‘ফসলবিলাসী হাওয়ার জন্য কিছু ধান চাই’ || ইমরান ফিরদাউস

‘ফসলবিলাসী হাওয়ার জন্য কিছু ধান চাই’ || ইমরান ফিরদাউস

“প্রত্যেকটা রাগ ঠিক প্রত্যেকটা মানুষের মতো আলাদা। সবসময় ওই বারোটা স্বরই থাকে; মানুষের যেমন মাথা, নাক, কান। কিন্তু ঠিক যেমন দুইটা মানুষ কখনোই এক না, দুইটা রাগও না। কক্ষনও দুইটা চেহারা বা দুইটা রাগ পাবেন না একই রকম। রাগের এই যে স্বাতন্ত্র্য, এইটা আপনাকে তার গভীরে নিয়ে যাবে।” — মনি কাউল, ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক ব্যতিক্রমী নাম

মেঘ মালহার বা মেঘমল্লার হিন্দুস্তানি রাগসংগীত। সংগীতসাধক তানসেন এবং রাগ মেঘমল্লার নিয়ে একাধিক কিংবদন্তি আছে। যেমন — মুঘলসম্রাট আকবরের সভায় নবরত্নের এক রত্ন ছিলেন মিয়া তানসেন। তানসেনের এমন সৌভাগ্যে সমসাময়িক সংগীতজ্ঞরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। তারা রাজসভায় তানসেনকে দীপক রাগ শোনানোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। দীপক রাগ এমনই এক তেজী রাগ যা গাইলে গান থেকে সৃষ্ট আগুনে তানসেনের শরীর ঝলসে যাবার সম্ভাবনা ছিল। তানসেন তা জানতেন। তিনি আরও জানতেন যে, দীপক রাগ গাওয়ার পর যখন আগুন জ্বলবে তা নেভানোর জন্য প্রয়োজন হবে মেঘমল্লার রাগ। কিন্তু একার পক্ষে তো একসাথে দুটো রাগ গাওয়া সম্ভব নয়। তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করার জন্য নিজের মেয়ে ও গুরুকন্যাকে মেঘমল্লার রাগের তালিম দিতে লাগলেন। তানসেন শুরু করলেন দীপক রাগ। একসময় সভাগৃহের সমস্ত মোমবাতিতে আগুন ধরে গেল। অবস্থা দেখে সবাই দিগ্বিদিক ছুটতে লাগলেন। তানসেনের নিজের শরীরেও আগুন জ্বলতে শুরু করল। তিনি ছুটলেন বাড়ির দিকে। সেখানে নিজকন্যা ও গুরুকন্যা সমস্বরে মেঘমল্লার গাইছে। আকাশ থেকে নামতে শুরু করেছে বৃষ্টিধারা। সেই বৃষ্টিজল নিভিয়ে দিলো তানসেনের শরীরের জলন্ত আগুন। শোনা যায় এই ঘটনার পর অসুস্থ অবস্থায় ছয়মাস তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন।

একই ঘটনার আরেকটি উপকথা আছে এমন — দীপক রাগ হলো অগ্নির রাগ। আকবরের রাজসভায় এই রাগ যখন তানসেন গাইতে শুরু করলেন তখন সভা হয়ে উঠল এমনই উত্তপ্ত যেন কোথাও আগুন জ্বলছে দাউ দাউ করে। তানসেনের শরীরের তাপমাত্রা এত বেড়ে গেল যে উনি নদীর তীরে বসলেন শরীর জুড়ানোর জন্য। ফল হলো নদীর পানি উলটো ফুটতে লাগল উত্তাপে। দীপক রাগে যখন তাঁর প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন খোঁজ পাওয়া গেল গুজরাটের ভাদনগরের তানা ও রিরি ভগ্নীদের যারা গাইতে জানতেন মেঘমল্লার রাগ। তলব করা হলো তাদের। আসন নিয়ে মেঘমল্লার গাইতে শুরু করেন তানা ও রিরি। আচমকা অঝোর ধারায় নেমে এল ভারী বর্ষণ। প্রশান্তির ধারায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তানসেন।

