‘ভদ্রে! আপনার কেশরাজি গুটাইয়া রাখিবেন কি?’ পাশের আসনে উপবিষ্ট সুন্দরী রমণীর চুলগুলো বাতাসে বারবার মুখের ওপর আসায় তাকে শুধালাম। তিনি চুলগুলো গোছাতে গোছাতে একই ভঙ্গিতে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘আপনার সহিত আলাপচারিতার লোভ সংবরণ করিতে পারিতেছি না। অনুগ্রহ করিয়া আপনার সুন্দর নামটি বলিবেন কি?’
‘চিকন উল্লাহ’ — কোনো প্রকার ভণিতা না করে বললাম।
রমণী হেসে খুন। ‘আপনার মতো অতিরিক্ত স্বাস্থ্যবান মানুষের নাম চিকন উল্লাহ? সত্যি বিস্ময়কর!’
‘আপনার মনোহর নামটি জানিতে পারি কি?’
অবশ্যই। আমার নাম ‘নাই বেগম।’
‘মস্করা নিশ্চয়ই! এমন নাম হয় কি?’
রমণী ভ্রুকুটি করলেন, — আপনার নাম চিকন উল্লাহ হলে আমার মতো স্লিম ফিগারের অধিকারিণীর নাম ‘নাই বেগম’ হতে আপত্তি কোথায়?
নাম নিয়ে কত গল্প, কত কাহিনি। চেক লেখক মিলান কুন্ডেরার মতে আমাদের নামকরণ কীভাবে শুরু হলো বা আমাদের পূর্বপুরুষেরা কীভাবে এর প্রচলন করলেন সে-ইতিহাস হয়তো আমরা জানি না; কিন্তু আমরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে এই ঐতিহ্য বহন করছি, এতে অবগাহন করছি; আবার কখনও এটা আমাদের ক্ষুরধার মেধার একঝলকের সৃষ্টি মনে করে গৌরবান্বিত হই। জাপান এবং ভিয়েতনামে সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো একটি সুন্দর নাম। আবার শেক্সপিয়ার বলেন, নামে কিবা আসে যায়? গোলাপকে যে নামেই ডাকি না কেন, সুগন্ধ সে বিলাবেই। কিন্তু একটি নাম শুনে যদি পছন্দই না হয়, কিছু আকর্ষণ বা কৌতূহলই তৈরি না হয়, তাহলে গুণবিচার করতে যাওয়া পর্যন্ত সময় নষ্ট করতে কজনই-বা রাজি হন?
প্রাণী ও উদ্ভিদের দ্বিপদ নামকরণের পদ্ধতি প্রবর্তন করে অমর হয়ে আছেন ক্যারোলাস লিনিয়াস। একই প্রাণী বা উদ্ভিদকে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ভাষায় কিংবা একই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন উপভাষায় ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। ফলে সেই উদ্ভিদ বা প্রাণীকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞগণ ধন্দে পড়ে যান। এই সমস্যা দূর করার জন্য তিনি প্রত্যেকটি উদ্ভিদ বা প্রাণী প্রজাতির জন্য দুইপদবিশিষ্ট একটি নাম প্রস্তাব করেন। এই নিয়মানুসারে Mangifera Indica বললে সারা দুনিয়ার বিশেষজ্ঞগণ আমগাছকেই বুঝতে পারেন। কিন্তু Homo Sapiens দ্বারা মানুষপ্রজাতিকে বোঝা গেলেও দুজন মানুষকে পৃথক করার উপায় কী? সহজ কথা! প্রত্যেকের জন্য চাই একটি করে নাম। একই সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ, প্রাণী বা অন্য কোনো বস্তুর জন্য একটি নামই যথেষ্ট হলেও প্রত্যেকটি মানুষ ও স্থানের জন্য পৃথক পৃথক নাম আবশ্যক। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে মানুষ ও স্থানের নামকরণের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় কি?
