ঈদগান একজোড়া || কাজী নজরুল ইসলাম

ঈদগান একজোড়া || কাজী নজরুল ইসলাম

খুবই কমন গানজোড়া। কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালির উৎসব ও পালাপার্বণ নিয়া আরও অনেক লিখেছেন গান ও কবিতা, মানুষের ইহজাগতিক সমস্ত সম্ভাবনাময় মিলনের মেলা-পার্বণগুলো উদযাপিত হয়েছে কাজীর গানে ও কবিতায়, আমরা তা জানি সবাই। বৃহৎ দুই ধর্মাবলম্বী মানুষগোষ্ঠীর যে-উৎসবগুলো বঙ্গে এবং বঙ্গের বাইরে পালিত হয়ে আসছিল, নজরুল সেগুলোকে উপজীব্য করে লিখেছেন কবিতা ও গান। পূজাপরব নিয়ে যেমন নজরুলে একটা উল্লেখযোগ্য তাৎপর্যবহ কবিতা-গান পাওয়া যায়, দুই ঈদ নিয়েও তেমনি। কিন্তু সেসব কবিতা বা গান নজরুলশৈলীর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেই রচনা হয়ে উঠেছে। স্রেফ দিবসস্মারক থোড়-বড়ি-খাড়া কাব্যিকতাদুষ্ট রচনা নয়, কাজীকর্মের যে-কেন্দ্রীয় খোঁজতালাশ তা এইসব উৎসবোপজীব্য রচনায় হাজির পুরামাত্রায়। কাজী মহামিলনেরই জয়গাথা গাইছেন। ভুলছেন না ধামাকাবাজিভরা আয়োজনের পেছনকার ফাঁকিফোকরগুলো অঙ্গুলিনির্দেশিতে।

এইখানে সেসবের সমস্ত নয়, মাত্র দুইটা গানের গীতিকথা আমরা আরেকবার পড়ব। দুইটাই ঈদুল ফিতর নিয়া। বাংলায় আমরা রোজার ঈদ বলি ফিতরের ঈদটাকে। যেমন ঈদুল আযহা সাধারণের লফজে কুর্বানির ঈদ। কমন দুইটা গানই নিচ্ছি আমরা পড়বার পাতে এইখানে। এই গানদুইটা আমাদের শৈশবকৈশোরস্মৃতির সঙ্গে জড়ানো। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানটার বাজনা চানরাইতে একমাত্র টেলিভিশন বিটিভিতে বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই শিরায়-তোলা আনন্দকম্পাঙ্ক চোখ বুজে এখনও টের পাই, চোখ খোলা রাখিয়াও পাই টের। তার পরেপরেই ‘ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ঈদ / ঈদ মোবারক হো’ গানটা বাজত, ওইটাও সমান বরণীয় ছিল কচি শিশুকিশোরদের কণ্ঠে। এখনকার শিশুকিশোরেরা গানদুইটার লিরিক আগাগোড়া জানে কি না জানি না। যারা গানের তালিম নিয়া থাকে তাদের কথা বলছি না, সাধারণ গানশিক্ষাসংশ্রবহীন আমাদের কথা বলছি। মিডিলিস্ট থেকে আসা সেই আমলের স্টেরিয়োতে এই গানদ্বয় নিবন্ধকার স্বকণ্ঠে রেকর্ড করেছিল, কয়েকবার পরপর কয়েক বছর একটানা, ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেটে এবং হাতের কাছে ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেট না পেয়ে বাপচাচার শখের ক্যাসেটের গান কেটে রেকর্ড করতে যেয়ে ব্যাপক নির্যাতনও সইতে হয়েছে। সেইসব কথা আপাতত থাক। বলি শুধু যে অ্যামেচারিশ সেই শিশুকণ্ঠের হোমরেকর্ডগুলো বাজারজাত করা যায়নি, বিপণনপ্রণালির অনুপস্থিতিজনিত সংকট আজকের নয়। ইদানীং অবশ্য শিশুকণ্ঠে সেই গানগুলো গেয়ে সেলিব্রেইট করবার এবং সেলিব্রেটি হয়ে ওঠার রাস্তাঘাট যথেষ্ট সুগম হয়েছে। সেই শিশুকণ্ঠটা হারায়ে ফেলেছি, হায়!

কাজী নজরুল ইসলামের ঈদুল ফিতরের সবচেয়ে কমনশ্রুত ও কমনগীত গানদুইটা আরেকবার পড়ব?

 

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।।

তোর সোনাদানা বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ।।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।।

আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই-সে ঈদগাহে
যে-ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহিদ।।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।।

আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্বনিখিল ইসলামে মুরিদ।।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।।

যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা নিত্-উপবাসী
সেই গরিব ইয়াতিম মিসকিনে দে যা-কিছু মুফিদ।।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।।

ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরিতে শিরনি তৌহিদের
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হজরত হয় মনে উমিদ।।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।।

তোরে মারল ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট-পাথর যারা
সেই পাথর দিয়ে তোল রে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ।।

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।।

 

ঈদ মোবারক হো 
ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ঈদ —
ঈদ মোবারক হো!
রাহে লিল্লাহ্‌ কে আপনাকে বিলিয়ে দিলো, কে হলো শহিদ।।

যে  কোরবানি আজ দিলো খোদায় দৌলৎ ও হাশমত্‌,
যার নিজের বলে রইল শুধু আল্লা ও হজরত,
যে  রিক্ত হয়ে পেলো আজি অমৃত-তৌহিদ।।

যে খোদার রাহে ছেড়ে দিলো পুত্র ও কন্যায়
যে আমি নয়, আমি না বলে মিশল আমিনায়
ওরে তারি কোলে আসার লাগি নাই নবিজির নিঁদ।।

যে আপন পুত্র আল্লারে দেয় শহিদ হওয়ার তরে
কাবাতে সে যায় না রে ভাই নিজেই কাবা গড়ে
সে যেখানে যায় জাগে সেথা কাবার উমিদ।।

ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক, ঈদ —
ঈদ মোবারক হো!

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you