মেঘচিল সেলিম মোরশেদ সংখ্যা : নির্বাণে উদযাপন

মেঘচিল সেলিম মোরশেদ সংখ্যা : নির্বাণে উদযাপন

খুবই স্থিতধী একটা কাগজ ‘মেঘচিল’। ওয়েবে এত গোছানো কন্টেন্ট অন্তত বাংলা ভাষায় বেশি-একটা নাই। লিটলম্যাগের টেম্পেরামেন্ট নিয়া কাগজটা প্রায় তিন বা তারচে বেশি বছর ধরে ওয়েবে সচল। কোনো হঠকারিতা বা লাফালাফি-চিল্লাচিল্লি নাই। ইন্টার্ফেইস থেকে শুরু করে এর অন্তর্গত রচনাসামগ্রী সর্বত্রই চিন্তাভাবনা আর পরিকল্পনার ছাপ লক্ষণীয়। উঠল বাই তো কটক যাই কিসিমের কারবার এইখানে নাই। যারা অনলাইন সাহিত্যহুজ্জোতির জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে এরই মধ্যে লেখালেখি-পড়াপড়ি জিনিশগুলারে বুড়াদের ছোঁড়া সাজবার কায়কসরত ভেবে এরই মধ্যে এসব এড়ায়া বাঁচবার ডিসিশন নিয়ে ফেলেছেন তারা এই পত্রিকাটা ব্যুকমার্কে দেগে রাখতে পারেন।

রিসেন্টলি ‘মেঘচিল‘ ওয়েবম্যাগ একটা পরিশ্রমী কাজ করেছে সেলিম মোরশেদের উপরে একটা আস্ত সংখ্যা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। সেলিম মোরশেদ নিয়া আপনার বা আমার নতুন করে জানবার কিছু নাই নিশ্চয়, যারা আর্লি দিনগুলায় লেখালেখিলিপ্ত ছিলাম তাদের ক্ষেত্রে তো বলা বাহুল্যই। লিটলম্যাগটাইমে বাংলাদেশপার্টের একমাত্র প্রোট্যাগনিস্ট তিনি, নিজের ক্ল্যান থেকে তার প্রচার ও সম্প্রসার হয়েছে বেশ ভালোভাবেই। ঠিক যেমন সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ নামে একজন কথাসাহিত্যিককেও ওইসময় দেখতাম/পড়তাম ঘনঘন। ‘আগুনের বিপদাপদ’ নামে উনার একটা বই নিয়া তো প্রচুর উদযাপনও হয়েছিল ছোটকাগজ ঘরানায়। যা-হোক, মোরশেদ নিয়া আমার আগ্রহ শুরুর দিনগুলোর পরে সেভাবে আর বজায় থাকে নাই; কেন থাকে নাই তাও আমি বলতে পারব বোধহয়। অ্যানিওয়ে।

মেঘচিল খুবই ভালো কাজ করেছে ডাউট নাই। খুবই গোছানো। ভাবলাম আপনাদের কারো কারো চোখে না-ও পড়তে পারে, যেহেতু ওইভাবে ফেসবুকবিহারী না আমার মতো সবাই। লিঙ্কটা আগায়া দিলাম কাজেই। এই নিন লিঙ্ক —

মেঘচিল সেলিম মোরশেদ সংখ্যা : নির্বাণে উদযাপন

এই সংখ্যাটি নিয়া আলাপ হচ্ছিল কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক আহমদ মিনহাজের সঙ্গে। আলাপ বলতে এখনকার জমানায় সাক্ষাৎ-সশরীর আলাপ তো নয়, তেমন ভুলবোঝার অবকাশ বাহুল্য, আলাপ বলতে মেইল চালাচালি কিংবা ইনবক্সিং বোঝায়। আমরা তা-ই বুঝি। মিনহাজ নব্বই দশকের বাংলাদেশে সিলেট থেকে সম্পাদিত ও প্রকাশিত ছোটকাগজ-আন্দোলনে তৎপর ছিলেন। অনেক পত্রিকায় সহযোগ দেবার পাশাপাশি তিনি ‘সূনৃত’ পত্রিকার সম্পাদনা পর্ষদের একজন, যে-পত্রিকাটি ২০০৩ সালে আহমদ ছফা ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছিল। ছফাপ্রয়াণের অব্যবহিত পরে এটি ছিল কোনো ছোটকাগজের পক্ষ থেকে দেহান্তরিত ছফার জীবন ও কাজের প্রতি প্রথম ট্রিবিউট। প্রসঙ্গত, সূনৃতের জন্যে লেখা চেয়ে এর সম্পাদক ও প্রকাশক আহমদ সায়েমের পাঠানো একটা চিঠিও ছাপা হয়েছে ‘মেঘচিল’ আলোচ্য সংখ্যায়। এই সবকিছু মিলায়া আলাপ হচ্ছিল আহমদ মিনহাজের সঙ্গে। মেইলের একাংশ কপি-পেইস্ট করি নিচে :

