কানাডা জার্নাল || রাহাত শাহরিয়ার

কানাডা জার্নাল || রাহাত শাহরিয়ার

কিছু খরিদ করতে গিয়ে দুটাকা বাঁচিয়ে ঘরে ফিরেছি, এমনটা কখনোই হয় না। অথচ সীমিত আমদানি যাদের, তাদের হিসেবী না হলে পদে পদে বিপদে পড়তে হয়। আমি হরহামেশাই পড়ি। বিষয়টা হচ্ছে, — আমার কিছু দরকার, আমি কিনলাম। পরে জানা যাবে এক সপ্তাহ আগে আরো ৫ টাকা দাম কম ছিল! অথবা কেনার ২ দিন পরেই দাম ১০ টাকা পড়ে গেল! এর জন্য ফিন্যানশিয়্যাল প্ল্যানিং লাগে। আমার যা এখনো আওতার বাইরে। আফসোস করে মাথার চুল ছেঁড়ারও আর তেমন অবশিষ্ট নাই।

Thrift শব্দটার অর্থ হচ্ছে সতর্কতার সাথে অর্থ-ব্যবস্থাপনা। এক দশক আগে যখন এদেশে আসি Thrift Store নাম দেখেই আমি উৎসাহী হয়ে ঢুকে পড়েছিলাম। এবার আর আমার খরচ বাড়ায় কে!

যে কয়েকটা ব্র্যান্ড আছে মোটামুটি কানাডার সব সিটিতে দেখা যায়, তাদের প্রায় সবগুলোই এনজিও বা গির্জাগুলো চালায়। মানুষ পুরনো ব্যবহৃত জিনিস দান করে দেয়। আর পরে সেটা ধুয়েমুছে কমদামে বিক্রি করার জন্য দোকানে রাখা হয়।

কী নেই! কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে স্ক্রু-ড্রাইভার, সুন্দর সুন্দর চিত্রকর্ম, ফার্নিচার, কাপ-প্লেট  — ইউ নেম ইট! আমি প্রথম প্রথম মূলত পুরাতন বই কিনতে যেতাম। মলাট শক্ত হলে একটু বেশি দাম। নরম হলে দামেও নরম। যা-হোক, এখন সবকিছুতেই আগ্রহী।

সমস্যা হচ্ছে, এটা অনেকটা ডলার স্টোরের মতো। কম পয়সায় শুধু বদনা কিনতে গেলেন আর বেরোলেন কম পয়সার আরো দশ পনেরোটা জিনিস নিয়ে। আমি এসব ক্ষেত্রে অনেক কড়া। ডিম কিনতে গেলে ডিম কিনে নিয়ে সোজা বেরিয়ে আসি। মুর্গির খোঁজখবর নেই না। Thrift Store ব্যতিক্রম। এখানে আমি সব দেখি।

একটু উদাস হই পুরনো টেপ-রেকর্ডার দেখে। বা, ডেস্কটপের সাদা মনিটর দেখে। একটা ছোট চায়ের টেবিল, কতকিছু-না মাথায় নিয়েছে সে! একটা পুতুল, কারও একসময়ের দিনরাতের সাথি।

খরচের একটা সুব্যবস্থা করতে ঢু মারতে যেয়ে আমি এ-ধরনের দোকানের প্রেমে পড়েছি। এখান থেকে ভালো-খারাপ যা-ই কিনি, “আহা, আরো আগে কিনলে কম দামে পেতে” — এই টেনশন ছাড়াই কিনি।


রাহাত শাহরিয়ার রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you