মানুষের নামকরণের ক্ষেত্রে দুটি এপ্রোচের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়; (১) ধর্মভিত্তিক, এবং (২) ভাষাভিত্তিক। বাঙালি মুসলিমদের নামকরণে পবিত্র কোরআন এবং ইসলামের ইতিহাসে উল্লিখিত বিভিন্ন চরিত্র বা নাম অনুযায়ী সন্তানের নামকরণ করা একটি প্রথা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। হিন্দু কিংবা অন্য ধর্মের অনুসারীদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। ভাষা ভিত্তিক পদ্ধতিতে নিজস্ব ভাষায় প্রচলিত বিভিন্ন অর্থবোধক শব্দ সম্ভারের সঙ্গে বংশনাম যোগ করে নামকরণ করা হয়। আবার বিদেশি ভাষায় নবজাতকের সুন্দর, অর্থবোধক বা ব্যতিক্রমী নামকরণ নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে রীতিমত উৎসবমুখরতা দেখা যায়। বাঙালি মুসলিমদের ক্ষেত্রে আরবি ভাষার শব্দসম্ভার ব্যবহারের প্রবণতা এক্ষেত্রে খুবই লক্ষণীয়। তবে, বংশনাম ব্যবহারেও ইদানীং অনীহা দেখা যায়; বরং দুই বা তিনটি শব্দ মিলিয়ে একটি নাম রাখা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
নেত্রকোণার মানুষ ও স্থানের কিছু নাম খুবই কৌতূহল-উদ্দীপক। কোনটা রেখে কোন নামের বিষয়ে বলি! অশালীনতা থাকলেও ‘নুনু মিয়া’, আবার ধ্বংসাত্মকতা থাকলেও ‘নাশ মিয়া’-কে এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষের নাম যদি হয় ‘গরুচরণ’ বা ‘বাঁদরচন্দ্র’ তাহলে মানুষ হওয়ার সার্থকতা কোথায়? বাংলা সিনেমার কাহিনিগুলো যেমন ‘একটু আলাদা’, ঠিক তেমনি উসফত, বারাজাফ, জিলন, নিপসেল, ফরচ, ভক্ষর, দিয়ারিশ প্রভৃতি নামগুলো ব্যতিক্রম ঠিকই কিন্তু এগুলো আমাদের চিন্তায় কোনো আবেদন তৈরি করে কি? রহসল, রিয়াজত, খনু, এভিন, ঠিঠন, খুদামা, খমরু, লরান, মতরঙ্গ জাতীয় নামগুলো বৈয়াকরণিক, ভাষাগত কিংবা ধর্মভিত্তিক কোনো নামকরণ পদ্ধতিতে কাঠামোবদ্ধ করা যায় কি? তবে, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষের মধ্যে এই জাতীয় নামকরণের প্রবণতা বেশি। দরিদ্র মানুষের মধ্যে শিক্ষার হার কম এবং সেই একই কারণে তাঁদের নামকরণ বিষয়ক শব্দসম্ভারের সমাহার কম বলেই অনুমিত। তাই বলে নামকরণে সচরাচর ব্যবহৃত বা অর্থবোধক কোনো শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে কি? নাকি সন্তানের নামকরণের ক্ষেত্রে উদাসীনতাই এর মূল কারণ? দরিদ্র শ্রেণির মানুষের ঘরে একটি সন্তানের আগমন কি শুধুই অন্ন ধ্বংসের আর একটি মুখ অথবা পরিবারে ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আরও একটি লাঠি? অন্য একজন মানুষ থেকে পৃথক করার জন্য তাঁর একটি নাম প্রয়োজন এবং তা একটা কিছু হলেই হলো — এমন মানসিকতাই কি এর জন্য দায়ী? প্রশ্ন হলো, যিনি নামটি দিয়েছেন এমন একটি অদ্ভূত নাম বা শব্দ তাঁর চিন্তায় এলো কীভাবে?
একজন আইনজীবীর নিকট থেকে শোনা একটি কৌতুক বলতেই হয়।
আদালতে মামলার শুনানি চলছে। সাক্ষীর কাঠগড়ায় উপস্থিত ভদ্রমহিলার নাম ‘পোশাকের মা’। সদ্য-বদলি-হয়ে-আসা বিজ্ঞ বিচারক একটু চমৎকৃত হলেও কৌতূহল দমন করলেন। পরবর্তী সাক্ষীকে তলব করা হলো। তাঁর নাম ‘পুলিশের মা’। বিচারক মনে মনে ভাবলেন পুলিশের মা নিজেই সাক্ষ্য দিতে এসেছে! বিচারক উসখুস করতে লাগলেন। পুলিশের মা-এর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হতেই বিজ্ঞ আদালত বললে, এরপরের সাক্ষীর নাম কী উকিল সাহেব? তৃতীয় সাক্ষীও মহিলা। নাম বললেন ‘উকিলের মা’। বিজ্ঞ বিচারক রসিকতা করার ইচ্ছা দমন করতে না পেরে বললেন, ‘তাঁর জবানবন্দি গ্রহণের প্রয়োজন আছে কি? বিজ্ঞ আইনজীবী বলে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়’। সাক্ষীর তালিকা হাতে; তাই উকিল সাহেব টিপ্পনি হজম করতে করতে মুচকি হাসলেন। চতুর্থ সাক্ষী কাঠগড়ায় উপস্থিত। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর নাম বললেন ‘জজের মা’। জজ বাহাদুরের আক্কেল গুড়ুম! তার উপরে উকিল সাহেবের টিপ্পনী, ‘ধর্মাবতার! এইবার কী করিব বলিবেন কি?’ আদালতকক্ষে একটি রসাত্মক আবহ তৈরি হয়েই ছিল। সাক্ষীর নাম শুনে হাসির দমকে আইনজীবীর কটাক্ষ বাতাসে মিলিয়ে গেল। একজন নারী মা হওয়ার বহুপূর্বেই ‘মা’ নামপ্রাপ্তি মেয়েদের প্রতি অত্যাধিক আদর নাকি নারীদের প্রতি পুরুষতান্ত্রিকতার অবহেলা তা পৃথক গবেষণার বিষয়। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নামকরণের ধরনে পরিবর্তন আসলেও নেত্রকোণায় এই নামগুলো এখনও বহুল প্রচলিত।
কোনো স্থানের নাম থেকে সেখানের প্রাকৃতিক পরিবেশ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, শৌর্যবীর্যের কাহিনি, মানববসতি এবং তার বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সুইডিশ গবেষক বেঙ্গট প্যাম্পের (১৯৭৮) মতে কোনো স্থানের নামটি হবে — (১) স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত, (২) প্রচলিত ভাষার নিয়মাবলি অনুসৃত, (৩) সামাজিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, (৪) ব্যুৎপত্তিসমৃদ্ধ, (৫) উচ্চারণে সহজ, এবং (৬) গ্রহণযোগ্য অর্থাৎ এটি কোনোভাবেই আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ বা হাস্যকর হতে পারবে না। উল্লেখ্য আর্জেন্টিনা, স্পেন, মিশর সহ বিশ্বের অনেক দেশেই ভৌগোলিক স্থানের নামকরণের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন বা কর্তৃপক্ষ রয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের United Nations Group of Experts on Geographical Names (UNGEGN) নামক একটি বিশেষজ্ঞ দলও রয়েছে।
