মার্শা বার্নিকাট মাদমোয়াজেলের মমতাবাণী ইন্দ্রিয়ে ব্যাপক মধুর মতো পশিল। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দুরভিসন্ধি নাই বাংলাদেশ দখলের, সংক্ষেপে এইটুকু কথা, শুধু সহযোগী হয়ে অ্যামেরিকা চায় বাংলাদেশের পাশে থেকে এই মিলিট্যান্সি নির্মূলের লড়াইয়ে কান্ধে-কান্ধ্ কাজ করে যেতে। অ্যামেরিকা পাশে পেয়ে খুশি হবে না এমন দেশটি পৃথিবীগ্রহে খুঁজে পাওয়া ভার। আমরা হাল্কাপাতলা জাতি ইন দ্যাট সেন্স। কথা হচ্ছে, অ্যামেরিকা আমাদের বন্ধু। ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে সেহেতু বন্ধুদৌত্যে। সেই সুযোগটা অ্যামেরিকা আদৌ পাবে কি না, মানে পেলে কবে পাবে, ভারতবন্ধুতা ছাড়া আমরা আপাতত কিচ্ছুটি ভাবছিনে। এছাড়া আমাদের ছোট এ তরী, ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই একসঙ্গে দুই দোস্তের, ডিপ্লোম্যাসি বলতেই আমরা বুঝি ইয়ারদোস্তির অটুটত্ব ও একনিষ্ঠতা।
যাকগে। অ্যামেরিকা আমাদেরে দখল করবে না বলেছে, অ্যাফগ্যানিস্টান ইরাক লিবিয়া বানাবে না বলেছে, হ্যাপি উই আর। শুধু খুশিই না, আমরা আশ্বস্ত। ভয় কেটে গেছে। উরিব্বাপ! যা ভয় পেয়েছিনু! অ্যামেরিকা আন্টি নির্ভয় করে দিয়েছেন এক-কথাতেই। তিনি লিবার্টিফ্রেন্ড। দুনিয়াটা স্ট্যাচু বানায়ে হেথা শান্তি এস্ট্যাব্লিশ করবেন উই বিলিভ। উই রিলাই অন হার। যদিও গোপনে সাহসের কথাটা বলি এই সুবাদে; যেমনটা ভয় পেয়েছি বলিয়া ভান করছি তেমন ভয় আসলে পাই নাই। আগের সেই ভয়দিন নাই। ইন্ডিয়া উই হ্যাভ অন আওয়ার সাইড। বিগ ব্রো ইজ ওয়াচিং আস্। সো নো ভয়। ডু ফুর্তি।
কিন্তু কোথায় এবং কবে হেন অভয়বাণী দিয়াছেন অ্যামেরিকা আন্টি? সি, ছিঃ, এরই মধ্যে ভুলে গেলে? ফজর হবার না-পায়, দ্য নাইট ইজ স্টিল দ্যেয়ার ইয়াং অ্যান্ড অ্যাডাল্ট, ভুলে গেলা বাহে! এক-জুলাই মিলিট্যান্ট অ্যাটাকের পক্ষকাল পরে, মে বি টুয়েন্টিফার্স্ট জুলাই হবে, অ্যামেরিক্যান চেম্বার অফ কমার্সের একটি মিটিঙে অ্যাড্রেস করতে যেয়ে অ্যামেরিকা আন্টি তথা মার্শা বার্নিকাট কথাগুলো ফর্মায়েছেন। কোট-আনকোট, সো-ফার, কথাগুলো স্মরণ করা যাক।
কহেন বার্নিকাট, য়্যুনাইটেড স্টেইটস হ্যাজ নো ইন্টেনশন টু অক্যুপাই বাংলাদেশ, অর টেইক ওভার বাংলাদেশ ইন দি নেইম অফ অ্যাসিস্টিং ইট। কথা হচ্ছে, এই ইন্টেনশনের কথাটা মার্শাজির মনে ছিল বলিয়াই মুখে এসেছে। এছাড়া, কার দিকে ইঙ্গিত করলেন হেন কথা কয়ে যে ইন দি নেইম অফ অ্যাসিস্টিং আমরা টেইক ওভার করতে অভিলাষ রাখি না। কে রাখে তাইলে? হ্যাঁ, মাসিমা, আমরা অ্যাডাল্ট হয়েছি। খালি খারাপ খারাপ কথা মনে উদয় হয় এবং বলতেও অবশিষ্ট রাখি না।
মার্শাজি আরও বলেন, ওই অ্যামেরিক্যান চেম্বার অফ কমার্সের জুলাই মিটিঙে, বোথ দি কান্ট্রিস হ্যাভ ইউনাইটেড ইন মিউচুয়্যাল বেনেফিট অ্যান্ড হ্যাজ টিমড আপ টু ফাইট দি টেরোরিজম দ্যাট হ্যাজ বিন ডেমোনাইজিং দি কান্ট্রি। আচ্ছা, সুন্দর, সমস্যা নাই। কিন্তু চান্স পাইলে তো ইউনাইটেড হবেন আপ্নে, উই রিগ্রেট, মনে হয় না আমরা আপনারে চান্স দিতে পারব। উই হ্যাভ আওয়ার চিরবন্ধু চিরনির্ভর, হে প্রিয়, উই হ্যাভ ইন্ডিয়া অ্যাভার বিউটি।
মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএস অ্যাম্ব্যাস্যাডর। উনার বক্তব্য শুনে শান্ত সমাহিত ক্রোধে একমাসাধিক নিদ্রিত ছিলাম। ঘুম থেকে জেগে একটা বাংলা কবিতা পাঠ করলাম উনার সম্মানে। ইন্ডিড, বাংলা কবিতা নয়, ইন্ডিয়ান বাংলা কবিতা। আগে সেইটা আরেকবার পড়ে ফেলি, কবিতাটি, লিখেছেন জয়দেব বসু :
ভূর্জপাতে লেখা এই সত্যগুলি মনে রেখো। … আমাদের বাঁচার ধরন কিছুটা ভিন্ন, হে আমার বিদেশি বন্ধুরা, যা কিনা অতিদ্রুত তোমাদের অচেনা ঠেকবে। অর্থাৎ, পরাজিত হতে হতে যে-সময়ে আমাদের নাক আমূল মাটিতে ঘষে গেছে, তখনই আসলে আমরা লড়তে শুরু করি। এসব জানো না তোমরা, দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশি শাসকেরা — এতকিছু তারাও জানে না।
ফলে এই সংহিতা সঙ্গে রেখো বন্ধুদল, যে-রকম সঙ্গে রাখো ক্যামেরা ও গর্ভনিরোধক, না-হলে যে-কোনোদিন এই উষ্ণ কালো মাটি তোমাদের বিপাকে ফেলবে। চৌকাঠের কোণা থেকে, বাথরুমের নালা থেকে, মধ্যদিনে যবে গান বন্ধ করে পাখি তখন খেতের কোনো অবিশ্বাস্য গর্ত থেকে আচমকা ছোবল এসে তোমাদের অন্ধ করে দেবে। গোধূলিতে বন্ধু হয়ে উঠোনে দাঁড়িও, দেহের মাংস কেটে নৈশভোজ দেবো। নিশুতি রাত্তিরে যদি সিঁদ কাটো, মস্ত আঁশবঁটি দিয়ে বড়বউ ধড় থেকে মুণ্ডু ছিঁড়ে নেবে।
… আতিথ্যের শর্ত মেনো পর্যটক, তোমরা — যারা ঘুরে দেখছ লাদাখের সীমান্ত অঞ্চল, তোমরা — যারা ঈশু ভজছো কোহিমার দূরবর্তী গ্রামে, তোমরা — যারা পালক বুলিয়ে দ্রুত শিহরণ সৃষ্টি করছ সিংভূমে, অযোধ্যা পাহাড়ে, ভূর্জপত্রে লেখা এই সত্যগুলি মনে রেখো। আমি সেই চণ্ডাল, অতিরক্ত কৌতূহল দেখাতে চাই না আর দেখতেও, প্রিয় বন্ধু, পছন্দ করি না।
[ট্যুরিস্ট গাইড / ভ্রমণকাহিনি / ১৯৯০]
লক্ষ করবেন, দুইটা জায়গায় জাম্পকাট করা হয়েছে ত্রিবিন্দু তথা লিডার্স যতি দিয়া। আশা করি, ইন ফিউচার অ্যাডজ্যাসেন্ট টু, জাম্পকাটের দরকার হবে না এই কবিতা ছাপাতে যেয়ে। এবং কবি হো তো, কবিতা হো তো, অ্যায়সা হি। দৃষ্টি প্রখর ও দূরের। কি ছিল ওই দুই কর্তিত/সেন্সর্ড স্থলে? এইখানে দেখে নেয়া যায় : “আমি এক ভারতীয়”, এবং পরের লম্ফস্থলে “ভারতীয় আতিথ্যের শর্ত মেনো পর্যটক” … এ-ই তো, ইন ব্রিফ, সংক্ষেপে। খেয়াল করতে হবে, লেখাটা ছাপা হয়েছে ১৯৯০ সনে এবং রচিত ১৯৮৮ সনে। সেই-সময়কার জিয়োপোলিটিক্যাল রেফ্রেন্সেস এখানে পাওয়া যায়। অ্যানিওয়ে। উই আর কোয়ায়েট হ্যাপি উয়িথ আওয়ার ফ্রেন্ডস। বিগ ব্রো ইজ ওয়াচিং আস্। লং লিভ ব্রো, সিস্, অ্যান্ড অফকোর্স, অল আওয়ার স্যুয়্যিট আন্টিস্!
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
- লঘুগুরু - November 8, 2024
COMMENTS