শিমুল ফুলের তেজে শীত মরে গেছে। পরিচিত নদীর ওপারে ঋতুর এ-চলে যাওয়াটা চুপ করে দেখি। আত্ম-অন্তরালে এইসব দেখাদেখি নিয়ে পৃথিবীতে মিশে যাচ্ছি। বহতা নদী যেমন দেখি তেমনি মানুষের গমনাগমন রহস্য ও প্রতিবিম্বকেও দেখি। বহুজনে মিশে থাকলেও পৃথিবীটা একা দেখবার জিনিস। জীবনসীমায় অনুভূতিটা চলমান। সেই চলমানতায় দেখে শুনে রাস্তা পার হই। বাঁচি। আত্ম-সমাধির মতো মানুষ আসলে একা। একা মানুষটাই বাঁচার তাগিদে নাটক করে। দিনগুলি-রাতগুলি নাটকের চিহ্নমাত্র।
সময়টা কাঞ্চনের। রমনার ভেতরে প্রচুর কাঞ্চন ফুটেছে। কাঞ্চন ফুটেছে ধানমন্ডির সাজানো-গোছানো বাড়িতে, লেকে। এই সব কাঞ্চনের রূপ গ্রহণ করতে করতে বিকেল পাঁচটায় ডাক্তারের চেম্বারে এসেছি। জন্মমৃত্যুর বৈভবে ডাক্তারখানাও পৃথিবীর আরোগ্য নিকেতন। পৃথিবীতে থাকার বাসনা থাকলে আপনাকে সেখানে যেতেই হবে। বুক ধড়ফড় থেকে পরিত্রাণ পেতে আমিও প্রকৃত ডাক্তারের খোঁজ করছি। কবি মামুন খান ফোনে বললেন : আপনাকে ডাক্তার-কবি হারিসুল হকের কাছে পাঠাবো। কথা বলে রেখেছি। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় আসুন। আনোয়ার খান মডার্ন হসপিটাল, ধানমন্ডিতে (ব্লক এফ, রুম ২০৯) তাঁর চেম্বার।
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই গেলাম সেখানে। ছটার কাছাকাছি ডাক্তার সাহেব এলেন। তিনি ছোটখাটো মানুষ। ধীরে-সুস্থে চেম্বারে প্রবেশ করলেন। তরুণী অ্যাটেনডেন্ট অনেককেই বসিয়ে রেখেছেন। বিখ্যাত ডাক্তার তিনি। কবি। রিসার্চ স্কলার। তাঁকে আবিষ্কার করা গেল তাঁরই ক্ষুদ্র চেম্বারে — শান্ত, শ্যামল, ভাটির মাধুর্যে আস্তে আস্তে কথা বলেন। মুখে হাসি। চশমার পুরু কাচের আড়ালে প্রশ্রয়ী দুটি স্নেহাদ্র চোখ। আমি চেম্বারে ঢুকছি আর চেয়ারে বসে তিনি আমার বিবরণ দিচ্ছেন। সরোজ মোস্তফা, কবি। শিক্ষক। নেত্রকোনায় মগরার সুবাসে থাকেন। তারপর অনেকক্ষণ জিজ্ঞাসা ও বিবরণে চিকিৎসাসেবা থেকে কবি ও কবিতার নানান প্রসঙ্গে ঘুরতে থাকেন। রোগ ও রোগী তুচ্ছ হয়ে কবি ও কবিতার জগৎটাই সামনে চলে এল। আমার সামনে উদ্ভাসিত হলেন সহজ-শান্ত সহজিয়া মনের কবি হারিসুল হক।
.
