চৈত্রশুরুতেই প্রিপেয়ার্ড থাকা ভালো ঝড়বাদলি বিষয়ে। যে-ল্যান্ডে জন্মেছ তুমি সেই ল্যান্ডের সিজন্স নিয়া, নানান সিজনের টেন্ডেন্সিস নিয়া, খানিকটুকু কমনসেন্স তো থাকতেই হয়। না-থাকলে একটা ব্লান্ডার হবেই হবে। যেমন দেখছি যে এ-বছর দেশজুড়ে বেশ রকশো হচ্ছে, জেলাশহরগুলোতে, সেগুলো কর্পোরেট স্পন্সর দিয়ে যেমন আয়োজিত হচ্ছে তেমনি মিনিস্ট্রির ব্যানারেও হচ্ছে। কালচারাল মিনিস্ট্রি। এবং কালচারসমুজদার নানা গ্রুপের/ফোরামের আয়োজনও কম নয়। ফিন্যান্সের বিবেচনায় সেইসব আয়োজনের সব-কয়টাই হিউজ বলতে হয়। এত মানুষের উদ্দীপনা, এন্ডিভার, এন্থ্যুসিয়্যাজম জড়িয়ে থাকে একেকটা আয়োজনে যে ব্যাহত হলে ব্যাপক মনখারাপ লাগে বেচারা আয়োজকদিগের। মন আমাদেরও কম খারাপ হয় না। ব্যানড কমিউনিটির আয়োজনে সিলেটে লাস্ট শোটা ভেস্তে গিয়েছে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়ে। কেবল এইটাই না, সারাদেশে স্বাধীনতা কন্সার্টের আয়োজনগুলোও এই সময়টায় বৃষ্টির কিংবা ঝড়ের কিংবা ঝড়ো-হাওয়ার খপ্পরে একের পর এক ধুলামাটি হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। ইনডোর কন্সার্ট হলে অ্যাট-লিস্ট শোটা চালানো সম্ভব হতো, শ্রোতাসমাগম কম হতো হয়তো, ওপেন-এয়ার হওয়ায় একেবারেই মাঠে মারা যাচ্ছে বেবাককিছু।
চৈত্রের শুরুতেই না-হোক মাঝামাঝিতে একটা ঝড় তো হবেই। বিশেষত সন্ধ্যায় বৃষ্টিবাত্যা, জোর ঝড়, আর চৈতালি হাওয়ার ঘূর্ণি তো হবেই। বিষয়গুলা ক্যাল্কুলেশনে রেখে এই সময়টায় কাজকাম আগাতে হয়। কেবল অদৃষ্টের ওপর ভরসা রেখে এগোলে ট্র্যাপ থেকে বাঁচন নাই। বৃষ্টি হবে না ভেবে বিসমিল্লা বলিয়া আসমানতলে ম্যারাপ বেঁধে নিলেই রক্ষা পাবেন তা হবে না। ব্যানড কমিউনিটির ছাব্বিশে মার্চ আয়োজনটা বানচাল ভণ্ডুল হয়ে গিয়েছে চৈত্রঝড়ের জোরজবরদস্তিতে। এইখানে কারোর কোনো হাত নাই। নিস্তার নাই ন্যাচারের খামখেয়াল থেকে। বেলা দ্বিপ্রহরে বেজায় সানি ওয়েদার, অপরাহ্ণে কুজ্ঝটিকায় আকাশ ছাওয়া আকস্মিক। ঘটনাটা বাংলার ঋতুপঞ্জিকানুযায়ী নিশ্চয় স্বাভাবিক। তবু মন তো মানে না। মানুষের উদ্দীপনা বিফলে গেলে কেউ খুশি হবার কথা না। তারপরও অর্গ্যানাইজারদের সংশপ্তক অবস্থান নিশ্চয় তারিফযোগ্য। ঝড়বৃষ্টি এতটুকু ধরে এলেই মিউজিশিয়্যানরা আবারও শুরু করছিলেন বৃষ্টিবিরতি নিয়ে।
