সোমবারের পড়ন্ত দুপুর পৌনে-তিনটেয় লন্ডন শহরস্থিত ডর্চেস্টার হোটেলের ফার্স্ট ফ্লোরের ভাবগতিক দেখে কেমন অগোছালো হন্তদন্ত মনে হচ্ছিল। ঘটনাটা আর-কিছু নয়, জেনিফার লোপেজ (Jennifer Lopez) উঠেছেন এই হোটেলেরই কোথাও। সংগীত এবং অভিনয়ের শিল্পী জেনিফার লোপেজ, সংক্ষেপে জেলো নামে যিনি বিনোদনসংবাদজীবীদের কাছে পরিচিত, বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে এসে এই হোটেলেই থানা গেড়েছেন আপাতত (লোপেজ তখন র্যাপতারকা পাফ ড্যাডির গার্লফ্রেন্ড)। হোটেলের সুসজ্জিত স্যুটের একাংশে ইতিউতি পায়চারি করছেন বা ঢিমেতালে পরস্পরের সঙ্গে খাজুইরা আলাপ জুড়েছেন নিচু গলায় একদল সংবাদসংগ্রাহক। সবাই তারা যার যার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছেন, কারো-বা অ্যাপোয়েন্টমেন্ট আছে কারো হয়তো-বা নাই, সকলেরই দিলের ভিতর তমন্না আছে জেলোর একখানা সাক্ষাৎকার নেবার।
ওদিকে জেলোর টাইট শিডিউল সম্পর্কে বার্তাজীবীদেরে বারবার জানানো হচ্ছিল শিল্পীর পার্সোন্যাল স্টাফেদের মারফতে, এছাড়া লাস্ট মিনিটের অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে যেয়ে বেশ ছুটোছুটি করতে দেখা যাচ্ছিল লোপেজের নিজস্ব সহকারীদিগেরে, জেলো হোটেল ছাড়ছেন সন্ধের আগে এমনটা কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল লোকমুখে। অ্যানিওয়ে। মিডিয়াপিপলদের তো এই সিচ্যুয়েশন গা-সওয়া। আশঙ্কা আর উত্তেজনা নিয়াই মিডিয়াকর্মীদের কায়কারবার। ফলে সাংবাদিক সবাই ভিতরে ভিতরে ফন্দি আঁটছিলেন জেলোর মুখ দিয়া কে কতটা বেশি কথা বার করে নিয়া আসবেন।
পরিকল্পনা করে, অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে, এই সিচ্যুয়েশনে সিনেশিল্পীদের কাছ থেকে বেশি কিছু আদায় করা যায় না আদৌ। নসিবের হাতেই ছেড়ে দিতে হয়, প্ল্যান ভেস্তে যাবে নাকি ক্লিক করবে কেউ বলতে পারে না আগেভাগে, বেশিরভাগেরই ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে না। তারপরও অপেক্ষা, আশার রজ্জু ধরে ঝুলে থাকা, নায়িকা-এবং-গায়িকা তারাশিল্পীটির সঙ্গে এক-নজর মুলাকাত করে নেয়া যায় কি না।
আগেভাগে কেউ বলতে পারে না কিচ্ছুটি, সেলেব্রেটিদের ক্ষেত্রে, সিদ্ধান্ত হয় লাস্ট মোমেন্টে কে পাবেন সাক্ষাতের সুযোগ এবং কতটা সময় তিনি নিতে পারবেন তারকা ব্যক্তিটির। অভিজ্ঞ জনসংযোগকর্তা থাকেন এইসব সামলানোর জন্য। লোপেজের পিআর কথাবার্তাহীন ঘুরছিলেন ব্যস্তসমস্ত হয়ে। জেনিফার লোপেজ সফরে এসেছেন যখন, অব্যবহিত কয়দিন আগে বেরিয়েছে