কুকুরের বিচির গন্ধ ছড়িয়ে শীত হামাগুড়ি দিতে দিতে চলে যায় নদীর দিকে || সত্যজিৎ সিংহ

কুকুরের বিচির গন্ধ ছড়িয়ে শীত হামাগুড়ি দিতে দিতে চলে যায় নদীর দিকে || সত্যজিৎ সিংহ

সিজনের পয়লা বৃষ্টিতে উচিত ছিল উঠানে নেমে খালি জাঙ্গিয়াটা রেখে ধুমসে ভিজি। কিন্তু বয়স হয়ে গেছে তো! চল্লিশ বছরের বুড়াপাকনার সাধ-আহ্লাদ কুকুরের কুকড়া লেজে মুড়িয়ে রাখতে হয়।

সকাল থেকে ‘কাঠল পাকে’ পাখির ডাক শুনতেছি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘অর্ধেক জীবন’ বইয়ে এই পাখির নাম বলছেন ‘চোখ গেল!’ — চোইত মাসের শন শন বাতাস বওয়া সন্ধ্যারাত্তিরে এই পাখি ডাকলে বুকটা ফালাফালা করে দেয়।

এখন সকাল গড়িয়ে দুপুর প্রায়, পাখিটা ডাকতেছে, আর আমি বা আমরা ক্রমশ ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাইতেছি সন্ধ্যারাত্তিরের হু হু হাওয়ার দিকে।

ধুম বৃষ্টির মধ্যে আমার জন্ম হয়েছিল, সেজন্য কী তার প্রতি আমার এত মায়া, মুগ্ধতা!

গোটা শীত কেটেছে চাবুক-খাওয়া মুমূর্ষু কুকুরের মতন। কোন-এক শালারপো লিখেছিল, শীত নাকি সুন্দরী সুপর্ণার সহোদরা! আমার ক্ষমতা নাই, নাহলে লিখতাম, কুকুরের বিচির গন্ধ ছড়িয়ে শীত হামাগুড়ি দিতে দিতে চলে যায় নদীর দিকে। অথবা লিখতাম, বর্ষা শেষ হওয়ার পরপরই শহরের টাউট-বাটপাররা গ্রামের দিকে চলে আসে, একেবারে নিরেট গদ্যের ভাষায়। বৃষ্টি দিতে দিতে মহাসাগরের বুকে ভেসে গিয়ে এক বিকেলে উঠলাম ওয়েস্ট পাপুয়ার নিবিড় সাগরতীরবর্তী গ্রামে, এইটা খোয়াবে দেখেছিলাম কোনো-এক মাঘমাসী কুকুরগন্ধী বিকেলবেলা, ভাতঘুমের সময়। আজ অবধি সেই খোয়াবের বিকট ঘ্রাণ গোলাপফুলে রূপান্তরিত হতে হতে পিছুটান ছাড়েনি।

এই যে দুপুরবেলা, গত রাতের বৃষ্টির পর, এখন ‘কাঠল পাকে’ পাখি ডাকতেছে, দোয়েল ডাকতেছে, বুলবুলি ডাকতেছে, বাতাসে শিস দিতেছে টুনটুনি, কাঠবিড়ালি একটাকে দেখতেছি মন্দমন্থর চোখে ভুরভুর করে মাটি থেকে বের হওয়া ‘মাটিয়াপোকা’ দেখতে দেখতে ঝিমোচ্ছে, বাঁশঝাড়ের ভেতর তার ছানাপোনাদের নিয়ে বাঁশমা তুমুল কলরবে বাতাসের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করতেছে —

এইসব এইসব দেখতে দেখতে বুঝি দুপুর পেরিয়ে সায়াহ্ন চলে আসে। আহ জীবন!


সত্যজিৎ সিংহ রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you