আমার চেনাজানা অনেক ঝানু কম্যুনিস্টকে দেখেছি জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে বোল পাল্টাতে। রাশিয়াফেরত, বহু কেতাবি জ্ঞানীদের দেখেছি সারাজীবন যা চিন্তা করেছেন তার বিপরীতে অবস্থান নিতে। অনেক জাতীয় কমরেড তো রীতিমতো জোব্বাওয়ালা ধর্মপ্রচারক বনে গেছেন।
অজপাড়াগাঁ শাল্লার আঙ্গারুয়ার কীর্তিমান পুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শ্রীকান্ত দাশ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। বরং তাঁর চিন্তাচেতনা মৃত্যুর পরও শাণিত হচ্ছে। তিনি কেতাবি জ্ঞানীদের চেয়ে মাঠ থেকে মার্কসবাদের শিক্ষা নিয়েছিলেন। মানবতাবাদী এই বিপ্লবী ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তৃণমূলে থেকে মানুষকে সমাজবদলের স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি ভাটির উন্নয়ন পরিকল্পনায়ও বাস্তবসম্মত পরামর্শ দিয়ে গেছেন। ভাটির প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষা করে টানা সড়ক, কালভার্ট, সেতুর বদলে স্বাধীনতার কয়েক বছর পরেই তিনি উড়াল সড়কের চিন্তা করেছিলেন, আজ যা হাওরে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
কমরেড শ্রীকান্ত দাশের পরিবার, সন্তানসন্ততিরাও তাঁর চিন্তাধারায় সংক্রমিত। নিজে দেহদান করে অমর হয়ে আছেন। সর্বমানুষের কল্যাণে তাঁর দেহ জগৎ টিকে থাকা পর্যন্ত চিকিৎসাবিদ্যায় ব্যবহার হবে। উপকৃত হবে সব ধর্মের মানুষ।
তাঁর দেখানো পথে তাঁর স্ত্রী ছায়া রানী দাশও মানবকল্যাণে দুই চোখ দান করার কাগজপত্র সম্পন্ন করেছেন। মাটিমূল মানুষের কাছে সাম্যবাদের দীক্ষা নেওয়ার ফলেই তাঁর মধ্যে মার্কসবাদের প্রকৃত আদর্শ সদা জাগরুক ছিল।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ভাটির এই শার্দুল শুধু সমাজপরির্তনের চিন্তাই করেননি, জাতিরাষ্ট্রের জন্মযুদ্ধ একাত্তরে রচনা করেছেন আত্মত্যাগের স্মারক। ভাটি এলাকায় যুদ্ধপরিকল্পনায় নিজেকে জড়িয়েছিলেন। কিংবদন্তী বীর যোদ্ধা সালেহ চৌধুরীকে রেকি করে এনে দিতেন আপডেট তথ্য। সেই অনুযায়ী অভিযান চালাতেন যোদ্ধারা, তিনিও থাকতেন অভিযানে। সালেহ চৌধুরীর কাছ থেকে জীবদ্দশায় এসব গল্প শুনেছি। তিনি লিখেছেনও তাঁর কথা।
একসময় হানাদার ও রাজাকারদের তাড়া খেয়ে সপরিবার ভারত সীমান্তের বালাটে চলে যান। সেখানে গিয়ে শরণার্থীদের পুনর্বাসন সহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ক্যাম্পে ক্যাম্পে গান গেয়ে যোদ্ধা সংগ্রহে নামেন। যুবকদের গানে গানে প্রেরণা দিয়ে যুদ্ধে নাম লেখাতে উদ্বুদ্ধ করেন।
কমরেড শ্রীকান্ত দাশকে নিয়ে বিশিষ্ট গবেষক তাজুল মোহাম্মদ সম্পাদনা করেছেন ‘মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী সংগ্রামী কমরেড শ্রীকান্ত দাশ’ স্মারকগ্রন্থ। এতে দেশ আন্তর্দেশের বিশিষ্টজনেরা লিখেছেন। আজ এই বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছে তাঁর জন্মভিটা শাল্লায়। আমারও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
কীর্তিমান পুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা কমেরড শ্রীকান্ত দাশকে নিয়ে প্রকাশিত এই স্মারকগ্রন্থ নতুন প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হোক এই প্রত্যাশা রইল।
শ্রীকান্ত দাশ : গণসংগীতের অনন্য শিল্পী
শামস শামীম রচনারাশি
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS