বব মার্লে : শেষ সাক্ষাৎকার || ইমরান ফিরদাউস

বব মার্লে : শেষ সাক্ষাৎকার || ইমরান ফিরদাউস

১৯৮০ সনের ১৮ সেপ্টেম্বর আমার দুর্লভ সৌভাগ্য হয়েছিল বব মার্লের সাথে সাক্ষাৎ করার ও সাক্ষাৎকার নেওয়ার। সে তখন ম্যাডিসন চত্বরের বাগানে অনুষ্ঠান করার জন্য ন্যুয়র্কে ডেরা করেছে; আর এই বাগানে গান করার পরপরই দেশব্যাপী সফরে বেরিয়ে পড়ার কথা ছিল। মার্লের সংকল্প ছিল সফরের শেষ অঙ্কে ন্যুয়র্কে ফেরত আসবে। কিন্তু, বিধি বাম! আচানক অসুস্থতা হেতু জিন্দেগির শেষ মাস-কয়েকটি (সু)চিকিৎসার নিমিত্তে ন্যুয়র্ক-য়ুরোপ আপ-ডাউন করতেই ফুরিয়ে যায়। আমি যদ্দুর জানি, মার্লে তাঁর ইহজীবনে ক্ষণিকের তরেও এমন সাংবাদিকমার্কা সাক্ষাৎকারের জন্য আসন তো দূরের কথা দাওয়াতও গ্রহণ করে নাই।

ঐ কালে আমি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের স্নাতক শিক্ষার্থীরূপে র‍্যাগে গীতবাদ্য এবং রাজনীতির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণায় রত আছিলাম। গবেষণার খাতিরে বিভিন্ন র‍্যাগে সুরস্রষ্টার সাথে দেখা-আলাপ করার সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি ক্যারিবিয়-মার্কিন সাপ্তাহিক/মাসিক পত্রপত্রিকায় ঠিকা ঝি-র মানে ফ্রিল্যান্স কাজ করতাম। পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন শিল্পীর মেলা-কয়টা পাব্লিসিটি রচনা লেখার পর একদিন ক্যারিবিয়ান পত্রিকার কর্তৃপক্ষ একজন আলোকচিত্রী সমেত আমাকে মার্লের সাক্ষাৎকার গ্রহণের দায়িত্ব দিয়ে পাঠালো। আর এইটা না বললেই নয় — বব মার্লের পাব্লিসিস্ট ঐ পত্রিকায় যোগাযোগ করার ফলেই আমার কপাল খুলে যায়।

দক্ষিণ সেন্ট্রাল পার্কের এসেক্স হোটেলে মার্লের কামরায় আমরা দেখা করি। এ-সময় মার্লের সাথে ছিলেন সকার খেলোয়াড় স্কিল কোল্ এবং পাব্লিসিস্ট কোম্পানির একজন সদস্য।


সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অনিতা ওয়াটার্স ।। ভাব-ভাষান্তর : ইমরান ফিরদাউস


অনিতা ওয়াটার্স (অ ও) :  তোমার টুফ গংগ  (Tuff Gong) নামধারী সংস্থাটি নিয়ত পরিবর্ধনশীল মানে সবসময় নতুন স্টুডিও/আর্টিস্ট যুক্ত হচ্ছে। টুফ গংগ নামের শানে নুযুল কি?

বব মার্লে (ব ম) :  টুফ গংগ? এইটা হঠাৎই মাথায় খেলে গেল, মানে একদম চিন্তা ছাড়াই। কেননা, গংগ মানে গান, র‍্যাগে গান; আর টুফ হইল টাফ (Tough)!

অ ও :  তো, এই সংস্থায় নতুন কি হইতেছে/ঘটতেছে?

ব ম : নতুন যা ঘটতেছে তা হইল নতুন আর্টিস্টরা নয়া গান রেকর্ড করতেছে, যদিও আমি সবার সাথে পরিচিত নই এই মুহূর্তে। টুফ গংগ-এ আমি হইলাম ওই মানুষ যে কিনা আর্টিস্টদের কণ্ঠস্বরের পরীক্ষা নেয় আর রেকর্ডিংয়ের কাজ করে।

অ ও : অডিশনের কাজটা এখনো তুমি নিজেই দেখো?

ব ম : হ্যাঁ।

অ ও : বিপণনের দিকটাও?

