‘বিস্ময়কর সবকিছু’ : তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া || সিরাজুদ দাহার খান

‘বিস্ময়কর সবকিছু’ : তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া || সিরাজুদ দাহার খান

ব্রাজিলিয় শিক্ষাবিদ পাওলো ফ্রেইরি ‘নিপীড়িতের শিক্ষা’ (Pedagogy of the Oppressed) নামে যুগান্তকারী একটি বই প্রকাশ করেন ১৯৬৮-তে। এতে তিনি নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য স্বশিখনপ্রক্রিয়া ও তাদের জাগরণ কেমন করে হবে তার মুক্তিকামী পদ্ধতি বিশদ বিশ্লেষণ করে তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অগাস্ট বোল ১৯৭০ সালে নাট্যধারায় ‘নিপীড়ত মানুষের নাটক’(Theatre of the Oppressed (TO)’ নামের ভাবনাসমৃদ্ধ নবনাট্যধারা সৃষ্টি করেন। উল্লেখ্য, তাদের এসব গণজাগরণমূলক তৎপরতার জন্য দু-জনকেই দেশছাড়া হতে হয়েছিল। অগাস্ট বোল অবশ্য বের্টল্ট ব্রেখটস্টানিস্লাভোস্কি দ্বারাও প্রভবিত ছিলেন কিয়দাংশে।

এটুকু উল্লেখ করলাম এজন্যই যে, বোল যে নাট্যঘরানা তৈরি করেছিলেন, সেটা কোনো শৌখিন নাট্যকলাচর্চা ছিল না। তিনি মার্ক্সবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন জন্য নাটককে সমাজ-রূপান্তরের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছিলেন। ব্রেখট ও বোলের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নাটক নিয়ে কাজ করা এখনও চলমান। কারণ, এখনও নিপীড়ক সমাজ সেই আগের মতোই আছে, বা আরও বেশি নিপীড়ক হয়ে উঠছে। বিস্ময়কর সবকিছুর নাট্যপ্রক্রিয়ায় বোলের নাট্যকৃৎকৌশল প্রচ্ছন্ন বা নরমভাবে হলেও প্রযুক্ত হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে (যদিও আলোচ্য নাটকের অভিলক্ষ্য নিপীড়িত মানষের মুক্তির নিশানা নিয়ে রূপায়িত হয়নি)।

অগাস্ট বোল চেয়েছিলেন নাটকের মধ্যে দর্শকবৃন্দ চলমান নাট্যক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়ে তাদের নিজস্ব বয়ান নিয়ে বিকল্প বাস্তবতা তুলে ধরবেন। আর ‘বিস্ময়কর সবকিছু’ নাটকে দর্শককে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা নাট্যরচয়িতা ও নির্মাতার বয়ান নিয়ে। এ প্রচেষ্টা বেশ সফল হয়েছে বিশেষত প্রধান পারফরমার মহসিনা আক্তারের সাবলীল ও সহজ কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, কাজটি কিন্তু সহজ ছিল না। কিন্তু আমার বা আমাদের দৃষ্টিতে নির্দেশক ও অভিনেতা এ পুলসিরাত অতি সহজেই পার হয়ে গেছেন, প্রশংসনীয়ভাবে।

ল্যাটিন আমেরিকার কমিউনিটি স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ডেভিড ওয়ার্নার-এর ‘But why?’ টেকনিকটিও সুপ্রযুক্ত হয়েছে বাবা-মেয়ের হাসপাতালে যাত্রাপথের কথোপকোথনে (তবে এ নাটকে এটার প্রয়োগ অবশ্য নির্দেশকের নিজস্ব ভাবনা থেকেও হয়ে থাকতে পারে)। পাওলো ফ্রেইরির মূল কৌশল ছিল নিপীড়িত মানুষের জীবনসংকটের কোনো সমস্যার মূল কারণ বা রুট কজ অ্যানালিসিস করানো এবং তা নিপীড়িত মানুষদের দিয়েই। প্রশ্ন করো এবং প্রশ্ন করো, তবেই তুমি জানতে পারবে সমস্যার গভীর কারণ। ভালো শিক্ষক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করতে স্পেস তৈরি করে দেন। এখানে যেন তারই একখণ্ড প্রতিফলন ঘটেছে বাবা-মেয়ের সংলাপের মাধ্যমে। যতদূর জানি, নির্দেশক জামিল আহমেদ-ও চাইতেন তাঁর শিক্ষার্থীরা তাঁকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করুক, তবেই তাঁরা প্রকৃত প্রস্তাবে নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হতে পারবেন।

