ইন্ডি মিউজিকের ঢাকা : বঙ্গাব্দ ১৪২৫  || শফিউল জয়

ইন্ডি মিউজিকের ঢাকা : বঙ্গাব্দ ১৪২৫  || শফিউল জয়

ইন্ডি বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিকের ঢাকাদশা জানার জন্য গত দুই জুন শনিবার আলাপ হয় মোহাই, সিঞ্জান আর জাওয়াদের সাথে। জাওয়াদ আর মোহাই দ্য অ্যালুনিজ গ্রুপের সদস্য। আর সিঞ্জান-জাওয়াদ ব্লান্ডারওয়্যার ব্যান্ডমেট। এছাড়াও তিনজন বেশ কয়েকটা ইন্ডি প্রোজেক্টের মেম্বার।

এই সাক্ষাৎকারে তাদের সাথে কথা হইছে ঢাকার ইন্ডি মিউজিকের (Independent Music) দ্রাঘিমাংশ স্পষ্ট করার জন্যে। একসময় রক মিউজিককে ‘অপসংস্কৃতি’ বলা মৃত গোষ্ঠীরা তাদের মৃত্যুর সাথে নিয়ে গেছেন রক মিউজিকও। বলা যায়, সেই প্রস্থানবিন্দু থেকেই এই সাক্ষাৎকারের সূচনা।

Independent Music

প্রশ্ন : নিজেদেরকে রক মিউজিশিয়ান না বলে ইন্ডি মিউজিশিয়ান বলার কারণটা কি? মানে আদর্শিকভাবে  রক মিউজিকের সাথে ইন্ডি মিউজিকের পার্থক্য বা মিলটা কোথায়?

মোহাই :  ইন্ডি মিউজিকের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে যার জন্যে একে রক মিউজিক ঠিক বলা যায় না। সাউন্ডের থেকে এর পেছনের ফিলোসোফিক ডিফ্রেন্সটাই দুইটাকে আলাদা করছে। ইন্ডি মিউজিশিয়ানরা নানা ধরনের চাপ থেকে অনেকটাই মুক্ত। এই চাপ লেবেলের, প্রোডাকশন সিস্টেমের। গানের উপাদানগুলা অনেকটাই এক। যে অ্যাপ্রোচে ইন্ডি মিউজিক উপস্থাপন করা হয়, সেটা রকের থেকে সম্পূর্ণই ভিন্ন। হিপ কালচাররে ধারণ করার জন্যে রক এখন আর যথেষ্ট না।

সিঞ্জান : ইলেক্ট্রিক গিটারের উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। ইলেক্ট্রিক গিটার যখন প্রথম আসলো, তখন কিন্তু গিটারিস্টদের আর শুধু অ্যাকুয়েস্টিক সাউন্ড দিয়ে আটকায়া রাখা গেল না। আর্টিস্টরা দেখল, ইলেক্ট্রিক গিটার দিয়ে আরও সূক্ষ্মভাবে নানাধরনের সাউন্ড তৈরি করা সম্ভব। ইলেক্ট্রনিক কিবোর্ড আসার পর তো পুরা মিউজিকই চেইঞ্জ হয়ে গেল। সাউন্ডের যে ব্যাপক হরাইজনটা আছে, তা নানাভাবে এক্সপ্লোর করা শুরু করল আর্টিস্টরা। আর এর সাথে ধরা যাক, একটা ল্যাপটপও যদি যোগ করা যায়, তাহলে তো নতুন একটা মাত্রা যোগ করতেছে। রক মিউজিক যে ব্রেকথ্রুটা আনছিল, যে লাইফস্টাইলটা দেখাইছিল, সেটাই তো এখন সাউন্ডের এস্টাব্লিশমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রিরও। ফলে অথেন্টিসিটির প্রশ্নটা এসে যাচ্ছে। ইন্ডিকে কিন্তু এই সাউন্ডের, এই ট্র্যাডিশনের চাপটা নিতে হয় না। সাউন্ডের ক্ষেত্রে আরও বিস্তৃত একটা ক্ষেত্র সে খুঁজে দেখতে পারে। আর রক মিউজিক যে কমিটমেন্টটা নিয়ে শুরু করছিল, সেই কমিটমেন্টে তারা থাকতে পারে নাই। এরজন্যে ইন্ডি মিউজিক রক মিউজিকের থেকে নিজেদেরকে আলাদা করে।

