ঢাকাবাসের গল্পত্রয় || কাজী ইব্রাহিম পিয়াস

ঢাকাবাসের গল্পত্রয় || কাজী ইব্রাহিম পিয়াস

বাংলাদেশের সিনেমা একটা ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। এফডিসির ৫টা গান আর ৩টা ফাইটের গরিব ঘরের ছেলে আর ধনীর দুলালির তথাকথিত প্রেমকাহিনির ফর্মুলা ছবির বাইরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট নির্মাতারা সিনেমা বানাবার সাহস করে এগিয়ে আসছেন। এটা অবশ্যই বাংলাভাষী ও বাংলাদেশের সিনেমার জন্য ভালো দিক।

নির্মাতা প্রসূন রহমান আমাদের প্রিয় মানুষদের একজন। সিনেমাস্রষ্টা তারেক মাসুদের সাথে থেকে তিনি পথ চলেছেন অনেকদিন। ‘সুতপার ঠিকানা’ নামে এই নির্মাতা আরও একটি ছায়াচিত্র নির্মাঙণ করেছিলেন, আর এবারে তৈরি করলেন ‘ঢাকা ড্রিম’।

ট্রেইলার দেখুন : ঢাকা ড্রিম

সিনেমায় জগৎপুর নামের অঞ্চলটি সারা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিই যেন! প্রতিদিন হাজার মানুষের রাজধানীযাত্রার স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্নের গল্প নিয়েই হাজির হয়েছে ‘ঢাকা ড্রিম’। প্রতিটি গল্পই আমাদের চেনাজানা। সেখানে ছিল — স্থানীয় নেতার অপরাজনীতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর জুলুম, নিম্ন আয়ের মানুষের একটু দাঁড়াবার স্বপ্ন, সহায়হীন নারীর গন্তব্যহীন পথচলা, সিনেমার স্বপ্নে বিভোর বাদামবিক্রেতা, নদীতে ভিটামাটি সহ সব সম্বলহারানো মানুষের গল্প ইত্যাদি। আর সবগুলো গল্পকে একটি সুতোয় কানেক্ট করেছেন এলাকার অন্ধ আয়নাল ফকির চরিত্রে অভিনয় করা ফজলুর রহমান বাবু।

সিনেমার প্লটটি অসধারণ এটা নিঃসন্দেহে বলতে হবে। কুমার বিশ্বজিতের মিউজিক দারুণ হয়েছে! তবে প্রোপার সিনেম্যাটিক হয়ে উঠবার জন্য আরো অনেক ধাপ উতরে উঠতে হবে আমাদের সিনেমাকে। ইন্ডি মেকারেরা স্বল্প বাজেটে সিনেমা বানান এটা মাথায় রেখেই বলছি — কিছু জায়গায় ভালো অভিনয় থাকলেও আরো ভালো অভিনয় বের করে আনার দরকার ছিল। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি — অনিল চরিত্রের শুরুর দিকে। সম্পাদনায় আরো কাজ করার সুযোগ ছিল। কিছু কালার গ্রেডিং-এর কাজ করা গেলে আর ক্যামেরার প্যানিং-টিল্ট শটগুলো আরেকটু স্মুদ হলে চোখে দেখে আরাম পাওয়া যেত। সিনেপ্লেক্সের বড় পর্দায় শুরুতেই প্যান করা শটটি চোখে বাড়ি দিচ্ছিল যেন! ফিলোসোফার আয়নাল চরিত্রের আরো খানিকটা এস্ট্যাবলিশমেন্ট প্রয়োজন ছিল। সমাপ্তিতে জাদুবাস্তবতার একটা ছায়া দেখানো গেলেও আরেকটু ডিটেইল দেখানো যেতে পারত। ঢাকাত্রয়ী হিসেবে বোঝা যাচ্ছে ঢাকাযাত্রার গল্প এটি, তবে ঢাকার অংশবিশেষ আরেকটু দেখানো যেতে পারত। আর প্রতিটি গল্প দর্শকের মনে দাগ কাটতে আরেকটু সময় দেয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মনে হচ্ছিল। সবশেষে আরেকটু প্রেজেন্টেবল করা গেলে ‘ঢাকা ড্রিম’ সিনেমাটি আরো সিনেম্যাটিক হয়ে উঠত।

আমার অবজার্বেশন বলে, একই টাকা ও সময় ব্যয়ে বিদেশি সিনেমা ও এই ধাঁচের বাংলা সিনেমা দেখার সুযোগ থাকলে একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে বিদেশি ছবিটি না দেখে বাংলা সিনেমাটি দেখলে সিনেমা শেষে দর্শকমনে বিদেশি ছবিটি না দেখার সুতীব্র আফসোস ঘটতে পারে। দর্শকের প্রতি নির্মাতার দায়বদ্ধতা এবং দর্শকের অপর্চুনিটি কস্টের বিষয়টি আমাদের নির্মাতাদের মাথায় রাখতে হবে।

পরিশেষে বলতে পারি, এটা একটা সুন্দর বাংলা সিনেমা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের গণমানুষের গল্পই বলা হয়েছে। একটা সৎ চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে সিনেমাজুড়ে। মৌলিক ধাঁচের এ-ধরনের আরো অনেক গল্প আমাদের নির্মাণ হওয়া ও দেখা উচিত। আমাদের গল্প আছে, নির্মাতা আছে, দরকার শুধু আরেকটু প্রেজেন্টেবল করে সিনেম্যাটিক নির্মাণের আর হলভর্তি দর্শকের!


গানপার ম্যুভিরিভিয়্যু

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you