বিস্ময়কর সবকিছুতে বিষণ্নতার যে কষ্টকর বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, তা হয়তো নিপীড়িত মানুষের মধ্যেও বিরাজমান; কিন্তু এ নাটক যে-ভাষায় ও যে-আঙ্গিকে যে-বয়ানে পরিবেশিত হয়েছে, তাতে করে এর ঘটনাপ্রবাহ ও বক্তব্য তাদের বোধগম্য হবে বলে আমার মনে হয়নি; হয়তো নির্দেশকের মাথায় সে-ইচ্ছা বা ভাবনা ছিলও না। এটি যেন একটি উত্তর-আধুনিক কবিতার মতো নান্দনিক প্রয়াস। পুরো নাট্যালাপে মানুষের জীবনের খুব সূক্ষ্ম একটা দিক ফুটিয়ে ‍তোলা হয়েছে : বিষণ্নতা; যা ধরা যায় না, ছোঁয়াও যায় না, শুধু অনুভব করা যায়, যা একজনকে কুরেকুরে খায়, তার নিজের অজান্তে বা জান্তে। নাটক শেষে একজন তরুণ দর্শক আমাকে বলছিলেন, ‘নাটকটি নিরীক্ষাধর্মী ও উপভোগ্য বটে, তবে মায়ের বিষণ্ণতার কারণ এবং যে-কোনো বিষণ্ণতার গভীরতর বিশ্লেষণ এতে স্পষ্ট হয়নি।। এটা থাকা দরকার ছিল। এ দিকটা তেমনভাবে নাড়া দিয়ে যায়নি।’ আমার নিজেরও মনে হয়েছে, আরেকটু ঝাঁকুনি দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারত।

ঘরোয়া পরিবেশে নাটকীয়তা সৃষ্টি অনবদ্য পারফরমেন্স
ইকবাল রোডের কলাকেন্দ্রটি একটি ছোট সভাঘরের বেশি কিছু না। সেটাকে পাফরমেন্স স্পেস বানিয়ে ‘বিস্ময়কর সবকিছু’ পরিবেশিত হয়। আলোর ঝকমকানি বা আলোআঁধারির কোনো বালাই নেই। কোনো রাখঢাক নেই; সহজ ও প্রকাশ্য।

মূল পারফরমার মহসিনা আক্তার খুব স্বাভাবিকভাবে নিজেকে ঘটনার সাথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং দর্শকদেরকেও সাথে নিয়েছেন যাদুকরের মতো। তেমন কখনো মনেই হয়নি যে, তিনি একটি শ্রমসাধ্য ও কষ্টকর কাজ করছেন একা — টানা ১ ঘণ্টা ৩০মিনিট ধরে। যেন কিছুই করছেন না তিনি। যেন আমাদের সাথে নিছক একটা গল্প করছেন; মাঝেমাঝে হাসিঠাট্টা করছেন এবং সেই গল্পে আমাদের শ্রোতা ও গল্পকার বানিয়ে নিচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে দর্শকসারি থেকে ৩/৪জনকে অভিনেতা বানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁরাও যেন এই স্রোতে সাবলীলভাবে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। একদিকে নাটক উপোভোগ করছেন, অন্যদিকে চরিত্র হয়ে সহজভাবে মূল অভিনেতার সাথে তাল মিলিয়ে চলছেন। এ কৃতিত্ব যেমন দর্শকদের, তার চাইতে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল অভিনেতা ও নির্দেশকের। কিন্তু দর্শক হিসেবে আমার কখনো মনে হয়নি যে, মূল পারফরমার গলদঘর্ম হচ্ছেন। নাটকের ফর্মটিই এমন ছিল যে, মূল পারফরমার তাঁর নিজস্ব কৃৎকৌশল অনায়াসে প্রয়োগ করে গেছেন। যদিও একজন পুরনো নাট্যকর্মী হিসেবে আমি জানি, এ-কাজটি মোটেও একতালে বয়ে চলা নিস্তরঙ্গ নদীর মতো সহজ ছিল না।