জাওয়াদ : রক মিউজিক এখন অনেক ফিক্সড লাইফস্টাইলের মতো হয়ে গেছে। আমি ইন্ডি মিউজিশিয়ান হিশেবে জ্যাজ ট্রাই করতে পারি, ফাঙ্কি জিনিশপাতি যোগ করতে পারি এমনকি হিপহপ এলিমেন্টস নিয়েও এক্সপেরিমেন্ট করতে পারি। রকের ক্ষেত্রে এই ক্ষেত্রটা অনেক সীমাবদ্ধ এই সময়ে আইসা। রকের ক্ষেত্রে যে-ঝামেলাটা হইতেছে যে, এটা খুব জেনেরিক সাউন্ড হয়ে গেছে। একটা ইলেক্ট্রিক গিটারে একটা ডিস্টর্শন টোনে একটা ভার্স, একটা প্রি-কোরাস, তারপর কোরাস — একটা সেট সাউন্ড আগে থেকে তৈরি করাই আছে।

প্রশ্ন : সাউন্ডের ক্ষেত্রে রকারদের অনেকেই কিন্তু এই ধরনের অ্যাপ্রোচ নিছে, নানা জায়গা থেকে মশলা এনে নতুন কিছু তৈরি করার।

সিঞ্জান : হ্যাঁ। কিছুটা তো সেটাই। ধরো, ফিফটিজে যেটা মেইনস্ট্রিম ছিল, তখন রক মিউজিক ছিল সেটার অ্যান্টিথিসিস। এর জন্যেই সেক্স, ড্রাগস অ্যান্ড রক্যানরোল — যেটা অনেক অ্যানার্কিক, আনঅর্থোডক্স। কিন্তু রকের যে অ্যান্টি-এস্টাব্লিশমেন্ট স্পিরিট ছিল, সেটা এস্টাব্লিশমেন্টকে রিপ্লেইস করে ফেলছে আস্তে আস্তে। এখন যদি তুমি সেক্স, ড্রাগস নিয়ে লিখতে চাও, — আর্টিস্টদের কাছে  এটা হবে ফিলোসোফিক্যালি মেইনস্ট্রিম। এটা ধর্মের মতো হয়ে গেছে।

প্রশ্ন : পার্থক্যটা কি তাহলে আসলে প্রোডাকশন সিস্টেমের? গানটা সম্পূর্ণই করা হচ্ছে নিজেদের তত্ত্বাবধানে, শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বটাও নিজেদের, কারণ এস্টাব্লিশমেন্টের ফাঁদে নিজেকে এক্সপ্রেস করতে গেলে কম্প্রোমাইজ করতে হয়। এই পার্থক্যের  ফলে পুরা মিউজিকটাই আলাদা কিছু হয়ে যাইতেছে।

সিঞ্জান :  আমার তো মনে হয় ইন্ডি মেইনস্ট্রিমে গেলে আরও বাড়বে তখন এই প্রবণতা। ধরো, কেউ যদি একটা ডোপ বিট বানায়, তুমি ল্যাপটপে গুতায়াই সেটা বানায়া ফেলতে পারবা। আর পিউরিস্ট হওয়ারও তো কোনো দরকার নাই। সবার কাছে অনেক সুযোগ আছে, সবকিছু খুব দ্রুত আগাচ্ছে। পিউরিস্ট বলতে বুঝাচ্ছি পলিশ সাউন্ডের কথা।

Independent Music

প্রশ্ন : তাহলে ইন্ডিকে আইডিন্টিফাই করা যাচ্ছে কীভাবে সে যদি সবকিছুকেই নিজের ভেতরে নেয়ার চেষ্টা করে? আলাদা করে তো ডিফাইন করতে হচ্ছে।

সিঞ্জান : আমার ধারণা মূল পার্থক্যটা হচ্ছে — মেইনস্ট্রিম বনাম ইন্ডি। মেইনস্ট্রিমের ট্রার্গেট অডিয়েন্স আর ইন্ডির টার্গেট অডিয়েন্স এক না। ইন্ডি আর্টিস্টদের ফ্যানবেইজ সবসময়ই ছোট। লো-ফাই প্রোডাকশন আরেকটা বৈশিষ্ট্য বলা যায়। সিক্সটিজ-সেভেন্টিজে প্রোডিউসারদের সাথে আর্টিস্টদের যে সম্পর্ক ছিল, এখন সেই সম্পর্কটা নাই। আগে দেখা যাইত, একটা ব্যান্ড কোনো আইডিয়া নিয়ে আসলো, প্রোডিউসার সেটাকে বাস্তবায়িত করত। কিন্তু সবকিছু অনেক স্পেশালাইজড এখন, পুরা কাজটাকে আলাদা আলাদা করে ভাগ করা হয়। ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটিতে ডিভিশন অফ লেবারের মতো। হাই বাজেট ফিল্মেও এই প্রবণতা দেখা যায়। একেকটা ডিরেক্টর দিয়ে কাট বানায়া শেষ পর্যন্ত কিছুই দাঁড়ায় না।

