শ্রীবৃষ্টি, শ্রীশৈশব, শ্রীজগন্নাথ, শ্রীচৈতন্য ও শ্রীহট্ট || অসীম চক্রবর্তী

শ্রীবৃষ্টি, শ্রীশৈশব, শ্রীজগন্নাথ, শ্রীচৈতন্য ও শ্রীহট্ট || অসীম চক্রবর্তী

ছোটবেলায় নতুন পঞ্জিকা বাড়িতে এলে প্রথমেই যে-তারিখটা দেখতাম তা হলো জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।

বাড়ির অদুরে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পৈতৃক প্রাঙ্গণ। সেই প্রাঙ্গণের মাঝখানে মাঝারি সাইজের পুকুর। সেই পুকুরকে প্রদক্ষিণ করে হতো শ্রীমান মহাপ্রভুর রথযাত্রা। সেই রথে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু আর শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ বুকে আঁকড়ে ধরে রথে উঠতেন শ্রীচৈতন্য দেবের পৈতৃক কুলের বংশধর শ্রী রাধাবিনোদ মিশ্র এবং আমার বাবা।

রথের দিন অঝোরে বৃষ্টি হতো। এখনো সিলেটের হিন্দু কমিউনিটিতে ‘রথের বাদলি’ বলে একটা প্রবাদ বিদ্যমান। রথের দিন অন্তত সাতবার বৃষ্টি হবেই। সেই রথের বাদলিকে থামানে আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টা।

আমাদের শৈশবে আমরা একটা মিথে বিশ্বাস করতাম। সেটা হলো বৃষ্টি থামানোর কিচ্ছা। যে-কিচ্ছার শেষ পর্যায়ে এসে একটা কাপড়ে গিট্টু দিয়ে রাখা হয় এবং পরের দিন সেই গিট্টু খুলে দিলে আর বৃষ্টি হয় না।

কিন্তু তবুও বৃষ্টি হতো। আর আমরা আশায় থাকতাম বৃষ্টি বন্ধের৷ কিন্তু চেরাপুঞ্জির দু-বাহুর অন্তরালে থাকা সিলেট জেলার বৃষ্টিবিলাস কি আর পৌরাণিক কিচ্ছায় বন্ধ হয়?

প্রায় এই সময়েই দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা হতো। সেই পরীক্ষাকে থুড়াই কেয়ার করে আমরা আশায় থাকতাম রথের মেলায় গিয়ে লাল বল, বাঁশি আর বন্দুক কেনার।

তবে সিলেটের ঢাকাদক্ষিণে মহাপ্রভুর রথযাত্রার অন্যতম আকর্ষণ হলো কাঠের ফার্নিচারের পসরা, আর হাজারো পদের শুটকির স্টল। দূরদুরান্ত থেকে কাঠমিস্ত্রীরা নিয়ে আসতেম নানা ধরনের কাঠের ফার্নিচার আর দেশের নানা অঞ্চল থেকে শুটকি ব্যাবসায়ীরা আসতেন থরে থরে সাজানো শুটকির বাহার নিয়ে। স্থানীয়রা রথের মেলায় কিনে রাখতেন শুটকির মজুদ আর অপেক্ষায় থাকতেন প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কেনার।

বহু বছর রথের মেলায় যাই না। ঠিক যেন শচীনকর্তার গানের মতো —

আইয়া আইয়া গেল গেল
রথের মেলা চইলা
তোরা কে যাস, কে যাস …

লেখার ভিতরে ব্যবহৃত রথযাত্রার ছবিটি পীযূষ কুরী কর্তৃক সিলেটের রিকাবিবাজার থেকে জুলাই ২০১৯ সনে তোলা

… …

অসীম চক্রবর্তী

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you