এইভাবে চৈত্রদিনে ময়দানে রককন্সার্ট আয়োজন অ্যাভোয়েড করা ভালো। প্রচুর সম্পদের অপচয় যেমন, যদিও সম্পদের অপচয় ব্যাপারটা অ্যাক্সিডেন্ট ধরে নেয়া যাবে, বড় কথা হচ্ছে শেষমেশ অনেক মানুষের শ্রম ও প্রেম পণ্ড হয়। শেষেরটাই বেশি পরিতাপের। অ্যানিওয়ে। এই নিবন্ধটা পাঠে নিবেশের আগে সম্ভাব্য পাঠক জেনে রাখুন যে এই নিবন্ধকার কন্সার্টময়দানে না-ঢুকে দেয়ালের বাইরে বেশ কয়েক ফার্লং দূর থেকে শুনে, অংশত শুনে, এই নিবন্ধ লিখেছে। এইটি রিভিয়্যু নয় সেই-অর্থে। এইটি রিভিয়্যু নয় কোনো অর্থেই। কিন্তু অর্গ্যানাইজারদের উদ্দীপনাময় বৃহৎ কলেবরের এমন আয়োজন যেন স্মরণের আবডালে না-যায় তাই এই নিবন্ধগদ্য। কন্সার্টের পূর্বরাত্রি এবং কন্সার্টরজনীর দুই টুকরা আলাপ একলগে জুতে দিয়ে এই নিবন্ধটা বানানো হয়েছে।
ডে বিফোর দ্য শো
খবরে প্রকাশ আবারো কন্সার্ট একটা। আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স ভেন্যুতে। ওপেন এয়ার। মাগ্না না, পাত্তি খর্চে এন্ট্রি। লাস্ট টাইমে এন্ট্রি মিলে গেছিল কুটুমের সৌজন্যে। খেশকুটুম সবসময় পাওয়া যাবে এমন তো নয়, আর সেই কন্সার্টকাপল তো আর হররোজকার ঘটনা নয়। কালেভদ্রে এমন কন্সার্টকাপলের সাক্ষাৎ লভা যায় যারা কার্টসিপাস, পানিবোতল আর কফিকাপ আগায়া দেয় আপনেরে। এইবার সেই বরাত মনে হয় না হবে। স্যাড। ছুটির দিন। খোরাকিবিহীন। কোথা পাই রেস্ত যে মাইঞ্জা মেরে কন্সার্টে যাই! দিন হোক, হরির দেশে সন্ধ্যা নামুক, হওয়া যাবে পার কোনো-না-কোনো উপায়ে।
এইবার স্বাধীনতা দিবসে এই কন্সার্ট অর্গ্যানাইজ করেছে ব্যানড্ কমিউনিটি (Banned Community)। সিলেটের একটা আয়োজক সংস্থা। ভার্সিটিশিক্ষার্থীদের সম্ভবত। গত বছর এরা শাহি ঈদগা মাঠে জেমসকে এনেছিল। সফল হয়েছিল কন্সার্টটা। তারপরও, ওই জেমসকন্সার্টের পরেও, কমিউনিটি কিছু প্রোগ্র্যাম করেছে, ফেসবুকে এলান দেখেছি, যেতে পারি নাই। নিশ্চয় যাইতে মন চেয়েছে, এইবারও মন চাইছে যেমনটা, বাদবাকি মওলা সহায়।
একশ আর তিনশ। দুই কিসিমের টিকেট। তালগাছ আর লালরঙা প্লাস্টিকচেয়ার। তালগাছই সই। স্ট্যান্ডিং। রকমিউজিকের গ্যাদারিঙে চেয়ার পাছায় নিয়া যারা গ্যাঁট হয়ে বসে থেকে গেরামভারি মুখচোখে কন্সার্ট উপভোগ করে, এদেরে নিয়া আমার দীর্ঘদিনের একটা আন্দাজ আছে। একদিন প্রকাশিতে বাঞ্ছা রাখি। কিন্তু স্পন্সর নাই, কে প্রকাশিবে? বেমুনাফা গানপারে পাৎলারাৎলা রিভিয়্যু লিখে আর একপায়ে দাঁড়িয়ে কানিবকের কিসিমে কন্সার্ট দেখে বেশিকিছু উন্নতি জিন্দেগিতে করা যাবে না তা জানি।