ব ম : আমরাই বিপণনের বিষয়গুলি দেখি এবং আমরা উৎপাদনের চেষ্টা করছি।

অ ও : ভিনাইল রেকর্ড মুদ্রণ কারখানা?

ব ম : ঠিক তাই।

অ ও : লস অ্যাঞ্জেলসে টুফ গংগ-এর একখানা বিপণীবিতান আছে, রাইট?

ব ম : আমাদের এক ভাই বিপণীটা চালায়।

অ ও : ব্রুকলিনে খোলার কোনো সম্ভাবনা আছে?

ব ম : ভগবান জানে, আমি জানি না।

অ ও : টুফ গংগের সাথে ইজ্রাইলের বারো গোত্র-এর [টুয়েল্ভ ট্রাইবস্ অফ ইজ্রাইল] সংযোগটা কি?

ব ম : টুয়েল্ভ ট্রাইব অরগানাইজেশন? স্কিল কোল জাহ রাস্তার নামে বিষয়টা খুলেমেলে বুঝায় দাও ওনারে।

স্কিল কোল : আচ্ছা, তুমি জানো (নিশ্চয়) জ্যাকবের বারো সন্তান ছিল, তেরো (আর-কি), বারো বেটা আর এক বেটি। বারো বেটা কারণ মানবদেহের বারো রকমের স্বাভাবিক ক্রিয়া আছে। তাই, জ্যাকবের বারো বেটা ইজ্রাইলের বারো গোত্রকে তথা বারো রকমের আদবকায়দা চিত্রিত করে। আর, এইভাবেই মূলত বারো গোত্রের আবির্ভাব ঘটে। একটি খুবই মজাদার সন্ধিক্ষণ আছে এথায়, বারো রকমের (আচার-ব্যবহারের) মানুষ হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাঝে বর্ণ বা গতরের চামড়ার রঙের দ্বারা কোনো ভেদ প্রথা চালু ছিল না। কারণ, আমরা বিভিন্ন গোত্রে জন্মাই কেননা আমরা বিভিন্ন মাসে জন্মাই বলে।

অ ও : এবং অরগানাইজেশনটি সবাইকে একত্র করে রাখে?

স্কিল কোল : জানো তো — আমরা যেই বিষয়টা যেমন, তেমন-তেমন শিক্ষা দিয়ে থাকি, মানুষদেরকে বলতে চেষ্টা করি যে — আমাদের অবশ্যই আফ্রিকার দিকে মুখ ফেরাতে হবে, কারণ পশ্চিমের গগনে গ্যাঞ্জামের ঘনঘটা দেখা যাইতেছে। বাইবেলের কারণে, তুমি জানো, আমরা বাইবেল পাঠ করি, এটা আমাদের শিক্ষা দেয় যে — যখন সন্দেহাতীতভাবে কতিপয় ঘটনা ঘটতে থাকে, তখন জানি ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি হবে, এবং তার নিদানের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

যেমন, আমরা কিভাবে ক্রাইস্টকে পাইলাম, ইম্পেরিয়াল ম্যাজেস্টি হাইলে সেলাসি দ্য ফার্স্টের অবতাররূপে। কারণ, বাইবেলে এর নির্দেশনা দেয়া আছে দুই হাজার বছর আগেই। বলা আছে — ক্রাইস্ট পুনরায় প্রকাশিত হবেন, মর্ত্যে ফেরত আসবেন, রাজাধিরাজ বা রাজাদের রাজার বেশে, প্রভুদের প্রভুরূপে, জুডাহ গোত্রের সিংহকে বশীভূতকারী রূপে, খোদায়ি নির্বাচকরূপে এবং তিনিই হবেন পৃথিবী-পরিচালনকারী সঠিক শাসক। কারণ, জুডাহ হইলো বিধানকর্তা, বাইবেলে এমনই বলা আছে। তাঁর ভাইয়েরা তাঁর প্রশংসা করবে। তাই জুডাহ এখন এসেছেন মানুষদের সমবেত করতে, গোত্রের উত্তরপুরুষদের একত্র করতে, কেননা, বিধানকর্তা মসীহ নির্ঘাৎ আসবেন।