জাওয়াদ : ইন্ডির কিন্তু অনেক সাবক্যাটাগরিও আছে। ইন্ডি রক হতে পারে, ইন্ডি ফোক হতে পারে। আর ইন্ডির ক্ষেত্রে আমার কিন্তু টপ নচ প্রোডাকশনের দরকার নাই। মেইনস্ট্রিম মিউজিক পলিশ প্রোডাকশন নিয়ে অনেক মাথা ঘামায়।

মোহাই :  কোনো প্রোডাকশনের ভেতর দিয়ে গেলে আমার গানটাকে প্রোডাক্ট হিশেবেই দেখতে হচ্ছে। মানে মার্কেটের চাহিদাটা আমাকে বুঝতে হবে, সেটা বিক্রি করার চাপটা নিতে হবে। ফলে এক্সপেরিমেন্টাল কিছু করার জায়গাটা কমে আসে। কিন্তু ইন্ডি হচ্ছে আমার যা আছে, সেটা নিয়েই আমি মিউজিকটা করতেছি। যা আর্টের সাথে সরাসরি যুক্ত না, সেটাকে পাত্তা দিলে অহেতুক প্রেশার বাড়ে। মেইনস্ট্রিম প্রোডাকশনের ঝামেলাটা হচ্ছে তারা আর্টের বাইরেও অনেককিছু নিয়ে সচেতন থাকে, যেহেতু তার প্রোডাক্টের বিক্রিটাও দেখতে হচ্ছে। আমি মনে করি, মিউজিকটা নিজেই নিজের স্টেইটমেন্ট। সেটাকে সবার বোধগম্য করার জন্যে অন্য চাপগুলা নিলে অনেক এনার্জি খরচ করতে হয়।

Independent Music

প্রশ্ন : সিঞ্জান, তুমি লেবার ডিভিশনের যে কথাটা বললা — এটা তো যে-কোনো ধরনের ব্যান্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অনেক  বিখ্যাত ব্যান্ড ভাঙছে এই কম্বিনেশনটার অভাবে। প্রোডাকশনের কাজ ভাগাভাগি করতে গিয়ে ক্যাঁচাল লাগছে। আর সলো আর্টিস্টদের অবস্থানটা কই এইখানে?

সিঞ্জান : বাংলাদেশের স্টুডিয়োগুলাতে কাজ করার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। এটা একটু আলাদা। দেখা যায়, স্টুডিয়োতে একটা মানুষই আছে যে সব ধরনের রেকর্ডিং করতেছে। ফলে আমি কিন্তু আমার ফিডব্যাকটা পাচ্ছি না।

মোহাই : আমারও একই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। স্টুডিয়োতে গেছি রেকর্ড করছে, আমাকে চাপ দিতেছে নির্দিষ্ট একটা প্যাটার্নে কাজ করার জন্যে। বলতেছে, এটা বাদ দাও, ওইটা অ্যাড করো। দুই হাজার সাত-আটের দিকে একবার মিক্সড অ্যালবাম করার সময় লেবেল থেকে একটা গানের ব্যাপারে বলল — ‘গানটা অনেক বড় হয়ে গেছে, এটা ছোট করতে হবে হবে। বেশি বড় হয়ে গেলে অ্যালবামে দিতে পারব না’। আমরা পড়লাম ঝামেলায়। পরে আর কী করব, গানের কোনো সেকশন তো বাদ দেয়া সম্ভব না। তারপর উপায় না পায়া টেম্পো স্পিডআপ করে দিলাম ট্র্যাকলেন্থ এক মিনিট কমানোর জন্যে। স্ট্যান্ডার্ড লেবেল বা প্রোডিউসারদের সাথে কাজ করার এই হলো ঝামেলা। স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের দরকার নাই এর জন্যে। কারণ ওইটা মিউজিকের ক্ষেত্রে ক্যাপিটালিস্টিক অ্যাজেন্ডা ছাড়া কিছু না। আর্টের ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করতে চাই না আমি।

জাওয়াদ : সলো আর্টিস্টদের প্রশ্নটাতে আসি। অর্ণব, ফারুক ভাই প্রজেক্ট — এরা কিন্তু সবাই সলো আর্টিস্ট। তাদের কিন্তু ইন্ডির সাথে পার্থক্যটা করতে পারি না। ইন্ডি মিউজিকটার অ্যাপ্রোচটা এমন থাকে না যে, আমার মিউজিকটা সবার কাছে ছড়াইতে চাই। অনেকেই হয়তো এমন আছে আমার মতো করে ভাবে, আমি তাদের নিয়ে আগ্রহী।  সলো আর্টিস্টদের টার্গেট থাকে ম্যাস পিপল।

