নাম কা ওয়াস্তে || ইমরান ফিরদাউস, নাফিস সবুর

নাম কা ওয়াস্তে || ইমরান ফিরদাউস, নাফিস সবুর

ভূমিকার আদলে

যে-বছর মুখের কথার প্রামাণিক সত্যতা পদ্মার পাড়ের মতো বিলীন হয় ক্ষমতার গঙ্গায়, সে-বছর লিখে লিখে কথা চালাচালি করতে করতে পাবলিক বোবা হয়ে গেল। কথারা শরণার্থীর মতন হেঁটে যায়, আই ওয়েওয়ে-এর হিউম্যান ফ্লো-এর দৃশ্যের ন্যায়। আওয়াজের সংসদ ভবনে, অধিকারের নামাবলি গায়ে দাপাদাপি করে আলোকিত সেলিব্রেটিরা। যাত্রাবিরতির অ-তিষ্ট ক্ষীণকালে, স্পর্শকাতর পর্দায় পরিস্ফুটিত হয় নাম-কা-ওয়াস্তে কথাবলি। এই নাম, নামে নামে যমে টানার প্রস্তুতি, বেনামে স্বেচ্ছাশাসনের, কুড়িয়ে পাওয়া বিষণ্ণতার মধ্যাহ্নে … কথায়, কথা উৎপাদনের বছরে — ইমরান ফিরদাউস ও নাফিস সবুর-এর আঙুলের ডগা বেয়ে এলোমেলো ঝরে পড়ে যাপনের অন্তরালের কোলাহল। বাবার আদেশ মায়ের দোয়ায়, মিম (meme) হবার প্রবল সম্ভাবনায় থরথর করে কাঁপতে থাকা বাক্যগুলোর হেডফ্যোওনে- ফ্যোওনে আইয়ুব বাচ্চু বলতে থাকে —

মিথ্যে স্লোগান আর মিছিলের লাশ
ভণ্ডামির রাজনীতি অস্ত্রসন্ত্রাস।
নষ্ট করেছে আমাদের
নষ্ট করেছে … নষ্ট করেছে …

মা তুমি রক্ষা করো।

 

পাথরে লিখো নাম … পাথর ক্ষয়ে যাবে
বুলেটে লিখো নাম … রক্তে ধুয়ে যাবে
বুলেটে লিখো নাম … কার্তুজখোসা পড়ে রবে।।

পড়ে-থাকা কার্তুজখোসা … যেন কৃতকর্মের টোকায়-রাখা স্মৃতির স্মারক

তোমার নাম আমার মনে
একক্ষয়ে-যাওয়া পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে
তোমাকে ভেবে ভেবে আমি কাঁদি
এই দোজাহানের কোথাও-না-কোথাও
এক খতরনাক হতভাগা আততায়ী
ট্রিগারে আঙুল রেখে বসে আছে
কোনো প্রার্থনা বাকি নেই —
সিনেমার মতো
তোমার নাম নিয়ে আমি কাঁদি
সিনেমার মতো
তোমার নাম ধরে ধরে নিজেকে ডাকি।।

নাম আর কামের এই পল্টনে মানে নষ্ট শহরের এই ইস্পাত-বারুদের রওজায় — সমকালে নাম-না-জানা সেই-যে কোনো মাস্তানের কথা হঠাৎই তো মনে পড়ে যায় যেন মিসফায়ার হয়ে ঘিলুতে ঘিলুতে সম্প্রচার হচ্ছে একপ্রস্থ আলগা জিজ্ঞাসা। এতদিনে সেও তো মেইবি হিউম্যান অফ লেইট ক্যাপিটালিজমের পাল্লায় … ভুল এবং শ্রেণিবিচারে অশোভন সম্ভবত তবু সঁপে-দেয়া সত্যপ্রেম আর যুদ্ধফেরত বখাটে গেরিলার গনগনে স্মৃতির প্যাথলজিক্যাল সেলাই ও সংক্রমণের লাগোয়া পথ ধরে … (এতটা পর) কোথায় নিয়া গ্যাছে তাকে তার সেই নিশপিশ জোড়া হাত বা নিশপিশ হাতদুইটাকে নিয়ে আবার তারে মেনে নিতে হইছিল কোন কোন নতুন মিথ্যা আর অর্ধসত্যদের বা ঐতিহাসিক পরম্পরায় মোকাবেলা করে যেতে হইছে — সেই রূপক এবং আক্ষরিকের রাজা উজির আর অন্যান্য প্রতিপুরুষদের?

যে তাকে মিথ্যা বলে তার নামও তো আমরা জানি না কিন্তু আর্থসামাজিক কূল বিচারের শ্রেণি অনুমান আমরা গানটা শুনতে শুনতেই সাইরা ফেলি যেমনটা বাপে-খেদানো মায়ে-তাড়ানো এই ব্যাকরণ বা মূল বইরে পাত্তা না দেয়া শহুরে বখাটে পূর্ববঙ্গীয় আদম মাস্তানেরটাও সম্ভবত।

কিন্তু জানি মেয়েটির নাম সে জানে ঠিকঠাক আর লিখেও যেন প্রার্থনার উচ্চারিত মহিমান্বিত আয়াত। বুকে মহব্বত নিয়া লিখে সে এই নাম যেনবা নামেরই উছিলায় দেখা মিলবে তার মানস আকাঙ্ক্ষার।

সময় শুধু মোমের মতো পোড়ে আর গলে যায়, না সে সিকোয়েন্স আর ডিওরেশনের কক্ষপথ ধরে চাতকির মতো ঘুরে ঘুরে সাম্প্রতিকের সীমানায় চালান করতে থাকে অতীত থেকে ছুঁড়ে-দেয়া চিঠি?

সে-চিঠির প্রাপ্তি স্বীকারের দায় কারো নাই শুধু এই গ্রেফতারি পরোয়ানা, (গুম)-এনকাউন্টার অব্লিগ ক্রসফায়ার, আর উৎকণ্ঠার এক আশু (কেবলই বিগত) নির্বাচনের মরসুমে আমাদের এই সিম্পলের মধ্যে ফাকিং গর্জিয়াস ভইরা দেয়া জুলুমবাজ লুটেরাদের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চর্চার পরিহাস — এই তেলেসমাতি রাষ্ট্রযন্ত্রে যুদ্ধফেরত নাম-না-জানা সেই-যে কোনো মাস্তান, তার কথা মনে পড়ে … যুদ্ধ থেকে ফিরে সে তো আর বসে থাকে নাই মনে হয়। তাহলে নিশ্চই নামই কামাইছে সে —

এই নষ্ট শহরের ইস্পাত-বারুদের রওজায় নামই কামাইছে সে বা কামাইতে চাইছে এমন — নাম, নামগন্ধের ধূপ, পরিচয় … যে-নামপরিচয়ের সিন্ডিকেট আপনার জবান, আমার টুটির উপর, আপনার-আমার এই ছা-পোষা জীবনচরিত আর ডেইলি লাইফ কারবার-জীবিকার উপর প্রবলভাবেই জারি রাখে নগদ ভয় এবং আনুষাঙ্গিক ঘটিতে পারে বলিয়া বোধ হয় এমন তরাসের ধিকিধিকি এংজাইটি মেইবি।