মেঘ মালহার বিষয়ে এত হদিশ করার প্রয়োজনটা জরুরি হয়ে ওঠে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘মেঘমল্লার’ দেখা-শোনা-পাঠের পর। মানে, কী কারণে নির্মাতাকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের (মুক্তিযুদ্ধের) পাঠকৃতি রেইনকোটকে শ্রুতিচিত্রে তরজমা করার প্রক্রিয়ায় ‘মেঘমল্লার’ নামকরণ করতে হয়? নৈর্ব্যক্তিক অর্থে, আলো-ছায়া দিয়ে রূপালি পর্দায় আঁকা-লেখা এই সিনেমা ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বিষয়ক এবং ‘বাংলাদেশ সিনেমা’ সংশ্লিষ্ট কোন দীপক রাগের শরীরে ভারী বর্ষণের শীতল ছোঁয়া দিয়ে গেল বা যায় … তা জানতে এই দর্শক মন অনুসন্ধিৎসু হয়ে ওঠে। যদিও নির্মাতা গণমাধ্যমের বরাতে জানিয়েছেন যে, “রেইনকোট নামে যেহেতু ভারতে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত একই নামের একটি চলচ্চিত্র রয়েছে, তাই এই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।”

সওয়ালগুলো শিকেয় তোলা থাকুক আপাতত। এও প্রকাশ থাকুক — চলমান রচনার মৌল উদ্দেশ্য রূপালি পর্দায় ‘রেইনকোট’-এর আনুপুঙ্খিক অনুবাদের তদন্ত করা নয়। বরং, আমি-আমরা আলোচনার চাকা গড়াতে চাই ‘মেঘমল্লার’-এর রাগ-বেহাগের পথেপ্রান্তরে।

বাস্তবতার নিপুণ চিত্রণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গদ্যের ব্যতিক্রমী সুষমা। রেইনকোট  গল্পটিও এইসব মাত্রার পরিধির বাইরে নয়। ইলিয়াসের গদ্যে বরাবরই ইশারা থাকে সমাজ-সংস্কৃতিতে প্রচলিত আখ্যানের নেত্রকোণের সমান্তরালে থাকা, অনুচ্চারিত বা অল্প-আলোচিত আরও আরও অন্য বাস্তবতার বয়ান।

উৎক্রমের সেই ধারা রেইনকোট  গল্পেও জায়মান। এখানে প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধবর্তী রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতা। সিনেমায় অবলম্বিত এ গল্পের পুরোভুমিতে আছে মধ্যবিত্ত-শিক্ষিত মৃদুমানুষের মুক্তি-যুদ্ধ-পরিস্থিতি সময়ের যাপিত জীবনের হিসেবনিকাশ; যার পটভূমিতে অর্কেস্ট্রা বাজাচ্ছে কলেজের লাইব্রেরির আলমারিতে লুকিয়ে-রাখা গ্রেনেডের নিনাদ আর মুক্তিযোদ্ধার স্টেনগানের ঠা ঠা আওয়াজ।

রেইনকোটের এমনতর অনুপ্রাণনা ‘মেঘমল্লার’-এও হাজির আছে। সিনেম্যাটিক আখ্যানের প্রয়োজনে গল্পের মূল চরিত্রগুলো প্রায় একই থাকলেও পালটে গেছে স্থান-নাম।  সিনেমায় গল্প শুরু ও শেষ হয় বাংলাদেশের কোনো-এক মফস্বলে। রেইনকোটে যা ছিল শহর ঢাকার মিরপুর।

যা-ই হোক, সংক্ষেপে সিনেমার গল্পটা হলো — ‘উনিশশো একাত্তর। সময়টা তুমুল বর্ষাকাল। মূল চরিত্র নূরুল হুদা বাংলাদেশের একটি মফস্বল শহরের সরকারি কলেজের রসায়নের শিক্ষক। স্ত্রী আসমা এবং পাঁচ বছরের মেয়ে সুধাকে নিয়ে তার সুখদুঃখের মধ্যবিত্ত সংসার। তাদের সাথে থাকত নূরুল হুদার শ্যালক, আসমার ছোটভাই মিন্টু। একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে মিন্টু মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চলে যায়। আর এদিকে নূরুল হুদাকে রেখে যায় জীবন-মৃত্যুর সংকটের মধ্যে। এরপরও নূরুল হুদা নিয়মিত কলেজে যায় এবং পাকিস্তানপন্থী শিক্ষকদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করে। মধ্যবিত্তের শঙ্কা, ভয়, পিছুটান তাকে প্রতিনিয়ত অসহায় করে তোলে। ঘোর বর্ষণের এক রাতে মুক্তিযোদ্ধারা নুরুল হুদার কলেজে এবং পাশের আর্মিক্যাম্পে আক্রমণ চালায় এবং কোনো কারণ ছাড়াই পাকিস্তানি আর্মি নূরুল হুদা এবং তার বন্ধু-সহকর্মী আবদুস সাত্তার মৃধাকে ধরে নিয়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যে যাওয়ার সময় আসমা তার ভাই মিন্টুর একটা ফেলে-যাওয়া রেইনকোট নুরুল হুদাকে পরিয়ে দেয়। পাকিস্তানি আর্মির সামনে নূরুল হুদা প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। প্রমাণ করার চেষ্টা করে, সে একজন শিক্ষক মাত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্রব নেই; কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা ক্রমেই বাড়তে থাকে। আঘাতে নূরুল হুদার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। রক্তের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই তার মিন্টুর কথা মনে হয়; এবং সে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাবতে শুরু করে। যার কাছে মৃত্যু বা আত্মদান কোনো ব্যাপারই না।’

তো, সিনেমার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চিত্রনির্মাতা চেষ্টা করেছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার প্রচলিত ঢং ও ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচাগ্র মেদিনী’-এর প্রকরণের বাইরে এসে গল্পের জাল বোনার।  সেহেতু, ভর করেছেন বর্ষা, প্রাকৃতিক নৈসর্গ, অন্দরমহলের আটপৌরে জীবন সহ নানা বিষয়ের উপর। ফর্ম বা আঙ্গিকগত প্রেক্ষাপট থেকে বেছে নিয়েছেন মিনিম্যালিস্ট শৈলী। দৃশ্যের ভেতর কথা কম, চরিত্রদের গতিবিধি বা চলন-বলন মুখ্য। দৃশ্য-দৃশ্যান্তরে মোটিফের পৌনঃপুনিক ফিরে আসা, চরিত্রদের বহিরঙ্গে নির্লিপ্তি — অন্য(তর) ছবির আমেজের আঁচ বিজ্ঞাপিত করে।

ক্যামেরা যেন সময়ের স্থিতিস্থাপকতা মাপনযন্ত্র। দৃশ্যের ত্রিকোণমিতিক বাস্তবতার নির্মাণে ক্যামেরার জ্যামিতিক, পেলব অভিগমন একাধারে যেমন হাতছানি দেয় জীবনের থেকেও বৃহৎ কোনো কালের গহ্বরে প্রবেশের, তেমনি চিত্রনাট্যের আলগা বুনটের দরুণ পাশে-বসে-থাকা দর্শককে যেন ঠেলে দেয় স্মার্টফোনের পর্দায় বিকল্প বিনোদন সন্ধানের দিকে।

নির্মিতির প্রেক্ষাপট থেকে এটা সত্য যে, একরৈখিক ও কেন্দ্রাভিমুখী স্বল্পমাত্রার ভাবনাযুক্ত কর্তৃত্বশীল সিনেমাআঙ্গিক থেকে রেহাই নেওয়ার তাড়া তাড়া নজির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেঘমল্লারগতরজুড়ে। কিন্তু, বোধিতে তা কোনো নতুন স্বাদের স্বাক্ষর করে না। মুক্তিযুদ্ধের ছবি মানেই যখন পর্দাজুড়ে জমিন দখল করে থাকে সম্মুখ-সমর, ধর্ষণ, নিপীড়ন — সেখানে এক অর্থে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তো বটেই, জাহিদুর রহিম অঞ্জনও যেন চোখে আঙুল দিয়ে বলেন ‘এই গল্প, গল্প নয়, আরও গল্প আছে’। তবে, সেই ইশারাটা সামগ্রিক অর্থে মূর্ত হয়ে ওঠে না। ফলে, দর্শক আবারও মুখ ফিরিয়ে নেয় স্মার্টফোনের পর্দার দিকে।