ইন্ডিপেন্ডেন্স দিবসে এই কন্সার্টে গান গাইতে চলেছে ‘অর্থহীন ও সুমন’, ‘আর্ক ও হাসান’, এবং ‘মাইলস’। খবরে জেনেছি আগেই যে এর আয়োজক ব্যানড কমিউনিটি। বি অ্যা এন এন ই ডি। নিষিদ্ধ জনপদ/সম্প্রদায় অর্থে ব্যানড কমিউনিটি। মিউজিকের সঙ্গে আশনাই আছে এমন সকলেই ইন ম্যানি সেন্সেস আউটকাস্ট। বলা যায় আউট-ল্য। সুসামাজিক নয় অর্থেই মিউজিশিয়্যানরা, স্পেশ্যালি রকমিউজিশিয়্যানরা, ধর্তব্য। কমপ্লিমেন্ট হিশেবে নেব কথাটা আলবৎ।
লোক্যাল কিছু দল তো থাকবেই, যেমনটা থাকে এই কিসিমের বড় আসরগুলোতে, যারা দুপুর থেকে বাদ-মাগ্রেব পর্যন্ত মঞ্চ গরম রাখার চেষ্টায় ঘাম ঝরাবে আর মাইক্রোফোনে ঘোঁতঘোঁত করবে। ব্যানড কমিউনিটি তো কমিটি হিশেবে একটা ইম্প্রেসিভ টাইম স্টেজে চেক-চেক-চেক-চেক করবে আর গিটারে-ড্রামে প্ল্যানহীন ডামাডোল করিয়া যাবে। এইগুলা গ্র্যান্টেড অবশ্য। কথা হচ্ছে, বাইরে থেকে আমন্ত্রিত দল হিশেবে স্টেজে উঠছে অর্থহীন, মাইলস ও আর্ক। তথাস্তু!
‘অর্থহীন ও সুমন’ তো মূল থেকে ব্যান্ডেরই নাম, যদিও কন্সার্টপোস্টারে দেখছি শুধু ‘অর্থহীন’, নয়া নাম ধরিল অথচ আকিকা নাই, নিউজ নাই, চুপ্কিচুপ্কি। কিন্তু ‘আর্ক’ কবে থেকে ‘আর্ক ও হাসান’ নাম ধারণ করিল? বোধহয় ইন্সিকিউরিটি ফিলিংস থেকে এহেন নবনামায়ন। নয়া জেনারেশনের কন্সার্টশ্রোতারা আর্ক বা খালি হাসান বললে বাই-নেইম চিনবে না, মুখচাওয়াচাওয়ি করবে; — গ্যাপ তো হয়ে গেছে ঢের, হাসানও ডিসলোকেইটেড বহুদ্দিন হয়। এহেন ভয় থেকেই কি আয়োজকরা আর্ক ও হাসান নামে কন্সার্টের প্রোমোপোস্টারে চেনায়েছেন ব্যাপারটারে? ম্যে বি। কিন্তু টুলুর আর্ক কি সম্ভব হাসান দিয়া? বা, পঞ্চম ছাড়া আর্কে সেই ফ্লেভ্যর কি ফিরাইয়া আনা আদৌ সম্ভবিবে? দেখা যাক। যদিও সম্ভব মনে হয় না। আগের দিন আর নাই, আগের দিনেরে গেসে বাঘে খাইয়া। মাইলস কেমন করে, তা-ও তো কম লক্ষণীয় নয়। দুইভাইয়ে ক্যাঁচাল বান্ধানো ও উকিলমোক্তার ডাকাডাকির পরে পৃথগন্ন মাইলস কী তামশা দেখায়, লেট’স্ সি।
কিছু-একটা উপায় নিশ্চয় হবে। একশ তনখা খর্চা রাইট-নাউ মুশকিলই। দিনমাদান ভালা নায়। ইয়া ইলাহি। কিন্তু মুই যাই না-যাই, টুমরোর কন্সার্টে জমজমাট ভরভরন্ত মানুষের মেল হোক কায়মনে চাই।
চিরদিন যেন কন্সার্ট হয় নির্বিঘ্ন, নিঃশঙ্ক, নির্ভয়। চিরদিন কন্সার্টে চাই নিঃসঙ্গ ও জুটিবদ্ধ কুটুমখেশের কলকাকলি। গিরস্তের টাকা হোক, গিন্নীর খোকা, আয়োজকদের উত্তরোত্তর উন্নতি, আর কন্সার্টে কুটুমেরা হাতে-হাত ধরাধরি প্রীতিস্নেহে প্রেমেশ্বরী লিলুয়া হাঁটুক।
