ছোটকাগজ স্মরণে : এক তথ্যচিত্রের খোঁজ শীর্ষক তাৎক্ষণিকাটি গানপার-এ তোলা থাকল। ছোটকাগজসংশ্লিষ্ট লেখক-পাঠককে তথ্যচিত্রটির ব্যাপারে কৌতূহলী করতে এটি কাজে দেবে। বাংলাদেশে ছোটকাগজের যুগ সম্ভবত অস্তমিত হতে চলেছে। গণমাধ্যমের বইমেলা বিষয়ক প্রতিবেদন দেখে তা-ই মনে হলো। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর বিলকুল ফাঁকা! কাকপক্ষীর দেখা নেই সেখানে!
ঠিক উল্টো দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায়। এবারের মেলায় ছোটকাগজের স্টল ছিল দুশোর কাছাকাছি। লেখক-পাঠক সমাগম ও বিক্রিবাট্টা দুটোই যথেষ্ট ভালো ছিল সেখানে। এর মধ্যে আবার রাজ্য সরকারের উদ্যোগে লিটলম্যাগাজিন মেলা আসছে সামনে। ছোটকাগজ, যতদূর বুঝতে পারলাম, নিছক সাহিত্যে আটকে নেই সেখানে। বিষয়বৈচিত্র্য আর কাজের গভীরতায় তার উপযোগ বহুমাত্রিক।
ওপার বাংলার বিদ্যায়তনে এই কাগজগুলোকে গবেষণার কাজে অনেকে ব্যবহার করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল লাইব্রেরিতে কৌতূহলবশত ঢুকেছিলাম। ভাবা যায় (!), জার্নাল সেকশনে দু-হাজারের অধিক ছোটকাগজ চোখে পড়ল। ওখানকার নাগরিক সমাজে ছোটকাগজের স্বাতন্ত্র্য ও গভীরতার খানিক ঝলক তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে। এই ডেডিকেশন সত্যি প্রেরণাদায়ী।
সাহাপিডিয়া (Sahapedia) নামের ইউটিউবচ্যানেলের সুবাদে তথ্যচিত্রটির খোঁজ পেয়েছিলাম। ছোটকাগজ ছাড়াও নিম্নবর্গ বা সোজা কথায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিযাপনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা কন্টেন্ট বানিয়ে থাকেন। ওই মানুষগুলো তো আর আমাদের মতো লিখন-পঠন প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে নিজের কথাটি বলেন না, যাপিত সংস্কৃতি ও জীবনভাবনার পুরোটাই সেখানে মৌখিক। কৃষিভিত্তিক প্রথাচার, পালাপার্বণ, ঈশ্বর ও দেবতাবিশ্বাসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ভক্তি ও মরমিচেতনার সবটুকু সেখানে মৌখিক পরম্পরায় যাপিত সংস্কৃতির ওপর ভর করে আজো টিকে আছে। রাজস্থান, বিহার ও কাশ্মিরের লাদাখ অঞ্চল জুড়ে ছড়ানো-ছিটানো এ-রকম কিছু নিদর্শন তাদের চ্যানেলে ঢুঁ মারলে পাবেন। ওরাল সাবস্ট্যান্সকে ধারণের ক্ষেত্রে চ্যানেলটিকে বেশ নিবেদিত মনে হয়েছে।
মিথনির্ভর ভক্তিমার্গে সক্রিয় মরমি জীবনবেদের বিচিত্র তরঙ্গ উপমহাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিচর্যায় একসময় ছাপ রেখেছিল। পরিমাণে সামান্য হলেও এগুলোকে ডিজিটাল ফর্ম্যাটে বন্দি করার ভাবনাটি মন্দ লাগেনি। রাজস্থানের মরু এলাকায় অবস্থিত অজপাড়াগাঁয়ের ভাবসাধক যমুনা মালির ভজন, হিন্দু ঘরে জন্ম নেওয়া শিরাহাট্টির ফকির সাধকের সুফিভাবে গাঁটছড়া বাঁধার কাহিনিন নিয়ে নির্মিত কন্টেন্টদুটি বেশ ভালো লাগল দেখে। যমুনা মালির সাদাসিধে জীবন ও মিথনির্ভর বিশ্ব থেকে জন্ম নেওয়া ভজনাশ্রিত গীতকাহিনি শুনতে-শুনতে ভাবছিলাম এ-রকম শত-শত যমুনা মালি আমাদের দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন! যুগের জটিল আবর্তে বিলীন হওয়ার নিয়তি মেনে নিয়ে গান করে চলেছেন! উনাদের এইসব ওরাল সাবস্ট্যান্স ধরে রাখার সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি কিন্তু কাজটি আমরা সেভাবে আর পারছি কই! কিছু ভালো কাজ (আমার জানামতে) নিশ্চয় হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে বহমান সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের তুলনায় সেগুলো নগণ্য।
জনসংস্কৃতির ছড়ানো-ছিটানো চিহ্নগুলোকে ছোটকাগজে কীভাবে দ্রষ্টব্য করে তোলা যায় সেটি নিয়ে বোধহয় ভাবা উচিত। জনজাতির ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের হদিশ পেতে এগুলোর ভূমিকা অসীম।
— আ. মি. ২০২৩
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS