বাংলাদেশে এই ইংরেজি গানটা বাংলাবৎ সরলসোজা ইম্প্রেশন নিয়া হাজির রয়েছে গেল দুই-আড়াই দশক ধরে শ্রোতার দলিজে। যে/যারা গানস্-ন্-রোজেসের কুল্লে একটামাত্র গানও শুনেছে তারা ‘নভেম্বর রেইন’ না-শুনিয়া পারেই না। আলবৎ তারা নভেম্বর রেইন শুনেছে। এত পরিচিত একটা গানের বাংলা বানাইতে নেমে টাইম খুন করা খামাখা। কাজেই জিনিশটা বাংলা না-করেই কিছুটা হাফবাংলা পাদ্যিক (পদ্যমতন দেখতেশুনতে) একটা ট্রাই করে দেখা গেল। গোস্তাকির জন্য মাফি মাঙতে বেহুদা বাক্য খর্চা না করি এইখানে, যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে এবং হবে।
যে-কথাটা আরেকবার বলা বাহুল্য তা এ-ই যে বাংলায় যত প্রকারের বিপর্যয় সম্ভব সবই এই ভাষান্তরণে ঘটেছে। আনফর্চুনেইটলি? কি বলব, ওয়েল, হয়তো। অক্ষমতাজনিতও। অর্থবিপর্যয় তো বটেই, ভাববিপর্যয়, চিত্রবিপর্যয় ব্লা ব্লা যা-কিছুই ইম্যাজিন করা যাক না কেন। প্রতিসরিত হতে হতে এর মূল উধাও হয়েই গিয়েছে হয়তো। তবু একে অনুবাদই তো বলতে হবে, অ্যা কাইন্ড অফ তর্জমা ভার্শন। প্রচুর আর্কেয়িক ক্লিশে এক্সপ্রেশন্স এইটা বাংলাকালে এসে গেছে এবং আনকাট রক্ষিত হয়েছে। অগত্যা।
গানস্-ন্-রোজেসের এই গানটা প্রায় নাইন-মিনিটস্ লম্বা। আর এর দীর্ঘকায় গিটারসোলোটাও সম্ভবত রেকর্ডবুকে একটা জায়গাটায়গা পেয়েছে ইংরেজি মিউজিকের হিস্ট্রিতে। এতই দীর্ঘ। অনবদ্য উপভোগ্যও। এই গানের লিরিক একটা-কোনো ছোটগল্প থেকে ইন্সপায়ার্ড, উইকিপৃষ্ঠায় এই তথ্য জানলাম, গল্পকারের নামও ওইখানে দেয়া আছে। এছাড়া আরেকটা তথ্য এ-ই যে, এই গানটা গোড়ায় পিয়ানোতে কম্পোজ করা হয়েছিল এবং মিড-এইটিজে পিয়ানোকম্পোজড নভেম্বর রেইনের স্টেজশোও হয়েছে। অ্যানিওয়ে। এই গানের একটি মিউজিকভিডিয়ো খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল এমটিভিতে পুনঃপুনঃ সম্প্রচারের নব্বইয়ের দশকে। সেই-সময় ইউটিউবে হিট কাউন্ট করার বালাই ছিল না, ছিল এমটিভিতে কয়বার প্রচার হলো গণনায় নেয়া। গানস্-ন্-রোজেসের এই মিউজিকভিডিয়োটা নাইন্টিটুতে বেস্ট সিনেম্যাটোগ্র্যাফির জন্য অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল এবং অ্যাওয়ার্ডগিভিং সেরিমোনিতে এল্টন জনের লগে স্টেজ শেয়ার করে গেয়েছিল নভেম্বর রেইন, এল্টন জন সেদিন পিয়ানো সঙ্গত্ করেছিলেন।
নভেম্বর রেইন অবশ্য পার্ট অফ অ্যা ট্রিলোজি, কিন্তু হলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবু অন্য দুইটা গানও শুনে ফেলা যায় পাশাপাশি; এদের মধ্যে একটা হচ্ছে ‘ডোন্ট ক্রাই’ এবং অন্যটা হচ্ছে ‘এস্ট্রেইঞ্জড’। ত্রয়ীর ড্রামস্ প্যাটার্ন চমৎকারভাবে একই। ড্রামস্ দিয়াই বোধহয় তিনটারে একটি ইউনিফায়িঙের রাস্তায় নেভিগেইট করা হয়েছে।