দুই
শহরে কাঞ্চন ফুটলেও গ্রামে মাটির রাস্তায় কিংবা জলের ধারে এখন ফুটেছে বরুণ। নদী কিংবা হাওরের পারে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ফুটে আছে বরুণমঞ্জুরি। ডাক্তার হারিসুল হককে মনে হলো কবিতার শুভ্ররূপ, বরুণমঞ্জুরি। কাগজের পাতায় তাঁর কবিতা আগেও পড়েছি। আজ বই খুলে খুঁজতে থাকি তাঁর জানালা, কল্পনা, দৃষ্টি ও দর্শন।
কাছাকাছি না-এলে দেখা কী যায় মানবসৌন্দর্য? শান্তস্বরে সজনে ফুলের মতো তিনি ছোট ছোট বাক্যে কথা বলেন। বলার চেয়ে দেখেন। শোনেন। দেখাশোনার প্রসন্ন হৃদয়ে তিনি মানুষের হৃৎ-ডাক্তার। সর্বাত্মায় কবিত্ব। আমি তাঁর নির্বাচিত কাব্যগ্রন্থ উল্টে উল্টে পবিত্র পাখিটিকে খুঁজি, যিনি নিবেদিত চোখে জগৎ দেখছেন।
প্রকৃতিকে ধারণ করে কী যে সুন্দর একেকটি কাব্যগ্রন্থের নাম। ‘আড়ালের মাছগুলো’, ‘ছায়ামাছ’, ‘সময়ের বিশিষ্ট পেরেক’, ‘কাননে মূর্খ কুসুম’, ‘বৃষ্টির মতো বাজে’, ‘আমার সমগ্র চর’ — এই নামগুলোতেই স্পষ্ট আছে কবিত্বের রঙ এবং কল্পনার প্রাচুর্য। বাংলা কবিতার একজন নিষ্ঠাবান পাখি হয়ে তাঁর কল্পনার চরকেই শব্দে-শস্যে সবুজ করছেন। প্রকৃতি নির্ভর নিরঙ্কুশ শব্দগুলোকেই তিনি খুঁজে এনেছেন। মর্তকুসুমের কেন্দ্রস্থলে মানবিক সংস্কৃতিকেই ধারণ করেছে তাঁর কবিতা।
.
তিন
যাপিত জীবনকেই কবিতায় লেখেন কবি। নগরীতে থাকলেও কবির নাড়ি পোঁতা আছে ভৈরবের মেঘনায়। মেঘনার মাটি তাঁর কবি কল্পনা ও কাব্যিকতার উৎস। কাহলিল জিব্রান যেভাবে লেবাননের ভূমি ও পাহাড়কে কবিতায় ধারণ করেন, তিনিও তেমনি মেঘনাতীরের সামাজিক রূপ ও শব্দমালাকে কবিতার পানসিতে উঠিয়ে দেন। কবিতার পাখি তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে। নিত্য মৃত্যুর এই পৃথিবীতে কবিতার পাখি জাগিয়ে রাখেন। সাধনায় রাখেন। কল্পনার শব্দঘর থেকে উঠে আসে বেঁচে থাকার স্বর।
পাখিই আমাকে জাগায় আমি জাগি না
ডুবে যাওয়া কিস্তির মতো তলানি ছুঁয়ে
আমিও ডুবতে থাকি
ঘুমের পুকুরে ঘোরের সায়রে
পাখিই আমাকে তোলে আমি ওঠি না
একেকটা ঘুম আসে স্বপ্নের লোবান জ্বালাতে
ওয়ালেটে থাকে তার পালাবার টিকিট
কোনো কোনো ঘুম আসে বৃষ্টির মতো
ভেজায়-কাঁদায়
অথচ চিহ্ন রাখে না
কোনো কোনো ঘুম আসে কেবল ভাসাতে নিয়ত ভাসাতে
আমি অতলে থাকতে চাই — গহনে ভাসতে…
নাকাল আমি
হাত পাতি… …
বোবাস্রোত উপচে পড়ে নদীর আদলে
ভাসি আমি
টলমল টলটল দুঃখার্ত হাঁস নমিত মস্তকে
দূরেতে ময়ূর নাকি ডেকে ওঠে গোত্রহীন কাকের ননদী
সংকেতে বলছে বুঝি মগ্ন হতে অশীল ক্রীড়ায়
পাখিই আমাকে জাগায় আমি জাগি না
(আমি জাগি কোন জানালায়, ‘সময়ের বিশিষ্ট পেরেক’)
.
চার
যারা পায় কবিতার প্রসাদ, তাঁদের জীবন হয় সহিষ্ণু, মায়াময়, প্রাণদায়ী। গানের স্পর্শের মতো তাঁরা সময়কে, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখেন। নিজেকে জানার চেষ্টায় সমস্ত কিছুকে চাক্ষুষ করেন। সবাইকে রাখেন কবিতার শুশ্রূষায় । নিজেকে জানার, বোঝার, দেখার প্রয়োজনটা ফুরায় না বলেই প্রতিবার এই জানার জগতেই প্রবেশ করতে হয়। ইতিহাসকে, মাটিকে, নদীকে, সময়কে, মানুষকে প্রতিবার নতুন করে জানতে হয়। যে মুক্তবেণী মেঘনার তীরে কবি জন্মেছেন সেই মেঘনাকেই দুচোখে বহন করতে হয়। যদি জিজ্ঞেস করেন কবিত্বের সারকথা কথা কি? তবে তার উত্তর হবে যে নাড়ী কেটে কবি মাটিতে নেমেছেন সেই মাটিতে তলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেই মাটিকে বহন করা। মাটিকে বহন করাই কবিত্ব। কবিত্ব হচ্ছে নিকট পড়শি। লালন ফকিরের গানেই সেই পাখি :
‘কথা কয় দেখা দেয় না—
নড়েচড়ে হাতের কাছে
খুঁজলে জনমভর মেলে না।’
তাই বলে কবি খোঁজাটা থামায় না। এক জনমের খাতায় কবি সেই পরমপাখিকে খুঁজতে থাকেন। খুঁজে যেটুকু পান তাই দিয়ে সময়টাকে, বিচরণকালকে পরশপাথরে রূপায়িত করেন। শব্দের সুন্দরে জীবন্ত থাকে কবির বিচরণকাল। মুহাম্মদ নূরুল হুদা কবি সম্পর্কে বলেন : “সৃজনের উন্মাদনা থাকলেও কোনো উল্লম্ফন নেই কবি হারিসুল হক-এর মধ্যে, তাঁর কাব্যযাত্রা স্বতস্ফূর্ত ও সাবলীল। প্রস্তুতি নিয়েই কবিতার নন্দনকাননে তাঁর প্রবেশ, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা দিয়েই পথে পথে তাঁর নিরন্তর বাঁকবদল। হারিসুল হক যে আপাদমস্তক কবি, সেই অনুভব তাঁর কবিতার কারুকাজে নিহিত। আর এই অনুভবনিচয় হারিসের কবিতাকে করে তুলেছে মহার্ঘ। যথার্থ শব্দ-নির্বাচনে কিংবা ছন্দের স্বচ্ছন্দ ব্যবহার হারিসের কবিতা অনবদ্য। আর একজন প্রকৃত কবির মতোই হারিসুল হক-এর যাত্রা প্রলোভনহীন, স্বচ্ছন্দ। ‘আমি অভিসারে যাবো’ কাব্যের মাধ্যমে যে কবির যাত্রারম্ভ, কবিতার গহীন অরণ্যে একান্তে পথ করে করে তাঁর নিরন্তর নতুন ভাবনা ও প্রকরণ অন্বেষণ। ‘ফিরে চাও পবিত্র পাখি’, ‘জলের পুতুল’, ‘তিরোহিত স্বপ্নের চাদর’, ‘আড়ালের মাছগুলো’ ‘আমার সমগ্র চর’ এর মতো হারিসের প্রায় সব কাব্যে মুদ্রিত আছে অসংখ্য মহার্ঘ কবিতা। এইসব কবিতায় বিমূর্ত সমকাল যেমন বাঙ্ময়, তেমনি ভাবীকালের সত্য অনুভবগুলোও ইঙ্গিতময়। হারিসের কবিতায় আছে ইতি ও নেতির মৈথুন, গ্রাম ও নগরের মিথস্ক্রিয়া, সাধু ও চলিতের বোলচাল, প্রেম ও বিরহের উন্মীলন, এমনকি দৃশ্যমান সত্য ও মিথ্যা বেসাতি। এসবই জারিত হয়ে হারিসুল হক-এর কবিতার রূপায়ণ। হারিসের কবিতায় আছে শব্দের স্বয়ংক্রিয় বিন্যাস ও বোধের অন্তর্লীন পরম্পরা। জয়তু, কবি হারিসুল হক।”
জলের সংস্কৃতির ভেতরে বসবাস করলেই একজন কবি ‘জলের পুতুল’ লিখতে পারেন। এই শব্দবন্ধে শুধু সাংকেতিক মানবসংস্কৃতি নয় আছে সহজিয়া মনের প্রকৃতি। কবির কবিতার কিছু বৈশিষ্ট্যকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি।
- কবির কাব্যসংস্কৃতি আছে বাংলার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী ও হাওরাঞ্চল। নদীমাতৃক এই জনসংস্কৃতির বিশ্বাস, অভিজ্ঞান ও প্রাচুর্য অনন্য ঘোরগ্রস্থ ভাষায় উঠে এসেছে তাঁর কাব্যে।
- বিষয়ভিত্তিক শব্দনির্বাচনে তিনি যথার্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
- আধুনিকতার নামে প্রকনণবাদিতার দিকে ধাবিত হননি তিনি। বিমূর্ততার চেয়ে সহজতামর্ধী কাব্যপথ বেছে নিয়েছেন তিনি।
- তাঁর কবিতায় মেঘনাপাড়ের নদীমাতৃক বাঙালি মনটিই সদাজাগ্রত।
- বাস্তবমুখী কবি তিনি। জীবন ও সময়ের যাপিত দিকগুলো অসংকোচে প্রকাশ করেছেন।
- গীতল কাব্যভাষায় প্রেম ও রোমান্টিকতাই তার কবিধর্ম।
- ছন্দের দৃঢ়বদ্ধ কাঠামো মেনেও তিনি মুক্তগদ্যে সমর্পিত তিনি। গতিমান যৌবনের পূজারি তিনি।
- কবিতায় দুর্বোধ্যতা নয়, জগতের প্রাসঙ্গিকতায়, সরলতায় সমর্পিত তাঁর কবিত্ব।
.