দ্য শো মাস্ট গ্য অন
কন্সার্টে প্রেজেন্ট না-থেকেও কন্সার্ট উপভোগের বহু উপায় মানুষের হাতে এসে গেছে এখন। ধরেন যে টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচারই শুধু নয়, এফএমে, ইউটিউবে, এন্তার আরও বহু উপায়ে আপনে একটা গানের জলসা এঞ্জয় করতে পারেন। সরাসরি নয়, কিন্তু কমও নয়। এইভাবে অল্টার্নেইট ওয়েতে কন্সার্ট সম্ভোগের সুবিধে যেমন আছে, তেমনি অসুবিধেও আছে। সুবিধের দিকটা এ-ই যে, এতে ট্যাঁকের পয়সাটা সাশ্রয় হয়, হ্যাপাও অলমোস্ট নাই বললেই চলে, সাউন্ডটাও অনেকটা সাব্লাইম ঠেকে কানে। এর অসুবিধের দিকগুলা আপাতত চুপায়ে যাই।
গিয়াছিলাম কুটুমবাড়ির একেবারে দেয়ালঘেঁষা অ্যারিয়ায়, আমাদের এক বন্ধুর হৃদয়সদনের লাগোয়া, অ্যাডলিঙ্ক নামে একটা কার্যালয়ে কার্যব্যপদেশে, ভেবেছিলাম বেলাবেলি কাজকম্ম গুছিয়ে সেরে নিতে পারব। সন্ধ্যায় যাব কন্সার্টে। ব্যানড্ কমিউনিটি অর্গ্যানাইজড ‘লাইট ইয়ার্স অ্যাহেড’ শীর্ষক ফোর্টিসেভেন ইয়ার্স অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স উদযাপনের উদ্যোগগুলার মধ্যে একটা। আলোকবর্ষ দূরে যাইবার প্রত্যয় নিয়া আয়োজিত সংগীতের আসর এইটা। আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে এর তোড়জোড় সকালবেলায় দেখে গেছিলাম গন্তব্যে গমনের পথিমধ্যে। এলাহি কাণ্ড। প্রচুর ইনভেস্টমেন্ট। কত লোকের শ্রম আর প্রেম! সবই বিনালে গেল বোধহয় বৃষ্টির অসহযোগ আন্দোলনে। ব্যাপারটা খানিক খুলেমেলে বলি।
দিন ছিল সূর্যে ভরা। সানি ওয়েদার। মনে একবারও কু উঁকি দেয় নাই যে বেলা না-ফুরাতেই বৃষ্টি এসে ভেস্তে দিয়া যাবে বেবাক। হয়েছে সেইটাই। বিকেলের দিকটায় ক্লিয়ার হয়ে গেছিল বাদলা বাতাস দেখে যে কন্সার্টের বোধহয় বারোটা বাজতে চলেছে। এবং আটটা বাজতেই বৃষ্টি। চৈত্রবারিপাত। মনে হচ্ছিল বুঝিবা আগাম কালবৈশাখী। ভীষণ বেগে হাওয়া আর সঙ্গে কাঁথা-গায়ে-টেনে-নিতে-ইচ্ছে-করে এমনই শীতকুসুমকুঁড়ি। কিন্তু তখনও গোটানো সম্ভব হয় নাই দিনের টু-ডু লিস্টটা, কাজেই না-কন্সার্ট না-কাজ এহেন দোনোমোনো হয়ে একটা চায়ের আধচালা ছাপড়ায় নিজের গা বাঁচাচ্ছিলাম বেচারা বাইকটাকে কারেন্ট-চলে-যাওয়া হাইওয়ের করুণ অন্ধকারে একলা ভিজতে দিয়ে। ততক্ষণে কুটুমবাড়ির এলাকা ছেড়ে প্রায়-বিদেশ-দূরে ক্যান্টোনম্যান্ট অ্যারিয়ায় এসেছিলাম চলে। এলাটিংবেলাটিং কাজে ফেঁসে এইভাবে কত কন্সার্ট বানচাল হয়েছে জীবনের! বরবাদ হয়েছে কত-না আনন্দকাণ্ড!
