অ্যা শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট কিলিং || সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

অ্যা শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট কিলিং || সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

ক্রিস্তফ কিয়েসলস্কি-র এই ‘অ্যা শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট কিলিং’।

ছবি শুরু হয় ওয়ার্শ শহরের তিনটি বিবিক্ত চরিত্রকে কাটাকাটাভাবে উপস্থিত করতে করতে। একজন তালতোবড়া টিনএজার, এক বিবেকবান উকিল ও এক আত্মকর্মক্ষম ট্যাক্সিড্রাইভার ক্রমে এক ভয়ঙ্কর তেমাথায় মুখোমুখি হয়।

ছেলেটি ফিল্মের সাড়ে-সাতমিনিট ধরে ট্যাক্সিড্রাইভারকে খুন করে। (এটা বিশ্বরেকর্ড, চলচ্চিত্রের ইতিহাসে।) অকারণতায় এই খুন কামুর আউটসাইডারের নায়ক মার্সো কর্তৃক দুজন আরব খুনকে বহু পিছনে ফেলে গেছে। কতকটা যেন জর্জ অরওয়েলের ‘হাউ টু কিল অ্যান এলিফ্যান্ট’-এর মতন। মেরেই যাচ্ছে। ট্যাক্সিড্রাইভারের মৃত্যু নেই।

ছবির বাকি অংশ রাষ্ট্র কর্তৃক বাচ্চাছেলেটিকে খুন করা নিয়ে। এবং নির্মমতায় সেটা আরো কত নির্মমতর, সেটাই ছবির বিষয়। ছেলেটির শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করতে তাকে, এমনকি, একটা সিগারেটও খেতে দেয়া হয়! তখন তার গলায় দড়ি। শেষ দৃশ্যে সে ঝুলছে। ফ্রেমের উপরদিকে ঝুলন্ত পা-পেটো দড়িতে বাঁধা উৎসবে আম্রপল্লবের মতো ঘুরে ঘুরে দুলে চলেছে। তার গোঁড়ালি থেকে চুঁইয়ে টপ টপ করে নিচে প্লাস্টিকের ট্রেতে পড়ছে পাতলা গু। ছেলেটি হেগে ফেলেছে। পূর্ব ইয়োরোপের আধুনিক ক্ষুদিরামের মলদ্বার থেকে টপ টপ করে এই গু-ঝরার পরিপ্রেক্ষিতে নিচে থেকে টাইটেল উঠে আসে —
স্ক্রিনপ্লে …
সিনেমাটোগ্রাফি …
মিউজিক …
প্রিন্সিপাল কাস্ট …
ডিরেক্টর …
এবং
৮৮ কান্ ফিল্ম উৎসবে জুরি অ্যাওয়ার্ড সেরা ইয়োরোপীয় ফিল্ম ১৯৮৮।

গানপারটীকা : না-কাহিনিমূলক ক্ষুদেকায় নিবন্ধ প্রচুর লিখেছিলেন সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। সেই নিবন্ধসমূহের বিষয় এবং ভাষাভঙ্গি চিত্তাকর্ষক খুবই। ফিকশনলিখিয়েদের মধ্যে একটা সাধারণ প্রবণতা খালি লিটারেরি বিষয়নির্ভর রচনা ফাঁদা, সাহিত্য বলতেই কিছু প্রথাগত লেখালেখি নিয়া আলাপ সঞ্চালনাকে লেখকরা ঠাওরিয়ে থাকেন, সন্দীপন ছিলেন এইসব গড় লেখকসুলভ প্রবণতা থেকে মুক্ত থেকে লেখালেখি চালায়ে যাওয়া লেখক। বর্তমানে যেই নিবন্ধটা গানপারে রিপ্রিন্টেড হচ্ছে, এইটা গ্রহণ করা হয়েছে একটা বই থেকে, সেই বইয়ের নাম — বই না-বলে চটিপুস্তিকা বললেই ব্যেটার বর্ণনা হয়, — ‘চলচ্চিত্র চঞ্চরী’। ইন্ডিয়ার প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই বই/পুস্তিকা জানুয়ারি পঁচানব্বইয়ে বের হয়েছে। এই নিবন্ধটুকু বইধৃত বর্ধিত কলেবর একটা রচনার অংশবিশেষ, সেই রচনার শিরোনাম ‘ফিল্মোৎসব ১৯৯০ : রাজসূয় না অশ্বমেধ?’ রচয়িতা বাবু সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, গোটা বইটারই তিনি রচয়িতা। আর রচনার যে-অংশ থেকে কেটেছেঁটে এই নিবন্ধ সংক্ষেপিত রূপে এইখানে নেয়া হয়েছে, সেইটা ‘ওস্তাদের মার’ শীর্ষকের আওতায় পৃষ্ঠা বাইশে অ্যাভেইলেবল। ফিল্মোৎসবে ক্রিস্তফ কিয়েসলস্কি-র দুটো ছবি দেখেছিলেন সন্দীপন, — ‘অ্যা শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট ল্যভ’ ও ‘অ্যা শর্ট ফিল্ম অ্যাবাউট কিলিং’, দ্বিতীয়োক্ত ছবিটির দেখা থেকে খানিকটা আঁচ পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করতেই লিখিত হয়েছে এই নিতান্ত হ্রস্ব অথচ সুতীক্ষ্ণ রচনা। — গানপার

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you