যে-নাম বললে চাকরি থাকবে না আর … সেই সর্বনামের ‘পুরুষ’ যেই নাম এবং তার পরিচয়ের খাতির আর (অপ)কীর্তির যেই যশ — এগুলোর পিছনে আছে যেই কেরামতির ফাউন্টেন — ক্ষমতার ঝরনাতলা, তার কোনো-একটা যুতসই ভাগের শরিকানা-দখল ধরতে পারলেই বোধ হয় … যেহেতু নষ্ট শহর আর সবকিছু নষ্টদের অধিকারেই যাবে বলে কথা, যোগ্যতম নষ্টটির কাছেই যাবে দ্য নেম হু শ্যাল নট মেনশনের ইজারা। সেই ইজারার ছাড়পত্রের মানে নামের বখরা আমরা (কেউ কেউ, সবাই তো না নিশ্চই) অনুগত সুবিধাভোগীরাও একটু সুযোগ বুঝে ব্যবহার করব যদি নসিবে থাকে — যে-কোনো জনপরিসরে — সরকার, বেসরকারের ক্লিভেজ ব্যাতিরেকে … যেন আমি ওগো দুর্বল তবু আমাতে করেছ কৃপা তাই অবনত — জিহ্বা এবং নিজেরই মুখের লালা দিয়ে ঘাম বাঁচিয়ে চেটে মুছে দিচ্ছি সেই নাম আর পরিচয়ের কালিমা, আপোসের সুদ কষায় …

৩০টি আম ও ৩৬টি লিচু
সর্বোচ্চ কতজন বালকের মধ্যে
নিঃশেষে ভাগ করে দেয়া যায়?

সুদের হার ৭% থেকে কমে ৫% হলে এক ব্যক্তির আয় ৫ বছরে ৭০ টাকা কমে যায়, তার মূলধন কত?

মানুষের বিচিত্র সমস্যাবলি … আপোসের সুদকষায় নামদস্তখত দিয়া সে বন্ধক রাখে তাজা সময়, জৈষ্ঠ্য মাসের হাসি — স্মৃতিকাতরতার মখমলে মোড়ানো অবসরভাতার বিকাশে হাতে পায় একখানি ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র। আধুনিক মানুষের একটা আইডি কার্ড — খুব দরকারি জিনিস। রোগী রাজার সেই এক দাওয়া — সুখী মানুষের কম্বল, তো সেই মিনিমালিস্টিক সুখী মানুষের সহায়সম্বলের কাছাকাছি দর্শন নিয়া (সম্ভবত) দাঁড়ায়ে আছেন যে ননভায়োলেন্ট বুদ্ধিস্ট জেনগুরু উনারও নিশ্চই একটা পরিচয়ের রাজনীতি আছে, অন্তত আছে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র।

পরিচয়হীনতায় কে বাঁচিতে চায়?

শরণার্থীপীড়িত এই দুনিয়ায় ফ্যাসিস্টপ্রধান মুসোলিনির এক পার্টিজান, কবি জনাব ফিলিপ্পো মেরিনেত্তির ফিউচারিস্টিক মেনিফেস্টোর থেকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় সার্কাজম ধার করে নিয়ে বলতে হয় —

‘আমরা গৌরবময় করতে চাই যুদ্ধ —
যুদ্ধেই পৃথিবীর একমাত্র স্বাস্হ্য ভালো থাকে …’