দুঃখ করি না। অ্যাট-লিস্ট নিজের জন্য দুঃখ করি না। ভাবি বেচারা আয়োজকদের কত ক্ষতিই-না হয়ে গেল, হায়! বৃষ্টি এসে এইভাবে কত লাভক্ষতি-সুদকষা তামাদি করে দিয়ে যায় নিতিদিন আমাদের! বৃষ্টিই আমাদের সহায়, আবার এই বৃষ্টিরই নিকট কত-না অসহায় আমরা! আর বৃষ্টি নিজেই যেহেতু সংগীতজনয়িতা, কাজেই ভিন্ন কোনো সংগীত সে কেন হতে দেবে তার আসমানতলায়!
ফিরছিলাম তখন রাত্রি এগারোটা পার। কন্সার্টগ্রাউন্ডের কাছ ঘেঁষে ফেরার সময় সাউন্ড শুনে বাইক থামাই। কী ক্লিয়ার আওয়াজ আসছিল পরিচিত বিট আর লিরিকের! গলাটা প্রায় আগন্তুকই মনে হচ্ছিল যদিও। ‘ভুলে গেছি কবে এক জোছনারাতে’, ‘এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়’, ‘শীত নয় গ্রীষ্ম নয় এসেছে বসন্ত’ … এই লিরিকগুলা আমাদেরে একদিন বেশকিছু উপকার যুগিয়েছিল। তরুণদিনে সেই কুটুমস্নিগ্ধ সময়টা আমরা পারায়ে এসেছি কিছু কথা আর গানের বাহনে চেপে একদম উড়ালপাখায়। এখন সেই দিন নাই। কিন্তু কথা পরিচিত হলেও গলাটা প্রায় নিষ্করুণ অচেনা লাগছিল। হাসানেরই গলা? আমি ঠিক হলফ করব না, হাসানেরই তো হবার কথা, ব্যবধানে বেবাককিছু অপসৃত হয়ে যায় বুঝি এইভাবে? চেনা যাচ্ছিল না হাসান গাইছেন বলিয়া! আহা রে! এত্ত শক্তিমত্ত গলা আর গায়ন ছিল তার, বেচারার, একদিন! সেই তীক্ষ্ণ তরল্লা বাঁশের ন্যায় বাঁশিকণ্ঠ রক্ কই? কী তীব্র উঁচু পর্দায় এই গলা সাঁতার কাটত একদিন কত অনায়াস! ‘স্যুইটি’, ‘একাকী’, ‘গুরু’ প্রভৃতি লিরিকের আর মিউজিকের আর রেন্ডিশনের সেই হাসান আজ কই?
