এল. কোহেনের একটা গান নিয়া… || ইমরুল হাসান

এল. কোহেনের একটা গান নিয়া… || ইমরুল হাসান

[আলাপটা লেনার্ড কোহেনের ‘ফেইমাস ব্লু রেইনকোট’ নিয়া। গানের পঙক্তির ভিতরে পোরা ব্যঞ্জনা দিয়া (বা তার সম্ভাব্য একটা পাঠ দিয়া) সামাজিক মাইন্ডসেট রিড-আউটের প্রয়াস এই রচনার বিশেষ দ্রষ্টব্য। রচনাটি লিখেছেন ইমরুল হাসান। লেখকের স্বনামখচিত ওয়েবক্ষেত্র থেকে এইটা আমরা নিয়েছি। গানপারে প্রকাশের জন্যে লেখকের অনুমতিও নেয়া হয়েছে।

লেখাটা পাঠের আগে বা পরে বা মাঝভাগে ‘ফেইমাস ব্লু রেইনকোট’ শুনে-নেয়াটা আবশ্যক। মনে হয় যে লেনার্ড কোহেনের দশটা গানও শুনেছেন যারা তাদের কাছে ‘ফেইমাস ব্লু রেইনকোট’ অপরিচিত তো নয়ই, বিখ্যাত কোহেন নাম্বারগুলোর মধ্যে এই ‘নীল বর্ষাজামা’ অবশ্যই একটা। তারপরও শোনেন নাই যারা, তারা সার্চইঞ্জিন থেকে রিটেন লিরিক্স পড়ে নেবেন, তাদের জন্যে এই লেখার সঙ্গেও যুক্ত রইল সংগীতসমেত পঙক্তিগুলো।

রচনার শেষাংশে জুড়ে দেয়া হয়েছে ইউটিউবলিঙ্ক, যেখান থেকে গানের ইংরিজিলিখিত পঙক্তিগুলো পড়ে নেয়া যাবে, এবং সবশেষে এর বাংলা তর্জমাও রইল। তর্জমাটা হাসানেরই করা। – গানপার]

18450092_10210565939877307_464411689_n

কোহেন যখন বলতেছেন ‘মাই উইমেন’, তখন একজন সার্টেন উইমেন তো আছেন বা ছিলেন উনার পজেশনে। এই ধারণাটা তো আছেই যে, – আমার বউ, আমার জামাই, আমার বয়ফ্রেন্ড, আমার গার্লফ্রেন্ড – এই দখল বা পজেশন গাড়ি-বাড়ির চাইতে কম কিছু না। আপনার লাইফে ম্যাটেরিয়াল পজেশন অনেককিছু আছে, কিন্তু রিলেশনশিপের পজেশনও থাকা দরকার, নেসেসারিই আসলে। ইন ফ্যাক্ট কোনো দখলদারি ছাড়া তো রিলেশনের ধারণাটা এগজিস্টই করতে পারার কথা না। এইসবকিছুরে এইভাবে ভাবাটা হয়তো একটু খারাপ লাগতে পারে, যেমন ভাবি – আমার রোবট, আমার মেশিন, আমার মোবাইল … কিন্তু ক্লোজই আসলে ব্যাপারটা, এত ডিস্ট্যান্স কিছু না মে বি। মানে, এই-রকম ভাবার ব্যাপার তো আছেই।

ঘটনা সেইটা না। ঘটনা হইতেছে এই ঔনার্শিপটা কেমনে কাজ করে। সেক্স অবভিয়াসলি একটা মেজর ব্যাপার। গানের ঘটনা মনেহয় এই-রকম যে, কোহেনের বউয়ের লগে তার ফ্রেন্ড ক্যাজুয়াল সেক্স করছে, কিছুদিন থাকছিল একলগে, এখন কোহানের লগে থাকতেছে, পরে এখন কোহেন ব্যাপারটা নিয়া ভাবার ট্রাই করতেছে। কোহেনের লিরিক্সে এই ব্যাপারটা আছে যে, তার ফ্রেন্ড তার বউরে নিছে বা তার বউ যে গেছে সেইটারে ফ্রেন্ড না করে নাই, এক্সেপ্ট করছে। এইটা যতটা মাইল্ড হওয়া পসিবল, ততটা মাইল্ডভাবে বলার ট্রাই করছেন কোহেন। দোষ দেয়ার ব্যাপারটা কম উনার, ফ্রেন্ড বা বউ – কারো উপ্রেই; একটা দুঃখ আছে খালি।