আচ্ছা। আর কি বলা যায়? হ্যাঁ, একানব্বইয়ের রিলিজড ‘ইয়্যুজ ইয়োর ইল্যুশন’ অ্যালবামে চেপে নভেম্বর রেইন প্রথম শ্রোতাবাজারে এসেছিল। নিচে আমরা নভেম্বর রেইনের একটা বাংলায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করি কিছুক্ষণ।

নভেম্বর রেইন
যখন তোমার চোখে চোখ রেখে চাই
বাঁধভাঙা এক প্রণয়ের দেখা পাই
ঠিক একইভাবে জড়ায়ে যখন ধরি
হৃদয়ে প্রেমেরই শীর্ষ শিহরে মরি
কিচ্ছুটিই তো রইবে না চিরকাল
দুইটি হৃদয় হারায় আপন তাল
আরও সুকঠিন ধরে রাখা পিদ্দিম
খড়ের গাদায় নভেম্বরের হিম
আমরা দুজনে এসেছি অনেক পথ
প্রণয় এবং বেদনায় সেই বিমিশ্র দ্বৈরথ
পথে পথে ফেলে এসেছি দিন ও রাত
মুছে ফেলিবারে পারি নাই ব্যথাঘাত
প্রেম আসে দ্যাখো জোড়ায় জোড়ায়
প্রেম ফের চলে যায়
কেউ তো জানে না কালকের সংবাদ
হয়তোবা কারো মরিবার হয় সাধ
ফুরসত যদি মিলে যেত দুইজনে
একগাদা ভুল শুধরে নেবার পণে
একজোট হয়ে একবিছানায় শুয়ে
পেতাম স্বর্গ দুইজনে এক হয়ে
এবং আমায় ভালোবাসো যদি প্রিয়
খুঁচিয়ে এনো না বিগতদিনের তুচ্ছাতি ক্ষতটিও
ফুল ফেলে যদি কথা শুরু করো কাঁটাগুলো ধরে ধরে
বেরিয়ে পড়ব রাস্তায় এই হিমের নভেম্বরে
একান্ত খুবই নিজের করিয়া কাটাতে চাও না সময়?
একান্ত খুবই নিজের করিয়া চাও না স্মৃতির সঞ্চয়?
যার যার মতো সকলের চাই নিঝুম মুখ-মুহূর্ত
তুমি স্মৃতিতেও তোমার মতোই স্নিগ্ধ স্বতঃস্ফূর্ত
শক্তই বটে স্বাগত জানানো হৃদয়ের দরোজায়
স্বজনেরাও তো জখম থেকে রেহাই দেয় না তোমায়
কিন্তু একটা ভাঙাহৃদয়েরও শুশ্রূষা দাও যদি
নিশ্চয় দ্যাখো লভিবে শান্তি বিরানায় নিরবধি
একান্ত খুবই নিজের করিয়া আমারও তো চাই সময়
একান্ত খুবই নিজের করিয়া চাই দূরস্মৃতিসঞ্চয়
যার যার মতো সকলের চাই নিঝুম মুখ-মুহূর্ত
তুমি স্মৃতিতেও তোমার মতোই স্নিগ্ধ স্বতঃস্ফূর্ত
ভয় থিতিয়ে একটু যখন হয়েছ স্ফূর্ত-স্বস্থ
হয়তো তখনও রয়েছ অল্প ভয়প্রচ্ছায়াগ্রস্ত
হয়তোবা আজ অথবা কালকে একদিন ভালোবাসবেই
শিশিরের মতো প্রণয়ে আমায় রাখিবে যে তুমি সে-ই
কিন্তু আজকে এই যে দেখছ প্রগাঢ় অন্ধকার
দুজনে একটু আগায়ে গেলেই দেখা পাবো রাস্তার
কিছুই তো নয় চির-অক্ষয় রাত কেটে ভোর হয়
এমনকি এই শীতঋতু শেষে বসন্তবায়ু বয়
একান্ত খুবই নিজের করে পেতে চাও বুঝি কাউরে?
একান্ত খুবই নিজের কাউরে চাও না হৃদয়পুরে?
যার যার মতো সকলের চাই নিবিড় নিজেরজন
তুমি শুধু নও একলা চাইছ নিরালা আলিঙ্গন
ভূমিকা ও তর্জমা : জাহেদ আহমদ
… …
- যখন অন্ধকার, বাপ্পা মজুমদার - October 23, 2025
- একটা পাখি, হিচককের নয়, লটকনগাছের - October 21, 2025
- মঁসিয়ঁ মু য়্যু - October 18, 2025

COMMENTS