সিঞ্জান : অর্ণব কিন্তু একেবারে এগুলার মাঝখানে। ওর ভেতরে ইন্ডিও আছে, কিন্তু ও মেইনস্ট্রিমে পৌঁছাইতে পারছে। তবে ও এত্ত বিশাল যে ওকে ইন্ডি বলা যায় না সেভাবে। কালচারের ব্যাপারটা এমন। অনেকে অনেককিছু চেষ্টা করে, কিন্তু একটা ফিট হয় মোটামুটি। ইন্ডির অডিয়েন্সটা অনেকটা কাল্ট বেইজড। দেখা গেল, মিরপুরে পঞ্চাশজন আছে, উত্তরাতে পঞ্চাশজন। এমন না যে আমি চাই না আমার গানও পপুলার হোক, কিন্তু আমি জানি হবে না। এটা কিন্তু সিস্টেমকে বাদ দেয়া না, বরং সিস্টেমটা আমাকে অ্যাডপ্ট করতে পারবে না এটাই মূল কারণ।

Independent Musicপ্রশ্ন : মেইনস্ট্রিম থেকে রিজেকশনের কারণেই কি তাহলে ইন্ডির দিকে টার্ন নেয়া?

মোহাই : আমার ধারণা মূল কারণটা হচ্ছে আর্ট বাদে অন্যকিছুকে গুরুত্ব না দেয়া। কমার্শিয়ালাইজেশনের বৈশিষ্ট্যগুলা নাই দেখেই এটা ইন্ডি। একটা গান তো নিজের বাচ্চার মতো, এটা তো বিক্রির জিনিশ না।

সিঞ্জান : এই ফিলোসোফিক্যাল দিকটা নিয়ে অনেক ভাবছি। মিউজিকটা আসলে কী? আমরা যা অনুভব করতেছি এবং যা করতেছি সেটা মানুষের কাছে পৌঁছানো। বড় আর্টিস্ট যারা আছে তারা স্টুডিয়োতে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করতে পারে। মিউজিকের পলিশনেস তো একটা ওয়েস্টার্ন জিনিশ, এই প্রিটেনশনের দরকার তো নাই। জাওয়াদের একটা গান আছে, ও যেখানে গাড়ির সাউন্ডটা স্যাম্পল করছে। এটা চমৎকার, কারণ যারা ঢাকায় থাকে তারা সবাই পরিচিত এই সাউন্ডটার সাথে, এর ভেতরেই আমরা থাকি।

জাওয়াদ : আরেকটা আছে, যেখানে ফোনের ভাইব্রেশনের সাউন্ডটা স্যাম্পল করা হইছে। এটা আসছে আমার ডে-টু-ডে লাইফ থেকে। সারা সপ্তাহ খুব ব্যস্ত যাচ্ছে,উইকেন্ড পাচ্ছি না। গানটা শেষ হয় ফোনের ভাইব্রেশনের সাথে হ্যালো বলার সাথে সাথে। এটা করসিলাম কারণ আমার ওই যাপনটাকে বোঝানোর জন্যে। মেইনস্ট্রিম মিউজিকে কন্ট্রোভার্সি খুব কম, তারা কনভেনশনাল থাকতে পছন্দ করে। কারণ ব্যবসাটা ভালো হবে তাহলে। এক্সট্রা নয়েজ যে দিতেছি আমি গানে, সেটা মার্কেটে চলবে না। যারা হিট মিউজিশিয়ান হতে চায় তারা কেয়ার্ফুলি নির্দিষ্ট একটা লাইফস্টাইল মেইন্টেন করার চেষ্টা করে। অ্যাপিয়ারেন্স থেকে শুরু করে গেটাপ সবকিছুতেই। সিঞ্জানের কথাই বলি, আমার দেখা সবচেয়ে অ্যাবসার্ড কালার আর ড্রেসে দেখি ওকে। আমিও অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে মাথা ঘামাই না, কিন্তু অনেকের কাছে নিজেকে প্রেজেন্টেবল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

