বাংলাদেশে কোরিয়ার সাহিত্য : উদ্যোগ ও উদ্ভাস

বাংলাদেশে কোরিয়ার সাহিত্য : উদ্যোগ ও উদ্ভাস

নেত্রকোনায় উজান প্রকাশনীর আয়োজনে ‘সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ : সমাজ, সংস্কৃতি,  সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বছরের শেষপ্রান্তে এসে, ডিসেম্বরের ১৮ সোমবার বিকাল চারটায় নেত্রকোনার সাতপাই বানপ্রস্থ  প্রাঙ্গণে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহরের সারস্বত সমাজের সুধীজন একত্রিত হয়ে সাহিত্যবাহিত দুইদেশের সংযোগসেতু ও সম্ভাবনা বিষয়ে আলোচনা করেন।

সভার প্রতিপাদ্য ‘সাহিত্যের আলোকে কোরিয়া ও বাংলাদেশ : সমাজ, সংস্কৃতি,  সম্পর্ক ও উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ’ ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি ও গবেষক সরোজ মোস্তুফা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ, সমাজগবেষক, বুদ্ধিজীবী ও লেখক  অধ্যাপক যতীন সরকার, নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বিধান মিত্র, কবি শাহেদ কায়েস, কবি মামুন খান, কথাসাহিত্যিক সাফি উল্লাহ প্রমুখ।

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদ ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম কবীরের সভাপতিত্বে পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক সাইফুল্লাহ এমরান।

অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিক সাফি উল্লাহ বলেন, — সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল, সংস্কৃতি বিভিন্ন ধর্ম বা গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত আর সেগুলোকে আমরা অনুবাদের মাধ্যমে ঋদ্ধ করি। বিদেশের সাহিত্য অনুবাদের সহায়তায় আমরা আস্বাদনের সুযোগ নিই। পৃথিবীর সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত রাখতে দেশবিদেশের সাহিত্য অনুবাদের কোনো বিকল্প নাই।

কবি শাহেদ কায়েস তাঁর আলোচনায় জীবনের একটা তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখযোগ্য সময় কোরিয়াবাসের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মনোজ্ঞ বিবরণ দেন। তিনি বলেন, — আমি চারবছর কোরিয়ায় বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলাম, খুব কাছ থেকে তাদের জীবনাচার দেখেছি। কোরিয়ান প্রফেসররা তাদের শিক্ষার্থীদের কাছে ভগবানের সমান। তিনি, কবি শাহেদ কায়েস, আরও বলেন — ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাবার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। যার ফলে অবিভক্ত কোরিয়া দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়।

অধ্যাপক বিধান মিত্র বলেন, — আধুনিক গদ্যের সূচনা হয় বিংশশতকে। তিরিশের দশকে আমরা আধুনিক কবিতার জগতে প্রবেশ করেছি। কোরিয়ানরা কবিতার জগতে প্রবেশ করেন ষাটের দশকে। কোরিয়ার সাহিত্য সম্পর্কে বাংলাদেশের পাঠকদের জানাশোনা খুবই ক্ষীণ। পত্রপত্রিকায় তেমন আলোচনা বা অনুবাদও গোচরে এসেছে কালেভদ্রে। এইবার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে উজান প্রকাশনীর মধ্যস্থতায় এই দেশের সাহিত্যের কিছু নিদর্শন বাংলায় আস্বাদ গ্রহণ করবার।

এছাড়াও অধ্যাপক মিত্র তাঁর বক্তৃতায় পাঠকের প্রাত্যহিক দায় এবং লেখকের কর্তব্য বিষয়ে আলোকপাত করেন।  কবিতাপাঠের প্রতি অনীহা ছাড়াও নতুন প্রযুক্তিপৃথিবীর পরিবর্তিত বাস্তবতায় পাঠকের সার্বিক পাঠবিমুখতার কথাও তুলে ধরেন।

দুইটা জাতির মধ্যস্থ সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিকাশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পন্থা তাদের শিল্পসাহিত্যসম্ভার পরস্পরের ভিতর বিনিময়ের একটা রাস্তা সুগম করা — সভাপতির বক্তব্যে এই কথাগুলো বলেন অধ্যাপক যতীন সরকার। তিনি তাঁর সারগর্ভ আলোচনায় বাংলাদেশের অনুবাদ ও কোরিয়ান সাহিত্যের সৃজনপ্রসূ বৈশিষ্ট্যের নানান দিক নিয়ে আলোকপাত করেন।

এলটিআই কোরিয়ার সহযোগিতায়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অকৃত্রিম আন্তরিকতায় এবং উজান প্রকাশনীর আয়োজনে সমবেত সুধীজনের সামনে আয়োজন-সমন্বয়ক কথাসাহিত্যিক ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ কোরিয়ার সাহিত্য গ্রন্থাকারে বাংলাদেশের পাঠকসমাজে হাজির করবার ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও পরিকল্পনা হাজির করেন।

অনুষ্ঠান চলাকালে ভেন্যুর একপাশে উজানের কোরিয়ান সাহিত্য গ্রন্থপ্রবাহের একটি প্রদর্শনমণ্ডপ ছিল অভ্যাগত অতিথি ও অংশগ্রাহীদের আকর্ষণের বস্তু। শীতসন্ধ্যায় আলোচনাশেষে নেত্রকোনার সৃজনশীল ও মননশীল লেখক, অনুবাদক ও সংস্কৃতিচিন্তক সকলে এক অনাড়ম্বর আড্ডায় মিলিত হন।

উল্লেখ্য, উজান  কর্তৃক কোরিয়ান সাহিত্যের বঙ্গানুবাদ ও গ্রন্থমালা প্রকল্পের অনুষ্ঠান দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে আয়োজনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী ইত্যাদি শহরের সফল ও স্বতঃস্ফূর্ত অনুষ্ঠানের পরে নেত্রকোনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানটি ঋদ্ধ করেছে উপস্থিত সবাইকে, এই বিবৃতির অনুরণন পাওয়া যায় অনেকেরই গলায়। আয়োজক কর্তৃপক্ষও নেত্রকোনা-জমায়েতের তারিফ করেন আনুষ্ঠানিকভাবে।

এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের ধারাবাহিকতা ব্যাহত হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন উপস্থিত বক্তা ও সমবেতজন সকলেই।

মো. জসিম উদ্দিন

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you