তার অভিনীত নয়া ছায়াছবিটি। কাজেই সিনেমাপ্রাসঙ্গিক প্রশ্নই গোছগাছ করে রাখছিলেন সমবেত সংবাদজীবী আমার পরিচিত-অপরিচিত বন্ধুরা। আমি ইনিশিয়েটিভ নিয়ে একটা লাইনঘাট করা যায় কি না সাক্ষাতের, আরেকটু কনফার্ম হয়ে নেয়া যায় কি না লাস্ট মিনিটের আশায় বসতি না গেঁড়ে, সেই চেষ্টাটা চালাচ্ছিলাম ধরাধরি করে চেনাশোনা কয়েকজন ম্যুভিজগতের মোটামুটি জানাশোনা মানুষকে। এবং আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে আধঘণ্টাখানেকের ভিতরে একটা আলতো মওকা পাওয়া যাবে। এরপরও শিয়োর না। যা-হোক, অগত্যা, হাল ছাড়বার চেয়ে অপেক্ষা উত্তম। অপেক্ষাই করি অভিজাত হোটেলকামরার অস্বস্তিকর স্নায়বিক উত্তেজনায়। এবং আমার ভাগ্য প্রসন্নই ছিল।
অপেক্ষাগারে, যেখানটায় জার্নালিস্টরা পায়চারি করছিলেন কিংবা আলস্যবুঁদ বসেই ছিলেন অনেকক্ষণ ধরে, বেশ মুখরোচক পানীয় ও টুকটাক জলখাবার রাখা হয়েছে আমাদের জন্য। ত্রুটি ছিল না আপ্যায়নে, কেতায়-আদবে, এসব ক্ষেত্রে এমনটাই দস্তুর। ঘরের একপ্রান্তে একটা ইয়াব্বড় টেলিভিশন রাখা, যাতে অপেক্ষমাণ অভ্যাগতদের বিরক্তি অপনোদন হয় এমন অভিপ্রায় থেকেই বোধহয় টেলিভিশনটা রাখা, আর তাতে নিউজ চ্যানেল টিউন করে রাখা। তাকাচ্ছে না কেউই বিশেষ সেদিকে। এমনিতেই বিকেলপ্রাক্কালে ভ্যাঁপসা বায়ু, গরম চড়ানো, অপরাহ্নের মেজাজমর্জি বিশেষ সুবিধের মনে হচ্ছে না। খানিক আগে এলান এসেছে পিআর তরফ থেকে; এলান এসেছে সমবেত দুই বেতারসাংবাদিকের জন্য, উনারা আগে-থেকে-বরাদ্দ তেরোমিনিটের জায়গায় এগারোমিনিট পাচ্ছেন জানানো হলো। লোপেজ স্বয়ং কুঠার হাঁকিয়ে টাইম কর্তন করছেন, পাব্লিক রিলেশন অফিসার মশাই নির্দোষ, উপায় নাই। দ্বিতীয় জ্ঞাতব্য হচ্ছে, এই কিস্তি জেলোকে কেবল তার নিউলি রিলিজড ম্যুভি নিয়াই জিগ্যেশ করা যাবে, দেড়িয়া আলাপে গেলেই ঘ্যাচাং। তথাস্তু। বেতারসংবাদকর্মীদ্বয়কে দেখা গেল উবু হয়ে পূর্বভাবিত প্রশ্নপত্র পুনর্বিন্যাস করে কেটেছেঁটে নিতেছেন। সময় বিশাল বদমাশ। লোপেজের মর্জি সদয় থাকলে অবশ্য সময়ের ঘেঁটি ধরে টেবিলের পায়ার সঙ্গে বেঁধে রাখা যাবে। জেলো ভরসা।
ছায়াছবিটার নাম ‘দি সেল’ (The Cell), সম্প্রতি (২০০০ খ্রিস্টাব্দে) জেলো অভিনয় করেছেন এইটায়, সাই-ফাই ঘরানার ম্যুভি। ডিরেকশন দিয়েছেন টার্সেম। এই ডিরেক্টর ১৯৯৯ সনে এমটিভি বেস্ট অ্যাওয়ার্ড লভেছিলেন ভিডিয়ো ক্যাটিগোরিতে ‘ল্যুজিং মাই রিলিজিয়ন’ বানিয়ে। এইটাই, ‘দি সেল’, টার্সেমের পূর্ণদৈর্ঘ্য পয়লা ছায়াছবি বানানো। অভিষেক ফিচার ফিল্ম। ছবিটায় একজন সিরিয়াল কিলারের সঙ্গে একটা মিউজিক ভিডিয়োর সংযোগ রয়েছে দেখানো হয়। বেশ কয়েকটা সাবপ্লট নিয়া ছায়াছবিটা ভালোভাবেই ডিল করতে পেরেছে, জেলোর অভিনয়ও উৎরেছে বেশ ভালো, এরই মধ্যে প্রেক্ষাগৃহে যেয়ে কিংবা বাসভবনে ছুটিদিনে যারা ছবিটা দেখে নিয়েছেন তাদের প্রক্ষিপ্ত কথাবার্তার উড়ো আওয়াজ থেকে এইসব বেশ কানে এসে পশছিল।
বলা হয় নাই যে টেলিভিশন চ্যানেল থেকে এসেছেন এমন কয়েকজন আমাদের সঙ্গে অপেক্ষাকামরায় অ্যাওয়েইটিং কখন ডাক আসে তাদের। দুইজনের একটা টিভিটিম এসেছেন লোপেজের সঙ্গে কিছু ব্যাপারে প্রাথমিক বা সম্ভব হলে পাকা কথা সম্পন্ন করে যেতে। টেলিভিশন সিরিজে অভিনয়ের ব্যাপারে জেলো যদি একবার রাজি হয়ে যান তবে কেল্লা ফতে। একটি মিনিসিরিজের স্ক্রিপ্ট পড়তে জেলোকে রাজি করানোই মিশন তাদের। ঘিয়া কালারের সোফায় বসে থেকে টেলিভিশনকর্মী দুইজনেই ছটফটাচ্ছিলেন। দশমিনিটেই সারতে হবে ব্যাটলফিল্ডে তাদের যাবতীয় বুদ্ধিবিদ্যা। আশা, আহা, কুহকিনী!
কী যাতনার যে ব্যাপারটা, তা অপেক্ষাকারী মাত্রই নিশ্চিত জানেন। অস্বস্তিকর এই অপেক্ষাকালে এক পাব্লিসিস্ট উদয়িলা হাতে নিয়া চ্যাপ্টা পাৎলা স্মার্ট-দেখতে একটি ক্লিপবোর্ড, মুখে-দেহে-চেহারায় তার পেশাদার পৌরুষভরা পাব্লিসিস্টের আদল ধরিয়া রাখবার প্রাণবাজি বৃথা আয়াস, শার্প গলায় ব্যস্ত ভঙ্গিমায় হাঁকিলেন তিনি, “ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা থেকে কে এসেছেন? ইন্ডিপেন্ডেন্ট, প্লিজ!” কোনো হেলদোল দেখতে না পেয়ে পাব্লিসিস্ট ফের আওয়াজ করেন, “নাই কেউ? আচ্ছা। গার্ডিয়ান? গার্ডিয়ান থেকে কে এসেছেন? আপনি? আসুন আমার সঙ্গে।”
বেচারা ইন্ডিপেন্ডেন্টের রিপোর্টার হয়তো কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পেশাবে গেছে, এবং কপাল পুড়েছে। কেবল যে সে তার কিয়্যু খুইয়েছে তা না, জেলোর ইন্টার্ভিয়্যু নেয়া তার আর হলো না। আপিশে ফিরে উপরকর্তার ঝাড়ি খাবে এবং হয়তো খোয়ায়ে ফেলবে ক্যারিয়ারের আসন্ন সোপানটাও। মন্দ ভাগ্য। তবে বরাত খুলেছে আমার। একজনের বারোটা, আরেকজনের বরাত। “ওয়েইট করেন এখানে,” এক অ্যামেরিক্যান পিআর বললেন, “একদম কাঁটায়-কাঁটায় পাঁচমিনিট পাচ্ছেন আপনি, ইয়াদ থাকে যেন।”
বহুপ্রতীক্ষিত পাঁচমিনিট, অতএব, উপস্থাপন করছি নিচে। চেষ্টা করেছি পাঁচ প্রশ্নেই কিছুটা বাঁধিগৎ থেকে বেরিয়ে জেলোকে এনগেইজ্ করতে, পেরেছি কতটা তা অবশ্য বলতে পারব না।
(Jennifer Lopez) লোপেজ, তিরিশোর্ধ্ব বয়সে খ্যাতির চূড়ায় থিতু, পোয়ের্তোরিক্যান পিতামাতার ঘরে অ্যামেরিক্যান এই শিল্পীর জন্ম, যখন হোটেলের নির্ধারিত সভাকামরায় এসে ঢুকলেন যেন উচ্ছল হয়ে উঠল গোটা কামরার ভেতরভাগ। ঘরের প্রবেশমুখে, দরোজার ওপাশে, দেখা-গেল-না এমন কারো সঙ্গে একটা ঠাট্টা করলেন সহাস্য গলাটা ঈষৎ চড়িয়ে। এন্ট্রান্স থেকে সোফা পর্যন্ত আসতে যেটুকু সময় তার পুরোটাই তিনি হাসছিলেন ঝলমল। সোফায় বেশ জাঁকিয়েই বসলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে একটা ব্রাইট স্মাইল দিলেন। “হাই” বললেন। সুন্দর, সপ্রতিভ, রূপসী। চোখজোড়া বাঙময়, গোল্ড আইশ্যাডো, দাঁতের বিন্যাস চমৎকার। পাঁচটা মাত্র প্রশ্ন করতে পারব তাকে, আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, রেডি হয়েই আছি প্রশ্ন মুখে চেপে। এবং যতটা পারা যায় থোড়-বড়ি-খাড়া ক্লিশে এড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারব মনে হচ্ছিল। বরাদ্দ সময়ের সীমায় যেটুকু সাধ্য সর্বোচ্চ করতে পারব ভরসায় আলাপ শুরু করি। ভাগ্যিস, জেলো কথাও বলছিলেন চটপটে দ্রুত। ফলে পাঁচমিনিটে বেশ-একটা আনন্দময় রেস্পোন্সরাশি নিয়া কামরা ছাড়তে পেরেছি শেষতক।
চিত্রনাট্যটিতে এমন কী আছে যেইটা আপনাকে এই ‘দি সেল’ ম্যুভিতে অভিনয়ে টেনেছে?
এইটা অনেকটা ‘সাইলেন্স অফ দি ল্যাম্বস্’-এর মতো, বইটা আমি বহু বহু বছর আগে পড়েছি। জিনিশটা তখনই মনে হয়েছিল যে এইখানে আছে সৃজনশীলা স্বাধীনতার এক অবারিত দরোজা। আপনি বুঝতে পারছেন কি বলতে চাইছি আমি? বলতে চাইছি, ডিরেক্টর যদি ঠিকঠাক পাওয়া যায় তাহলে এই সিনেমা সামথিং রিয়্যালি ভালো হবে এইটা আমার মনে হয়েছিল ছবির স্ক্রিপ্ট পড়তে যেয়ে। এক-কথায় এইটা দারুণ একটা ম্যুভি। ভয়ের এবং গা-শিউরানোর ম্যুভি। আমার মনে হয় কি জানেন? আমার মনে হয় আর্ট ব্যাপারটা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর এবং ভিন্ন ভিন্ন অভিমতের অভিব্যক্তিগত রূপায়ণ। আর একেক শিল্পী অনুপ্রাণিত একেকভাবে, একেক কায়দায় যার যার মতো, ভিন্ন ভিন্ন জিনিশে প্রেরণা থাকে একেকজনের। সবসময় এই জিনিশ, এই প্রেরণার ফল, মিঠা হবে মনে করার কারণ নাই, তিতাও হতে পারে, তিতাও হয়।
ক্যাথেরিন ডিয়েইন চরিত্র রূপায়ণের আগে এই-ধরনের সাইকোলোজিস্ট পেশাজীবীর ভূমিকা কেমন হয়ে থাকে জেনেবুঝে নিতে রিসার্চ করেছিলেন কিছু? চরিত্রটা তো জটিল এমনিতে, যে কিনা ট্র্যান্সেন্ডেন্টাল সায়েন্সের বদৌলতে অপরের মনোজগতে যা-কিছু ঘটছে দেখে আসতে পারে, এই বিষয়টা নিয়া আগে কখনো ভেবেছিলেন কিছু?
যে-কোনো চরিত্রে অভিনয়ের আগে আমি রিসার্চ করি। রিয়্যালিই করি। ‘দি সেল’ ম্যুভিটায় যেহেতু আমি ছিলাম থেরাপিস্ট চরিত্রে রূপদানকারী, আমি সকলের অজ্ঞাতসারে থেরাপিস্ট যারা তাদের চাল-চল দেখতে গিয়েছি, বিশ্বাস করুন, ভিন্ন একটা নাম নিয়ে পরিচয় লুকিয়ে আমি ফিমেল থেরাপিস্টের কাজে খ্যাতিমান যারা আছেন আমাদের দেশে তারা তাদের প্যাশেন্টের সঙ্গে কেমন বিহেইভ করেন দেখার ইচ্ছায় আমি দিয়েছি ক্লিনিকচেম্বারগুলোতে। কেউ অভিনয়কারী ডিসগাইসড আমাকে দেখে একবারের জন্যও চিনতে পারে নাই। রিয়্যাল লাইফে থেরাপিস্ট নারীটিও আমাকে একফোঁটা আন্দাজ করতে পারে নাই।
যে-ক্যারেক্টারটায় অ্যাক্টিং করেছেন সেই ক্যারেক্টারের প্রতি কতটা সাযুজ্য ও সহমর্ম বোধ করেন আপনি?
আ, হ্যাঁ, অনেক। মানে, দেখবেন যে ম্যুভিটিতে দেখানো হচ্ছে ক্যারেক্টারটা খুবই প্যাশোনেইট, মানবিক আবেগপূর্ণ, নিজের কাজের সুবাদে যেসব লোক তার সংস্পর্শে আসে হেল্প নিতে তাদের প্রতি সে খুবই সহায়তাভাবাপন্ন, বুঝছেন তো আমি কি বলতে চাইছি? কিন্তু কৌতূহলকর মনে হয়েছে যে-ব্যাপারটা আমার কাছে সেইটা হচ্ছে ক্যারেক্টারটা নিজেকে একদম বিপদাপন্ন করে ফেলছে, ঝুঁকিতে যাচ্ছে, স্রেফ অন্যের জন্যে নিজের বিপন্নতাও মেনে নিচ্ছে। ভেড়ারা যেমনটা হয়ে থাকে দেখবেন, পরোপকারী ও নরম স্বভাবের, বিশেষভাবে সে যখন খুনীর মনোজগতে একবার নয় দুইবার নয় তিন-তিনবার যাতায়াত করতেছে নিজের সমূহ ক্ষতির আশঙ্কা সত্ত্বেও।
(কথাবার্তার এই পর্যায়ে পাব্লিসিস্ট ভদ্রলোক সন্তর্পণে দুয়ার ফাঁক করে চেহারা দেখান আমারে এবং ডানহাতের দুইখানা আঙুল তুলে নিঃশব্দ সংকেতে বুঝায়ে দেন যে আই হ্যাভ দুই মিনিটস লেফট)
অভিনয়শিল্পী হিশেবে নিজের সবচেয়ে বড় অর্জন কোনটা আপনার কাছে?
(বেশ জোরে শ্বাস নিয়ে জেলো বলেন) আমি জানি না। আসলেই জানি না। মাত্র কয়েকদিন আগেই একটা ছায়াছবির কাজ শেষ করলাম যেইটার নাম ‘অ্যাঞ্জেল আইজ্’, সম্ভবত ওইটাই হতে যাচ্ছে আমার সবচেয়ে ভালো অর্জন, হতে পারে ক্যারিয়ারে এইটা আমার জন্যে একটা পালক যোগ করবে যেইটা আমি হয়তো মনে রাখতে চাইব। তবে এসব নিয়া আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারি না। আমি শুধু বলতে পারি, কাজের সময় আমি অত্যন্ত অভিনিবিষ্ট থাকি নিজের কর্তব্যের প্রতি। নিশ্চয় বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি। কাজ করার সময় কখনোই এমনটা ভাবি না যে এই কাজটা আমাকে একটা বিরাট কিছু অর্জনে হেল্প করতে চলেছে। এইভাবে আমি ভাবি না। আমি শুধু ফোকাসড থাকি নিজের কাজের প্রতি। আমার মনে হয় অর্জনফর্জন নিয়া ভাবাভাবি কিছুটা বিপাকে ফেলে দিতে পারে আমাকে।
যদি বলি পাঁচ শব্দে নিজেরে ডেস্ক্রাইব করতে, চেষ্টা করবেন প্লিজ?
মমতাপূর্ণ, স্ট্রং, প্যাশোনেইট, সেন্সিটিভ, (খানিকক্ষণ থেমে এরপরের শব্দটা বলেন) এবং কেয়ারিং।
এইবার পাঁচ শব্দে যদি নিজের বন্ধু পাফিকে (জেলোর বয়ফ্রেন্ড পাফি ড্যাডি) ডেস্ক্রাইব করতে বলি, পারবেন?
হ্যাঁ, পারব। আমি বলব পাফি হচ্ছে পাওয়ার্ফুল, ক্যারিশ্ম্যাটিক, কেয়ারিং, ডিন্যামিক, (একটু থেমে) এবং স্যুয়িট।
এইবার আর নিঃশব্দের অঙ্গুলিসিগ্ন্যাল নয়, রীতিমতো দরোজায় টোকা পড়ে। বেচারামুখো পাব্লিসিস্ট এসে দাঁড়ান দুয়ারে, একদিকটায় মাথা নামিয়ে এমন ভঙ্গি করেন যার অর্থ হতে পারে, “বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?” আমিও প্রমাদ গুনি। পাঁচমিনিট ওভার হয়েছে বেশ কয়েক সেকেন্ড আগে। জেলোকে উইশ করি, আজকের রাতের প্রিমিয়ার শোয়ের জন্য গ্যুডলাক জানাই। “থ্যাঙ্কস”, লোপেজ ফিরতি জিগান, “আপনি আসছেন তো?” আমি মাথা নাড়াই, ঝুঁকে হ্যান্ডশেইক করি, বিদায় নিই। করিডোর দিয়া আসবার সময় দেখি নেক্সট ইন্টার্ভিয়্যুয়াররা অধীর অপেক্ষমাণ সারিবদ্ধ সোনালি কেদারাগুলোতে।
মূল : এমা ব্রুক্স ।। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান ।। প্রকাশকাল : সেপ্টেম্বর ২০০০ ।। বঙ্গানুবাদ : বিদিতা গোমেজ
- শৈলিন উডলির কথাগুলি (৭) - August 11, 2019
- কেইটের কথাবাত্রা (১০) - July 25, 2019
- টিল্ডা টোল্ড (২) - May 12, 2019
COMMENTS