এ প্রদর্শনীতে তাৎক্ষণিকভাবে বাবা হয়েছিলেন আমার পরিচিত একজন উন্নয়নকর্মী জাকির হোসেন, হাতকুকুরের শিক্ষিকা, হঠাৎ প্রেমেপড়া প্রেমিক একজন। তাদের সাবলীল সহজ কথোপকথনে মনেই হযনি যে তারা মহড়াকৃত নন। হাতকুকুরের শিক্ষিকা তো বাজিমাৎ করলেন কোনো কৃত্রিমতা ছাড়াই। এ কৃতিত্বও কি তাদেরকেই দিব না কি মহসিনা, এবং নির্দেশক নাট্যচিন্তক ও নাট্যনীরিক্ষায় অগ্রজন সৈয়দ জামিল আহমেদকে? নাকি ত্রিপক্ষীয় সবাইকে?

আর অভিনয়ের ফাঁকে ফাঁকে মহসিনা মাঝে মাঝে কৌশলে ছন্দ ঠিকঠাক রেখে নিজে সংগীতশিল্পীদের মতো একটু ব্রিদিং স্পেস নিয়ে নিয়েছেন, সেটাও বেশ শক্তিমত্তার পরিচায়ক বটে! মহসিনার পারফরমেন্স ছিল অসাধারণভাবে সাধারণ। ওঁর পারফরমেনস-এ স্বচ্ছন্দ ও সহজ কলাকৌশল দেখতে দেখতে আমার নিজের উদ্ভাবিত একটি শিখন-প্রক্রিয়া ‘মাইন্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্রোচ’-এর কথা যেন মনে পড়ছিল, মাঝে মাঝে; যেখানে প্রশিক্ষক বা শিখনসহায়করা এমন সহজ-সাবলীলভাবে বন্ধুর মতো মিশে যাই শিক্ষার্থীর সাথে।

অনুবাদ বা দেশিয়করণ
ডানকান ম্যাকমিলানের মূল নাটকটি আমার পড়া নেই। তবে এর ভাবানুবাদ বেশ চমৎকার হয়েছে। তেমন কোথাও মনেই হয়নি যে এটি একটি অনুবাদকৃত নাটক দেখছি। যেন আমাদেরই দেশের নাটক। নির্দেশক ও অনুবাদক এ-ক্ষেত্রে মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন, নির্দ্বিধায় বলা যায়। মূল পারফরমার এটি আত্মস্থ করেছেন এবং রূপায়িত করেছেন স্বচ্ছন্দে।

আমি নিজে অভিনয় শুরু করি তা প্রায় ৫২/৫৩ বছর আগে; আর মঞ্চে অভিনয় ছেড়েছি তা তো বছর তিরিশেক আগেই। প্রায়-নিয়মিত নাটক দেখি। তবে, এ-রকম পরিবেশনা এখনও চোখে পড়েনি। এমনকি, আমার ভাবনাতেও কখনো আসেনি। এমনভাবে এটি সাজানো হয়েছে, যেন যে-কোনো সময় খুবই সামান্য প্রস্তুতিতে এটি পরিবেশন করা যায়, যে-কোনো সভাঘরে, বাড়ির ছাদে, এমনকি বড় ড্রয়িং রুমে। সাজসজ্জা, রংবাহারি আলো কি মিউজিকের ঝনঝনানী — এসবের বালাই নেই। অথচ দর্শকেরা অভিভূত হয়ে গল্প শুনছে এবং গল্পকার হিসেবেও ভূমিকা পালন করতে পারছে, অনায়াসে।

