বেশ বিলম্বেই শুরু হলো বৈশাখ ব্যক্তিগত, অনিবার্য দুর্যোগবশত দিরং, করার কিছুই ছিল না বস্তুত। রোগব্যাধি-বিপদাপদের সাইরেন যন্তরখানা তো উইকেড খুবই, চিরদিনই, বিশেষ বলেকয়ে আজ্ঞা-অনুমতি নিয়ে সে আসেও না, আসে যখন আর যাইতেও চায় না। সাতিশয় হারামজাদা ব্যাধি-বিপদাপদ নিয়া কাজেই দ্বিতীয়রহিত মজাদার এমন মানবজনম কোনোমতে কেটে যাবে। এই নিয়া ভাবনার কিছু দেখি না। অ্যানিওয়ে। বহনযোগ্য বালা-মুসিবত আসুক অল্পবিস্তর উহাতে তেমন আপত্তি নাই, কিন্তু কুইনাইন গলাধঃকরণ পর্বান্তে যেন হোমিওপ্যাথি শিস-দিবার-বাঁশিবৎ শিশি থেকে এত্তটুকুনি মিষ্টি গুল্লিগুলোর ফুর্তি থাকে সকলের প্রাণে — এইটুকু শুধু দোয়া। তাছাড়া যা চাইবার তা এ-ই যে, নিজে গাইতে তো জানি না, তাক্কত নাই গাইবার, কিন্তু কয়েকটা ভালো গান অন্তত শুনতে যেন পাই, কিছু সুন্দর দৃশ্য ও সমুদয় দৃশ্যাদৃশ্য অবলোকনের নয়নজোড়া; আর, আন্তর ক্ষুধাটুকু যেন না-হারাই, জীবনতেষ্টাটা টাগরায় চাই। কিছু অনবদ্য ও অনুপম সিনেমা উপভোগস্কোপ, দোয়েলদিদৃক্ষা, কিছু লেখাপত্তর পড়তে পারার মওকা — এইসব কায়মনোবাক্য দোয়াদুরুদ নিয়া আমার নতুন বছর শুরু। ও হ্যাঁ, একটু পয়সাপাতিও তো দরকার। হয়া যাবে, নিশিদিন ভরসা রাখিস, ওরে মন, ব্যবস্থা একটা হবেই। নিজের জন্য রচিত দোয়া চারপাশের সমস্ত রোরুদ্যমান জিন ও ইনসানের জন্যও প্রযোজ্য। বলা বাহুল্য। সকলের শুভ হোক। শুভস্য শীঘ্রম্, শুভস্য বিলম্বম্! শুভ নববর্ষ!
২
নয়নে হেরিনু অন্ধকার সহসা বৈশাখপ্রাতে, গেনু বদ্যিবাড়ি তড়িঘড়ি, জানিলুম মুসিবতখানার নাম, ভুগিলুম টানা আধহপ্তা আস্ত, তন্মধ্যে চারদিন ছিনু অলমোস্ট ব্ল্যাকাউট, ঘটনা বাঁ-নয়নে ছিল যদিও, বদ্যিলিখিত পয়সার বিনিময়ে প্রাপ্ত সন্দর্ভপত্তরে উহার নাম জানিনু : কর্নিয়াল ইরোশন সিন্ড্রোম। উইকেন্ড অন্তে কর্মালয়ে যেতে আশা করি পারব। ভুগিনু বহুদিন, বহুদিন পরেও বটে, বহুদিন এত লম্বা কাল কাটাই নাই গৃহান্তরীণ। তবে এইটা আরেকবার বুঝতে পারলাম যে, সব মুসিবতেরই একটা গ্যুড সাইড থাকে, এমনকি অসুখবিসুখেরও। ধরুন আপনি অসংখ্য মানুষজনের সঙ্গে কানেক্টেড, তাদের জন্য কিছু করুন বা না-করুন কানেকশন তো গড়ে ওঠে আপনার অজান্তে। আপনি মানুষের জন্য শুভকামনা করুন বা না-করুন, মানুষ কিন্তু আপনাকে নিয়া ভাবে, আপনার ভালো হোক চায়, আপনার শুভঘটনা কামনা করে। এইটা আমি বিশ্বাস করি। এমনকি আপনার শত্রুও তো আপনার বিপদে-ব্যামোতে আপনার জন্য পস্তায় একবার হলেও। কবীর সুমনের একটা গান শুনসিলাম জীবনের শুরুর দিনগুলায়, গানটা মহাসংগ্রাম নামে একটা সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছিল সম্ভবত, কয়েকটা লাইন ছিল এ-রকম : “ভাবছ তুমি ভাবনা তোমায় ডাকছে কাছে / তোমার জন্য আমার মনেও ভাবনা আছে” … ইত্যাদি; এই গানের কথাগুলো সত্যায়িত করা যায় ব্যামোয়/বিপদে পড়লে। দেখা যায় তখন কত লোক এমনকি আপনার মতন তুচ্ছ ও তৃণতুলনীয় লোকেরে নিয়াও ভাবে, আপনার জন্য দোয়া খায়ের করে ইত্যাদি, আপনার কুশলকল্যাণ কামনা করে। অথচ আপনি হয়তো উল্টাটাই করসেন তাদের জন্য। অসুখের কালে এইসব বোধোদয় হয়। একটু থমকে পেছন ফিরা তাকায়ে দেখার ফুরসত পায় মানুষ। কাজেই অসুখবিসুখ অভিশাপই নয় কেবল, উল্টাটাও সত্য। মনে হচ্ছিল এইসব, আরও বহুকিসু, রোগশয্যায় নির্জীব শুয়ে থেকে। অ্যানিওয়ে। পূর্বদিগন্তে সুর্য উঠসে শেষপর্যন্ত। বরং একটু বেশি মাত্রায় আরশে উঠসেন সূর্যদেব, নবোদ্যমী যুবা যেন, দুনিয়া মিসমার হয়া যায় এমনই সেই রইদের তজল্লা। স্কাই ইজ ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। দখিন হাওয়া আছে নাকি নাই, তা এক্সামিন করে দেখবেন আপনাদের মতন প্রেমিকপ্রেমিকারা। অ্যানিওয়ে। লেটস্ গেট ব্যাক টু ওয়ার্ক। উল্লাস!
— জাহেদ আহমদ / এপ্রিল ২০১৪
বৈশাখোৎসব, বিবর্ণা জার্নাল থেকে
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS