পাত্র জনজাতির দুর্গাপূজা || সুমন বনিক

পাত্র জনজাতির দুর্গাপূজা || সুমন বনিক

আদিবাসী পাত্র সম্প্রদায়ের সঙ্গে দুর্গোৎসব উদযাপন — অনুভূতিতে আঁচড় কেটেছে! সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সেনাপতিটিলায় আদিবাসী পাত্র সম্প্রদায়ের এই দুর্গাপূজা।

পাত্র জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে সিলেটের আদি নৃজাতিগোষ্ঠী, খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর আগে থেকে সিলেট অঞ্চলে তাদের বসবাস। গবেষকদের মতে, পাত্র জাতিগোষ্ঠী হচ্ছে রাজা গৌড়গোবিন্দের বংশধর/সভাসদ। ইতিহাসের তথ্যমতে, পাত্র জনগোষ্ঠী লালেং নামে পরিচিত। পাত্র জাতিগোষ্ঠী শুধু সিলেটে নয়, ভারতের আসাম, মেঘালয় রাজ্যেও তাদের বসবাস। ক্ষয়িষ্ণু এই আদিবাসীগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি।

দুর্গাপুজোর আনন্দটুকু তাদের সান্নিধ্যে এসে বহুমাত্রিকতায় উপভোগ করেছি। শহরের চাকচিক্য আর আড়ম্বরপূর্ণ পূজামণ্ডপ ছেড়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও অনাড়ম্বর এই আয়োজন — আমার মনে ও মননে গেঁথে থাকবে নিশ্চয়ই। তাদের আয়োজন সাড়ম্বর না-হলেও প্রাণের ছোঁয়া ছিল।

সমাজের পিছিয়েপড়া এই জনগোষ্ঠীকে আপনজন করে নেয়া একমাত্র মহৎকর্ম বলে দাবি না করলেও, পরস্পরের আত্মতুষ্টির জায়গাটি নির্মল ছিল। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সিংহবাড়ির সিংহপুরুষ শ্রী জ্যোতির্ময় সিংহ মজুমদার চন্দনদা ও বৌদিকে ধন্যবাদ দিতেই হয়, মর্মত তাঁদের উদ্যোগেই আমার এই আনন্দযাপন।

পূজারী অমূল্য পাত্র এবং পূজা আয়োজনের সভাপতি রবেন্দ্র পাত্রের আতিথেয়তা ভোলবার নয়। কলেজপড়ুয়া সত্যব্রতী পাত্র ও তার মা রেবতী পাত্রের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি । মানুষকে আপন করে নেয়ার এক সম্মোহনক্ষমতা তাদের স্বভাবজাত, যা শহুরে জীবনে বিরল। সত্যব্রতী ও রেবতীর নিপুণ হাতেগড়া হস্তশিল্প উপহার দিলো, আর্থিক মূল্যে যা পরিমাপ করা যায় না। তাদের উপহারসামগ্রী পরমপ্রাপ্তি — যার পরতে-পরতে শুধুই ভালোবাসা জড়িয়ে আছে!


সুমন বনিক রচনারাশি
গানপারে দুর্গাপূজা

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you