।

ছোটবেলায় শুনেছিলাম জাপান থেকে একদল শিল্পী বাংলাদেশের রিকশা-পেইন্টারদের জাপানে নিয়ে গিয়ে এক্সিবিশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এছাড়া ঢাকার অ্যালিয়ঁস ফ্রসেজে ফরাশি এক নারী বাংলাদেশে প্রথম একটি এক্সিবিশন কিউরেট করেন এবং সমস্ত কাজের একটি ক্যাটালগ প্রকাশ করেন। সাল মনে নেই তবে ১৯৯৬/’৯৭ সম্ভবত। সেখানে আর. কে. দাসের মতো আরও বহু শিল্পীর কাজ ছিল। সেসব কে আর্কাইভ করেছে কোথায় আছে কে জানে।

আমাদের দেশে একজন এস. এম. সুলতানকেই হয়তো আমরা খুঁজে পেতাম না আহমদ ছফার মতো মানুষ না থাকলে। ছফা সুলতানকে নিয়ে লিখেছেন। তাঁর কাজের গুরুত্ব অনুধাবনে সেই লেখা আজ এক ইতিহাস। আর. কে. দাসের মতো আরো যেসব শিল্পী যারা মেইনস্ট্রিমের বাইরে থেকে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন এবং একদিন সবার অলক্ষে চলে যাচ্ছেন তাদেরকে মনে রাখবার উপায় কি? তাদের কাজকে যথাযথ সম্মান দেওয়ার উপায় কি?

এসব নিছক প্রশ্ন আকারেই থাকুক। নূরুল আলম আতিক একবার একটা প্রোজেক্টের জন্য পুরান ঢাকায় এসব শিল্পীদের কিছু সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। জানি না সেসব দিয়ে তিনি কিছু বানিয়েছিলেন কি না। যা-ই হোক, আমার প্রাত্যহিক বাড়িফেরার পথে প্রায়ই দেখতাম আর. কে. দাস তাঁর বাসার ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে তখন অল্প আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কখনও চুপচাপ পথচারীদের চলাচল দেখতেন। আমি ছিলাম সেই ভিড়ের ভেতর থেকে তাকিয়ে থাকা এক মুখ।

কী সহজ আর সৌম্য ছিল মানুষটার বিষণ্ণ পোর্ট্রেট! তাঁকে আমার শেষ সালাম জানাই।

শিবু কুমার শীল রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you