এতিমের জীবনকথা || ফাইয়াজ বিন নুর

এতিমের জীবনকথা || ফাইয়াজ বিন নুর

বইটির স্টোরি একটি এতিম শিশুর লাইফস্ট্রাগল নিয়ে। মানবজীবন কখন কার কীভাবে কোনদিকে কোন রূপ ধারণ করবে কারোরই জানা নেই। একটি এতিম হয়ে উঠতে পারে অনেক ধনসম্পদশালী, আবার ধনসম্পদশালী কোনো-একসময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারে এতিমদের মতোই।

হ্যারল্ড রবিন্স-এর ‘নেভার ল্যভ অ্যা স্ট্রেইঞ্জার’ বইটি এমনই এক ব্যক্তির স্ট্রাগল করে বেঁচে থাকার জীবনকাহিনি তুলে ধরবে পাঠকের কাছে। হ্যারল্ড রবিন্সের লেখায় অশ্লীলতা পাওয়া যায় বলে একটা কমপ্লেইন খুব শুনে থাকব। কথিত অশ্লীলতা কমবেশ সব লেখকের লেখাতেই পাওয়া যায়, ম্যুভি/বই/নাটক যা-ই হোক পাঠক/দর্শক তা কীভাবে নিচ্ছেন এটাই হচ্ছে বিষয়।

যা-ই হোক, হ্যারল্ডও আলোচ্য বইটায় অন্য অনেকের মতো অশ্লীলতা তুলে এনেছেন অনেকটাই, তবে শিক্ষনীয় বিষয়গুলাও কম দ্রষ্টব্য নয়। পুরুষ মানেই কাজ, কাজ মানেই পুরুষ। এটা ছিল বইয়ের মূল বিষয় যেখানে লেখক এতিম শিশুটির বাস্তব জীবনচলার পথে প্রতিটি বিষয়ই তুলে ধরেছেন; একদম শৈশব থেকে শেষ অব্দি। পথচলায় কিছু সঞ্চিত হয় স্মৃতি, কিছু মুছে ফেলতে হয়, কিছু সারাজীবন ছায়া হয়ে যায় যার মধ্যে আনন্দ-বেদনা থাকে বিদ্যমান। বলা হয় কোনো কাজই ছোট নয়, এবং ছোট থেকেই মানুষ বড় হয়। হ্যারল্ড সেই এতিম শিশুর জীবনচলার সারাপথ জুড়ে এটাই বর্ণনা করে দিয়েছেন বইয়ের সব কারেক্টারের মাধ্যমে।

সৃষ্টির এতিম/অনাথ শিশু অথবা মানুষ, যারা স্বেচ্ছায় এতিম হয়ে পা রাখেনি মাটিতে, যারা সাধারণ মানুষদের মতোই সাধারণ মানুষ, তবে শ্রেষ্ঠ সাধারণ মানুষেরা আপাতত তা মেনে নিচ্ছে না নিজেদের মানসম্মানে আঘাত লাগার বিষয়টি চিন্তাভাবনার কারণে। ভিন্ন তো নয়। ভিন্ন হওয়াটা পরিবেশই নির্ধারণ করে দিচ্ছে পৃথিবীর মাটিতে পা রাখার পর এবং করে দিচ্ছে তাদের স্বার্থপর, কেউ হচ্ছে খুনি, কেউ কালোবাজারি ব্যবসায় কিংবা অন্ধকার পথ ধরে হচ্ছে ধনী, আর সেই সূত্র ধরেই চলছে মানুষটার জীবন, মৃত্যুর পর তার রেখে-যাওয়া পরবর্তী প্রজন্মের শরীরেও তো তারই রক্ত বইছে।

এ-রকম হাজার হাজার এতিমেরই বাস্তব জীবনকাহিনি যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ারও বাইরে, হ্যারল্ড রবিন্সের আলোচ্য বইটায় ক্যাপ্চার করা হয়েছে। এতিম-অনাথদের জীবনদুর্দশা আর তাদের জীবনজয়ের পথে কেউ তাদেরকে সত্যিকার অর্থে মমতাতাড়িত অনুভব করেছেন, কেউ করেছেন সাহায্য, কেউ তাদের জীবনী তুলে ধরেছেন মানুষের কাছে, কেউ ফেলেছেন দুইফোঁটা আঁখিজল, আর যা এড়িয়ে চলা হয়েছে সবসময়ই তা হচ্ছে তাদের প্রতি কিছু সুন্দর ব্যবহার, সর্বোপরি তারাও মানুষ অন্য সমস্ত মানুষের মতোই। যেহেতু তারাও মানুষ সাধারণ মানুষদের মতোই, তাই বাস্তব জীবনে বই পড়ে পাঠক হিসেবে আর দর্শক হিসেবে রাস্তাঘাটে তাদের দর্শন মিললে এই প্রাপ্য সামান্য মৌলিক অধিকারটুকু তারা তাদের মতো সাধারণ মানুষদের কাছে থেকে পাবার যোগ্য অবশ্যই।

বইটি পাঠকদের অনুভূতিতে সাড়া দেবে এ-রকম আরও অনেক বিষয়বস্তু নিয়ে। হ্যারল্ড রবিন্সের প্রতি শুরু থেকে একটা খারাপ মনোভাব জন্মালেও, বাস্তব জীবনের কিছু বিষয় তুলে ধরার কারণে শেষ অব্দি পড়ে ভালোই লাগবে বইটা আশা করি।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you