পাপুয়া নিউগিনির ‘অসভ্য আদিবাসী’ আর খারাপ আবহাওয়ার হাত থিকা মুসা ইব্রাহিমরে উদ্ধার করা গেছে। সুসংবাদ! এর আগে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া, মতান্তরে, চূড়ার কাছাকাছি থিকাও তারে উদ্ধার করতে হয়েছিল। আশ্চর্যের কিছু নাই। মুসা ইব্রাহিম তো পর্বতারোহী, অবরোহী নন। তিনি কেবল উঠতে পারেন, পরে নামায়া আনতে হয় আর কি!
মনে পড়ল, অনেক ছোটবেলায় বড় বড় চাচাতো ভাইদের দেখাদেখি আমাদের ছাদের উপরে চিলেকোঠার ছাদে উইঠা গিয়া মুসা ইব্রাহিম হৈয়া গেছিলাম। আর নামতে পারি না। চাচাতো ভাইয়েরা বড় হৈলেও তো যথেষ্ট বড় না। তারাও নামাইতে পারে না। শেষমেশ ভয়ঙ্কর ঘটনাটাই ঘটল। নানাবিধ শোরগোলে আব্বার দিবানিদ্রা ব্যাহত হৈল। তিনি আইসা নামাইলেন। নামায়া কান বরাবর বিরাশি সিক্কার যে চটকানাটা দিছিলেন, সেইটাই আমারে সম্ভাব্য পর্বতারোহী হওয়ার পথ থিকা জীবনের জন্য বাঁচায়া দিছে!
বাবরভাইয়ের গৌরবের দিনে মুসাভাইকে নিয়া এই পুরান স্মৃতি মনে পড়ল।
২.
পর্বত বিজয় বা আরোহণ একটা কষ্টসাধ্য দুঃসাহসিক কাজ। কিন্তু এই কাজকে একটা স্পেক্টাকল আকারে পরিবেশন করা সম্ভব নয়। আপনি যেমন সাঁতার, ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলা কনজিউম করতে পারছেন, ঠিক সেই অর্থে ‘পর্বত-বিজয়’ কনজিউম করতে পারছেন না। না-পারার কারণে এই কর্মটি কোনো নান্দনিক সৌন্দর্যও তৈরি করে না আমাদের দৃশ্যকল্পনায়। ‘পর্বত-বিজয়’ বললেই আমরা দেখি বিজয়ী পর্বতচূড়ায় দাঁড়ায়ে আছেন, দেশের পতাকা সহ। এতে আমাদের একটা জাতীয়তাবাদী শ্লাঘা বোধ হয় মাত্র।
কিন্তু যিনি পর্বতারোহণ করেন, তিনি নিশ্চয়ই বিপুল বীরত্বের সাথে এই কাজটি করেন, তাতে অনেক সৃজনশীলতা, ঝুঁকি এবং সৌন্দর্য থাকে। দুঃখের বিষয়, সেসবের অভিজ্ঞতা কেবল একা তারই হয়। কিছু ফটো হয়তো তিনি নিয়ে আসেন, কিন্তু সেটা দিয়ে এই টোটাল কর্মটির ন্যারেটিভ আমরা তৈরি করতে পারি না। পরবর্তীতে তিনি বা অন্য কেউ যদি সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লেখেন বা ডকুমেন্টারি বানান, তখন আমরা সেটা এনজয় করতে পারি।
ফলে, কারো পর্বত-বিজয়ে আমাদের জাতীয়তাবাদী অহমটাই কেবল ইমিডিয়েটলি তৃপ্ত হয়। সেটা প্রথমবারের ঘটনায় যতখানি হয়, পঞ্চমবারের ঘটনায় ততখানি হয় না। নেপালের শেরপাদের এভারেস্ট বিজয় নিয়া ওখানে নিশ্চয়ই কোনো সেলেব্রেশন হয় না। ওটা নিয়মিত ঘটনা।
অথচ, কী কষ্টের কাজ! কত লোক মারা গেল এভারেস্টে! যারা চূড়ায় উঠল, তারাও আসলে নিঃসঙ্গই থেকে গেল। একটা জাতীয়তাবাদী ফলস ন্যারেটিভের ওপর দাঁড়ায়ে থাকল তাদের সমুদয় অর্জন!
- কথাসাহিত্যিকের প্রস্থান : ফেয়ারোয়েল টু ফয়জুল ইসলাম || সুমন রহমান - January 26, 2025
- হালুমহুলুমভালুমবাসা, ব্রাত্য রাইসু! || সুমন রহমান - November 23, 2024
- শেখশাহি, সাংবাদিকতা ও স্বাধীন বাংলা || সুমন রহমান - August 23, 2024
COMMENTS