নির্মাতার সফলতা যদি দর্শকের ভাবনার চরে চিন্তার ধূলিঝড়ের ঘূর্ণি তোলার মধ্যে থাকে … তবে বলতে হয় জাহিদুর রহিম অঞ্জন এক্ষেত্রে নামের সুবিচার করতে পারেননি। এটা যেমন তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র, তেমনি বিকল্পধারার চলচ্চিত্রকর্মী হিসেবে বিশ বছর অপেক্ষার পর এ নমুনা আঙ্গিকগতভাবে নতুন কিছু দেখালেও, ভাবগতভাবে নিউরনের অনুরণনে তা কতটুকু (গাঢ়) ছাপ ফেলে তা নিয়ে বাহাস করা যেতে পারে।

‘মেঘমল্লার’-এ দেখতে ভালো লাগে ঝরঝর মুখর বাদল দিন-স্নাত নৈসর্গের রূপবিম্ব, যা বৃষ্টিতে ভেজা নায়িকার গা লেপ্টে থাকা বাজারি বিনোদনকে অবশ্যই খারিজ করে। ভালো লাগে আখ্যানের আবহ নির্মাণে শব্দ, রঙ, সংগীতের পরিমিত প্রয়োগ। তবে হয়েছেটা কী, এই পরিমিত প্রয়োগ বাস্তবে উচ্চকিত হিপোক্রেসিসর্বস্ব আমাদের নরম গালে কেন যেন গরম চড়ের ওম-এর প্রলেপ দিয়ে যায় না। কেবল একটা ছবিই হয়ে থাকে … (বি)স্মৃতিপটে। কেবলি বোধ হয় — দৃশ্যকাব্যের বিলাসিতাটুকুন।  দাশবাবুর একটা লাইন মনে পড়ে যায় — “…একদিন হৃদয়ে ঢের আঘাত দিয়েছে চেতনা / তারপর ঝরে গেছে…”।

আবারো মনে পড়ে — আধুনিক বাঙালি মাত্রই ভাত, মাছ, নস্টালজিয়া আর ওপেনটি বায়োস্কোপ। দীর্ঘ (ক্ষণব্যাপী) স্থায়ী অর্থে লংটেকের ব্যবহার থাকলেও আবারো আমরা বঞ্চিত হই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী কোনো ‘লং অ্যান্ড লার্জার দ্যান লাইফ’ ইউনিক অভিজ্ঞতার। বাংলাদেশ সিনেজগতে এটি যেন এক ‘তিন প্রহরের বিল’। হ্যাঁ … খরচ এবং এন্তেজামের দোহাই তো আছেই … আর কত … চলুক!? হল্ থেকে বেরিয়ে টুকরো টুকরো শট নয়, একটা আস্ত সিনেমা নিয়ে গল্প করার চল স্বাধীন বাংলায় কবে হবে … ভগবান জানে।

আলোচ্য সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী ঘটনা মিন্টুর রেইনকোট। আগুপিছু ভাবনায় ভীত নুরুল হুদার গায়ে জড়িয়ে-থাকা মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইনকোট নিছক কোনো বর্ষাতি নয়। রেইনকোটটিও মুক্তিযুদ্ধ, যোদ্ধার ত্যাগ, তিতিক্ষা আর লড়াইয়ের সাক্ষী। যার গায়ে লেগে আছে বাতাসে পোড়া বারুদের গন্ধ, একদৃষ্টিতে শত্রুছাউনির দিকে বন্দুক তাক করে থাকা মুক্তিসেনার চিবুক গড়িয়ে পড়ে ঘামের স্বেদ-স্বাদ। যেনবা ‘মুক্তি চাই’-চেতনার এক আলখাল্লা। এই আলখাল্লা যখন নুরুল হুদার শরীরে সওয়ার হয় … তখন নুরুল হুদা পরিবর্তিত হন এক অন্য মানুষে। দমন-করে-রাখা মুক্তির বাসনার বাঁধন ছেঁড়ার কাল হয়ে দাঁড়ায় রেইনকোট। দেয়ালে-পিঠ-ঠেকে-যাওয়া মানুষের চেতনার উল্লম্ফন ঘটে। অমানুষিক নির্যাতনের মুখেও উচ্চারিত হয় অকুতোভয় দীপ্ত চেতনা ‘জয় বাংলা’!

