বনপুদিনা এবং ল্যান্টেনা পরস্পর জ্ঞাতি ভাই। দু-জনেই ভারবেনেসি (Verbenaceae) গোত্রের সদস্য। দু-জনের আকার-আকৃতিতেও রয়েছে বেশ মিল। তাদের জন্মস্থানও একই অঞ্চলে। আদিতে তারা ছিল নয়া দুনিয়ার বাসিন্দা। কালক্রমে জন্মস্থান আমেরিকা থেকে পুরাতন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আগ্রাসী আগাছা হিসেবে বহুবর্ষজীবী, চিরহরিৎ, বহু শাখাপ্রশাখায় বিশিষ্ট এই গুল্মদুইটির বেশ বদনামও রয়েছে। তবে বনৌষধি ও শোভাবর্ধক হিসেবে কদরও কম নয়।
বনপুদিনা বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই কমবেশি পাওয়া যায়। তবে এটি মূলত হাওরাঞ্চলে অভিযোজিত হয়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু জ্বালানির চাহিদা পূরণ সহ মানুষের নানা অত্যাচারে এর সংখ্যা বর্তমানে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
বনপুদিনার কাণ্ড ও পাতা ঝাঁঝালো সুগন্ধময়। কোনো কোনো দেশে এর তাজা ও শুকনো পাতা চা হিসাবে পান করা হয়। কাষ্ঠল কাণ্ড একটু চাপ দিলেই মটমট শব্দ করে ভেঙে যায়, তাই এর আরেক নাম মটমটিয়া বা মটকা। আগ্রাসী ও নাছোড়বান্দা স্বভাবের কারণেই সম্ভবত ভাটির কোনো কোনো অঞ্চলে এর নাম দেওয়া হয়েছিল পিছাসবন। কেউ কেউ ডাকে বনতুলসী বা ‘ভুঁইওকরা’।
উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Lippia alba — লাতিন লিপ্পিয়া শব্দটি সপ্তদশ শতকের ইতালিয়ান নিসর্গী Augusto (Augustin) Lippi-র স্মরণিক; দ্বিপদ নামের শেষাংশ লাতিন ‘অ্যালবা’ অর্থ সাদা। ফুল সাদা, গোলাপি ও হালকা নীল-রক্তবর্ণের, তবে সাদা রঙের আধিক্যের কারণেই সম্ভবত নাম ‘অ্যালবা’।
বাংলাদেশে ল্যান্টেনা সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে অভিযোজিত। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এর উপস্থিতি সহজেই চোখে পড়ে। বনপুদিনার চেয়ে এর ফুলের বর্ণ উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়। এ-কারণে এই আগাছাকে অনেকেই নিজের মালঞ্চে পেতে আগ্রহী। তবে এরাও আগ্রাসী স্বভাবের। স্থানীয় প্রজাতিকে বিতাড়িত করে সহজেই জায়গা দখল করে নেয়। কিন্তু গহন বনে জন্মাতে পারে না, কারণ পর্যাপ্ত রোদের অভাবে এরা লম্বা গাছপালার সঙ্গে লড়াই করে টিকতে পারে না। তাই এদেরকে সচরাচর বনের কিনারায় দেখা যায়।
প্রজাতিটি অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু। খরা, বিভিন্ন ভূমিরূপ, আর্দ্রতা, লবণাক্ততা ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবেশে এরা মানিয়ে নিতে পারে। বনে অগ্নিকাণ্ডের পর প্রথম যে-উদ্ভিদটি মাথা তুলে দাঁড়ায়, সেটি ল্যান্টানা। গবাদি পশুর জন্য এরা বিষাক্ত। তবে এর ভেষজ গুণাগুণও রয়েছে।
Lantana camara প্রজাতিটির দ্বিপদ নাম। গণ নাম ‘ল্যান্টেনা’ এসেছে wayfaring (পদব্রজে ভ্রমণরত) গাছের প্রাচীন লাতিন নাম থেকে। দ্বিপদ নামের শেষাংশ ‘ক্যামেরা’ উদ্ভূত হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায় প্রজাতিটির স্থানীয় নাম থেকে। বাংলায় একে কুটুসকাঁটা, পুটুস, কর্ণফুলি, পাঁচফুলি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
- বন্যায় কী যে ক্ষতি হলো কবি ইকবাল কাগজীর! || কল্লোল তালুকদার - June 29, 2024
- সুধাংশু কুমার শর্মা : স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদ || কল্লোল তালুকদার - October 1, 2021
- বানপ্রস্থ থেকে ফিরে || কল্লোল তালুকদার - August 12, 2021
COMMENTS