আমার সন্দেহ, এইটা প্রেমের দুঃখ না খালি, ঔনার্শিপটা যে নাই, সেই না-থাকারও কষ্ট।

18492508_10210565938837281_1935504968_nএকটা কষ্ট তো জেন-এরও আছিলো। কোহেন ভাবছে সেইটা পার্মানেন্ট জিনিশ, উইমেনলি একটা ব্যাপার। এইটাও এক ধরনের মালিকানার জিনিশ বইলা ফিল করছে বইলা মে বি। কিন্তু ওই লোকের সাথে রিলেশনের ভিতর দিয়া শে কোনোভাবে সেইটারে ইরেজ করে দিতে পারছে। কেমনে করছে – সেইটার ব্যাখ্যা তো নাই এমনিতেও, ব্যাখ্যা জিনিশটা তো বাজেই, একরকম; তারপরও … মে বি জেন পলিগ্যামিক হওয়ার ভিতর দিয়া এমন একটা জায়গারে আইডেন্টিফাই করতে পারছে যেইখানে মালিকানার ব্যাপারটা ব্লার হইতে পারে।

‘রেভিউলেশনারি রোড’ সিনেমায় একটা সিন ছিল কেট উইনস্লেট যখন বুঝতে পারে যে তার হাজব্যান্ড চিট করতেছে তখন শে তার নেইবারের লগে সেক্স করে; যেন প্রতিশোধ নিলো একটা। সেক্স করা যে মালিকানার একটা ঘটনা, সেইটা থিকা শে নিজেরে বাইর করতে চায় মনেহয় নিজেরে। পারে না। কিন্তু এই গানটাতে জেন-এর প্রতিশোধের কোনো ব্যাপার নাই, জাস্ট আরেকটা রিলেশনই, কিছুদিনের। শে অনারও করে ব্যাপারটারে। কিন্তু এই-রকম থাকতে যে পারা যায়, খালি এইটুকই না; শে যে ছিল, এইটা মে বি তারে রিলাক্স করে কোনোভাবে।

এই ফেমিনিন কষ্টটা যে নাই, এই না-থাকাটা কোহেনরে কোনোভাবে রিলিফ দিতেছে – এইটা নিয়াও সন্দেহ আছে আমার। যেইটারে আমরা পুরুষ-ইগো বইলা আইডেন্টিফাই করি সেইটা মে বি মালিকানার একটা ঘটনাই। এর অ্যাগেইন্সটে কারো-না-কারো মালিকানায় না থাকতে পারার ফিলিংসটাই মে বি ফেমিনিন ঘটনা না। … মালিকানা বা মিনিংয়ের বাইরে যদি কোনোকিছু এগজিস্ট করে সেইটারে মনেহয় আমরা ঠিকমতো আইডেন্টিফাই করতে পারতেছি না।

18492934_10210565937157239_688446745_nচিন্তার দিক থিকা গ্রামসির সুপার-স্ট্রাকচার যেইভাবে মার্কসের ইকনোমিক ক্লাসের উপর দাঁড়ায়া আছে, সেইভাবে দেখতে গেলে ঔনার্শিপের প্যাটার্নটা কিছুটা জটিল হইছে তো এখন। যেমন, একটা জমি সেইটা বান্ডেল কোলেটারালের ভিতরে চইলা আসলে পরে মনে হইতে পারে তো যে, মালিকানার ব্যাপারটা নাই মনেহয়! কিন্তু থাকে তো; ইভেন একটা দেল্যুজিয়্যান সোসাইটিতে বা পলিগ্যামিক রিলেশনেও মালিকানার ব্যাপারটা শিফট হয়, বাতিল হয়া যায় না, কোনোভাবেই।