মোহাই :  আমার একটা ব্যান্ডের গান ছিল ‘লেডি ইন রেড’ নামের, অ্যাম্ফেটামিন অ্যাডিকশন নিয়ে। ওই গানের ভেতরে কিবোর্ড সলো আছে একটা, যেটা পেছনে ড্রাগটা চেস করার সাউন্ডটা ছিল। লাইটারের সাউন্ডটা সলোর সাথে মিলায়া দেয়া হইছে। কোনো মেজর লেবেল তো আমাকে এটা করতে দিবে না। এই যুগে মিউজিকটা আসলেই অনেকের কাছে ব্যবসা। মেজর লেবেলরা চেষ্টা করতেছে সেটাকে কর্পোরেট স্ট্যান্ডার্ড, আর ডিসেন্ট লাইফস্টাইলের সাথে মেলানোর জন্যে। ফলে তাদের বিচারে কিছু কিছু জিনিশ ব্যবসার জন্যে ভালো, কিছু জিনিশ ঠিক না। এটাকে আমি ‘প্রস্টিটিউশন অফ আর্ট’ ছাড়া কিছুই বলব না।

সিঞ্জান : সলো আর্টিস্টদের সাথে এটা কিন্তু একটা পার্থক্য। সলো আর্টিস্টরা সচরাচর বিতর্কিত কিছু করতে চায় না। ওরা প্রথমে দেখবে গ্লোবাল মার্কেটটা — ‘আচ্ছা, এই সাউন্ডটা কি বাইরে আছে’?  বাইরের ইলেক্ট্রনিক, ড্যান্স গান গাওয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথেই কিন্তু ওই প্যাটার্নের গান বাংলাদেশে হওয়া শুরু করল। গ্লোবাল চেইঞ্জ আমাদের টেইস্টকে প্রভাবিত করতেছে এবং সলো আর্টিস্টরা সেটাকেই কপি করতেছে।

Independent Music

প্রশ্ন : কিন্তু সবাই কী তাদের গানটাকে বিক্রি করতে চায় না? আর চাইলেই কী পারে?

মোহাই : পার্থক্যটা হইল, কেউ হয়তো বিক্রি করতে পারতেছে এবং বিক্রি করার জন্যেই বানানো হচ্ছে। তুমি একটা ভালো গান বানাইতে পারো যেটা হয়তো বিক্রি হবে, কিন্তু বিক্রি করার জন্যেই গান বানানো — এটা ঝামেলা। আমাদের ফোকাসটা যদি শুধু গানের উপর থাকে, তাহলে এই প্রশ্নটাই আসে না।  আগে থেকে বলাটা তো সেভাবে সম্ভব না, কিন্তু প্রোডিউসাররা কিন্তু হিট এলিমেন্টগুলাকেই রিক্রিয়েট করার চেষ্টা করে স্টুডিয়ো সেশনগুলাতে। এইটিজের সময়কার গেইটেড রিভার্বের স্নেয়ারের সাউন্ডটা অনেক পপুলার হইছিল, সবাই পরে সেটাই করছে। এখন আবার সেটার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তার মানে একটা অ্যাভান্ট গার্ড জিনিশের অবস্থাও এমন হতে পারে। কিন্তু আমি চাই আমার এক্সপ্রেশনটা যাতে অন্যকিছু দিয়ে অ্যাডাল্টারেটেড না হয়, যেটা আগে হয়ে গেছে। পিঙ্ক ফ্লয়েডের প্রথম অ্যালবামের সাউন্ডটার মতো নতুন কিছু। ক্রেইজি! এখানে লিরিক্সের কাজটা হচ্ছে মিউজিককে মানুষের ভাষায় রূপান্তর করা।

Independent Musicসিঞ্জান : গানটা লিখা সম্ভব, কিন্তু স্প্রেড করাটা ঝামেলার। পলিটিক্যাল হেজেমনির মতো কালচারাল হেজেমনি আছে এখানে। একজন বিখ্যাত কেউ হয়তো কোনো গান সম্পর্কে বলছে, ‘এই গানটা ভালো না’। এটার প্রভাবটা হবে ব্যাপক। কে বিখ্যাত হবে আর কে হবে না এটা উপরের মানুষজন ঠিক করে দেয়। বিখ্যাত হওয়া যাবে কী যাবে না এটা কোনো প্রশ্ন না আমার কাছে। জাওয়াদ যদি এমন একটা গান লিখে যেটা হয়তো পপুলারিটি এনে দিবে, সেটা হয়তো হবে কিংবা হবে না। কিন্তু দিনের শেষে নিজের প্রশান্তিটা গুরুত্বপূর্ণ। যারা বিখ্যাত হতে চায় তারা হোক, কিন্তু ইন্ডি আর্টিস্টরা সেভাবে চায় না। সেদিক থেকে দেখলে ইন্ডি মিউজিকটা রক মিউজিকেরই একটা প্রোগ্রেশন। এমন না যে আমরা রক মিউজিক শুনে বড় হই নাই — কিন্তু ওই লাইফস্টাইল, ওই ভাষা আর সাউন্ড এখন মৃত। ইন্ডি আর মেইনস্ট্রিম বা রকের মাঝখানে দেয়াল আছে একটা। আর সেই জায়গাতেই অর্ণব উইয়ার্ড একটা পয়েন্ট। মেইনস্ট্রিমের ধারণাটাই চেইঞ্জ হয়ে গেছে। ঢাকায় তো এখন অনেক ধরনের গ্রুপ। এটা না মানা ছাড়া উপায় নাই যে আমার লাইফ আর পঞ্চগড়ে যে থাকে তার লাইফটা এক না। একসময় হয়তো কানেকশনটা ছিল, গ্লোবালাইজেশনের কারণে মার্কেটটা নানাদিকে ছড়ায়া আগের থেকে আলাদা হয়ে গেছে।

জাওয়াদ : নিজের পছন্দটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন কিছু-একটা করলাম, সেটা মানুষের ভালো লাগলে অবশ্যই ভালো লাগবে। এমন না যে এ-রকম ছোট অডিয়েন্সের কাছেই থাকতে চাই। কিন্তু আমার যেটা ইচ্ছা হইতেছে সেটাই করতে চাই। এটা অন্যদিক থেকেও হতে পারে। এক বড়ভাই আমাকে এসে জিগেস করতেছে —  ‘তোমাদের গানের মধ্যে  সবার জন্যে রেবেলিয়াস মেসেজটা নাই কেন? কী আর্ট করতেছ তোমরা?’ কিন্তু আমার প্রশ্নটা হচ্ছে — আর্টকে এই মেসেজের চাপটা কেন নিতে হবে? আমার জাস্ট একটা অনুভূতি এক্সপ্রেস করতে ইচ্ছা করতেছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাকি সবকিছুর গুরুত্ব নাই আমার কাছে। এমন না যে ইন্ডি মিউজিকে মেসেজ থাকবে না, রক আর ইন্ডি দুইটাতেই রেবেল হওয়ার ব্যাপারটা আছে। কিন্তু রকের বিদ্রোহী মেসেজটা অনেক স্ট্রাকচার্ড হয়ে গেছে।

প্রশ্ন : পলিটিক্যালি যারা অনেক সচেতন, অ্যাক্টিভ — তারা কিন্তু সবসময় একটা মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করে যেটা পলিটিক্যালি ভাইব্র্যান্ট। এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করো? লীলা, সহজিয়া, বা মনোসরণির কিছু গানকেও — স্পেশালি প্রবর রিপনের শেষ গানগুলার কথা বলা যায়।

মোহাই : এটা তাদের স্বাধীনতা যে তারা মেসেজটা পৌঁছাইতে চায়। মিউজিশিয়ান হিশেবে আমি অডিয়েন্সের ইম্যাজিনেশনের উপর আস্থা রাখি। যারা মেসেজ দিতে চায় ডেলিবারেটলি, তারা চায় নির্দিষ্ট একটা মেসেজ পৌঁছে দিতে যেটা সবাই বুঝতে পারবে, সবাই একইভাবে কানেক্ট করতে পারবে। একটা সমঝোতার মতো।

জাওয়াদ : প্রবর রিপন বা মনোসরণিকে কিন্তু এই গণ্ডির ভেতরে আমি অন্তত ফেলতে পারব না। অন্যদের কথা বলতে পারব না, নিজেরটা বলা যায়। হয়তো টায়ার্ড ফিল করতেছি সারা সপ্তাহের ব্যস্ততার পরে বা ব্যস্ততার ফাঁকে ফ্রি টাইম নাই, একটা ইন্সট্রুমেন্ট হাতে নিয়ে বসলাম, কিছু একটা বের হইল এটা নিয়ে। ব্যস এটাই। সেটা হয়তো অন্য কোনো পলিটিক্যাল স্টেইটমেন্টের কথা বলে, কিংবা আদৌ বলে কী না জানি না। সেটা আমার মাথাব্যথা না।

সিঞ্জান : মেসেজটা তো সবসময় এ-রকম হওয়ার দরকার নাই যে — যাও গিয়ে আন্দোলন করো। কিন্তু এগুলাও অনেক ছোট ছোট রেজিস্টেন্স প্রতিদিনের লাইফের। এগুলাও তো বাস্তব, সেটা তো রাস্তার আন্দোলনের থেকে কোনোভাবেই কম না। মেসেজের সমস্যাটা হচ্ছে, সেটা প্রায় ধর্মীয় বিশ্বাসের মতো যে এটা করলে ওইটা হবে, ওইটা করলে এটা হবে। এতটা কজ অ্যান্ড এফেক্টের ভেতর দিয়ে যাওয়াটা প্রেফার করি না।

Independent Musicপ্রশ্ন : ইংরেজিতে গান গাওয়া নিয়ে তোমাদের ব্যাখ্যাটা কি? তোমাদের কি মনে হয় যে ইংরেজিতে গান গাওয়ার ফলে একটা শ্রেণীর শ্রোতার কাছে থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছো?

সিঞ্জান : ব্যক্তিগতভাবে এই জিনিশটা আমাকে ভাবাইছে। অনেক চিন্তা করছি এটা নিয়ে। কিন্তু আমি যে পরিবশে বড় হইছি নতুন ঢাকার, এই গুলশান বনানী — সেখানের কালচারে বাংলার থেকে ইংলিশই আমার বাস্তবতার ভেতর বেশি ছিল। আমার চিন্তাটাও প্রথমে ইংরেজিতেই আসে। মানে আমি চেষ্টা করেও পারব না বাংলাতে গান লিখার। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাটা আছে বাংলার প্রতি আন্তরিকভাবে। প্রচুর বাংলা বই পড়তেছি এখন। ভবিষ্যতে বাংলা গান লিখার পরিকল্পনা আছে। এই নতুন ঢাকার গ্লোবাল কঞ্জ্যুমারের কালচার, সেখান থেকে আমি আসছি। এসব চিন্তা করে মাঝেমাঝে নিজেকে ভণ্ডও মনে হয় যে, আমি কেন এই ঢাকাতে বসে ইংরেজিতে গান লিখতেছি যেখানে আমার চারদিকে সবকিছু বাংলাতে হচ্ছে। কিন্তু রংপুরের মানুষও কিন্তু আমার গান শোনে। এ-রকম পাইছি। অনেক ভালো লাগে এমন কাউকে পাইলে। এটা সত্য যে, একটা বাংলা গানের সাথে যেভাবে কানেক্ট করি, নেপালিস একটা গানের সাথে সেভাবে পারব না। কিন্তু তারপরেও, ভিটগেনস্টাইনের কথায় বললে  — ‘মিউজিক ইজ দ্য অ্যালফাবেট অফ গড’। আর ঢাকায় ইংরেজি গান শোনে এমন মানুষও প্রচুর। জেমস যখন রক মিউজিক শুরু করতেছে, তখন সেটাও নতুন ছিল বাংলা এক্সপ্রেশনে। জেমস তো জেমসই, সে পারছে। কারণ সে  আইয়ুব বাচ্চুর মতো ওয়ানাবি না।

জাওয়াদ : আমার কিন্তু বাংলা আর ইংলিশ দুইটাতেই বেশ অনেকগুলা গান আছে। যখন যেটাতে ইচ্ছা হয় ঐটাতে গান বানাই, গাই। কিন্তু আমার মনে হয় বাংলায় আরও বেশি ইন্ডি গান হতে পারে, ইংলিশ তো সব জায়গাতে আছেই, কিন্তু বাংলা তো আমাদের ভাষা। বাংলাতেই একটু আউট অফ দ্য বক্স যাই, নতুন কিছু চেষ্টা করি ইন্ডির থ্রুতে।  অনেকেরই চমৎকার ইন্ডি ধাঁচের বাংলা গান আছে। এইভাবে কিন্তু বাংলা গানের সংগ্রহটাও বাড়বে। কিন্তু আবার আমাদের মিউজিককে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে গান করতে হলে কিন্তু আবার মেইনস্ট্রিমে ঢুকতেই হবে। ডেফিনিশনটাই চেইঞ্জ হয়ে যাচ্ছে তখন।

মোহাই : আমার প্রথম ব্যান্ডের সাথে আমি বাংলা গান দিয়ে শুরু করসিলাম। এরপর সবাই দেশের বাইরে চলে যায় এবং সেইখানে গিয়ে দেখা গেল, অনেকেই আমাদের মিউজিকটা অ্যাপ্রিশিয়েট করতেছে, কিন্তু ভাষার দূরত্বের কারণে কিছু হচ্ছে না। ফলে কিছু ইংরেজি গানও করলাম। লিরিক্স বুঝতে পারলে সবসময়ই তো অন্য ধরনের এক-রকমের যোগাযোগ হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত — ইংলিশ আরবি উর্দু ফার্সি যেটাতেই করুক না কেন, সেটা মিউজিকের জন্য কোনো বাধা না। মিউজিক বা সাউন্ড — এটা ইউনিভার্সাল একটা ভাষা বিশেষ ধরনের সম্পর্কের জন্যে। সাউন্ড হচ্ছে সাউন্ড।

প্রশ্ন : হিপহপ মিউজিক নিয়ে তোমাদের মতামত কী? যেহেতু এটাও বেশ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠছে বর্তমান আর্বান সিনে। ইন্ডির সাথে এর পার্থক্য বা মিলগুলা কোথায়?

