খাবেন, ভাইজান? খেতে পারেন, যেহেতু বিজ্ঞাপনে বসতি লক্ষ্মী। এবং যেহেতু একখান হইল রমজানের ঈদ আরেকখান কুর্বান, ভাইজান, অতএব আর্সিকোলা খান! খেতে পারি, কিন্তু কেন খাব? আর্সিকোলা খাওয়াটা আদৌ সংস্কৃতিসম্মত কি না, দেখতে হবে। এবং কোনোকিছু করা বা খাওয়ার আগে — সেইটা আনকালচার্ড গরু-মোষ-মেষ-খাসি জবাই করা/খাওয়া হতেপারে, কিংবা হতে পারে সংস্কৃতিগর্বিতা কালীপূজার পাঁঠা খাওয়া/বলী — অ্যাট-লিস্ট আপনার জ্ঞানবুদ্ধিযুক্তিবিদ্যার বোঁচকা বা সংস্কৃতিশিশিটা আচ্ছা-করিয়া ঝাঁকাইয়া লইবেন খিয়াল করে। হ্যাঁ, দেখতে হবে আর্সিকোলা খাওয়ার আগের কোর্স তথা ধারালো ছুরি দিয়া জবেহকৃত পশুমাংশ ভক্ষণ বঙ্গীয় সংস্কৃতি হৃষ্টচিত্তে লেজিটিমেইসি দ্যায় কি না। তা, মনে করেন যে দিলো না, সাংস্কৃতিক অ্যাপ্রুভ্যাল্ আপনি পাইলেনই না মনে করেন, খাইবেন না তাইলে? খাইবেন, কিন্তু মুখে কইবেন খাই নাই। আল্লার দুনিয়ায় বাঁচতে গেলে খেয়োখেয়ি ইগ্নোর করে বেঁচে থাকার ফর্ম্যুলা আজও উদ্ভাবন হয় নাই। তা আপনে যতই হোন-না আধুনিক ইমানদার বা বেইমান/ইমানহারা, খাওয়া ছাড়া বাঁচন নাই। কিন্তু মুখে জরুর জপ করা জারি রাখিয়া যাইবেন যে খাওয়াখাদ্য অত্যন্ত গর্হিতকম্ম, অতীব মন্দ, খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে সেই সমার্সেট মম্ সাহেবের মধ্যাহ্নভোজন গল্পে প্রাপ্ত পাঠিকার নখরামি ঠিকমতো অনুশীলন করিয়া যাওয়াই কিন্তু প্রগতি; ইয়াদ রাইখো, ব্রো! মনে রেখো, প্রণয়িনী! ফর্গেট নট, সিস্! প্রগতিশীলতার বৈধতা পাইলেই শুরু করে দিতে পারেন সংস্কৃতিনৃত্য। যদি ইচ্ছা হয় আরেকটু প্রগতি হইবার, অ্যাডভ্যান্সড লেভেলের প্রগতি, তাইলে জেন ফন্ডা বা পামেলা অ্যান্ডার্সন বা ব্রিজিত বার্দো প্রমুখার পথ মাপতে পারেন। পশুদুঃখদর্দ বুঝিয়া তাদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে জীবনপাত করিবার রাস্তায় ডিগ্নিটি ব্যাপক। দুনিয়ায় মানুষ নিধনের মিহি কায়দাকানুন প্রবর্তনে যে-জাতি যত বেশি লিপ্ত, তার খান্দানও তত উন্নত। পশু নিধনের ক্ষেত্রেও তারা স্যফিস্টিকেইটেড, সুনিপুণ, মিহি মেশিনের ম্যান্যুফ্যাকচারার। খুনখারাবি নিয়া আদতে সমস্যা নাই, কিংবা নাই পশুনিধন নিয়াও, সভ্যতার মাথাব্যথা আসলে সংস্কৃতি নিয়া। আপনি যা-ই করেন ন্যায্য-অন্যায্য, সংস্কৃতিজোটের বৈধতা হাসিল করিয়া লইলেই চিন্তা নাই দুনিয়ায়-আখেরে। একটু উদাসীন বা কম-মনোযোগী যারা সংস্কৃতি নির্মাণের কারখানায়, কাজেই, তাদিগের জিল্লতি সীমাশুমারছাড়া। পাঁঠা হাড়িকাঠে ফেলে এককোপে বলীদান ‘সংস্কৃতি’ হয়ে গেল, অথচ জবাইদান হলো না কেন, ঘটনাটা প্যাঁচ খাইল কোথায়, একবার ভেবে বের করতে পারলেই কেল্লা ফতে। এককোপে কল্লা হইতে ধড় জুধাকরণের হরিব্বোলকম্ম যারা দেখেছেন, তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন যে এককোপে-কম্মসারাকারী বঁটিখানা মানবিক ও মোমমাখানো কোমল; তুলনায় জবাই নিন্দনীয় ও অমানবিক তথা আসুরিক। প্রকৃত তা-ই কি, বলুন তো? যদি তা-ই হয়, তাইলে জবাইয়ের আগে বঁটি-ছুরিজিভের দুইপাশে মেয়োনিজ্/মধু মাখিয়ে নিলেই কি সাংস্কৃতিক বৈধতা পাওয়া যাবে? এই বৈধতাটা আসছে কোত্থেকে, কে দিচ্ছে এবং কবে থেকে, এইসব সওয়াল আপাতত তোলা থাক। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মেশিনে মেরে হোক কিংবা হাড়িকাঠে এককোপে কেটে কল্লা নামায়ে সেই কল্লারিক্ত/কল্লাওয়ালা পাঁঠা/গাভী/ষাঁড়/বলদ/মহিষ/মেষের গোশ্ত যদি আপনি ডলারের বিনিময়ে এক্সপোর্ট করতে পারেন, সেইটা তাইলে কালচারাল এক্সচেঞ্জ। সমস্যাটা তাইলে কি বিনা-হাদিয়া গাদাগুচ্ছের মামুলি মানুষের মধ্যে ভাগবাটোয়ারায়? বা আস্ত গরু-বক্রি-ভেড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলদারদের দেশে এক্সপোর্ট না-করে একলা খাওয়ায়? নাকি পশুটা মাটিতে শুইয়ে মাবুদের নামোচ্চারণপূর্বক ভোঁতা বঁটিদাও গলায় ঘষে জবেহ্ করায় আপত্তি? ক্লিয়ার বোঝা যাচ্ছে না। হালের বছরগুলোতে যে-ডেভেল্যপমেন্টগুলো হয়েছে এ-বাবতে, যেমন বলীসংস্কৃতির সর্ববৃহৎ পীঠস্থান তথা পাঁঠাপাইকার রাষ্ট্র, বছরের এই সিজনে বাংলাদেশে গরুপাচার করে হাত পাকানো মহাভারত, সম্প্রতি সীমান্তবর্তী ঈদের দেশে ঠেঙিয়ে গরু না-ঠেলে আন্তর্জাতিক মোড়কে তাদিগের গরুমাতাজিরে পুরে প্যাকেটপ্রতি হিউজ্ ফরেন্ কারেন্সি আর্ন করার ব্যবস্থা পাক্কা করে ফেলেছে, এই লোক্যাল্ গরুপ্যুশার থেকে ক্রমশই বিশ্বকসাই ইন্ডিয়ার সফলতা আমাদিগেরে নিরিখ করে সংস্কৃতিচিন্তায় ব্যাপক রদবদল করতে হবে। দেখতে হবে যে এই সংস্কৃতিওয়ালারা খামাখা বলী বনাম জবাই নিয়া মামলা লটকায়ে রেখে আখেরে ইন্ডিয়াঠাকরুনের পোয়াবারো করে চলেছে কি না। আমি শিয়্যর না এই ব্যাপারে। জ্ঞানীগুণীরা তথা সংস্কৃতির ধারক, বাহক, রক্ষক, প্রচারক ও যুগযুগান্ত সংস্কৃতিতক্ষকেরা বাইঞ্চোতিটা ছাড়তে পারলে দেশ ও দশের অমঙ্গলাশঙ্কাটা কাটে। এক-কথায়, নাট্যঘন স্বরে বলা যায়, থামলে — (এইখানে একটু প্যজ্ দিয়ে পরের দুইশব্দ উচ্চার্য) — ভালো লাগে। এখন, পরিশেষে বক্তব্য, সংস্কৃতির ভক্ষকেরা আজকে কুর্বানিদিনে নোয়াপাতি ভুঁড়িখানা ভাসিয়ে সংস্কৃতিগোশ্ত ভক্ষণ করিবেন, সংস্কৃতির অমর্যাদা বা বারোটা বাজাইবেন, আমরা আপত্তি করি না। আর ওদিকে সংস্কৃতির হাজারবছর-কোপাকুপিপন্থী রক্ষকেরা আর্ত গবাদি ব্যথায় তড়পাইবেন, উহাতেও আমরা আপত্তি করি না। আমরা আবারও বলি কি, থামলে — (এইখানে একটু প্যজ্ দিয়ে পরের দুইশব্দ উচ্চার্য) — ভালো লাগে। একটু আর্সিকোলা খাইতে পারেন যদি হাঁসফাঁস লাগে, যদি আরও হজমের দরকারে জায়গা খালি করা লাগে তাইলে কিলিয়ে কাঁঠাল হজমের সনাতনী কৃষ্টির দ্বারস্থ হউন, তবু অন্যতর কোনো হার্ডার ড্রিঙ্কস্ আজকে একটু মুলতুবি রাখেন। তবে পেঁয়াজটা, তার সঙ্গে একটু ছোলা-চানাচুর এইগুলোও, আজকেই খাইয়া রাখেন আগুয়ান। যদিও কোনোদিনেরই বিধান নাই, কিন্তু কালকে মনে করেন যে দেখি-নাই-কায়দায় আঁখি ক্লোজ্ করে প্যাগ-পাঁচেক মেরে দিয়েন। দুনিয়াটা আসলেই কিন্তু মন্দ না, আসছেন যে এইখানে দেড়-দুইদিনের আয়ু নিয়া, জানেন? সো জবাই বলুন, অথবা বলী, কিংবা স্লোটার মেশিন, থিংস্ দ্য সেইম্। আর এই ক্রিয়াকাণ্ডগুলো ছাড়া ঘাস খেতে হবে আপনারে, মানে গাইঞ্জা, সেইটার সাপ্লাই তো প্রোপার-ইম্প্রোপার কোনো চ্যানেলেই পর্যাপ্ত নয়। থাকলে একটু সংস্কৃতিসেবী হয়ে এন্তেকাল্ করার বার্তাবাহী হেল্দি একটা ক্যাম্পেইন্ চালানো যেত। কামঅন্, ড্যুড, কোলাকুলি করি!
লেখা : জাহেদ আহমদ
… …
- বাত্তির রাইত - February 15, 2025
- চিকন চালের চলাচল - February 13, 2025
- বাগেশ্বরী শিল্পপঙক্তিমালা - February 4, 2025
COMMENTS