হারাতে-বসা হাওরের দাগ ও খতিয়ান || পাভেল পার্থ

হারাতে-বসা হাওরের দাগ ও খতিয়ান || পাভেল পার্থ

জলের তরে কই গো কথা
প্রাণের তরে কই…

টুপটাপ জলের নিদান ঝুঁকে আছে মায়ার জাঙ্গালে। দিঘল পাথারে ঢলে পড়ে মেঘের দোয়াত। হিজলের ছায়ার স্মৃতি করতলে নিয়ে উঠে আসে এক নিহত শামুক। শামুকের খোলে প্রেমের মায়া গুলে হাওর ব্যাপিয়া দাঁড়ান এক বিমুগ্ধ কবি। পাঁজরে শান দিয়ে হারানো খাগের কলম। ভাটিবাংলা সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের শামস শামীম। রক্তে যার হাওরের মাতম, নেশায় যার উথাল হাওর।

দেশের ছয় ভাগের এক ভাগ জুড়ে হাওর জলাভূমি। রাতা, গচি, বইয়াখাউরি, সমুদ্রফেনার মতো গভীর পানির ধানের আঁতুড়ঘর এই অঞ্চল। দূরবীণ, শীতালং, রাধারমণ, হাসন, করিম, প্রতাপ, উকিল মুন্সী জলের দাগ থেকে এখানে খুঁজে পেয়েছেন গীতল কুসুম। নানিদের নাভিতে এখানে ঘুমায় কুড়া পক্ষীর ডিগবাজি। দুনিয়ার খাদ্য, পরিবেশ ও সংস্কৃতির সুরক্ষায় নিরন্তর অবদান রেখে যাওয়া হাওর চির-অবহেলিত এক অঞ্চল। এখানে বরাবর উন্নয়নের নির্দয় রক্তক্ষরণ। শামীম এই রক্তপিছল পথে হেঁটে গেছেন। উদগল থেকে খৈয়ারকোণা, শনির থেকে দেখার কিংবা ছায়ার থেকে শালদীঘা। দমবন্ধ হাওরের আহাজারিগুলো বুঝতে চেয়েছেন।

শামীম তার হাওরের স্মৃতিগুলো ধরতে চেয়েছেন টুকরো কবিতায়। মেলেছেন ৬৪ ডানার উড়াল। শামীমের হাওরের ডানার পালকে জলের যন্ত্রণা আছে, পুরাণের ছলকানি আছে, আছে প্রাণ-প্রকৃতির ডাক। কবিতাগুলিতে হাওর ও হাওরপাড়ের গ্রামবসতিগুলোর স্মৃতিময় নথি আছে। শামীমের ‘হাওর সিরিজ’-এর পেখম আমাদের সাহিত্যকান্দায় জলের ঝকমারি জাগায়। এই জলের দাগ আমাদের উৎসাহিত করে, তীব্র ও কাতর করে। ‘বর্ষায় নাও / হেমন্তে পাও’-এর অভিজ্ঞতাকে অনুবাদ করে।

শামীমের অনুবাদে হাওরের মাটি-জলে আমরাও আমাদের হারানো দাগ খুঁজে দেখতে পারি।


পাভেল পার্থ রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you