তথাপি, বিশ্বজুড়ে আমরা এক পরিবার কিন্তু তোমাকে তোমার নিজের (পরিচয়) সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। তা না হলে, অবস্থাটা দাঁড়াবে রোমানদের মতন, রোমান জ্যোতির্বিদদের খপ্পড়ে পড়ে তাদের ব্যাপক দৌড়ের উপর থাকতে হইছিল। তারা (রোমান জ্যোতির্বিদরা) সবকিছুতেই প্রতারণার আশ্রয় নিছিলো, পরন্তু আমরা বাইবেল থেকে (আসল) ঘটনার সকলটুকুন জেনেছি এবং ওখান থেকেই সবকিছু এসেছে। আমরা আমাদিগকে ভিন্ন গোত্ররূপে চিহ্নিত করেছি। আমাদের পরিবারে প্রধান ভ্রাতা গ্যাড নাম্নী একজন পুরুষ। এটাই রাস্তা, এতক্ষণে বুঝে গেছো নিশ্চয়।

অ ও : তাহলে রাস্তা টুয়েল্ভ ট্রাইবস-এর সমার্থক শব্দ?

স্কিল কোল : হ্যাঁ।

অ ও : এ প্রশ্নটা মার্লের কাছে। আমি বেতারে তোমারে কইতে শুনছি যে র‍্যাগে সংগীতকারদের আরও সংগঠিত/অরগানাইজড হতে হবে। কথাটারে একটু ভাইঙ্গা বলবা?

ব ম : অরগানাইজড। যেমন ধরো, তারা যদি বুঝতে পারে এই মিউজিক করা দিয়ে আদতে কি হয় বা ঘটে এবং এইটা বাজারে না রাখার/থাকার ভিতর দিয়ে কোন ঘটনা ঘটে। অরগানাইজড হয়ে তারা একমাত্র যে কাজটা করতে পারে তা হলো — কে মিউজিকটা পাবে এবং কখন তার হাতে গিয়ে পৌঁছুবে এবং সেটা দিয়ে কী ঘটানো সম্ভব — এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। ম্যালা মানুষের হাতে এই মিউজিক পৌঁছাইতেছে এবং সকলে এইটা শুইনা নিজের মধ্যে থুয়ে দিচ্ছে। শিল্পীগো একলগে হইতে হবে। কেউ কেউ পরিস্থিতিটা বুঝতে পারতেছে, অনুধাবন কইরা উঠতে পারতেছে আর্টিস্ট এবং তার সংস্কৃতির সেতুর সম্পর্ক। এখন, একলগে মিলে সংগঠিত হয়ে ঘটনাটা ঘটানো ছাড়া আর কোনো জরুরি কাজ নাই।

অ ও : অরগানাইজড বলতে টুফ গংগ যেমনে কাজ করতেছে সেইটা?

ব ম : টুফ গংগ অরগানাইজড দলের একটা উদাহরণ হইতে পারে। কিন্তু, এর বাইরেও অনেকজন রয়ে আছে, যারা আসলে জানেই না কি হইতেছে চারপাশে। অগোরে আনতে হবে সংগঠনের সবুজ ছাতার তলে। নাইলে, তারা খালি এক্সপ্লয়েট বা শোষণের শিকার হইতে থাকবে এবং হায়! হায়! কোম্পানির সিন্ডিকেটে চক্কর কাটতে থাকব।

অ ও : তুমি কি মনে করো টুফ গংগ মার্কাস গারভে প্রস্তাবিত স্বাধীন অর্থনীতি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে?

ব ম : অবশ্যই। মার্কাস গারভে আমাদের দেখাইছেন কিভাবে শিল্পায়ন করতে হয়। তিনি বলেছেন, আমাদের কাজ ঠিক পথে এগোচ্ছে।

স্কিল কোল : আমাদের (অব্যশই) স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা জারি রাখতে হবে।

অ ও : এবং নিয়ন্ত্রণ-এর স্টিয়ারিং ধরে রাখতে হবে।

ব ম : হ্যাঁ।

অ ও : র‍্যাগে কি এখনও সমাজের নিপীড়িতের ধারণা প্রতিফলিত করে? এটাকে কি এখনও ঘেটো বা মহল্লা সংগীত বলা যায়?

ব ম : আলবৎ বলা যায়।

অ ও : মিউজিকের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে কোন সুবিধা হচ্ছে?