তিতাস গ্যাস অফিস পারায়ে ব্রিজের মুখে বাইক থামায়ে ম্যে-বি আর্কের হাসানেরই গলা শুনছিলাম। শীত লাগছিল। নদীর বাতাস আসছিল। ফোঁটা পড়ছিল শূন্য হইতে। হেল্থ ইশ্যুতে একটু উদ্বিগ্ন হয়ে ফের কিক্ দিয়া পারাইলাম নদী। শীতে কাবু হয়ে যাব ভয় ছিল না, হাসানের গলার ঘ্যাঙরঘ্যাঙ শুনে একের-পরে-এক চারটা ডার্বি নিঃশেষিয়া ক্ষান্ত দিতে হলো। ঘরে এসে ঢুকেছি কি ঢুকি নাই বৃষ্টি পুনরায়। নিঝুম। কন্সার্টের পূর্ণচ্ছেদ। মাইলস কি পেরেছিল গাইতে? কিংবা অর্থহীন ও সুমন?
প্রবেশপত্রাধিকারবিহীন কন্সার্ট শোনার অসুবিধা একটাই। ঠিক রকের ধকটা পাওয়া যায় না। ভাইব্ টের পাওয়া যায় না। ভাইব্রেশনটাই কিন্তু রকগানের মজা। আস্লি চিজ বলতে রকগানে এই ভাইবটা। হাসানের গলায় অবশ্য প্রবেশপত্র মারফতে গেটের ভেতরে যেয়েও রকের অনুরণন পাওয়া যাইত না বলিয়াই মনে হয়। টাইম হ্যাজ্ গ্যন অ্যাওয়ে। অ্যানিওয়ে। সেই ম্যাজিকটাইমের মানুষ আমরা, সিনেমাহ্যলের দেয়ালে কান চেপে কেবল জসিমের ঢিশুম-ঢিশুম আর অঞ্জু ঘোষের উহু-আহা শুনে তেরোটা গানসম্বলিত তিনঘণ্টা মেয়াদের ছায়াছবি কান দিয়ে দেখে নিতে পারতাম। ভিসিআরঘরের বেড়ার ফাঁকফোকরগুলো তখন অষ্টাশ্চর্য উদ্ভাবন হিশেবেই কাউন্ট করতাম আমরা। হাউ টাইম ডাজ্ ফ্লাই, তাই না?
জানি না বৃষ্টির সময় গাইয়ে-বাজিয়েরা আশ্রয় নিচ্ছিলেন কোথায়, কিংবা আসনওয়ালা-আসনছাড়া গানশ্রোতারাই-বা যাচ্ছিলেন কোথায় খোলা আসমানতলায় শেল্টার নিতে? এই রিপোর্ট কম্পোজকালেও শুনতে পাচ্ছি বৃষ্টি এসে গান থামাতেছে, ফের বৃষ্টি কিছু প্রশমিত হলে স্টেজে ধিড়িম-ধিড়িম শুরু হতেছে। কেউ যদি রিপোর্ট করেন অকুস্থল থেকে, সেইটা আজ না হোক কালকে কিংবা তার কনভিনিয়েন্স অনুযায়ী অ্যানি আদার ডে, প্রেজেন্ট ছিলেন যারা ওইদিন কন্সার্টগ্রাউন্ডে, কেমন করল মাইলস বা আর্ক বা অর্থহীন সম্যক বোঝা যাবে।
কে আছিস, এই রিপোর্টারটারে থামা! রাস্তার কিনার থেকে এন্ট্রি ফাঁকি দিয়ে দেড়-দুইটা গান শুনে আর চুরট ফুঁকে এসে রেলগাড়িদীর্ঘ কন্সার্টপ্রতিবেদন প্রকাশিছে! সেনাপতি! সেনাপতি!! রিপোর্টারটারে এক্ষুনি বন্দী করো!
জো হুকুম, জাঁহাপনা!
[metaslider id=”4315″]
নিবন্ধ রচনায় : মিল্টন মৃধা
কৃতজ্ঞতাসূত্র
সংশ্লিষ্ট ফোটোগ্রাফসমূহ কন্স্যার্ট-অর্গ্যানাইজার ‘ব্যান্ড কমিউনিটি ইভেন্ট পেইজ‘ থেকে গৃহীত।
… …
- অন্তরঙ্গ কবিচিত্র - January 28, 2021
- সঞ্জীব চৌধুরী : জীবনতথ্য - November 19, 2019
- বাঁশি ও বিচ্ছেদী - November 16, 2019
COMMENTS