আ আ

আ আ

২০০৬ সালে প্রকাশিত পত্রিকাটায় ঘাপটি মেরে এদ্দিন পর্যন্ত লুকানো ছিল কবিতাগুলো। চোখে পড়ল এসে ২০১৫ যখন মধ্যভাগ ক্রস্ করে ফেলেছে প্রায়! এবং এই চোখাচোখির সঙ্গেও জড়িত দস্তুরমতো আরেকটা কাকতাল। কত অদ্ভুত ঘটনাই-না ঘটে এই বিপুলা বাজারবিধৌতা গ্ল্যামারওয়ার্ল্ডে! এর কিয়দংশ বলে উঠতে না উঠতেই জীবন ফুরায়ে যায়, আসে করুণাধারাটাও শুকায়ে। এছাড়াও রয়েছে ব্যাটাগিরি-ফলানো রচনা লেখার হাউশ এবং ভাইস্-ভ্যার্সা ব্যাটাগিরি-ফলানো-যায়-না টাইপের লেখা লিখতে প্রবৃত্ত না হওয়া। আর এইসব বাজারবাও পরিস্থিতির প্রেশারে এন্তার গল্প পশ্চাতে থেকে থেকে একদিন দুম করে এসে যায় ডিপার্চারমুহূর্ত। ‘নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে … হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম-না-জানা পাখি / অজান্তেই চমকে উঠি / জীবন ফুরালো নাকি?’ ঠিক এইটা না, আহমেদ ইউসুফ সাবেরের কবিতা নিয়ে এই গল্প নয়। আখমাতোভার একটা বাংলা-অনূদিত কবিতার গল্প এইটা।

আব্দুল্লাহ্ আল মামুন অনুবাদ করেছেন কবিতাটা। আখমাতোভার গোটা কাব্যগ্রন্থ, ‘শোকস্তোত্র’ বঙ্গানুবাদিত শিরোনাম কবিতাবইটার, ছোট্ট বই, পত্রিকায় পাণ্ডুলিপি হিশেবে ছাপানো। ‘চন্দ্রাবতী’ শিরোনামক পত্রিকা, সম্পাদক সুস্মিতা চক্রবর্তী, ছাপা হয়েছে রাজশাহী থেকে ২০০৬ সালে। এরপর আর কোনো সংখ্যা বারায় নাই মনে হয়। কিন্তু ওই একটামাত্র সংখ্যাই ছিল সংগ্রহযোগ্য। অনেক অনুবাদের একত্র জমায়েত হয়েছিল পত্রিকাব্যাপী, মূলত প্রবন্ধগদ্যাদি, কিছু কবিতাও। গদ্যগুলো পড়া হয়েছিল তখনকার টাইমেই, কিন্তু পদ্য অপঠিত রয়ে গেছিল। অনূদিত কবিতা আজও পড়ার ব্যাপারে তেমনটা আগুয়ান হই না। তা-ও তখন ‘চন্দ্রাবতী’ সমস্ত মনোযোগ অধিকৃত করে রেখেছিল কবিতারই একটা আস্ত ম্যানাস্ক্রিপ্ট দিয়ে; এমিলি ডিকিন্সন বাংলায় ছাপা হয়েছিল সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের অনুবাদে। একটা-দুইটা না, পাক্কা একশ’ দুইটা কবিতার সমবায়ে ‘ডিকিন্সন শতক’ শিরোনামে এমিলি ডিকিন্সনের নির্বাচিত কবিতার অনুবাদ; বলা বাহুল্য, গোমেজের নির্বাচন; এবং ছোট্ট কিন্তু দুর্ধর্ষ ভূমিকা।

‘নারী বিষয়ক ছোটকাগজ’ কথাটা কাভারে এবং ভেতরে এখানে-ওখানে লেখা আছে কাগজে, লেখা না-থাকলেও রচনাবিন্যাস ও সম্পাদনাধারা থেকেই বোঝা আদৌ অসাধ্য নয় যে এইটা নারীবিষয়কেন্দ্রী কাগজ। সুসম্পাদিত কথাটা বাংলাদেশে অল্প পত্রপত্রিকার ব্যাপারেই লাগসই, ‘চন্দ্রাবতী’ নিঃসন্দেহে সেই অল্পসংখ্যার একটা, বানানত্রুটির প্রাচুর্য সত্ত্বেও পত্রিকাটা ভালো হয়েছিল। অদ্যাবধি হাতে নেয়া যায় মাঝেমধ্যে।

ফেসবুকে বেশ-কিছুদিন আগে আখমাতোভা মাদামের খান-সাতেক কবিতা সামনে এসে গেছিল বঙ্গানুবাদে। ঢের ঢের বছরের বাদে দেখা হয় আখমাতোভার সনে। এ-যাত্রা দেখা হয় বিজয় আহমেদের ভাষান্তরদৌত্যে। সেই কবিতাগুলো কবির মশহুর ‘রেক্যুয়েম্’ থেকে বেছে নিয়ে অনূদিত, মনোহরণীয় হয়েছিল অনুবাদেও। গোটা বইটা দেখার সাধ হয় এর নামটার আকর্ষণে; ‘রেক্যুয়েম্’ শব্দটা ভারি সুন্দর মনে হয় সবসময়। ইংরেজি পিডিএফ পাওয়া যায় আয়াস একটুতেই, এবং, ইন্সিডেন্টালি গোটাটার বঙ্গানুবাদ পরের দিন সকালেই পুরানা সাময়িক পত্রিকার ফোকর ফুঁড়ে এসে নিজেরে মেলে ধরে। এতদিন, কম নয় প্রায় ছয়/সাতবছর ধরে, এইটা তাকিয়ায় নিদ্রা যাচ্ছিল! ‘চন্দ্রাবতী’ কাগজেই ছিল গোটা ‘রেক্যুয়েম্’ অথচ চোখেও পড়ে নাই! বিচিত্র কোইন্সিডেন্সগুলোর জন্যই জীবন মধুময় মনে হয় কালেভদ্রে। দেখি যে এইটা বাংলায় করে রেখেছেন জনৈক আব্দুল্লাহ্ আল মামুন, অনুবাদকের পরিচিতি ছাপা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিশেবে, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তখন, এদ্দিনে নিশ্চয় বাড়বাড়ন্ত হয়েছে প্রোমোশন্ পেয়ে, এবং দু-দুটো ইংরেজি ভাষান্তরসহযোগ নিয়ে এইটা বাংলায় এনেছেন বলে জানাচ্ছেন বঙ্গানুবাদক স্বয়ং।

অনুবাদ কেমন হয়েছে এইটা তো বলতে পারব না। কারণ রুশিতে রেক্যুয়্যেম তো চক্ষেও দেখি নাই। কিন্তু বাংলায় জিনিশটা ভাবতে বা পড়তে অসুবিধা হয় নাই। সুন্দর হয়েছে। বিলাপগাথার সকরুণাভা আছে এখানে অন্তঃশীলা। আখমাতোভার কবিতা বিষয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতি আছে বেশ লম্বা। মানে, সঙ্কোচে জানাই আজ, এখন তো সুখের স্মৃতিই সেসব, এক-সময় বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত ছোটকাগজ নামধেয় পত্রিকাগুলোতে এই রুশি বিষাদমানবীর কবিতা আকস্মিক কোনো-না-কোনো কোণায় মিলে যেতই যেত। অনুরাগ আসার বদলে আমার বিরাগ প্রায় স্থায়ী রূপ নিয়েই নিয়েছিল উনার উপর উনারই বাংলা অ্যাডম্যায়ারারদিগের কারণে। এমনও মনে হতো আমার, তৎকালে, সেইসব অনুবাদ প্রায়শ পাতাভরাটকরণ ছাড়া আর-কোনো উদ্দেশ্যে ছাপানো হয় নাই; কিংবা তখন রুসম্ ছিল অনেকটাই এমন যে, একগুচ্ছ অনুবাদকবিতা আর একজোড়া অনুবাদগল্প না-ছাপলে এডিটর মশাই ঠিক কুলীন কাগজকরিয়ে হিশেবে সমাজে পাত্তা পাবেন না। আন্দাজ আমার, হতেও পারে দ্য ট্রুথ ইজ্ আউট দ্যায়ার। কাজেই এক্স-ফাইলস্। অ্যাইজেন্ট মোল্ডার আর অ্যাইজেন্ট স্কালির মামলা। ‘আমার জন্য কেঁদো না, মাগো, / আমি তো কবরে বেঁচে আছি’ ইত্যাদি স্তবক ওইখানে পাওয়া যায়, ‘রেক্যুয়েম্’ তথা ভাষান্তরিত ‘শোকস্তোত্র’ কবিতাপুস্তিকায়।

তা, না-যাই সেদিকপানে। এমনিতে এই কয়টা বাংলা কবিতা যদি আখমাতোভা মাদামের হয়, তাইলে তো উনারে একটা চান্স দেয়া যায় কি না পুনরায় প্রেমনিবেদনের, সিরিয়াস্লি ভাবছিলুম এদ্দিন বাদে। রেক্যুয়্যেম শব্দটা আমার ভারি প্রিয়। ওই স্মৃতিসূত্রেই। নাইন্টিসিক্স/সেভেনের দিকে একটি টিভিসিরিজ দেখাত বিটিভিতে, ‘রেক্যুয়্যেম ফর গ্র্যানাডা’, সেইখান থেকেই শব্দটা জানা এবং খানিক ইতিহাসও। তো, অ্যানিওয়ে, লেখাগুলো সুন্দর হয়েছে। এবং ছোট্ট ভূমিকাটায় আখমাতোভার যাপিত জীবনে প্রেতমহাত্মা স্তালিনের উপর্যুপরি নিগ্রহ-অত্যাচার, গুটিকয় বাদে বাকি সব-কয়টা বইয়ের উপরে আরোপ-করা নিষেধাজ্ঞা, ইত্যাদি বাংলায় একপৃষ্ঠা ব্যাপ্তির ভিতরে বেশ এঁটে উঠিয়েছেন অনুবাদক। কম্যুনিস্ট কিংডমের আদেশ-নিষেধপ্লাবিত শাসননীতি নিয়া আলাদা আলাপের দরকার হয় না। শাসনসোহাগ বাংলায় যা বা যেমন, রুশিতে তা-ই, চৈনিকেও তথৈবচ।

লেখা / জাহেদ আহমদ

… …

জাহেদ আহমদ
Latest posts by জাহেদ আহমদ (see all)

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you