মাধুর্য অশেষ || কল্লোল তালুকদার

মাধুর্য অশেষ || কল্লোল তালুকদার

মধুর, তোমার শেষ যে না পাই
প্রহর হলো শেষ …

প্রজ্ঞাবানেরা বলেন, রবীন্দ্রসমুদ্রে সাঁতার দিয়ে একজন বদ্ধপরিকর পাঠকও কূলকিনারা না-পেয়ে শেষপর্যন্ত হন দিশেহারা। একজীবনে তাঁর বহুমাত্রিকতা অনুধাবন ও উপলব্ধি করা সত্যি দুরূহ!

অবশ্য তাঁকে না-পড়ে কিংবা উপলব্ধি না-করে অতিসহজেই তাঁকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায়। অতীতে অনেকেই তা করেছেন, বর্তমানেও অনেকে এ-বিষয়ে সদা সচেষ্ট। ওইসব লোকের বোধশক্তি যে ঠিক কতটুকু বিকশিত হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। দু-একটা গান-কবিতা দিয়ে রবীন্দ্রপ্রতিভা বিচার করা নিছক মূর্খতার সামিল।

বাংলাসাহিত্যের অনেক বড় বড় দিকপাল কেবল ক্লাসরুমের চারদেয়ালে বন্দী হয়ে পড়েছেন, কিন্তু বাংলাসাহিত্যাকাশের মধ্যগগনে জ্বলজ্বলে ‘রবি’ এখন দেদীপ্যমান।

কেউ স্বীকার করুক আর না-ই করুক, বাঙালি-জীবন প্রকৃতপক্ষে এখনও চির-আধুনিক রবীন্দ্রাবেশে আকণ্ঠ পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে। তাঁর কথা, তাঁর রচনাশৈলী, তাঁর চিন্তাদর্শন, তাঁর সৃষ্ট শব্দ কিংবা বিশিষ্টার্থক শব্দসমষ্টি জেনেশুনে কিংবা নিজেদের অজান্তেই বাঙালিরা (এমনকী রবীন্দ্রবিদ্বেষীরাও) ব্যবহার করে চলেছে আকসার। আমাদের অনেক বড় বড় লেখক এখনও তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের নামকরণ করেন কবিগুরুর গান, কবিতা প্রভৃতি থেকে শব্দসমষ্টি ধার করে; উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা যায় — ‘গভীর নির্জন পথে’, ‘ভ্রমি বিস্ময়ে’, ‘অন্ধকারের উৎস হতে’, ‘আমার সকল কাঁটা ধন্য করে’, ‘অঙ্গবিহীন আলিঙ্গনে’ … খুঁজলে এ-রকম অসংখ্য নাম পাওয়া যাবে!

একজন রবির জন্ম না হলে জাতি কতকিছু থেকে যে বঞ্চিত হতো, তার নেই কোনো ইয়ত্তা। অস্থির যান্ত্রিক সভ্যতার এই ডামাডোলে পথের দিশা ও মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্য কবিগুরুর প্রগাঢ় ও সুশীতল ছায়াতল এক অনন্য আশ্রয়স্থল।

ক্ষুদ্রজ্ঞান নিয়ে জীবনভর তাঁকে বোঝার চেষ্টা করেছি। এখনও তিনি প্রতিনিয়ত নূতন নূতন রূপে আবির্ভূত হন। প্রতিনিয়ত আন্দোলিত হই, রোমাঞ্চিত হই, পুলকিত হই, শিহরিত হই, বিস্ময়ে বিমূঢ় হই! আমি সত্যি দিশেহারা!

তবে অন্তর্গতভাবেই আমি সম্ভবত নাছোড়বান্দা এক ‘সুদূরের পিয়াসি’; তাই অতল-অসীম রবীন্দ্রসরোবরে আমৃত্যু অবগাহন করে যেতে চাই। যদিও জানি, এ-জীবনে সেই ‘বিপুল সুদূরের’ নাগাল পাবো না কখনোই, তবু ওই সরোবরে ডুব দিলে দেহমনে যে অপার্থিব প্রশান্তি আসে, সেই ‘আনন্দ আবেশ’ নিয়েই অন্তে অনন্তে বিলীন হয়ে যেতে চাই।

ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর, তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি—
মোর ডানা নাই, আছি এক ঠাঁই সে-কথা যে যাই পাশরি।

  • রচনার অন্তর্গত রবিপঙক্তিখচিত ছবিত্রয় লেখকের সৌজন্যে পাওয়া  — গানপার

গানপারে কল্লোল তালুকদার প্রণীত অন্যান্য রচনারাশি

… …

কল্লোল তালুকদার

COMMENTS