এই ভাবচক্করের মগ্নচৈতন্যে বেমক্কা শিস দিয়ে আসে মনের ভুলে আর  ধীরে মুছতে-থাকা পুরান প্রেম, আমার দেয়া তোমার নাম। সন্ধ্যাবেলার যত্নে আঁধারের টিমটিমে বুকে — জ্বলন্ত ধুঁকতে-থাকা, থেমে থেমে চলা সারি সারি যাত্রীবাহীর ভেতর একটা যে-কোনো রিকশা অথবা একজন চালক আছেন এমন একটি গড়াইতে-থাকা কৌটোর ভেতর প্রাগৈতিহাসিক জলতরঙ্গ, ঘিলুতে ঘিলুতে হরমোনাল রাশ … রাশ কেটে গেলে আমরা জানলাম ‘মানুষের ভালোবাসা তেমন বিখ্যাত কিছু নয়’ আর যেমন ধান কাটতে হয় রোদ্রোজ্জ্বল দিনে তেমন ঝলমলে দিন করেই একদিন প্রেম ভেঙে যায়। আরেকদিন জন্ডিস হয়, পরীক্ষার খাতায় মানুষ নাম-রোল লিখতে ভুলে যায় কোনো কোনো দিন। যাবতীয় বদনাম আর ধ্বংসস্তূপের চাপা সম্ভাবনা নিয়েই শহরগুলি তাদের পেট চিরে জায়গা করে দেয় নতুন গল্প, ক্ষুধা আর অসুখ নিয়ে আসা হাতিয়ারপ্রেমী মানুষ, মানুষ আর মানুষ খেই-হারা আরও মানুষদের। এর মধ্যে ধান্দা, লোহা, টক্কর, ঝুট ব্যবসা আর প্লাস্টিকের চালের কানাঘুসা, কার্বন ফুটপ্রিন্ট, প্রক্সিওয়ার, আর ভিড় আর ভিড় আর ভিড় আর ভিড় আরও ভিড় ঠেলে আরও ভিড় আরও ভিড় আরও ভিড় আর ভিড় আর ভিড়ের মাঝখানে নেহাত নিজের চিবুকেরই কাছে একলা হয়ে যাওয়া চোদনা মানুষ আর তার মহিমান্বিত শ্রমের মর্যাদা। আমরা গ্রাম থেকে গঞ্জে, ছোট শহর থেকে বড় শহরে যাব, অন্য দেশে যাব, পয়সা কামাবো, বিয়ে করব, বোমা মারব  — এই কেবল যাওয়া-আসার মাঝেই সকলি ফুরায়ে যায় মা। মা তুমি রক্ষা করো, মায়েরাই কি প্রথম নাম দেয় আমাদের?

[Best_Wordpress_Gallery id=”8″ gal_title=”নাম কা ওয়াস্তে ১”]

কোথায় যেন দেখছিলাম লেখক নতুন শহর — রাজধানী আর ফেলে-আসা মফস্বল, এই দুইরে ফ্রয়েডীয় তরিকায় আত্মীকরণের চেষ্টায় ছিলেন। শহর ঢাকাকে নাকি প্রেমিকার মতো লাগছিল উনার, আমার লাগে নাই তেমন।

এই নাম আর কামের পল্টনে হতভম্ব হয়ে গেলে মাঝেমাঝে — খোদাকে ডাকি। নতুন প্রেম — তোমাকে ডাকি। এক তুরুপ হিন্দি গানের কলি, চোখের ভেতর দুষ্ট চিলের মতন করে কান নিয়ে ঢুকে যায়। আল্লাহ্-খোদা, উনার বড় নামের কারবার। নিরানব্বইটা নাম আর নামের অর্থ সহ ফজিলত নিয়া উনি নিরঞ্জন হয়া বিরাজ আছেন ভাবের দুনিয়ায়। আর নতুন প্রেম, আমি শুধু তার একটা নামই জানি। যে-নামই হোক, সে-তো এক প্রকার চিহ্নমাত্র তবু তোমার চিহ্নের কাছে গিয়া আমি সংজ্ঞা হারাই। তোমার নাম ধরে তোমাকে ডাকি।

আমাদের নাম কি বর্ণনা করতে পারে আমাদের, আমার নাম কি আমার ছায়া না আমার শুভেচ্ছাদূত সে? একটা নামের মতন আরও অনেকগুলি নাম, একই নাম কিন্তু কতিপয় অন্য-অন্য মানুষ। মানুষ অর্থ (meaning) উৎপাদন করতে ভালোবাসে সম্ভবত আর অর্থের সাথে জুড়ে দেয় সম্বন্ধ আর জুতমতো বৈষয়িক অভিপ্রায়। সে নাম দেয়, নাম রাখে; ছদ্মনামে নাম গুম থাকে। যাকে ভালোবাসে, যাকে ঘৃণা করে, যাকে পোষ মানায়, যাকে জন্ম দেয়, যাকে করুণা করে আর যাকে তাচ্ছিল্য দেয় বা যা তৈরি করে, বানায়, যার সাথে শত্রুতা হয় — সবাইকে নাম কিংবা সর্বনামের সুতো ধরে ডেকে ডেকে টেনে নিয়ে আসে। নামের সুতার রঙ, পরিচয় — পরম্পরার সুতার রঙ মিলে আরেকটা সুতলি পাকায়।