ব ম : নিয়ন্ত্রণের হাতকড়া তো সবসময়ই রেডি আছে। দিনে দিনে এটা আরো কঠোর হচ্ছে। আরো যেটা হচ্ছে, বাজারে এই খবর বিজ্ঞাপিত হচ্ছে যে, আপনে চাইলে আপনার মনের কথা কইতে পারবেন না, যদি বলেন তাইলে অশনি সংকেত আছে আপনার কপালে। অনেক লোক এই নিয়ন্ত্রণের ব্যবসার মধ্যে আছে; এই যেসব স্টুডিয়োগুলোতে তোমার আসা-যাওয়া সেখানে দেখবা — মানুষকে সব কথা বলতে দেয়া হয় না, কারণ অথরিটি রাজি নয় বলে। টুফ গংগ-এ যেমন তুমি জানো — এইটা এমন একটা আখড়া যেখানে তোমার কণ্ঠ স্বাধীন। তুমি রেকর্ড বানাও, বেচো, এবং কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ ছাড়াই সত্য বলো, বলতে পারো।

অ ও : এ উইকেন্ডে কই থাকবা?

ব ম : সারাদেশে ছড়ায় পড়ব।

অ ও : ওয়েস্ট কোস্টে যাইবা?

ব ম : যামু। তয়, আমরা মনে হয় শিগগিরি ব্যাক করব।

অ ও : বিকন এ বাজাইতেছো?

ব ম : হ, সত্য শুনছো।

অ ও : অ্যাপোলোতে বাজাইতেছো না কেন?

ব ম : কি কমু … তেমন কোনো কারণ নাই।

অ ও : জাস্ট এমনেই?

ব ম : হয়।

অ ও : কমোডরস-এর লগে ট্যুর দিতেছো না?

ব ম : নাহ, শুধু এই উইকেন্ডে একটা শো আছে।

অ ও : তুমি কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো একটি নির্দিষ্ট শ্রোতাগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে চাও?

ব ম : সত্যি করে বললে — মানুষের কাছে। সাধারণ মানুষ। সকল মানুষ, কালো মানুষ, চৈনিক। সব মানুষের কাছে যেতে চাই।

অ ও : তুমি কি মনে করো র‍্যাগে মিউজিকের ফিলোসফি ইউনাইটেড স্টেটস-এ বেশ ছড়িয়ে পড়ছে?

ব ম : আমি মনে করি না এটা ‘বেশ ছড়িয়ে পড়ছে’। আমার মনে হয় পাব্লিক ‘স্পিরিট’টাকে অনুভব করতে পারে, সেটারে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তুমি কাউকে ধইরা-বাইন্ধা রাস্তা বানাইতে পারবা না বা পারো না। তুমি সত্যটা গ্রহণ করে নিতে পারো। এইটা প্রতিদিনই ঘটতেছে। তো, বিষয়টা এমন হইতেছে না যে — দলে দলে লোকে র‍্যাগে মিউজিকের ছায়াবীথিতলে আইসা খাড়ায়তেছে, মানে তুমি যাদেরকে মিন করতেছো আর-কি … । আর ওইভাবে ভাবলে তো ভবের দুনিয়ায় মানুষের কমতি নাই।

কিন্তু, স্মরণে রাইখো সেইখানে কিন্তু মেলা শিশুলোকও আছে, যারা বড় হইতেছে, তারা সংখ্যায় বড় লোকের চাইতেও অধিক। তো, সবকিছুরই ভবিষ্যৎ আছে। কারণ, লোকে যখন আলাপ পাড়ে, তখন তারা যাগো চলতে-ফিরতে দেখে তাগো নিয়াই আলাপে মশগুল থাকে, এ-রকম মানুষই বেশি। তারা কিন্তু শিশুদিগের কথা ভাবেই না, যারা এখনও চলতে-ফিরতে শিখে উঠে নাই। না ভাবলে-বা কি, শিশুরা সংখ্যায় কিন্তু মোটেও অগ্রাহ্যকর নয়। এটারেই বলে বিকাশ বা ইংরেজিতে ডেভেলপমেন্ট।

অ ও : ‘সত্য’-কে অন্তরে অন্তরে পৌঁছানোর একটা ভালো উপায় র‍্যাগে মিউজিক — তোমার কি তা-ই ধারণা?

