শীত বোধহয় এসেই গেল। বোধহয় নয়, শীতের আগমনী ঠিকই টের পাওয়া যায় শিরশির-করা হাওয়ায়। বিশেষত ভোরের দিকটায় নিদ্রোত্থিত হলে, কিংবা ভোরের দিকে নিদ্রায় গেলে, একপ্রকার শিশিরসুবাস বাতাসে পাওয়া যায়। এদেশের ঋতুপ্রবচনগুলো বলে এসেছে সেই কবে থেকে যে তেরোই ভাদ্র শীতের জন্ম। কথাটা আগে এক-সময় স্রেফ কথার-কথা ভাওতা মনে হতো। ক্রমশ বুঝেছি যে এইটা আদৌ উড়িয়ে দেবার নয়।
ঋতুরূপান্তরগুলো সনাক্ত করা যায় দিবারাতির ট্র্যানজিশনমুহূর্তে। যেমন ভোরবেলায়, প্রাকসান্ধ্য গোধূলিতে, এমনকি ডিপ ডার্ক নাইটে মহল্লার গলিতে হাঁটতে বেরোলেও সিজন্যাল্ চেইঞ্জেস্ ধরা যায়। অ্যানিওয়ে। শীত তো তশ্রিফ নেবে ইমিডিয়েটলি আফটার দুর্গাপূজা, আই সাপোজ্। সবসময় দেবী দুর্গার আগমনী শীতের কল্ হিশেবেই বিবেচিত হতো আমাদের কাছে। এবং ভাবতাম, দুর্গাপূজার আর কত দেরি পাঞ্জেরি? ইন্ডিয়ান পাব্লিশারের পূজাসংখ্যাগুলো মার্কেটে গড়াগড়িয়া যায়, কিনবা না? আহা! মানুষের স্বভাবও ওই ঋতুপঞ্জির মতোই। ঈদসংখ্যা আর পূজাসংখ্যা বাজারে দেখামাত্র খরিদের এক ধুন্দুমার ঋতু ছিল তোমার জীবনে … সেই দিনেরে খাইসে বলো কোন-সে বনের বাঘে! এল বুঝি চিৎ-কাৎ-কোঁকানোর ঋতু ধেয়ে ওই?
কিন্তু সন্ধিক্ষণগুলো — রজনী-দিবসের মুখ্য দুই সন্ধিসেতু প্রত্যুষ ও প্রদোষ — বয়ে যায় বেখেয়ালে হররোজ। ভোরবেলা জাগাজাগির কাজ ওই ছাত্তর ছাড়া আর কারা করে, কে হায় সানমামা জাগার আগে জাগে শিক্ষার্থীজীবনের পরে, দেখার ব্যাপার। অবশ্য করে অনেকেই, আর্লি রাইজের কাজটা করতে অনেকেই বাধ্য; সুয্যিমামা জাগার আগে অনেকেই জাগে, জাগতে হয় তাদেরে; অনেক পেশাজীবী লোকের জীবিকা ভোরে জাগার উপরেই নির্ভর করে। যেমন পত্রিকাফেরিওয়ালারা। বা কাঁচাবাজারের আড়ৎদার, মাছের আড়ৎদার, নগরসরনীর পরিচ্ছন্নতারক্ষক — এমন আরো অনেকেই নিত্য ভোরবেলা জাগেন। অনেকে আছেন যারা নাইটশিফ্ট সেরে ভোরবেলা বাসায় ফেরেন। এদের ভোর আসলে আমাদের দুপুরবেলাগুলোর মতোই। চিড়েচ্যাপ্টা কাজের চাপে, টেনশনে, বিরক্তি বিবমিষায়।
আর আমাদের সন্ধ্যেবেলাগুলো! আহা! আমাদের সেই বিগত শতাব্দীসন্ধির সন্ধ্যেবেলাগুলো! ওই রঙ, ওই রূপ, ওই গোধূলিগলানো সোনার সন্ধ্যা আজও কি হয় পৃথিবীতে? হয় ম্যে বি, কিন্তু তাকিয়ে দেখবার ফুরসত কই? বা, ফুসরত হলেও, আজ আর সন্ধ্যা উপভোগের ইন্দ্রিয় অটোমেটিক আগের মতোই কাজ করবে কি না, সাড়া দেবে কি না, সন্দিহান। অবশ্য ওই বয়সের এখনকার যারা, তারা নিশ্চয় পায়, সন্ধ্যাকে হাতে পায়, ভোরবেলাকে হাতে পায় শাঁস ও মূলসুদ্ধু। নিশ্চয় পায়। এবং সন্ধ্যাবেলাগুলো সম্ভবত টের পায় নিউলি-ম্যারেডেরা; আন্দাজ করি, পায়, আজও পায়। যেন পায়, এই হোক আমাদিগের আসন্ন শীতের প্রার্থনা।
অ্যাওয়েইটিং, হে উইন্টার, কাম্ শার্প! আরও জাঁকিয়ে, হার্ট কাঁপিয়ে, দামামাড্রামস্ বাজিয়ে! এসো, উইন্টার হে, এসো আমাদের নিস্তেজ লোকালয়ে!
লেখা / জাহেদ আহমদ
… …
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
- লঘুগুরু - November 8, 2024
COMMENTS