হবিগঞ্জের হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর সুনামগঞ্জের নির্মলেন্দু চৌধুরী সাতচল্লিশের দেশভাগের কয়েকবছর পর বাধ্য হলেন দেশত্যাগী হতে। কিন্তু জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার অমোঘ টান কি কখনও এড়ানো যায়? নিদহারা কলকাতা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালেও তাঁদের মনের কোণে প্রতিনিয়ত বাজে মরমিয়া-ভাটিয়ালি সুর। হেমাঙ্গ বিশ্বাস গাইলেন —
হবিগঞ্জের জালালি কইতর সুনামগঞ্জের কুড়া
সুরমা নদীর গাংচিল আমি শূন্যে দিলাম উড়া …
কলকাতা শহরে থেকে হাওরের পানির জন্য আক্ষেপ করা যেতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আষাঢ় মাসের প্রায় মাঝামাঝি পৌঁছেও যদি হাওরে পানির দেখা না-পাওয়া যায়, তবে তা অস্বাভাবিক! হ্যাঁ, এবার ঠিক এ-রকম অবস্থাই বিরাজমান।
আষাঢ় মাসে নূতন পানিতে চরাচর থৈথৈ করার কথা। কিন্তু ‘আষাঢ় মাসের ভাসা পানি’ কই! যেখানে বিপুল জলরাশি থাকার কথা, সেখানে এখনও সবুজ ঘাস। পানি নেই তো মাছও নেই। ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে এখানকার প্রতিবেশগত অবস্থা।
পালতোলা নৌকা না-ই থাক, যন্ত্রচালিত নৌকা ছাড়া বছরের এই সময়ে হাওরাঞ্চলে চলাচল করার কথা ভাবাও যায় না। অথচ গতকাল মোটরবাইক চালিয়ে আমার গ্রামের বাড়ি থেকে দিব্যি ঘুরে এলাম! অবিশ্বাস্য! আধা পানি, আধা শুকনা — এ-রকম এক মাঝামাঝি অবস্থায় এসে যেন সবকিছু থমকে আছে!
আমার গ্রামের বাড়ি জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরে। ব্রিটিশরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময়ে এই অঞ্চলের নাম দিয়েছিল বেতাল পরগনা। কারণ হাওরবেসিনের এই অঞ্চলটির গভীরতা এতটাই ছিল যে, জরিপকালে নল দিয়ে মেপেও কোনো তাল পাওয়া যাচ্ছিল না — তাই নাম বেতাল।
নানা কারণে হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। মাত্র তিন দশক আগের হাওরের সঙ্গেও বর্তমান পরিস্থিতির যেন তুলনাই চলে না! এই অবস্থা চলতে থাকলে প্রবাসে নয়, হাওরে থেকেই হাওরবাসীকে অচিরেই গাইতে হবে —
হাওরের পানি নাই রে হেথায়
নাই রে তাজা মাছ
বিলের বুকে ডালা মেলা
নাই রে হিজল গাছ …
২৫ জুন ২০২১
- ভেতরে বাইরে সর্বত্রই সর্বজনীন দুর্গাপূজা || কল্লোল তালুকদার - October 2, 2025
- আমার গ্রামিক মন আমার নাগরিক জীবন || কল্লোল তালুকদার - September 27, 2025
- বন্যায় কী যে ক্ষতি হলো কবি ইকবাল কাগজীর! || কল্লোল তালুকদার - June 29, 2024
COMMENTS