এ-বিষয়ে স্পর্ধার আহ্বানটিও আগ্রহোদ্দীপক — “আমরা আপনার বাড়িতে অথবা নিকটস্থ কোনো অভিনয়যোগ্য স্টুডিও, কনফারেন্স সেন্টার অথবা অন্য কোনো ঘরে নাটক উপস্থাপন করার ইচ্ছা পোষণ করি। আমাদের প্রয়োজন কেবল ২৫ ফুট লম্বা এবং ১৫ ফুট চওড়া একটি ঘর। যোগাযোগ : ০১৭১ ৭৮০৮৬৪০।” এ আহ্বানটিও কিন্তু অভিনব এবং উদ্দীপক।

দুএকটি ভাবনা
হতে পারত —

১. বিস্ময়কর সবকিছুর তালিকা পড়ার জন্য প্রত্যেককে সম্পৃক্ত না করে কিছুজনকে সম্পৃক্ত করা;
২. মায়ের বিষণ্নতার কারণ আরেকটু সম্প্রসারিত করা;
৩.ঘটনা বর্ণনা ছিল চমৎকার — কিশোর, তরুণ, বড় হয়ে ওঠা, প্রেম-পরিণয়, বিয়ে-বিষণ্নতা-বিচ্ছিন্নতা-বিচ্ছেদ-অবিস্মরণ-পুনঃস্মরণ সবই ছিল বেশ গোছানো উপস্থাপন। কিন্তু ঠিক কীভাবে কী কারণে দু-জনের সম্পর্ক আর টিকিয়ে রাখা গেল না — সেটাকে কি আরও একটু স্পষ্ট করা যায় বা যাওয়া উচিত;
৪. অনিশ্চিত একটি নিরীক্ষাধর্মী নাট্য-আলাপে ছন্দপতনহীন সফল হয়েছেন স্পর্ধার কলাকুশলী ও এ-নাটকের নির্মাতা। কিন্তু বিষণ্নতার কষ্টটা-ধাক্কাটা যেন আমার বা আমাদের অন্তরে একটু লেগেও তেমন বড়ভাবে লাগল না। মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ মূল রূপকার ঝলসে উঠেছেন ঠিকই, কিন্তু ঠিক যেন স্থায়িত্ব পায়নি তার ঝলসানো রূপটি;
৫. হতে পারত নাটক শেষে দর্শকদের সাথে মতামত বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করা, যা এ-প্রযোজনাটিকে আরও স্পষ্ট ও বিস্ময়কর হতে সহায়ক হতে পারে;
৬. যেহেতু ছোট পরিসরে নাট্যক্রিয়া সম্পাদিত হয়, নাটক শেষে কলাকুশলী বিশেষ করে নির্দেশকের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়া যেতে পারে;

আমার উপর্যুক্ত ভাবনা ও পর্যবেক্ষণ ভুলও হতে পারে। তবুও আপনাদের ভাবনার জন্য তুলে ধরলাম।

