পূর্ণিমা

পূর্ণিমা

শাদাসিধা সাধারণ সুন্দর ঝলমলানো মুখশ্রী নিয়া হাজির হয়েছিলেন পূর্ণিমা বাংলাদেশের সিনেমাপাড়ায়। হাসি ছাড়া আর-কিচ্ছুটিই নজরে পড়বার নাই। স্নিগ্ধ উপস্থিতি বলতে যা বোঝায়, সিনেমাস্ক্রিনে কিংবা স্টিলফোটোগ্র্যাফে, নায়িকা পূর্ণিমার তা আছে। এত অঢেল সেই স্নিগ্ধতা, আর কোনোকিছুর দিকে মন বা দৃষ্টি নিয়া যাইবার জো নাই। মিষ্টি বেশি পছন্দ করে যারা, তাদের বয়সটারে এনভি করি আমরা, তারা সারাদিনই মিষ্টি খেতে চাইতে পারে। একটু বয়স যাদের পাকা, যারা নানাবিধ অভিজ্ঞতায় জীর্ণ ও অধিক মিষ্টি গলাধঃকরণে বদ্যির পরামর্শ মেনে অনীহ, তারা চান মাল্টিপার্পাসিভ সবকিছু। মুখশ্রী ও শরীরের ক্ষেত্রেও হয়তো তারা তা-ই চাইবেন। ফলে কেবল স্যুয়িট মুখশ্রী দিয়া অ্যাডাল্টদের পোষায় না।

পূর্ণিমা

চাঁদের লগে তুলনা করে কেউ কেউ পূর্ণিমারে ডেস্ক্রাইব করে খেয়াল করেছি। ষোলোকলা পূর্ণ করা চাঁদের দশা। আর কে না জানে যে চাঁদের ষোলোকলা কমপ্লিট হইলেই পরে তারে পূর্ণচন্দ্র তথা পূর্ণিমা ডাকে লোকে। কিন্তু মুশকিল হলো, কলাশাস্ত্রে বিশেষ কোনো দখলদারিত্ব পূর্ণিমার আছে বলিয়া আজও মনে হয় নাই। কিংবা যা আছে সেইটারে শাস্ত্রীয় কলা/আসনমুদ্রার একটাতেও ফেলা যাবে না, জানার মধ্যে জানেন তিনি ছলাকলা, তা-ও উঁচুদরের ট্রিকি কিছু নয়, পূর্ণিমার আয়ত্তে আছে ওই ঘুরেফিরে ন্যাকামি। বিদঘুটে নখরামি। বাংলাদেশের কমার্শিয়্যাল কল্পচলচ্চিত্রে যা সাধারণলভ্য ও সর্বত্রগোচর একটা ফেনোমেনা। হাঁটতে-বসতে হাসতে-কাঁদতে ন্যাকামি আর ন্যাকামি। রিয়্যালিটি মানিয়া না নিয়া উপায় নাই আমাদের। ন্যাকামিরিয়্যাল বাংলা ছায়াছবিশিল্প।

কলাবিদ্যায় পারদর্শিতার ব্যাপারটা ছায়াছবি বিজনেসের সাথে সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে তো জরুরি। কিন্তু ভূবঙ্গে এই বিদ্যায় সাক্ষরতা আছে এমন নায়ক-নায়িকার দেখা পাওয়া জাতিস্মর ও ত্রিকালদর্শীদের নসিবে থাকলেও থাকতে পারে। আমরা পাই নাই। ফলে পূর্ণিমার ন্যায় নায়িকারা তাদের জ্যোৎস্নায় বিশেষ প্রীত করতে পারেন না প্রবেশিকা-পারানো বুড়াদেরে। বাচ্চাদের জন্যে ম্যে বি ঠিক আছে। একঘেয়েমি জিনিশটা আসে কলা-না-জানা মাকালদেরে দেখে। এবং জ্যোৎস্নাও তখন রোজকার ভাতের হাঁড়ি থেকে ফেলে দেয়া বা গাপ করে খেয়ে ফেলা মাড়ের মতো মনে হয়।

ঢালিউডে পূর্ণিমার আগমন নাইন্টিসেভেনে। সালমান শাহ আত্মহনন/হননের অব্যবহিত পরের বছরেই। ‘এ জীবন তোমার আমার’ ম্যুভি দিয়ে। এরপরে একে একে খান-পঞ্চাশেক করেছেন। ইদানীং বড়পর্দায় পাতলা মাঝেমধ্যে দেখা যায়। ইদানীং ছবিও হই কই বড়পর্দায়? গত বছর-পাঁচ ধরে মৌসুমী-শাবনূর-পপির মতো পূর্ণিমারও উপস্থিতি বিরল হয়ে উঠেছে বড়পর্দায়। টেলিভিশনের নাটকে দেখা যায় ঈদেচান্দে। দেহে বেশ চর্বি ফিরেছে। বেশ কেন, পুরাই পৃথুলা বলতে হবে। দেখতে তবু মন্দ লাগে না। একঘেয়ে লাগে, এইটুকুই-যা।

স্ক্যান্ডাল খুব-একটা নাই বোধহয় এই নায়িকার। খুব-একটা সাতেপাঁচে না জড়িয়ে একটানা অভিনয় করে গেছেন এতদিন ধরে, এ এক আশ্চর্য। পোশাক ইত্যাদির ব্যাপারে পূর্ণিমার সেন্স খুব ভালো। অথবা তার অবয়ব এমনই যে যা-কিছুই পরিধান করেন, দেখতে ভালো লাগে। একঘেয়ে লাগতে শুরু করে পরের মিনিট থেকে। কেননা হাসিমুখ ইন্ট্রোতে ভালো লাগলেও সবিস্তার আগাইলে এত ঝলমলা হাসি কেমন ভ্যাবলা লাগে। সেইটাই হয়েছে পূর্ণিমার ক্ষেত্রে।

পূর্ণিমা

এখনও পূর্ণিমার বয়স আছে নায়িকার পার্ট করার। শরীরী ছন্দ ও তাক্কতও। তবু অভিনয়ে একেবারেই শিথিল ইদানীং। বিয়ে-থা করে থিতু হয়েছেন সতীর্থদের তুলনায় ঢের আগেভাগে অল্প বয়সে। স্বামী ও সন্তান নিয়া ভালোই সংসার করছেন, নিরভিযোগ। ২০১০ সনের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। পরে বেশকিছু সংগঠন ও পত্রিকা ইত্যাদির অ্যাক্লেইম পেয়েছেন। বয়স-নির্বিশেষ সকলেই পূর্ণিমা পছন্দ করে। চাঁদের হাসির বাঁধভাঙা ভালোবাসে দেখতে সবাই।

আজকাল পূর্ণিমাকে দেখলে মনে হয় তিনি দিন দিন যেন হাঁসের ডিমের মতো গুল্লুগাল্লু ও ধবধবা হয়ে উঠছেন আরও। অনেক ক্রিম-স্নো ও অন্যান্য উপটান গায়ে মাঞ্জন করেন বোধহয় সারাদিন। কাজকাম না থাকলে যা হয় আরকি।

… …

মিল্টন মৃধা
Latest posts by মিল্টন মৃধা (see all)

পরের পোষ্ট
আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you