চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: শেষ পর্ব || শেখ লুৎফর

চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: শেষ পর্ব || শেখ লুৎফর

দেহ-মন-রক্তের গান, মুক্তির গান
শেখপাড়ার দিক থেকে মাগরেবের আজান ভেসে আসে। ফালু ডাকাত একটা কোদাল হাতে গোয়ালঘরে ঢুকে যায়। উত্তরের কোনার দিকে একটা বিশেষ জায়গা সে খুদতে শুরু করে। গোয়ালঘরের ভিটের মাটি লোহার মতো শক্ত। কোপ দিলে মাটিতে ঢন করে একটা শব্দ তুলে কোদাল ফিরে আসে। তবু ফালু ডাকাত জানপ্রাণে কোদাল দিয়ে কোপ মারে।

একদিন সে-ও একটা পুরুষ ছিল, এই কথা তো দেশের মানুষ জানল না। তার দুঃখ হয়, জীবনের অনেকগুলা বছর সে একটা বেটিমানুষের ওমে মুখ ডুবিয়ে পয়মাল করে দিয়েছে।

ফালু ডাকাত কোদাল ফেলে গোয়াল থেকে লাফ দিয়ে বের হয়, — আমার গামছা কৈ?
তার হুঙ্কারে স্বয়সন্তানহীন শূন্য বাড়িটা কেঁপে ওঠে। বুড়িও বাড়ি নাই। তিন বাড়ি পরে, বাপের বাড়ি গেছে। গামছাটা কোমরে কষে বাঁধতে বাঁধতে বারিন্দা থেকেই বড় একটা লাফ দিয়ে ফালু ডাকাত উঠানে পড়ে। তার দম আর সাহস দেখে সে নিজেই আচান্নক হয়। কিন্তু পায়ের শক্তি কিছুটা কমে গেছে। শরীরের টাক্কর সামাল না-দিতে পেরে তার হুমড়ি খেয়ে পড়ার দশা! তবু সে সামলে দাঁড়িয়ে পড়ে। মনে মনে বলে, — দুরু বাল, আমি ত আর ডাকাতির জইন্য মানুষের দরজা ভাঙতাম না যে পায়ের গোছা লোহার মতন শক্ত অইতে অইব।

অনেক বছর আগে ভৈরব থেকে পালিয়ে আসার সময় সোনাদানা, টাকাপয়সার সাথে ছোট গাট্টিটার মধ্যে করে নলকাটা বন্দুকটাও নিয়ে এসেছিল। গত সাত-আটদিন ভেবেচিন্তে সে মনস্থ করেছে, বন্দুকটা কাঁধে ফেলে, ঘোড়ামোবারকদেরকে সাথে নিয়ে হারুম-তারুম করবে। গুণ্ডামি করবে আর মাঝে মাঝে গোঁফ ভেজাবে তালের তাড়িতে।

খুদতে  খুদতে গোয়ালঘরের মাটির নিচ থেকে সে সত্যিকারের ফালু ডাকাতকে উদ্ধার করে। জিনিসটার ওপরের আবরণ সরাতেই ঝকঝকে বন্দুকটা ফালু ডাকাতের যৌবনের দিনগুলার মতো ঝলক দিয়ে ওঠে।

আজ সকালে সে ঘোড়ামোবারককে বলে এসেছে, রাত আটটা-নটা নাগাদ যেন তার দলবল নিয়ে জামতলায় থাকে। বন্দুকটার সাথে এখন গুলিও পাওয়া গেল দশ-বারোটা। আজ রাতেই সে হানা দিবে আকন্দপাড়ার দিকে। তার রক্তে এখন পুরানা দিনের নেশা গোখরো সাপের মতো ছোবলাচ্ছে।
এই সময় খেলা আসে, — ভাইসাব, অ ভাইসাব…?

ফালু ডাকাত মনে মনে বিরক্ত হয়। খেলা একটা জীবন্ত ডিস্টাব! কতদিন পরে একটা মানুষের কালো চকচকে পিঠ আর কাঁধ ত্যাজে ফুঁসে উঠেছে আর এখন কি না খেলার আগমন?

