তরুণ কুমার মহলানবিশ দেহ রাখলেন। বাংলাবাজারে বইয়ের প্রচ্ছদের সূত্রে তাঁকে চেনা। জীবনের সুদীর্ঘ সময় ধরে প্রুফ ও এডিটিংয়ের কাজ করে গেছেন। আমাদের গাদা গাদা সাহিত্য তাঁর হাতে সুসংহত হয়ে পরবর্তীতে প্রকাশিত হতো। ফলে তাঁকে পাঠকেরা না চিনলেও লেখকেরা, প্রকাশকেরা বেশ চিনতেন। নারিন্দার গুরুদাস সরকার লেনে আমিও কিছুদিন ছিলাম। খুব কাছাকাছি ছিল তার গেরুয়া রঙের বাড়ির সিংহদরজা। প্রতিদিনের যাওয়া-আসার ফাঁকে দেখা হতো। দু একটি কুশলাদির পরই আমি জানতে চাইতাম বাংলা বানান শুদ্ধরূপে কীভাবে লিখব তার টিপস। একথা ওকথার পর অনেক বড় লেখকদের প্রসঙ্গও আসতো এবং তাদের বানান বিষয়ক উদাসীনতার কথা, এক্সপার্টিজের কথাও শুনেছি তাঁর কাছে। সম্পাদনাকে আমরা যে একেবারেই গুরুত্বের সাথে দেখি না সেসব কথাবার্তা ওই পথ চলতে চলতেই শুনতাম। লেখালেখির সাথে লেখকের নানা প্রস্তুতি থাকা যে কত জরুরি সেসব তার কাছে শুনতাম।
একদম নিরহঙ্কারী মানুষ ছিলেন। খুব ইচ্ছা ছিল তাঁর কাছে সম্পাদনা ও প্রুফ-এর জার্নিটা রেকর্ড করব, তা আর হলো না। তরুণদা চলে গেলেন ঠিকই তবে তিনি আমাদের কাছে নমস্য হয়ে থাকবেন। তিনি নিষ্ঠা, স্থির অবিচল ধ্যানমগ্ন হয়ে আমাদের এলোমেলো ভাবনাগুলো মালার মতো গেঁথে দিতে পারতেন তাঁর লাল-কালোর কলমে। অফসেট কাগজে হাজার হাজার পৃষ্ঠার মার্জিনে কত কত আকার, কত কত হ্রস্ব-ইকার, কত কত স্পেস-ডিলিট আজ শূন্য পড়ে রইল নিথর গুরুদাস সরকার লেনের হলুদ বাড়িতে। তিনি আমাদের দেখিয়ে দিতেন কোথায় অল্পপ্রাণ, কোথায় মধ্যপ্রাণ, কোথায় তিষ্ঠ ক্ষণকাল।
ওম শান্তি!
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025
- লোককবি মনির নূরী ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 19, 2025
- উপন্যাসে শহুরে জীবনের ক্লান্তি ও বিপন্নতার বোধ || হারুন আহমেদ - November 16, 2025

COMMENTS