সিঞ্জান : আমার তো মনে হয় হিপহপ আর আমরা অনেকটা একই কাজ করতেছি। দুইটাই তো অ্যান্টি-এস্টাব্লিশমেন্ট। তবে আমার ধারণা ‘ইন্ডি’ ক্যাটাগরিটা জনরা ব্যাপারটাকে অস্পষ্ট করে ফ্যালে। কিন্তু বেসিক পার্থক্যটা ইন্সট্রুমেন্টালই বলা যায়। আমার লাস্ট অ্যালবামে তিনটা হিপহপ স্টাইলের গান আছে। কিন্তু এটা হিপহপের স্পিরিটটা নেয় নাই। হিপহপ যেমন গ্ল্যামার, মানি আর সেক্স নিয়ে কথা বলে — আমি কিন্তু তার বিপরীতে সেই জায়গাটায়। আমার গান শুনে মনে হয় না উত্তেজিত হয়ে কিছু ঘটায়া ফেলব। চারপাশের প্রেশারে সেন্টিমেন্টাল হওয়াটা তো এখন অনেক টাফ। তবে অ্যাগ্রেসিভনেসের কথা বলতে গেলে এটা বাহ্যিক একটা ব্যাপার। বাংলা হিপহপের সাথে আমি রিলেট করতে পারি না কারণ টু মাচ এনার্জি, ওরা অনেক কিছু বলে যেটার সাথে রিলেট করা যায় না। আমি সেভাবে ফিল করতেও চাই না, এবং সেটা করতেও চাই না। পলিটিক্স নিয়ে কথা বললেই সেটা খুব পলিটিক্যাল হয়ে যায় না, আর্ট অন্তত এভাবে কাজ করে না। ‘পলিটিক্যাল কারেক্টনেস’-এ আমি ইন্ট্রেস্টেড না। আবার ‘নট ইন্টু পলিটিক্স’ ’ এটাও ফ্যাশনেবল স্টেইটমেন্ট, সেটাও হাস্যকর। আমার মিউজিকটা আমি চারপাশে যা দেখি, সেটার একটা ডায়াগনসিস বলা যায়।

হিপহপের সাথে আরেকটা পার্থক্য ক্লাসের। আমার অভিজ্ঞতায়, ওরা ডিফ্রেন্ট ক্লাস থেকে আসে। বনানীতে হিপহপ সেভাবে হয় কী না আমার জানা নাই। যেটা হয় সেটাকে আমি ঢাকার হিপহপ বলব না। কিন্তু ঢাকার অনেক এলাকাতেই হিপহপ প্রচলিত। আর্বান এরিয়ার প্রোব্লেম এটাই। ওরা নিজেরাও ভালো থাকে না, কাউকে ভালো থাকতেও দিবে না। হিপহপকে এই ব্যাপারটা ট্রিগার করে।

জাওয়াদ : আমার কিন্তু আবার হিপহপ মিউজিক খুব ভালো লাগে। আমি জানি না এখানে এলাকার কোনো ব্যাপার আছে কী না, কারণ আমি ঠিক বনানীর না। হিপহপের ভেতরেও অনেক ক্যাটাগরি আছে। পলিটিক্যালি ওরা অনেক আউটস্পোকেন। ‘হিপহপ মিউজিক’ কথাটা শুনলেই প্রথমে বিটসের কথা মাথায় আসে, র‍্যাপের কথা মাথায় আসে — যদিও এটাই সব না। কিন্তু কেউ যখন বলে ‘আমি ইন্ডি মিউজিশিয়ান’ তখন কোনো পার্টিকুলার আইডিয়া মাথায় আসে না। সিঞ্জানের যে-তিনটা গানের কথা ও বলল, সেটাকে আমি হিপহপ না বলে ইন্ডিই বলব। সব ধরনের আইডিয়া থাকলে চমৎকার হয়, পুরা মিউজিক সিনারিয়োটা ইনক্লুসিভ হয় তখন। তবে সবাই একই প্যাটার্নে কাজ করলে ঝামেলা।

মোহাই : হিপহপের কন্টেন্ট আলাদা হয় কারণ ওই ফর্মটাই এমনটা চায়। ক্ল্যাসিক্যালের যেমন একটা নির্দিষ্ট ওয়ে আছে, তেমনি হিপহপ মিউজিকের।

প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিতে দাঁড়ানো বাম থেকে সিঞ্জান, জাওয়াদ, মোহাই । সমস্ত ফোটোগ্রাফ লেখকের সৌজন্যে পাওয়া  গানপার

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you