সালতামামির ক্যাল্কুলেশনকালে মিউজিকে বেশি রোজগারপাতি হয়েছে এমন শিল্পীর একটা তালিকা প্রায় সব পত্রিকা বাইর করে বছরের অন্তিমের দিকে, এইটা বাংলায় নয় ইংলিশে গানবাজনাজাগতিক প্রায় রীতিই হয়ে উঠেছে, এর মধ্যে প্রভাবশালী মিডিয়াহাউসের তালিকা নানা কারণেই দৃষ্টি কাড়ে দেশদুনিয়ার মিউজিকফ্যানসার্কেলে। এবারকার বছর-অন্তিমে এরই মধ্যে বেশকিছু পত্রপত্রিকা তালিকা বানাইতে লেগে গেছে, কেউ কেউ প্রকাশও করেছে। সেইসব তালিকার খবরাদি নিয়া আলাদা অ্যানালিসিস হতে পারে। এইখানে আমরা শধু ‘ফোর্বস্’ ম্যাগাজিনের যেই ইনভেস্টিগেশনজাত খবর বেরিয়েছে সেইটা জানব।
‘ফোর্বস্’ প্রতিবছরের মতো এইবারেও তাদের বাজারতদন্তের ভিত্তিতে একটা তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে। সেই বাছাইয়ের তালিকায় শীর্ষ দখল করে আছেন দেখা যাচ্ছে কেটি পেরি। গত বছরের জুন থেকে এই বছরের জুলাই পর্যন্ত সংগীতকর্মকাণ্ডে কেটি পেরি তিরাশি মিলিয়ন ইউএস ডলারের মতো উপার্জন করেছেন। অ্যানুয়্যাল র্যাঙ্কিং অফ দি বেস্ট-পেইড উয়োমেন ইন মিউজিক অনুসন্ধানের রেজাল্ট প্রকাশ করতে যেয়ে ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস্’ খবরটি দিয়েছে। এই শীর্ষ দখলের লড়াইয়ে কেটি পিছে ফেলে এসেছেন টেইলর স্যুয়িফট এবং বিয়োন্সের মতো জনপ্রিয় সংগীততারকা পার্ফোর্মারদের। ‘ফোর্বস্’ জানাচ্ছে, টেইলরের নেট আয় এইটি মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং বিয়োন্সের সিক্সটি। কিন্তু কণ্টক একটা আছে বটে, সেইটা হচ্ছে যে এই ইনকামের হিসাবটা করার সময় পর্যন্ত করপ্রদান বাকি আছে। এইটা প্রিট্যাক্স আর্নিং এখনও। কর জমা দিয়া আয়রোজগারের অঙ্কটা খানিক কমবে ন্যাচারালি। কিন্তু কমলেও কত কমবে আর? বড়জোর বাথটাবভরা পানি থেকে এক-দেড়টা আঁজলা কমবে হয়তো।
খবরটা পাক্কা কি না তা তো অত ক্রসচেক করে দেখবার মুরদ এই বঙ্গপ্রতিবেদকের নাই, কিন্তু ‘ফোর্বস্’ অনুসন্ধানটা চালায়েছে এক্সপার্ট মার্কেটসার্ভেয়িং অ্যাজেন্সি নিয়েল্সেনের জরিপ, মিউজিকব্যবসায় নিয়োজিত কিছু ইন্সাইডার সোর্স আর নিজেদের ম্যাগাজিনের এস্টিমেইট ইত্যাদি মিলিয়েজুলিয়ে। এমনিতে কেটি পেরি তো জনপ্রিয়ই বিশ্বজুড়ে, তবু গত একবছরে কেটির ক্যারিয়ারে একটু হলেও মুর্গিঝিমুনি সিচ্যুয়েশন লক্ষ করা যাচ্ছিল। ‘ফোর্বস্’ ম্যাগাজিনের সর্বোচ্চ-উপার্জন-করা নারী মিউজিকশিল্পীর তালিকায় শীর্ষস্থান কেটি পেরি পেয়ে যাওয়ায় কিছুটা ছানাবড়া আঁখি নিয়া সাংগীতিক মার্কেটবোদ্ধারা তালিকাটা খুঁটিয়ে দেখছেন।
অবশ্য যদি কেউ ভাবেন যে ক্যাশ ইনকামটা পেরি আর্ন করেছেন তার রিসেন্টলি-রিলিজড ফিফথ স্টুডিয়োঅ্যালবাম ‘উইটনেস’ থেকে তাইলে ভুল করবেন। ‘উইটনেস’ মার্কেটে এসেছে ২০১৭ জুন মাসে। একহপ্তার মধ্যে অ্যালবামটা বিলবোর্ড-২০০ চার্টের টপ থেকে তেরো নাম্বারে ড্রপ করে। তা সত্ত্বেও অন্য কয়েক দেশের চার্টে এর অবস্থান মজবুতই ছিল এবং দিনশেষের হিসাবকিতাবে অ্যালবামটা অ্যারাউন্ড আটলক্ষ চল্লিশহাজার কপি বিক্রি হয়েছিল ওয়ার্ল্ডোয়াইড। তুলনায় টেইলর স্যুয়িফটের ২০১৭ নভেম্বরে বের-হওয়া অ্যালবাম ‘রেপ্যুটেশন’ বিক্রি হয়েছে ৪.৫ মিলিয়ন কপি। কাজেই, আশ্চর্য নয়, ফিমেইল সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কেটি শীর্ষ উপার্জনকারীর বার্ষিক তালিকায় স্থান পাওয়ায় কিছুটা ছানাবড়াচক্ষু হয়েছে দেশদুনিয়ার শ্রোতাভাইবোনবন্ধুরা।