শেষ কথা নয়
তবুও বলব, যা দেখলাম তা মনে থাকবে দীর্ঘদিন। নাটকটি নিজেই যেন বিস্ময়কর একটি মাইলস্টোন। নিজেকে ভাঙার এ-রকম ঝুঁকি হয়তো দু-একজন নিতে পারেন। জামিল আহমেদ তাদের পথপ্রদর্শকও বটে! বিস্ময়কর তো বটেই! সবচেয়ে বিস্ময়কর লেগেছে , একটি সাত বছর বয়সী কন্যা বা ছেলে তাঁর বিষণ্নতাক্লিষ্ট মাকে জীবনে বেঁচে থাকার অর্থ উপলব্ধি করানোর জন্য উপহার হিসেবে দুনিয়ার সব বিস্ময়কর বিষয়ের তালিকা প্রণয়নের মতো একটি অভিনব এবং কিছুটা পাগলামো কাজে হাত দেয় এবং তা প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছায়। এ তালিকা শেষ হতে চায় না, তাকে ঘোরের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়, এবং দুনিয়ার সবকিছু বিস্ময়কর বিষয় এতে স্থান করে নেয়। কিন্তু তারপরেও সে তার মাকে আত্মহননের প্রচেষ্টা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে না। এ যেন জীবনানন্দ দাশের আত্মহননবিষয়ক কবিতা ‘আট বছর আগের একদিন’-এর কথা মনে করিয়ে দেয় — ‘বধু শুয়ে ছিল পাশে, শিশুটিও ছিল … মরিবার হলো তার সাধ!’ অবশ্য তৃপ্তির বিষয় হচ্ছে, ওই তালিকা তাঁর জীবনের এক বিষণ্ণতাক্লিষ্ট মর্মান্তিক সময়ে নিজের আত্মহননের পথ থেকে নিজেকে জাগিয়ে রাখে।

স্পর্ধার স্পর্ধা আছে, সাহস আছে, এমন একটি অনিশ্চিত আশ্চর্য নাট্যযাত্রায় দর্শককে টেনে আনার প্রচেষ্টায় প্রবৃত্ত হওয়ায় এ-কথা স্বীকার করতেই হবে, যে-কোনো দর্শক বা সমালোচককে।

সবশেষে বলব : খোলা আকাশ কি এত ভালো লাগত, যদি কিছু কিছু মেঘ নাহি থাকত! যে মানুষ আমৃত্যু সম্পূর্ণ সম্পন্ন জীবন যাপন করে গেলেন কোনো বিষণ্নতা বোধ ছাড়াই, ধরে নিন তিনি তাঁর জীবনটা যাপনই করেননি যথাযথ!

স্পর্ধা বিলিকৃত বর্ণিত বয়ানে নাটকের সারসংক্ষেপ বা পূর্বাভা
‘বিস্ময়কর সবকিছু’ নাটকটি এক বিষণ্নতাক্লিষ্ট মায়ের একমাত্র সন্তানের জীবনকাহিনি। নাট্যক্রিয়ায় সাত বছরের সেই সন্তানের মা তার নিজের প্রাণনাশের চেষ্টা করে। মাকে বেঁচে থাকার অর্থ যোগান দেবার এক অদম্য বাসনা এই তালিকা রচনার এক উদ্দীপক ঘটনা। তালিকায় জীবনের বিস্ময়কর সবকিছুর নাম লিপিবদ্ধ করে মাকে উপহার দেবার ইচ্ছা জাগে তার মনে, সে মনোযোগ দেয় একনিষ্ঠচিত্তে সেই সাধ পূরণে। মাকে সেই তালিকা বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিতে ব্যর্থ হলেও সন্তানটির জীবনের চড়াই-উতরাইয়ের দগদগে জলছবি হয়ে থাকে তালিকাটি। এই জলছবি দেখায়, কিভাবে ওই তালিকার সূত্র ধরে ওই সন্তানের জীবনে পরিণত বয়সে প্রেম-পরিণয় থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং মায়ের মৃত্যু ঘটে। তবুও সে উঠে দাঁড়ায় অসামান্য এক প্রচেষ্টায়। সবার উপরে জীবন সত্য। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন যে-কোনোকিছু সম্ভব; অতএব নিজের প্রাণনাশের চেষ্টা কখনোই নয়। ‘বিস্ময়কর সবকিছু’ এই বোধ সঞ্চারিত করে সহজ-সরল ভাষায়।


স্পর্ধা  প্রযোজিত ‘বিস্ময়কর সবকিছু’
মূল নাটক : ডানকান ম্যাকমিলান
অনুবাদ, দেশিয়করণ, পরিকল্পনা ও নির্দেশনা : সৈয়দ জামিল আহমেদ
অভিনয় ও পোশাক : মহসিনা আক্তার

সিরাজুদ দাহার খান রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you