পাঁচ
তাঁর কবিতার রূপ ও প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে সহজেই বলা যায় তিনি এ-মাটির বরুণমঞ্জুরি। বাংলার সহজ স্নিগ্ধ ফুল এই বরুণ। যাকে সহজেই এই চেনা যায়। মাটির কাছাকাছি থাকে বলে যার পাশে সহজে দাঁড়ানো যায়। ছায়া-ঘ্রাণ-সৌন্দর্য সব নেয়া যায়। বর্ণনা ও সাংকেতিকতার অপূর্ব মিশেলে তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। বাংলার প্রতিবেশ। তাঁর কাব্য বন্ধ জানালায় টোকা দেয়ার মতো বর্তমানকে দেখিয়ে সামনের প্রতিবেশ দেখায়। আশাহীন নন তিনি। কবি বলেন :
‘একজন গতায়ু বৃদ্ধের ধূলিমাখা চোখে ভবিষ্যৎ স্থির
শব্দহীন। সংজ্ঞাশূন্য ঠান্ডা পাথর। সে দেখে বড়শিতে
গেঁথে যাওয়া কাতর মাছ অনুনয়রত। ক্লান্ত বিকেলে
ঢুঁ মারে বিষণ্ণ শালিখ বান্ধবহীন একা।
সে খোঁজে আহত স্মৃতি বিস্তৃত প্রায় অরণ্যনির্জনে’ একটা সম্ভাব্য স্বপ্নপথ কবি খোঁজতে থাকেন। এই কথা বলা অকিঞ্চিৎকর হবে না যে জীবনের রুক্ষ দিকগুলোকে অসংকোচেই প্রকাশ করেছেন তিনি কিন্তু বেশি প্রকাশ করেছেন গন্তব্যের সত্যপথ।
.
ছয়
কবি নিজেই বলেছেন তাঁর পূর্বপুরুষ কবিয়াল ছিলেন। সহজধর্মে ছিল তাঁদের আত্মীয়তা। কবিতাটা অনেকটা আত্মজিজ্ঞাসার মতো। কবিতাটা অনেকটা নিজের কবিধর্মকে খোাঁজ চেষ্টা। যে রক্ত তাঁর ধমনিতে প্রবাহিত এই রক্তে নেই ঢালতলোয়ারের কারবারি। জ্যোৎস্নারাতে কাব্যস্বভাবে তারা ছিলেন সুরের কারবারি। সেই সুরের দেশের, সুরের পূর্বপুরুষের জীবনাখ্যান তুলে ধরেছেন ‘আমার পূর্বপুরুষ’ কবিতায়।
আমার পূর্বপুরুষ কেউ কি ছিলেন কবিয়াল
পুষতেন টিয়া ময়না কিংবা হরিয়াল
কখনো দেখেছেন কি কেউ সুবোধ ঘড়িয়াল
তাঁদের ছিলো না তো ঢালতলোয়ার
আমার পূর্বপুরুষ কেউ কি ছিলেন কবিয়াল
হররোজ ফোটাতেন কৃষ্ণগোলাপ
বাগানে দু’কান পেতে শুনতেন বৃক্ষের নিঃশ্বাস
তাঁদের ছিলো না সময় গা পাতবার
আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন কি কেউ স্মৃতিভুক প্রাণী
বিস্মরণের ঝুলি ঘেঁটে করতেন কড়ি আমদানি
দহনের কষ্টনিচয় ঢেলে গড়তেন ভাবনার পুঁজি
তাঁদের ছিলো না শক্ত তর্জনি
আমার পূর্বপুরুষ ছিলেন কি কেউ শব্দের কারবারি
বনানীর কাছে ছিল যার আকণ্ঠ ঋণ
কাব্যসভায় যে ছিল জ্যোৎস্নাবিদ্ধ ছন্দের হীরামন
তাঁদের ছিলো না কোনো বিত্তের ঝকমারি
আমার পূর্বপুরুষ কেউ কি ছিলেন কবিয়াল
(আমার পূর্বপুরুষ, ‘ফিরে চাও পবিত্র পাখি’)
আধুনিকতার নামে কবিতাকে তত্ত্বধর্মী করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি নিজের কবিতাই লিখতে চেয়েছেন। কবিতার দুর্বোধ্যতা কিংবা সুবোধ্যতা নিয়ে তিনি কখনো মাথা ঘামাননি। সময়ের হালচাল কিংবা তাত্বিকতার সূত্রধরেও কবিতার জমিনে প্রবেশ করেননি। তাঁর কবিতা এই মাটির প্রতিধ্বনি; চিত্রধর্মী জীবনের প্রাকৃতরূপ। আমি বলি প্রকৃত কবিতায় একটা শাশ্বত সরলতা থাকে। সেই সরলতা সবাইকে ডাকতে থাকে। কবিতার সেই সারলিক ঘর, দার্শনিকতা, সুন্দরের প্রাধুর্যতা মন ভাল করে দেয়। আসুন মন ভালো করে দেয়া একটি কবিতার শান্তি নিয়ে এই লেখাটা শেষ করি। দৃষ্টি ও বিশাল চোখের আকাশ নিয়ে কবি ভালো থাকুন। জয়তু কবি হারিসুল হক।
সর্বস্ব খুইয়েছে যে তার কোনো ঠিকানা থাকে না
থাকে না ফেরার পথ পেছনে বা পাশে
সে হাঁটে ঘোরের মধ্যে নিজেকে হারাতে
সে বাঁচে মুক্তমাছের মতো অবাধ বিস্তীর্ণ জলাতে
সে বাঁচে নিষ্কম্প চিত্তে বিরুদ্ধ বাতাসে
সর্বস্বান্ত যে তার থাকে না প্রত্যাশা
অরণ্যের নিরুত্তাপ-নির্জন তার যুৎসই উপমা
গোছানো বাগানে যেন খাপছাড়া মূর্খ ভালুক
উদোম তিমির মতো বেখাপ্পা সে গার্হস্থ্য পুকুরে
তামাদি মুদ্রার মতো মূল্যহীন। কেউ রাখে না পকেটে
এ যেন কাঁচাবাঁশ। বাঁশিও হবে না যা দিয়ে
মেঘাচ্ছন্ন রাতে চাঁদ শুধু পালিয়ে বেড়ায়
সর্বস্বান্ত যে
তার চাঁদ চোখ মুদে থাকে চিরকাল
ক্ষুধার্ত কাকের ডাকে ঘুম ভাঙে তার
সে দেখে ছাদ ভেঙে নেমে আসছে
কয়েকটি মেঘ। শতছিন্ন। দলছুট। বিবর্ণ
অন্ধপথ ডাকে তাকে ঘোর অন্ধকারে
(সর্বস্ব খুঁইয়েছে যে, ‘ফিরে চাও পবিত্র পাখি’)
- ডাক্তারের চেম্বারে কবিদর্শন ও বরুণমঞ্জুরি || সরোজ মোস্তফা - March 9, 2025
- আলাপচারিতায় ছত্তার পাগলার অনুসন্ধান ৩ : ছত্তার পাগলার গীতাখ্যকবিতার অনুলিখনকার || সরোজ মোস্তফা - February 26, 2025
- ভরা চান্নির উপত্যকায় কাব্য ও কথকতা || সরোজ মোস্তফা - October 30, 2024
COMMENTS