গত ২০০২ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত Eighth United Nations Conference on the Standardization of Geographical Names-এ নরওয়ে কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনে স্থানের নামকরণের ক্ষেত্রে দুটি ধরনের (approach) কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, স্বতঃস্ফূর্ত বা জনপ্রিয় নামকরণ পদ্ধতি। প্রচলিত বেশিরভাগ স্থানের নামই এই ধরনের আওতাভুক্ত। এই মতবাদ অনুযায়ী নিকটবর্তী অন্যান্য স্থানের নাম, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, সাংস্কৃতিক বা ঐতিহাসিক কোনো প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মিল রেখে কোনো স্থানের নাম দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এর সঙ্গে কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা বর্ণনা যোগ করে এর ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। দ্বিতীয়তঃ ব্যাপ্টিজম। এই প্রক্রিয়ায় কোনো স্থানকে সাধারণত পূর্বে নামকরণকৃত কোনো বস্তুর নামানুসারে নামকরণ করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি নির্ধারিত পদ্ধতি, নীতিমালা বা আইন অনুসরণপূর্বক কোনো স্থানের নামকরণ করাই এই ধারার প্রতিপাদ্য। আবার স্বতঃস্ফূর্ত পদ্ধতিতে আরোপিত নামকে কখনও কখনও এই পদ্ধতি অনুসারে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। স্থানের নামকরণে বিদেশি বা দেশি শব্দ ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে এক্সোনিমি এবং এন্ডোনিমি নামক দুটি এপ্রোচও প্রচলিত রয়েছে। কোনো এলাকাকে বিদেশি মানুষের উচ্চারণে বা ভাষায় ডাকার প্রক্রিয়াই হলো এক্সোনিমি (Chittagong/Bogra) এবং স্থানীয় মানুষের উচ্চারণে বা ভাষায় নিজস্ব নামে ডাকার প্রক্রিয়া হলো এন্ডোনিমি (Chattogram/Bogura)। নেত্রকোণার ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ত পদ্ধতির এককাধিপত্য দেখা যায় নিঃসন্দেহে।
নগরজীবনের কোনো সুবিধা বা নামগন্ধ না থাকলেও হাওড়ের মধ্যে রয়েছে ‘নগর’ ইউনিয়ন। আফ্রিকার সঙ্গে নেত্রকোণার যোগসূত্র জানা না গেলেও খতিব নগুয়া, বলাই নগুয়া, যুগীর নগুয়া, ভাউরতরা নগুয়া নামগুলো কীভাবে এই অঞ্চলের একান্ত আপন হয়ে গেল তা বোধগম্য নয়। আবার এই ‘ভাউরতরা’ শব্দের ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করতে বিশেষজ্ঞগণ গলদঘর্ম হবেন নিশ্চয়ই। পঞ্চগড়ের একটি উপজেলার নাম উল্লেখ করে একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছিলেন ‘এরূপ অশ্লীল নামগুলো পরিবর্তন করা উচিত’। বিচিপাড়া, চোরেরভিটা, পাঠাবুকা, যুগীরগোহা, গোয়াতলা, চামারজানি, ধনপুরের নাম নিয়েও তাই ভাবা প্রয়োজন। ‘শালা’ শব্দটি ‘গৃহ’, ‘স্ত্রীর ভাই’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। বরিশাল বা নেত্রকোণার আঞ্চলিকতায় শব্দটি ‘হালা’ হিসেবে উচ্চারিত হয় এবং এটি একটি আদরণীয় গালি হিসেবে সমধিক ব্যবহৃত। ‘বোবা’ অর্থ ‘নির্বাক’ নামক একটি বিশেষণের সঙ্গে ‘হালা’ শব্দ যোগ করে একটি স্থানের নাম হয়ে গেছে। তেমনি রানী, বীরমার, চিনা, মাচে’র সঙ্গে হালা’র সম্পর্ক বোধগম্য নয়। গাভারকান্দা’র কথা না বলে ক্ষান্ত হই কী করে! বাংলা একাডেমির অভিধান অনুযায়ী ‘গাবর’ অর্থ হলো নির্বোধ, অসভ্য এবং ‘গাভুর’ হলো গোঁয়ার। ‘কান্দা’ শব্দের অর্থ নদী-তীরবর্তী জলস্রোত প্রতিরোধী বাঁধ; আবার এলাকা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ‘গাবর’ অথবা ‘গাভুর’ যে শব্দ থেকেই ‘গাভারকান্দা’ নামটি আসুক না কেনো তা খুবই মানহানিকর। আবার ‘খিলা’ শব্দের অর্থ চাষের অনুপযুক্ত, পতিত, অকর্ষিত; অথচ স্থানের নাম দেওয়া হয়েছে প্রজাপতিখিলা, নিলাম্বরখিলা। প্রজাপতি ও নীলাম্বরের মতো চমৎকার দুটি কাব্যিক শব্দের সঙ্গে এমন একটি ‘খিল’ ধরা শব্দ antagonistic contradiction-এর চমৎকার উদাহরণ হলেও এখানে মিলেমিশে একাকার। পাগলের বীর হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা মালুম না হলেও এখানে ‘বীর পাগলী’ রয়েছে মৌজার তালিকায়। একটি বিলের ‘বরইউন্দ দিঘর ঝাংড়া গ্রুপ’ নামকরণের স্বার্থকতা কোথায়? ইউনিক হলেও ‘বাদে কেন্দুয়া ধরের বাংলা প্রকাশ বাংলা দাস পাড়া, মানুষউড়া, গ্রিদান টেংগা, বিপ্রবর্গ, কলুংকা, ঔটি, বাইঞ্জা ভিয়ারকান্দি, বাদে ধারাম, গাবাউথা নামগুলো প্যাম্পের শর্তগুলো পূরণ করে কি? অপরদিকে, মেঘশিমুল, মহিমা, বীর বৈরাটী, ভদ্রপাড়া, ভদ্রা, রজকচিকনী, মঙ্গলসিদ্ধ, সোনাজুর, নীলকন্ঠপুর, কবিরত্নের বহর, সেইচাহনী জাতীয় রোমান্টিক ও শিহরণ জাগানিয়া নামেরও রয়েছে সমৃদ্ধ ভান্ডার।
ভৌগোলিক নামকরণের আরেকটি ধারা হলো বাণিজ্যিক এপ্রোচ; যা পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একটি সুন্দর ও অর্থবহ নামের জনপ্রিয় হওয়া খুবই স্বাভাবিক; কিন্তু একটি উদ্ভট নামও হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এক্ষেত্রে নামকরণের প্রচলিত রীতি-নীতি প্রযুক্ত নাও হতে পারে। নিউজিল্যান্ডে অবস্থিত ৮৫ ডিজিট বিশিষ্ট দীর্ঘতম এই স্থানের নামটি Taumatawhakatangihangakoauauotamateaturipukakapikimaungahoronukupokaiwhenuakitanatahu হতে পারে শ্রেষ্ঠতম উদাহরণ। এখানে পর্যটক আসেন রাস্তার উপরে স্থাপিত এই নামফলকের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য। যুক্তরাজ্যের নর্থ ওয়েলসের Llanfairpwllgwyngyllgogerychwyrndrobwllllantysiliogogogoch এবং আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের Chargoggagoggmanchauggagoggchaubunagungamaugg-এর নামও উল্লেখ করার মতো। সুসং বা সুসং দুর্গাপুর নিজ নামে ইতোমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে দেশ জুড়ে। সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ জল, সাউথ গারো হিলসের ব্যাকগ্রাউন্ডে সবুজের সমারোহ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সদস্যদের সাধারণ জীবনযাপন প্রণালি, রাশিমনি হাজং-এর বীরগাঁথা, কমরেড মনি সিংহের বিপ্লবী জীবন সুসং-কে করেছে অনন্য।
উপসংহারে বলতেই হয় ‘নামে কিবা আসে যায়?’ পাহাড়, হাওড় ও সমতলের অদৃশ্যপূর্ব সংমিশ্রণ এই নেত্রকোণা। নেত্রকোণার মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনাচরণ নেত্রকোণাকে করেছে অনন্য। সবকিছু ছাপিয়ে নেত্রকোণা তাই আমাদের ভালবাসার আশ্রয়স্থল।
… …
- নেত্রকোণার নামকাহন (পঞ্চম পর্ব) / হাওরাঞ্চলের পানি এবং গীতল জীবন || মঈনউল ইসলাম - August 30, 2021
- নেত্রকোণার নামকাহন (চতুর্থ পর্ব) || মঈনউল ইসলাম - January 9, 2021
- নেত্রকোণার নামকাহন (তৃতীয় পর্ব) || মঈনউল ইসলাম - October 9, 2020
COMMENTS