ব ম : র‍্যাগে অন্যতম পথ হইতে পারে, যদি গানের লিরিকের ভেতরে সত্যের চারা বপন করা থাকে। যোগাযোগ ও সংজ্ঞাপনের একটা উপায় মিউজিক। মানুষ এর ভেতর দিয়ে সেটা পারে। যোগাযোগ ঘটেই থাকে, জানো তুমি সেইটা। কেউ-একজন একটা সত্য কথা শুনলো, সে গিয়ে আরেকজনরে বললো। কোনো একজন মানুষের পক্ষে তো সকলের মাঝে সত্য বিলানোর দায় নেয়া সম্ভব নয়। যেমন, তুমি একটা সুবচন শুইনা আরেকজনের কাছে গিয়ে আবার সেইটা শেয়ার করো। জানো তো, এমনে করেই ভূত থেকে ভূতে কথা ছড়াইতে থাকে। যেমন ধরো, জ্যামাইকাতে আমি দীর্ঘদিন ধইরা বাস করি, তারপরও আমি ওয়াকিফহাল আছিলাম না। তারপরেও, এইটা তো ছিলই সেখানে মানে ‘সত্য’ যেইটা।

অ ও : কত দিন সেটা?

ব ম : মেইবি আঠারো বছর লেগে গেছে। মানে রিয়েলিটি অফ দ্য ট্রুথ বা সত্যের বাস্তবতার নুরানি চেহারা সম্পর্কে এর আগে আমি জানতাম না।

অ ও : মানুষের লগে আলাপের ভেতর দিয়ে বিষয়টা তোমার কাছে এসে পৌঁছাইছিল?

ব ম : আচ্ছা, আলাপটা আমার ক্বলবের ভেতরেই ছিল। তো, যখন তুমি একটা ভিশনের দেখা পাও এবং মানুষের লগে মেশো, কথা কও এবং বুইঝা ফালাও যে — এই তো আমার লাইনের লোক। তখনই পটকাটা ফোটে, হৃদয়ের মন্দিরে শতদল হয়ে।

যেমন, এই যে স্কিল কোল, যারে আমি বহু বছর ধরে চিনি, আমি একদিন অনুধাবন করলাম আমাগো বোঝাপড়া একই লাইনের। তো, এরপর আমরা এক পরিবারের অন্তর্গত হয়ে গেলাম। তোমার বিশ্বাসের দরজা যদি এক থাকে তাইলে তুমি ওই পরিবারে একজন হয়ে গেছো। রাস্তার স্পিরিটটাও তা-ই। নির্ভুলভাবে, আমার মতো রাস্তার সংখ্যা বিস্তর। আমাগো বিশ্বাসের ইচ্ছাগুলো এক আর তাই আমরা এক পরিবার।

অ ও : সত্যবাণী কী সময়ের পিছে পিছে পাল্টাইছে বইলা বোধ হয় তোমার? আগের তুলনায় আফ্রিকা কি এখন বেশি ফোকাসে?

ব ম : কখনোই পরিবর্তন হবে না। একটামাত্র গানের ফিতায় আমি আফ্রিকা নিয়ে ভাবনার কুসুম প্রস্ফুটিত করছিলাম। ফিতাটার নাম হয় ‘সারভাইভ্যাল’। এইটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ফলাফল। মানে, জ্যামাইকা থেকে আম্রিকা এবং আরো আরো যত এলাকা আমি চোখে দেখছিলাম সেসবের একটা অভিজ্ঞতা-সঞ্চয়প্রবণ বোঝাপড়া হাজিরের প্রচেষ্টা ছিল ওই অ্যালবামে।

অ ও : জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা উদযাপন কনসার্ট কেমন ছিল?

ব ম : ওইটা ভালো ছিল। আসলে, কনসার্টটা দারুণ ছিল বললে একরতি বেশি বলা হবে না, আমি প্রকৃত প্রস্তাবে অনেক আরাম পাইছি, উপভোগ করছি। সত্য-সত্যই এমন সব মানুষের লগে সাক্ষাৎ হইছে যারা যুদ্ধে লড়াই করছে, জাঁদরেল মানে তোমরা যারে জেনারেল বইলা থাকো তাদের লগে বসার সুযোগ হইছে, ভাবের বিনিময় ঘটছে। এক জাঁদরেল তো আমারে শুধায় — ‘আমি শুনলাম তুমি ফিরতেছো, তুমি আসলেই জ্যামাইকা যাইবা গা’? আমি কইলাম, হ। সে জিগায় ক্যানো? আমি বলি — আমার এন্তার কাম আছে সেথায়। সে কয় — কামকাজ, কি কও! তুমি তো তোমার ঘরেই আছো। তার উত্তরে আমি বললাম — জ্যামাইকাতে আমার কাজ আছে। সে বলে — তুমি বোকাচোদা নাকি। এইটা আফ্রিকা, তুমি এখন আফ্রিকায়, থাইকা যাও, এইখানে তুমি থাকবা। বুঝছো তো কি কইছি (অনিতা ওয়াটার্সের উদ্দেশ্যে)? আর, ওইজন হোমরাচোমরা জাঁদরেল ছিলেন।

অ ও : তুমি আমন্ত্রণে আপ্লুত হইছিলা?

ব ম : বিষয়টা ভালো লাগছিল। এই জন্মে পাওয়া সবচেয়ে দারুণ আমন্ত্রণ ওইটা। যে-মানুষ স্বভূমির জন্য রক্ত-ঘামের উজান পাড়ি দিছে, সে যখন বলে এই দেশ তোমার — এর চেয়ে পরম কিছু হইতে পারে না। বহু লোক তার আশেপাশে দিয়ে গুলি খায়া মারা পড়ছে, তিনি কিন্তু মায়ের ইচ্ছায় গাজি হয়ে ফিরতে পারছেন; এবং আইসা অফার করতেছেন থাইকা যাওনের, জিম্বাবুয়েতে। এর মতন আনন্দচঞ্চল অবস্থা আমি লাইফে ফেইস করি নাই।

অ ও : সাম্প্রতিককালে ইথিওপিয়াও ঘুইরা ফিরলা, তো সেখানেও কি রাস্তা আছে?

ব ম : হ্যাঁ, একটা ঘুরান দিয়ে আসার মতো আর-কি। ইথিওপিয়া রাস্তাগো দ্যাশ। এইখান থেইকাই রাস্তা শব্দ/ধারণার উৎপত্তি।

অ ও : রাস্তারা কি সেখানে ভোগান্তির মধ্যে বাস করতেছে?

ব ম : আহ … তুমি রুশগো আগমনের বিষয়টা ইঙ্গিত করতেছ? (হাহাহাহ)

অ ও : তোমার দৃষ্টির সীমায়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাস্তা এবং র‍্যাগে মিউজিকের ব্যাপক কোনো ভূমিকা দেখতে পাও?

ব ম : জানো তো, এইটা একটা ক্রমবর্ধমান বিষয়। আমার মনে কয় না যে — কেউ আছে পূর্বাভাস দেয়ার মতো। যেমন, ধরো — মানুষ ম্যালা কিছুই ভাবে এবং এরপরও উষ্ঠা খায় এবং সরেস দিকটি হলো সে আবার মাজা শক্ত কইরা উইঠা খাড়ায়। কারণ, আর কিছু না হোক সে এইটা জানো যে — সে পজিটিভ লাইনে আছে।

চলতিপথে কিছু অভিমুখ নির্দিষ্ট থাকে, তোমার কাজ হইল গতিপথ ধইরা আগায় যাইতে থাকা। পরিস্থিতিটাকে সমুদ্রে জাহাজের মতো করে ভাবতে পারো। তুমি আদতে কোনো জমিন দেখতে পাইবা না, কিন্তুক তুমি জানো পূর্বদিকে সেটা আছে। তো, তোমার কাজ হবে পূর্বদিগন্তের পানে যাত্রা জারি রাখা। আর তাই আমি বলি, র‍্যাগে মিউজিক তার মতো করে আগায় যাবে। আফ্রিকাতে পাঁচশ কোটি মানুষ আছে, বলো জয় গুরু! র‍্যাগে মিউজিকের সবচেয়ে বিশাল শ্রোতাগোষ্ঠী আছে আফ্রিকায়। আমি বলতে চাইতেছি যে, য়ুরোপেও এর ব্যাপক ফলোয়ার আছে মাগার আফ্রিকারটাই বৃহত্তম। এবং এইটা কোনো গর্ব অথবা ফুটানি বা এইরকম কোনো বিষয় না।

এইটা একটা নির্জলা সত্য মাত্র।

তুমি যাও নাইজেরিয়াতে, সেনেগালে — আফ্রিকার যে-কোনো দেশে, গেলেই বুঝবা … বিষয়টা কত বড়। ভালোবাসাটা কোন লেভেলের। এইটা উথালপাথাল টাইপের একটা ঘটনা — র‍্যাগে মিউজিক আর-কি … ।।

… …

 

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you