হিন্দি সিনেমার তুরুপ গানের জোসিলা রমণীটি ডাক দেয়। সে তার দেহের দেমাগ আর আমাদের করুণ অবস্থার কথা সুর করে চাবুকের মতো নেচে নেচে বলে। সে আর তার দেহ, বিষয় ও বস্তু। এই বিষয় আর বস্তুকে একত্রে ডিল করার এখতিয়ার তার বাইরে আপাতত শুধু একটা জিনিসেরই, তার নামের। সে-নামটির নিজ অর্থ একটা থাকতে পারে কিন্তু এই সাংঘাতিক মুহূর্তে চরিত্র — সে নিজেকে দিয়াই যেন সংজ্ঞায়িত করতেছে তার নামের। এর সাথে কিছুটা নার্সিসিস্ট এই মেয়েটির সাংগীতিক ঘোষণার মাধ্যমে আমরা এও বুঝতে পারি যে, তার এই নামডাকের মধ্য দিয়া হয়তো তারে পাওয়া যাবে না বা তার জওয়ানির নৈকট্যলাভের প্রক্রিয়ায় আমরা আর বেশিদূর আগাইতেও পারব না; কিন্তু আমাদের মতো বদমাশদের সান্ত্বনা পুরস্কারস্বরূপ একটা নিশানা রেখে দিয়ে যায় সে। তার নামটা, শিলা। তার নাম নিয়াই আর-কি যতটুক তারে নিজের করা যায় — এরকম একটা অবস্থা। আমরা তার নাম নিয়া কানাঘুসা করব, মনে মনে আঁচড় কাটব, হাত বুলাবো আর কাঁদব।

আমি তোমার নাম লইয়া কান্দি

কিন্তু কান্দন বিব্রত বোধ করে উচ্চসভার মতো, সে চায় না তার কান্দনে অন্য কোনো নাম ভাগ বসাক। নামের নামতায় আমতা আমতা করতে থাকা ফুঁপানো স্পন্দন উচ্চারণ করতে চায় না আর, কাগজে লিখে রাখা সেই নাম। মিথ্যার নামে সত্য আর সত্যের নামে কাটাছেঁড়া চলে, বাল এই সময়ে। ভালোবাসা, ভালোলাগা, ক্রোধ, আনন্দ, বেদনা একাকার হয়ে গেছে চিহ্নের মতো আপতিক নামসংকেতে। মিথ্যে দিয়ে সত্যি করে বলি — আমার মতো তোমায় এমন কে ভালোবাসে, ফাঁকির নামে এত মিষ্টি করে আর কে তোমায় ডাকে। নামের আরশ জুড়ে বিশেষণের নজরদারি, পরিচয়ের খাঁচায় অন্তর-আত্মার হাজতগিরি। আগুনে পুড়ে খাঁক হয়ে যায়, যাচ্ছে এই শহরের পোড়া নাম। বাসের চাকায় পিষে যাওয়া নামগুলো কাঁদে থেঁতলে-যাওয়া গোলাপের শবদেহে। যেই দেশের নাম বাঙলা, সে দেশের বিমানবন্দরে নামে, বিসর্গ নামের পাখিরা। পাখিরা কেয়ার করে না কোন সড়কের কি স্থান-নাম। জানো না, তাদের ঠোঁটে ঠোঁটে লেগে থাকে এক রেণুর তরে অন্য রেণুর ভালোবাসার নাম, গন্ধ আর ঘাম। কাফেলার মতো সারি দিয়ে চলা প্রাক্তন প্রেমগুলো আসা-যাওয়ার মাঝে, বাসি রোদ পোহায় পাখিতীর্থদিনে। আর আল্লাহ-এর নামে ভাবে … ক্ষীণমতি’র মতো ঠগীর পাল্লায় যেন না পড়ে। ঢাকার নর্থ এন্ডের আর্টসামিটে, নামী শিল্পী মিউমিউ করে জোনাকির মতন। যেই নগরে আর একটাও গ্রাম থাকবে না, সেই দেশে নাগরেরা কাঁপে বেনামী ইনফ্লুয়েনজাজ্বরে। একটি চলমান নাটক যার সাহিত্যিক নাম : জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা — সেখানে কমলা বা কমলালেবুর মতো গোল করে ওঠে, সুশীল নামেরা। যেন কিছু হয়নি, সব ঠিক আছে, দেরাজে রাখা মায়ের শাড়ির ভাঁজের মতন। যত কথা এই সময়কে নিয়ে, তার কতটুকু ভবঘুরে সত্য আর কতটুকু কুঁচকির আড়ালে জমে-থাকা স্বেদবিন্দুর পীড়নপ্রণালি … তার কোনো খতিয়ান নেই বাংলাবাজারে।

