ফিতার ক্যাসেটের A-পিঠ আর B-পিঠ নিয়ে যে-জেনারেশনের কোনো ধারণাই নাই তারা কখনোই বুঝবে না আইয়ুব বাচ্চু ’৮০ ও ’৯০-এর দশকের জেনারেশনের কাছে কি ছিলেন।
অটো সিএনজি, টমটম বা গাড়িতে চড়ে কন্সার্ট দেখতে যাওয়া জেনারেশন ক্যামনে বুঝবে ৫-১০ কি.মি. (মাঝেমাঝে আরো বেশি) হেঁটে কন্সার্ট দেখতে যাবার মজাটা কোথায়।
আমাদের সময়ে কন্সার্টে গানটা আসল গায়কই গাইতেন আর আমরা গলা মিলাতাম। এখনকার জেনারেশনের পোলাপাইন কন্সার্টে গিয়ে নিজেরা গান গায় আর আসল গায়ক গলা মিলায়।
তখন অনলাইনের যুগ ছিল না। লাইন ধরেই টিকেট কিনতে হতো। ঠিক কখন টিকেট শেষ হয়ে যাবে আমরা কেউই জানতাম না। হয়তো আমার কাছে আসার আগেই টিকেট শেষ তবুও আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। যদি কোথাও থেকে টিকেট মিলে যায়। একদমই টিকেট না-পেলে কন্সার্ট-এলাকার আশেপাশে গিয়ে দূর থেকে গান শুনতাম।
আহ্! কী চমৎকার সেই দিনগুলি!
আজকে কথা ওঠে, আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে এত কথা নাকি বর্তমান জেনারেশনের পছন্দ না (বিভিন্ন পোস্ট মারফত জানা তথ্য)! ক্যামনে পছন্দ হবে? তাদের মাথার ভেতরে গেঁথে আছে বর্তমানের বিভিন্ন বস্তাপচা গানের লাইন।
অথচ আমরা এখনও সেই পুরাতন “সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে?” লাইনে বিরহ খুঁজে পাই। এখনও কষ্ট হলে বলি, “আর বেশি কাঁদালে / উড়াল দেবো আকাশে”। “এই রূপালি গিটার ফেলে / একদিন চলে যাব দূরে” বলে অভিমান করি।
আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে ’৮০-’৯০-এর দশকের আমাদের স্মৃতি খুব ছোট কিছু নয়। কারণ আমাদের ইউটিউব, ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম ছিল না। আমাদের সময় কাটত ফিতার ক্যাসেট, বিটিভি, তিন গোয়েন্দা আর মাসুদ রানায়। আমরা এসব নিয়েই বুঁদ হয়ে থাকতাম। আমাদের প্রতি ক্ষণে ক্ষণে ইশ্যু খুঁজতে হতো না ফেসবুকপোস্ট দেবার জন্যে। আমরা খুঁজে খুঁজে ভালো গানগুলো একসাথে করে একটা ক্যাসেটে রেকর্ড করাতাম। আমরা প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ছবি আপ দিবার চেয়েও বেশি ধৈর্য নিয়ে একটা গান ভালো লাগলে বারবার টেনে টেনে শুনতাম। ফিতার ক্যাসেটে এক গান শোনার কী ঝামেলা তা ইউটিউবে গানশোনা মানুষেরা বুঝবে বলে মনে হয় না। কোনো কারণে ক্যাসেটে প্যাঁচ লেগে গেলে, বলপেন বা পেন্সিল ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে সেটাকে আবার ঠিক করতাম।
আহ্! কী চমৎকার সেই ফিতাময় স্মৃতিগুলি!
আইয়ুব বাচ্চু আমাদের কাছে অনেককিছু। আইয়ুব বাচ্চু ভালো থাকুন যেখানেই থাকুন।
… …
- স্মৃতিফিতার সেই দিনগুলো || রুবেল আহমদ কুয়াশা - October 22, 2018
COMMENTS