সিনেমার এইটাই সবচেয়ে শক্তিশালী বিন্দু। কিন্তু, বিন্দুতে জমে-থাকা সিন্ধুসম শক্তির স্ফূরণ ঘটে না আমাদের মানসলোকে। অভিব্যক্তিটি ‘ক্যামন আছো / ভালো আছি’-এর মতো ধরা দেয়। শিল্পের শক্তি সিনেমার মায়াবী পর্দা ফুঁড়ে দর্শক আমাদের গায়ে-মুখে-চুলে লাগে না। নান্দনিক অভিজ্ঞতা হয় মাত্র।

বাংলাদেশসিনেমায় জাহিদুর রহিম অঞ্জন সৃজিত ‘মেঘমল্লার’ একটি সংবাদ তথাপি সংবেদও। ব্যক্তিগত অভিব্যক্তির জারণ-বিজারন, সমাবেশ-বিন্যাস। ইওরোপিয় অঁতর ঘরানা, ইন্ডিয়ার সমান্তরাল সিনেমা, জাপানি কায়দায় জানু থেকে বাস্তবতা দেখন ধারার চিহ্নবহনকারী ‘মেঘমল্লার’ এ-তল্লাটে অপ্রচলিত ঘটনাও বটে। শুদ্ধ।

এক্ষণ, শিকেয়-তুলে-রাখা প্রশ্নগুলি নামানো যাক … ‘মেঘমল্লার’ বাস্তবতাকে দেখনদারির জায়গা থেকে যে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে তা হেজিমোনিক কালচারে মগ্ন দর্শকসাধারণের চৈতন্যে অন্য সিনেমার শিস দিয়ে যায় নাকি সমসাময়িক ‘ভালো’ সিনেমার নামে বিরচিত ‘মিডল সিনেমা’ এবং দেশীয় ছবির নামে চলিত বাণিজ্যিক সিনেমার চালু সংস্কৃতিকে উপরন্তু প্রশ্নের সম্মুখীন করে — তা নিশ্চিত করে বলা গেল না।


একনজরে মেঘমল্লার
পরিচালক : জাহিদুর রহিম অঞ্জন
প্রযোজক : বেঙ্গল এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড
চিত্রনাট্যকার : জাহিদুর রহিম অঞ্জন
উৎস : রেইনকোট (ছোটগল্প)
লেখক : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
অভিনেতা : শহীদুজ্জামান সেলিম, অপর্ণা ঘোষ,
মারজান হোসাইন জারা, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
সুরকার : সুব্রত বসু
চিত্রগ্রাহক : সুধীর পাল্‌সানে
সম্পাদক : সামীর আহমেদ, জুনায়েদ হালিম
বণ্টনকারী : বেঙ্গল ক্রিয়েশন্‌স
মুক্তি : ডিসেম্বর ১২, ২০১৪ (বাংলাদেশ)
দেশ : বাংলাদেশ
ভাষা : বাংলা


সহায়ক তথ্যসূত্র
১।  মেঘমল্লার সিনেমা

২।  মেঘমল্লার, উইকিপিডিয়া ভুক্তি

৩।  দুজন-জীবনানন্দ দাশ

৪।  তানসেন-অবাক করা এক সঙ্গীতের যাদুকর

৫।  মালহার রাগ,উইকিপিডিয়া ভুক্তি

৬।  বিষয়:ধ্রুপদ সঙ্গীত, মনি কাউল-এর সাথে অ্যাঞ্জেলা ল্যেহর-এর আলাপ

৭।  ব্যতিক্রমী ভারতীয় চলচ্চিত্রকার মনি কাউল স্মরণে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী/২, প্রচারপত্র, আয়োজনে বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম এবং ঢাকা আর্ট   সেন্টার, ২৭-২৮ জুলাই, ২০১২


  • লেখাটা লাল জীপের ডায়েরী পত্রিকায় ২০১৫ অগাস্ট মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। গানপারে প্রকাশপ্রাক্কালে যথোচিত অনুমতি নিয়া পাব্লিশ করা গেল। — গানপার

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you