ফালু ডাকাত গোয়ালঘরে বসে, গামছা দিয়ে বন্দুকটা মুছতে মুছতে ভাবে : ছাত্ররা এখন দেশের মা-বাপ। সেই ছাত্রদের সাথে এখন খেলার উঠাবসা। নৌকার মিটিঙে ঘাটুদলের চমক দেখিয়ে সে এখন মরদের মতো মরদ একটা। এই ভাবনায় ফালু ডাকাতের মনের গতি নব্বই ডিগ্রি ঘুরে যায়। ঘোড়ামোবারকদের মতো চোরছ্যাঁচড়দেরকে সাথে নিয়ে হাঁটলে মানুষে তাকেও একটা চোর ভাববে। কিন্তু সে তো ফালু ডাকাত। তার পৌরুষের দাম কী ঘোড়ামোবারক বুঝবে? তাবাদে সে এখন ডাকাতিই-বা করবে কেন?

এক বুড়ি ছাড়া দুনিয়াতে তার কেউ নাই। বুড়ির চুপসা শরীরটার পাশে শুয়ে থাকার চে বন্দুক হাতে বেরিয়ে পড়া অনেক বেশি জৌলুসের। দেশে এখন যুদ্ধের রব উঠেছে। সে-ও চায় বাংলাদেশ স্বাধীন হউক।

ফালু ডাকাত গামছাটা কোমরে আরেকটু কশে বাঁধে। তারপর বন্দুক কাঁধে ফেলে গোয়ালঘর থেকেই গমগমা গলায় হাঁক দেয়, — খেলা আইছ?
দেউড়ির পাশ থেকে খেলা আওয়াজ দেয়, — হ ভাইসাব।
— বেফার কী?
ফালু ডাকাত খেলার সামনে এসে দাঁড়ায়। তার কাঁধে বন্দুক দেখে খেলা অবাক হয় না। বহু বছর আগে লোকটা এদেশে এসেছিল। নাম তার ফালু মিয়া। কিন্তু কয়েক বছর পরেই লোকে তাকে ডাকতে শুরু করে ফালু ডাকাইত। দুনিয়ায় কোনো সত্যই গোপন থাকে না। অনেকের হাতেই এখন ছুরি, রাইফেল, বন্দুক দেখা যায়। ফালু ডাকাত নামটার সাথে বন্দুকটা খুব মানিয়েছে দেখে খেলা হাসতে হাসতে বলে, — বিরাট বেফার; রেলসড়ক নষ্ট কৈর‌্যা দিতে অইব। পাকিস্তানি হানাদাররা যাতে এই দিকে আইতে না পারে।

হারিকেনের কাঁচের চিমনির মতো উত্তেজনায় খেলার চোখ চকচক করছে। ফালু ডাকাত মুচকি হাসে, — খালি রেল ভাঙলে অইত না খেলা, দেশটাও স্বাধীন করুন লাগব।
— তাইলে চলুইন।

ফালু ডাকাত একটু ভাবে : মেঘনার ভরা বুকে হুমাস হুমাস ঢেউ উঠছে। বাতাস ডাকছে শন শন। নদীর বুকে জেলে আর বেদেনিদের নৌকায় হারিকেনের নিবু নিবু আলো। আজমিরীগঞ্জের দোতালা লঞ্চ আসছে পেসেঞ্জার নিয়ে। নলকাটা একটা বন্দুক আর একবুক দুঃসাহস নিয়ে তারা কয়জন কয়েক মিনিটেই টপাটপ ডাকাতিটা সেরে, ঝাঁপিয়ে পড়ত মেঘনার বুকে। আর আজ দেশের সব সাহসী মানুষেরা স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে বেরিয়ে পড়ছে। রক্তের গরম এক জিনিস আর নেশা আরেক জিনিস। খেলার মতো এই ফালু ডাকাতেরও একটা নেশা ছিল। বহু বছর পরে আজ আবার সেই নেশাটা জেগে উঠেছে। তাই সে ডাকাতদলে না গিয়ে এখন দেশের সব সাহসী মরদদের সাথে কাঁধ মিলিয়ে হাতে বন্দুক তুলে নেবে।

ফালু ডাকাত সামনে পা বাড়ায়, — লও খেলা। তাড়াতাড়ি লও চানমোহন সাহার পুকুরপাড় থাইক্যা ছাত্ররা জয়বাংলা কৈয়্যা গেরামের সবাইরে ডাকতাছে। তাড়াতাড়ি লও।
খেলা লাফিয়ে ওঠে, — আইয়োন ভাইছাব, একমিনিটও টাইম নাই।
ফালু ডাকাত কান পাতে, সড়কের দিক থেকে সবার আগে বিকাশের গলা ভেসে আসছে, — জয় বাংলা…।

বিকাশের না হাঁফানি? — এই কথা জিজ্ঞাস করে ফালু ডাকাত খেলার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
— কী যে কৈন! দেশ স্বাধীন অইব, এই আমুদে হাঁফানি থ্যাহে?

কাদু-কালু-অহাকালু সহ গ্রামের মানুষজন দা-কুড়াল-খুন্তি হাতে হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসছে। সবার আগে শোনা যাচ্ছে দানবকালুর হেঁড়ে গলা। অহাকালু পশ্চিম দিকে মুখ করে ডাকছে, — খেলা…। অ খেলা…।
— আইতাছি…, বলে খেলা এত জোরে চিৎকার মারে যে ফালু ডাকাতের কানের পর্দা পটপট করে ডেকে উঠে ত্যাব্দা মরার দশা।
নেংটিকাছা ফালু ডাকাত বন্দুক হাতে ছুটতে থাকে। ছুটতে ছুটতে সে সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারেই ভোমাগলায় চিৎকার দিয়ে ওঠে, — জয় বাংলা…
আগে আগে খেলা ছুটছে। দৌড়ের মাঝে খেলাও গলা মিলায় — জয় বাংলা…।

খেলার গলা শুনে ঘোড়ামোবারকরা জামতলা থেকে সরে যায়। তাদের হাতে রামদা-ছুরি আর শালকাঠের ডাণ্ডা। তাদের চোখে-মুখে খুন, লুটতরাজের আগুন বিড়ির আগুনের মতো অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে।

একটু পরেই তাদের দুজনকে অবাক করে পেছন দিক থেকে পরীর গলা ভেসে আসে, — জয় বাংলা…
খেলা আচান্নক গলায় জিজ্ঞেস করে, — পরী তুই?
পরী আবেগে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, — হ। আমিও তোমার লগে যুদ্ধে যাইয়াম।
খেলা খুশি হয়ে অন্ধকারেই পরীর একটা হাত নিজের মুঠিতে তুলে নেয়। খেলার হাতটা আজ অনেক বেশি শক্ত। আজ কুখাবনগরের রাক্ষসদেরকে হত্যা করার উত্তেজনায় গরমে ফেটে পড়ছে তার হাত।

শতশত মানুষ রেলসড়কের দিকে ছুটছে। একটু আগে আঙ্কুরের দোকানের সামনে দিয়ে কলুপাড়া আর মড়লপাড়ার মানুষেরা কাউমাউ করতে করতে রেলের দিকে ছুটে গেছে। এখন গোপাটের দিক থেকে ভেসে আসছে তাদের উত্তেজিত হাঁকডাক। সবার আগে মাগীকুদ্দুর গলা। আঙ্কুরের দোকানের দিকে এখন শুধু ঝিঁঝির ডাক, ব্যাঙের ডাক। মানুষের কোনো আওয়াট নাই। আঙ্কুর হাতের রেডিয়োটা রেখে চোখ ফেলতেই দেখে তার সামনে রসুন। সে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে, — তুই?
রৌশন লজ্জায় লাল হয়ে মাথায় আঁচল তুলে দেয়, — হ।
যে-রৌশন দোকানে এসে দাঁড়ালে ব্লাউজহীন শরীরের নানান জায়গা এমনিতেই দেখা যেত, আজ সে রীতিমতো ঘোমটা দিয়ে নতুন বৌয়ের মতো লাজুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। এই দেখে অভিমানে আঙ্কুরের ফর্শা মুখটা কালো হয়ে ওঠে, — কি চাস?
জড়সড় রসুন শাড়ির আঁচলটা আরেকটু টেনেটুনে দোকানের খালি অংশে বসে পড়ে, — আমারে হ্যা যেন মাফ কৈরা দ্যায়। তার ছেলে আমার পেডে, আমি কী কৈরা তার কাছে যহন-তহন আই?
আচান্নকের একটা সীমা আছে। রসুনের কথায় আঙ্কুরের বিস্ময় সেই সীমা ছাড়ায়। সে তোতলাতে তোতলাতে বলে, — কি কৈলে!
— হ। চাইর মাস চলতাছে।

আঙ্কুরের জবানে ভাষা নাই। সে বোবা পশুর মতো লোলা-ন্যাংড়া হয়ে বসে থাকে। হঠাৎ তার জীবনটা সার্থক সার্থক লাগছে। রসুনের গর্ভে তার চারমাসের সন্তান! নাহ্! রসুন তাকে একটুও ঠকায়নি। তার দেহ-মন-রক্তের সকল গান, সমুদয় বিচ্ছেদের হাহাকার তার সন্তানের মাঝে রেখে যেতে পারছে।

জীবনে প্রথম রসুনকে দেখে আঙ্কুরের গতরে কামনার যে-আগুন লেগেছিল, সেই আগুনে সে টানা পাঁচ বছর পুড়েছে। একটু একটু করে বিচ্ছেদের রস মেছরির দানা বেঁধেছে। তাবাদে দ্যাখো রসুন আজ তার সামনে নিজের বউয়ের মতো ঘোমটা দিয়ে বসে আছে, গ্রামের স্বামী-স্ত্রী যে ভাষায় কথা বলে সেই জবানে আলাপ করছে! এই ঘটনা আবিষ্কারের পর আঙ্কুরের মাথা খারাপ হওয়ার দশা।

— আমি অহন যাই…।
যাই বলেও রসুন লাজুক চোখে আঙ্কুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু যায় না। হারিকেনের আলোতে আঙ্কুর দেখে, দুধের সরের মতো রসুনের চোখে মিঠা মিঠা শরম। ভালোবাসার শরম। রসুন মুখ নিচু করে আঙ্কুরকে বলে, — দিনকাল ভালা না। হে যেন সাবধানে থাহে। তার কোনো অসুবিধা হইলে, আমারে যেন গোপনে খবর দ্যায়।

রসুন চলে গেলেও কলুপাড়ার অন্ধকার পথটার দিকে আঙ্কুর অধম নয়নে চেয়ে থাকে। তাবাদে সে দুধের সর তোলার মতো করে বোঝে, মাতৃত্বের রসে মোহিনী তামাকের মতো কড়া মেজাজের রসুন আজ স্বাদে-গন্ধে খেজুরের নয়া গুড়।

অবাক আঙ্কুরের দেহটা হঠাৎ কেঁপে ওঠে। বাইরে লক্ষ-কোটি ঝিঁঝি ডাকছে। বৃষ্টির আশায় পশ্চিমের শুকনা খালে ক্যাটর ক্যাটর করে ডাকছে ব্যাঙ। পুব দিক থেকে ভেসে আসছে বিকাশের গলার গর্জন, — জয় বাংলা…।

আঙ্কুর পাছা ঘষটে ঘষটে বাইরে বেরিয়ে আসে। আমুদে বারবার তার চোখের নজর ঝাপসা হয়ে আসছে। তৃপ্তিতে দুই চোখ উপচে উঠছে কান্নায়। ঠিক এই সময় হাছু কলু ছুটতে ছুটতে আসে। বুড়া কোথায় জানি ছিল কে জানে। কলুপাড়ার শেষ কাতারে তার ভাঙা ঘর। ঘরে ঢুকতেই তার সামনে ছুটে আসে জামাই খ্যাদাইন্যা মেয়েটা, — তুমি কৈ আছলা বাজান? গেরামের সব মানুষ রেল ভাঙবার গ্যাছে, দেশ স্বাধীন করবার গ্যাছে…।

এইটুকু বলে মেয়েটা তার বাপের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। স্বাধীনতা কী জিনিস সে জানে না। কিন্তু মানু মিয়াদের মতো রাক্ষসরা যে-ছাত্রদেরকে ভয় পায়, যে-ছাত্রদের হুকুমে খোদার মতো বলবান মানু মিয়া সবার সামনে কান ধরে উঠবস করে, জরিমানার টাকা পাইপাই করে মিটিয়ে দেয়, নিশ্চয়ই সেই জিনিসের নাম স্বাধীনতা। তাই স্বাধীনতাটা তাদের মতো গরিবদের জীবনে বিরাট কিছু।

এবার মেয়েটা সাহস করে তার বাপেকে বলে, — যাও, যাও বাজান তুমিও স্বাধীনতা আনতে রেলসড়কের কাছে যাও। দ্যাশ স্বাধীন হইলে আমি বিষুরির থলিত জোড়া কৈতর দ্যায়াম।

ভাঙা ঘরের কোনার দিক থেকে বুড়িটাও খেঁকিয়ে ওঠে, — বুইড়্যা হ্যাঁডাডা আক্কৈর‌্যা খাড়ইয়্যা রইছে ক্যা? মনে আছে ছাত্ররা মানুরে কি করছিন? হেই ছাত্ররা গেরামের সব মাইনশেরে লইয়া রেলসড়কে গ্যাছে। হ্যা যায় না ক্যা?

হাছু কলু অন্ধকারেই উস্টা খেতে খেতে রেলসড়কের দিকে ছুটছিল। আঙ্কুর তাকে ডেকে থামায়, — আমারে লইয়া যাও।
হাছু কলু অবাক হয়, — তুমি কী কৈরা যাইবা?
হাছু কলুর কথায় আঙ্কুর রাগে লাল হয়ে ওঠে। বারোমাস হাঁপানির রোগী বিকাশ আজ হুঙ্কার দিয়ে জয়বাংলা বলছে। বিকাশ পারলে সে কেন পারবে না?

আঙ্কুর লাঠিতে ভর দিয়ে, বাঁকা পিঠটা যতটা সম্ভব তারচে অনেক বেশি টানটান করে দাঁড়িয়ে বলে, — খালি শক্তি দ্যায়া লোহার রেল ভাঙা যায় না, বুদ্ধিও লাগে।

আঙ্কুর বাইরে এসে অন্ধকার আকাশের সবচে বড় তারাটার দিকে তাকিয়ে ভাবে, দশ মাস দশদিন লড়াই করে তার ছেলে একদিন রসুনের পেটের অতল অন্ধকার থেকে এই মাটিতে এসে নামবে। তার আগে তার চিকন বুদ্ধি, খেলার সাহস আর কাদু-কালুদের শক্তি দিয়ে লড়াই করে দেশটাকে করতে হবে স্বাধীন। কতকাল ধরে আমাদের রক্তে কাঁদছে সালাম বরকত, আসাদ, মতিউরের রক্ত!

এইতক ভেবেই আঙ্কুর জোরগলায় একটা ডায়ালক মারে, — মায়ের বুকের পবিত্র জমিনের মতো, প্রিয়তমার আলিঙ্গনের মতো, নবজাতক সন্তানের মিষ্টি মুখের মতো, সানকিভরা গরম ভাত আর শীতের খেতার মতো এই বাংলা হবে আমার সোনার বাংলা।

ইসহাকপুর / ০১.০৪.২০১৯-৩০.০৭.২০২০

চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ : আগের পর্ব
চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ ১-২৭
শেখ লুৎফর রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you