Neom, Doctor Chef আর Bilete Bangali — এই তিনের আয়োজনে লন্ডন শহরে হয়ে গেল মুসাফিরানার (Musafirana) সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
দুপুর থেকে বিরামহীন তুষারপাত, বৈরী আবহাওয়া, কিন্তু গানপাগল মানুষেরা কেউ ঘরে বসে থাকেননি। আমার প্রিয় দুই বন্ধুর সন্তানসম্ভবা পত্নীরাও থেমে থাকেননি, চলে এসেছেন গানের বৃষ্টিতে স্নাত হতে।
“আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ / বৃষ্টি, তোমাকে দিলাম / শুধু শ্রাবণসন্ধ্যাটুকু / তোমার কাছে চেয়ে নিলাম” — আজকের তুষারস্নাত সন্ধ্যায় মনের অজান্তে গুনগুন করে এই গানের দুই কলি যে বা যারা বাসার বারান্দায় বসে গাইত, সেই মানুষগুলোও আজ সুর মেলালো মঞ্চের শিল্পীর সাথে। এমনই অনেক মনমাতানো গানে আর কণ্ঠের জাদুতে সীমান্তের বেড়াজাল ছাড়িয়ে তিনি পৌঁছে গিয়েছেন দুই বাংলার মানুষের হৃদয়ের মনের কাছাকাছি।
আজকের সন্ধার মূল আকর্ষণ — সংগীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আবৃত্তি, গল্পের ধরন আর ‘বৃষ্টি’ বিষয়ভিত্তিক এই ত্রয়ীর আলোচনা শুধু ভাবগম্ভীর ছিল, তা নয়। বরং অনেক মজাদার, তথ্যবহুল কথাবার্তা আর গানের ইতিহাস থেকে গল্পের ঝুলি। একটা গানও শোনার সুযোগ হলো শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কণ্ঠে। জয় সরকারের অনবদ্য গিটার বাজানো উপভোগ করল হলভর্তি শ্রোতা-দর্শক। সাথে তার গায়কী। সাথে ছিলেন দলের নিজস্ব যন্ত্রী — কিবোর্ডে শুভেন্দু দাস মাখন, তবলায় সুবীর চক্রবর্তী আর গিটারে লাল্টু রায়। এদের বাজানো শুধু উপভোগ করাই হয়নি, হয়েছে ভূয়সী প্রশংসা।
তিন ঘণ্টার মতো মঞ্চে গান, আবৃত্তি আর গল্প দিয়ে মাতিয়ে রেখেছেন শ্রীকান্ত আচার্য, জয় সরকার আর শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘আমি এত যে তোমায় ভালোবেসেছি’ গানটা শুনতে চাই — পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর থেকে আওয়াজ পেলাম। রসিক মানুষ শ্রীকান্ত আচার্য প্রশ্ন করলেন, “কাকে?” হলভর্তি মানুষের মাঝে হাসির রোল পড়ে গেল। দর্শকসারি থেকে অনেকেই অনেক গানের অনুরোধ করেছেন, কিন্তু শিল্পীর মনে ধরল এই বিখ্যাত গান। অনুরোধ রাখলেন, হারমোনিয়ামে আঙুল রাখলেন, গাইলেন নিজের মতো করে দরাজ কণ্ঠে শ্যামল গুপ্তের লেখা, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়-এর গাওয়া বিখ্যাত এই গান — “তোমার কাজলচোখে যে গভীর ছায়া কেঁপে ওঠে ঐ / তোমার অধরে ওগো যে হাসির মধুমায়া ফুটে ঐ / তারা এই অভিমান বোঝে না আমার / বলে, তুমি তো আমায় ভালোবেসেছ / শুধু আমার গোপন ব্যথা কেঁদে কেঁদে কয় / কেন আরো ভালোবেসে যেতে পারে না হৃদয় / আমি এত যে তোমায় ভালোবেসেছি” …
গান শেষ করে শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য জানান দিলেন, “আমার মনে হয় ভালোবাসাটুকই শেষ কথা বলুক, বন্ধুরা!” তারপরেও সমবেত মানুষের অতৃপ্ত ইছা রয়ে যায়, কিন্তু মনের প্রশান্তি নিয়ে গুনগুন করে বাড়ির দিকে যাত্রা করে সবাই অনেক গল্প, গান আর কবিতার মোহ নিয়ে। সবার মতো আমিও ফিরলাম ক্যামেরার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে। স্টেশন থেকে বের হয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে শুনে নিলাম অনেকগুলো গানের একটা। শুভ্র তুষারের উপর দিয়ে হাঁটার সময় কারো খেয়াল এল মনে, আর গানের লাইন — “তোমারি খেয়ালে ক্ষণে ক্ষণে কত কথা জাগে মোর মনে / চোখে মোর ফাগুনের ছবিটি আঁকো” …
রচনার সঙ্গে যুক্ত ছবিগুলোর শিল্পী লেখক স্বয়ং
[metaslider id=”4314″]
… …
- প্রথম জন্মাষ্টমী || পীযূষ কুরী - September 1, 2018
- তিন মুসাফির বিলেতের মঞ্চে : জয়, শ্রীকান্ত, শ্রীজাত || পীযূষ কুরী - March 28, 2018
- মনের জানালায় || পীযূষ কুরী - October 24, 2017
COMMENTS