“সেলিম মোরশেদের ওপর ‘মেঘচিল’-এর আয়োজন আপনাদের সুবাদে জানতে পারলাম। অনলাইনে ছোটকাগজের কারুকার্যময় উপস্থাপনা দেখে ভালো লাগল। লিংকের সূচিপত্র দেখে মনে হলো বেশ ভালো কাজ হয়েছে। এখনও পড়িনি। নিজের লেখা গুছিয়ে নিলে ফাঁক করে দেখব। ‘সূনৃত’-এর সপ্তম সংখ্যার পরিকল্পনার সময় বিভিন্ন বিষয় ধরে লেখকদের আমরা পত্র পাঠিয়েছিলাম। প্রতিটি পত্রই লেখক ও তাঁর বিষয় অনুসারে ভিন্ন ছিল। কিন্তু সাড়া তেমন পাইনি। মোটের ওপর সবাই নানা অজুহাত দেখিয়ে লেখা আর পাঠাননি। সেলিম মোরশেদ তখন অসুস্থ ছিলেন। আবেগময় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সায়েমকে (আহমদ সায়েম, কবি এবং ‘সূনৃত’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক গানপার)  বলেছিলেন সুস্থ হওয়ার পর চেষ্টা করবেন লেখা দিতে। সেটা আর ঘটেনি।

মনে পড়ছে এই সুবাদে সলিমুল্লাহ খানের সঙ্গে পত্রযোগাযোগ ঘটেছিল। আমাদের সঙ্গে তাঁর মত ও তরিকার মিল পড়ে না এবং তিনি ছফাভাবিক ইত্যাদি জানিয়ে পত্র দিয়েছিলেন। আমরাও তাঁর পত্রের জবাব দিয়েছিলাম। তো চিঠি চালাচালির সূত্রে দেড়পাতার ইংরেজি একখান লেখা ই-মেইল করে জানতে চেয়েছিলেন এতে চলবে কি না। লেখাটি তিনি সম্ভবত তরজমা করে পাঠাতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁর সাড়ার ধরন দায়সারা মনে হওয়ায় আমরা আর জবাব লিখিনি, তিনিও ফিরে কিছু লিখেননি। ছোটকাগজে বৈচিত্র্য সহকারে মনের মতো সংখ্যা করা বাংলাদেশে-যে সম্ভব নয় আক্কেলটা এই সুবাদে হয়েছিল।”

ছোটকাগজ সম্পাদনায় সুখদুঃখ দুনোটাই ছিল, বর্তমানে সুখদুঃখ সবই আছে কেবল ছোটকাগজটাই নাই। ছোটকাগজ নিয়া হাঁউকাঁউ হয়েছে ম্যালা, হাঁউকাঁউ করেই গিয়েছে বেলা, আজও দেখি ঝিমায়া ঝিমায়া ছোটকাগজ নিয়া হাঁউকাঁউ হয়। এখন ছোটকাগজ নিয়া বারোদিনের শিশু রহিম বাশশাও বড় বেরহম তুচ্ছাতাচ্ছিল্য করেন দেখতে পাই। কিন্তু এইটা তৎকালে লেখালেখির একমাত্র পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন স্পেস ছিল বোধহয়। লিখতে ইচ্ছে করত সেইসব পত্রিকায়। একটা পত্রিকার দেখাদেখি আরেকটা পত্রিকা বাইর হতো। অনলাইনে বা নেটযুগে এসে এই প্রবণতা আরও জোরদার হবার কথা ছিল। অজ্ঞাত কারণে তা হয় নাই। অঙ্গুলিমেয় কয়েকটা ওয়েবকাগজ আছে যেইগুলারে একটু পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন স্পেস মনে হয়। গার্বেজই বেশি। ‘মেঘচিল’ অঙ্গুলিমেয় কয়েকের এক।

মেঘচিল’ ওয়েবকাগজের সম্পাদক ও প্রকাশক বিজন অরণ্য। মেঘচিল মিডিয়া লিমিটেডের পক্ষ থেকে এইটা পাব্লিশ হয় রেগ্যুলার্লি। বাকি সমস্ত তথ্য সাইটে যেয়ে দেখে নিতে অনুরোধ করব। মন্দ লাগবে না। ব্যুকমার্ক করে রাখতে পারেন। বা, একটু সদয় বিবেচনাপূর্বক, কাগজটার সোশ্যাল সাইটের পেইজগ্যুলায় একটা লাইক বা সাবস্ক্রাইব দিয়া রাখলে বেশ হয়। ভালো উদ্যোগগুলারে এছাড়া অ্যাক্লেইম করবেন কেমন করে?

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you