শাবনাজ

শাবনাজ

অষ্টম-নবম শ্রেণিতে এলেম হাসিল করার কাজে নিযুক্ত অসংখ্য বালকের ইশকুল পালিয়ে প্রেক্ষাগৃহের রহস্যগুহায় সেঁধিয়ে যাওয়ার শুরু হয় শাবনাজের হাতছানিতে। কেবল ইশকুলডেস্কে ব্যাগ-জ্যামিতিবক্স রেখে প্রাণ ও পাছার মায়া ত্যাজিয়াই পলায়ন তা তো নয়, এর আগের দিন-তিনেক ধরে অ্যা সিরিজ অফ অ্যাক্টিভিটি ইমপ্লিমেন্ট করা লাগত। ঘরের পুরানা পত্রিকা, হাঁসমুর্গির আন্ডা, নারকেল-সুপারি ইত্যাদি চুপকে-চুপকে বেচেবুচে একটা ফান্ড হয়ে যেত দুপুরের শো দেখার। পরের দিন ইশকুলে বাপের বা কাকার তলব পড়ত। সংক্ষেপে, প্রাণ বাঁচলেও পাছাটা কাঠের তক্তানির্মিত রুলের প্রহারে চ্যাপ্টা লাল হয়ে যেত।

তখন নতুন হাওয়া এসেছে সেভেন-এইটের ছোকরাদের গায়ে এবং মনে। এসেছে হিন্দি সিনেমার দেখাদেখি বাংলাদেশেও নয়া নায়ক-নায়িকা নিয়া ছায়াছবি নির্মাণের ধুম। প্রথমবারের মতো আন্টিবয়সী সিনেমানায়িকাদেরে এক্সক্লুড করে এক নায়িকার আগমন ঘটে এহতেশাম সাহেবের হাত ধরে। সেই নায়িকার নাম শাবনাজ। সঙ্গে এক ছোকরা নায়ক, নাম তার নাঈম। সিনেমার নাম ‘চাঁদনী’। শুরু হলো টিনেইজ কাহিনিনির্ভর ছবি নির্মাণের ধারা। চাঁদনীর ব্যবসাসাফল্য ভর করে এফডিসি নয়া স্টার্ট করে। যেন নতুন যুগের সূচনা।

আক্ষরিক অর্থেই নতুন যুগের শুরু হয় শাবনাজ-নাঈম জুটির চাঁদনী  রিলিজের মাধ্যমে। এরপরে একে একে অনেকে আসেন। এইভাবেই বাংলাদেশের উত্তমকুমার সালমান শাহ অবতরণ করেন এফডিসিতে এবং বাংলার মানুষের হৃদয়ে। একইসঙ্গে আসেন মৌসুমী। ঠিক তাদের পরে শাবনূর, পপি, পূর্ণিমা এবং আরও অনেকে। এইসবের কিছুই হতো না চাঁদনী না এলে।

অবশ্য খুব যে আহামরি কিছু ছিল শাবনাজের অভিনয়নৈপুণ্য, মোটেও নয়। কিন্তু শরীর এবং অন্যান্য আঙ্গিক ব্যবস্থাদি ছিল স্কুলকলেজবয়স্ক তরুণদের অনুকূল। তারা নিজেদের মতো দেখতেশুনতে একটা মানবীর দেখা পায় এই পয়লা। তাদের পাশের ডেস্কে বসে-থাকা সহপাঠিণীর মতো চোখ-মুখ-শরীর সবকিছু। ফলে ক্লিক করে শাবনাজ এবং সেইসঙ্গে লিপস্টিকরাঙা ভ্যাবলা নাঈম।

খুব বেশিদিন ছিল না তাদের ক্যারিয়ার। দুইজনে জুটি বেঁধে এবং অন্য নায়কনায়িকার সঙ্গে আলাদা আলাদা সাকুল্যে একুশ-বাইশখানা ছায়াছবি করেন। পরে দুইজনে একে অন্যেরে চিরতরে বগলদাবা করে এফডিসি থেকে বিদায় নিয়া বাচ্চাকাচ্চা ও সংসারধর্ম গ্রহণ করেন। শাবনাজ তো হিজাব করেন, সালাত-সিয়াম কায়েম করেন রেগ্যুলার, স্বামী ছাড়া পা বাইরে বের করেন না ঘরের।

চাঁদনী  ছাড়াও ‘চোখে চোখে’ নামে একটা ছায়াচিত্র সফল হয়েছিল। শ্রুতিমধুর গানগুলা বাজারে-বাসাবাড়িতে বেশ বাজত। এই জুটির সব সিনেমাই ব্যবসা করেছে। একদমই কিন্তু অভিনয় বা নির্মাণশৈলীর কারণে নয়, ব্যবসা করেছে নয়া সময়ের অভিঘাতে। মুক্তবাজার অর্থনীতির গোড়ায় কালচারাল একটা বার্স্ট সর্বত্র হয়েছিল। ফলে তরুণেরা নিজেদের সিদ্ধান্তে চলতে শুরু করছিল। কন্টেন্ট খুঁজছিল তারা তাদের নিজেদের ফেভ্যরের। ফলে যা পেয়েছে তা-ই নিয়েছে।

শাবনাজের শরীর ছিল ছিপনৌকার ন্যায়। বেতস বা লাউডুগির ন্যায়। ছিপছিপে, লকলকে। তার চোখজোড়া ডাগর ছিল। প্রকাশবাঙময়। ভাগ্যশ্রীর সঙ্গে সাযুজ্য খুঁজে পেতেন অনেকেই। হিন্দি সিনেমায় সেই সময়টায় ভাগ্যশ্রীর চোখযুগলের কদর ছিল। তবে যে-ব্যাপারটা মার্জনার অতীত ছিল শাবনাজের মধ্যে, সেইটা আওয়াজ। শাবনাজের গলা দিয়া আওয়াজ বেরোলেই বেলুন চুপসে যেত দর্শকের। বিচ্ছিরি কণ্ঠস্বর। মনে হতো কেঁচো কথা বলছে।

এই নিবন্ধ প্রকাশপ্রাক্কালে ব্যানার ও অন্তর্গত অন্যান্য প্রয়োজনে তিন-চারটে স্থিরচিত্র দরকার ছিল বলে গ্যুগল সার্চ দিয়া আকাশপাতাল খুঁজলাম, কড়ে-গোনা যা ছবিই পাই ইমেইজের পাতায় তার সব-কয়টাতেই পাশে দণ্ডায়মান ওষ্ঠরাঙা ভ্যাবলাকান্ত মুলা নাঈম। শাবনাজের একক কোনো রিসেন্ট ছবি মিলল না হাজার হাতড়েও। যত অনুষ্ঠানে অ্যাটেন্ড করেছেন শাবনাজ, গত দুইদশকে সম্ভবত ছয়-সাতবারের বেশি মিডিয়ার সামনে আসেন নাই এই যুগল, সবখানেই নাঈম পাহারা দিচ্ছেন শাবনাজেরে।

অবশ্য দিনকাল যা পড়েছে, পাহারাদার শফিহুজুরদের শাসনামল, বেডরুমে সেইফটি নাই। কাজেই রাজপথে কেমন করে ছাড়বেন প্রাণপ্রিয় পত্নীটিরে। অগত্যা আমরা ভালো ছবি ইনক্লুড করতে পারি নাই এই নিবন্ধের সঙ্গে।

প্রতিবেদনকারী : মিল্টন মৃধা

… …

 

মিল্টন মৃধা
Latest posts by মিল্টন মৃধা (see all)

পরের পোষ্ট
আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you