না, অ্যালবাম বিক্রি থেকে তো নয়, পেরির বাল্ক আর্নিংটা এসেছে অ্যাকচুয়্যালি কন্সার্টগুলো থেকে। আরও নির্দিষ্ট গলায় বললে, পেরির আয়ইনকামের সিংহভাগ এসেছে ‘উইটনেস ট্যুর’ থেকে। এক নয় দুই নয়, আশিটা শো করেছেন কেটি এবং শোপ্রতি নিয়েছেন অ্যারাউন্ড ওয়ান মিলিয়ন যুক্তরাষ্ট্রীয় ডলার। ‘ফোর্বস্’ এই সংবাদটা জানাচ্ছে আমাদেরে। এছাড়া আছে ‘অ্যামেরিক্যান আইডল’ অনুষ্ঠানে গেল বছরে এবিসি টেলিভিশনে জাজ হিশেবে প্রেজেন্স থেকে পাওয়া টাকাকড়ি। ইনকামটা ক্যাল্কুলেটরে ফশ করে গোনার মতো অত অল্পও নয় কিন্তু! কুড়ি থেকে পঁচিশ তো হবেই, মিলিয়ন, ইউএস ডলারে।
এই এক নয়া ব্যাপার দেখা যাচ্ছে এখনকার মিউজিক অ্যারেনায়। ডেব্যু হয়েছে এমন শিল্পীরাও বর্ষশেষের গণনায় মিউজিকের চেয়ে নন-মিউজিক খাতের পার্ফোর্ম্যান্স দিয়া কামাইরোজগার করছেন তুলনায় বেশি। আগের দশক পর্যন্ত ঘটনাটা ঘটত শিল্পীদের ক্যারিয়ার পাকাপোক্ত হয়ে গেলে পরে। তাও তো সবার নসিবে নন-মিউজিক আইটেম দিয়া আয়ইনকাম করা কালেভদ্রেও জুটত কি না খুঁজতে হবে। এখন তো ইউটিউবহিট দিয়া, অ্যাডভার্ট দিয়া, আনকোরা আগন্তুকও ধুমিয়ে পয়সাপাতি কামাইতে পারে। এখনকার মিউজিশিয়্যানরাও নগদপ্রাপ্তির আশায় গানবাজনা খানকয়েক করেই ছুটছেন অসাংগীতিক অন্যান্য উৎস হইতেও পয়সা হাতাইতে। স্টেজশো তো রোজগারের সাংগীতিক উৎসই, মেইন উৎস বলব। স্টুডিয়োঅ্যালবাম বরঞ্চ মঞ্চে পসার বাড়াইবার হাতিয়ারই ছিল আগে। এবং ভাইস-ভার্সা। আজকাল টিভিস্টুডিয়োয় বা রেডিয়োস্টেশনে লাইভ ইভেন্টস্, ইউটিউবশোতে প্রেজেন্স, গেস্ট অ্যাপিয়্যারেন্স, বইপ্রকাশ বা ব্র্যান্ড পার্টনার্শিপ ইত্যাদি বিচিত্র মওকা সামনে এসেছে শিল্পীদের রুটিরুজির। শিল্পীরাও ভালোই ইস্তেমাল করছেন মওকাগুলার।
‘ফোর্বস্’ পরিচালিত ও প্রকাশিত সর্বোচ্চ উপার্জনকারী নারী মিউজিশিয়্যান আর্টিস্টের পূর্ণ তালিকাটা আমরা নিচে একনজর দেখে নিয়ে ২০১৮ সমাপ্তিমাসে নেক্সটকামিং দিনগুলায় সার্প্রাইজিং কিছুর অপেক্ষায় থাকতে পারি।
‘ফোর্বস্’ জরিপ : পূর্ণাঙ্গ তালিকা
১. কেটি পেরি ($৮৩ মিলিয়ন)
২. টেইলর স্যুয়িফট ($৮০ মিলিয়ন)
৩. বিয়োন্সি ($৬০ মিলিয়ন)
৪. পিঙ্ক ($৫২ মিলিয়ন)
৫. লেডি গাগা ($৫০ মিলিয়ন)
৬. জেনিফার লোপেজ ($৪৭ মিলিয়ন)
৭. রিহানা ($৩৭.৫ মিলিয়ন)
৮. হেলেন ফিশার ($৩২ মিলিয়ন)
৯. সেলিন ডিওন ($৩১ মিলিয়ন)
১০. ব্রিটনি স্পিয়ার্স ($৩০ মিলিয়ন)
প্রতিবেদনকারী : বিদিতা গোমেজ
… …
- শৈলিন উডলির কথাগুলি (৭) - August 11, 2019
- কেইটের কথাবাত্রা (১০) - July 25, 2019
- টিল্ডা টোল্ড (২) - May 12, 2019
COMMENTS