নাম এক প্রভু। নিরঞ্জন। আল্লাহ-কি-আলি, কালা-কি-কালী — বলে যায় পাগল রাজ্জাক। পাঁচ ওয়াক্ত নামে-বেনামে স্টকিং করে, হইতেছ তুমি শায়খ গুগল। বিনা অজুহাতে করতেছ পাচার, কনফিওজড শীৎকাতরতা। গরম মালে হাত দিতে নেই, বাবা বলেনি?!?

অ্যামেচার শীৎকার, লাইভ চিৎকার, একাকার, ফ্ল্যাশ মবের হাহাকার — সেলফ্যোওনের মেমোরি স্টোরেজে, ক্লাউড ড্রাইভের তনুদেহের পরতে পরতে। এই খুশিতে, ঠ্যালায়, মানুষের বাগানে ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে যায় বেগানা ফুলের লগে রেললাইনের বস্তিতে। ফুল হাসে, কথা কয় না। মানুষ কান্দে, কারণ কইতে পারে না।

চির-দূরে থাকা, ওগো চির নাহি আসা — এই জীবনকে যে নাম করিছে চুম্বন, প্রতি মেক-আউটে তা প্রকাশ গোপন।

শেষ অঙ্কে স্মরি কে.এন. ইসলাম-এর মুরতি। যেমতি তিনি এরশাদ করেছেন :

“তোমারে করিব পান, অ-নামিকা, শত
কামনায়,
ভৃঙ্গারে, গেলাসে কভু, কভু
পেয়ালায়!”

সব শোধবোধ।।

[Best_Wordpress_Gallery id=”10″ gal_title=”নাম কা ওয়াস্তে ২”]

নির্ঘণ্ট

‘অ-নামিকা’ — কে.এন. ইসলাম

‘আমরা গৌরবময় করতে চাই যুদ্ধ — যুদ্ধেই পৃথিবীর একমাত্র স্বাস্হ্য ভালো থাকে…’ — অন্যদেশের কবিতা, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

‘এই নষ্ট শহরে’ — গান, দলছুট (সঞ্জীব চৌধুরী); কথা — ফরহাদ মজহার

‘মানুষের ভালোবাসা তেমন বিখ্যাত কিছু নয়’ — শিল্পের টেকনোলজি, ফরহাদ মজহার

‘নষ্ট করেছে আমাদের’ — যায়েদ আমিন / আইয়ুব বাচ্চু / এলআরবি

‘ভজিব তোমার রাঙা চরণ’ [আল্লাহ-কি-আলি, কালা-কি-কালী] — রাজ্জাক দেওয়ান

… …

নাফিস সবুর

নাফিস সবুর

ইমরান ফিরদাউস

ইমরান ফিরদাউস

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you