তবে কোহনরে বেনিফিট অফ ডাউট দিতে চাই আমি। হালেলুইয়ার ‘লাভ ইজ নট অ্যা ভিক্টরি মার্চ…’ লাইনটার জন্যে। শেষমেশ উনি মনেহয় এমন একটা স্পেইসরেই ওপেন করতে চাইছেন যেইটা আছে, থাকতেছে, কিন্তু এনাফ ভিজিবল হইতে পারতেছে না।

https://www.youtube.com/watch?v=kkSERbdl39Q

ফেইমাস ব্লু রেইনকোট
এখন ভোর চারটা, ডিসেম্বরের শেষের দিক
আমি লিখতেছি এখন খালি জানার লাইগা তুমি আছো কি-না ঠিক
নিউইয়র্কে তো ঠাণ্ডা, কিন্তু যেইখানে আছি আমি ভালোই লাগে
এইখানে, ক্লিন্টন স্ট্রিটে সারা সন্ধ্যায় মিউজিক বাজে
আমি শুনছি অনেক দূরের মরুভূমির ভিতর তুমি তোমার ছোট বাড়িটা বানাইতেছো
এখন কোনোকিছুর লাইগাই তুমি বাঁইচা থাকো না, আমি আশা করি তুমি কিছু রেকর্ড অন্তত রাখতেছো

হ, আর জেন আসছিল তোমার চুলের জট নিয়া
শে কইছিল যে তুমি তারে দিছো এইটা
যেই রাতে তুমি ক্লিয়ার হয়া যাওয়ার প্ল্যান করতেছিলা
তুমি কি কখনো ক্লিয়ার হইতে পারছিলা?

আহ, শেষবার আমরা যখন তোমারে দেখছিলাম তখন তোমারে লাগতেছিল বুড়া
তোমার বিখ্যাত নীল রেইনকোটটা ছিল কান্ধের দিকে ছিঁড়া
তুমি স্টেশনে গেছিলা প্রতিটা ট্রেনের লগে দেখা করার লাইগা
আর তুমি বাড়ি ফিরা আসছিলা লিলি মার্লেনরে ছাড়া

আর আমার উইমেনরে তুমি তোমার লাইফে ফুলকি কইরা নিছিলা
যখন শে ফিরা আসছিল শে আর কারো বউ আছিলো না

ভালো কথা, আমি তোমারে দেখি সেইখানে তোমার দাঁতে গোলাপ নিয়া
পাতলা জিপ্সি চোর আরেকটা

ভালো কথা, আমি দেখি জেনির জাইগা উঠা…
ও তোমারে জানাইছে শুভেচ্ছা

আমি কি বলব তোমারে, আমার ভাই, আমার খুনি
আমি কি কইতে পারি?
আমার মনেহয় আমি তোমারে মিস করি, আমার মনেহয় আমি তোমারে মাফ করে দিছি
আমি কৃতজ্ঞ যে আমার রাস্তায় দাঁড়াইছিলা তুমি।

যদি কখনো তুমি এইখানে আসো, জেনের লাইগা বা আমার লাইগা
তোমার শত্রু ঘুমায়া গেছে, আর তার উইমেন আছে ফ্রি হয়া

হ, আর থ্যাঙ্কস, তুমি যে তার চোখ থিকা অশান্তিটা মুছে দিছিলা
আমি ভাবতাম যে ওইটা সবসময় থাকব, এইজন্য কখনো ট্রাই করতাম না

আর জেন আসছিল তোমার চুলের জট নিয়া
শে কইছিল যে তুমি তারে দিছো এইটা
যেই রাতে তুমি ক্লিয়ার হয়া যাওয়ার প্ল্যান করতেছিলা…

– তোমার এল.কোহেন, শুভেচ্ছা।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you